somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের আতঙ্ক

২৭ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের আতঙ্ক

ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের আতঙ্ক ক্রমশ গ্রাস করছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের। ক্ষুদ্র ঋণ দাতাদের লাগামছাড়া সুদের হার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের ঋণের জালে আটকে ফেলছে। সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের শাসানি, অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে গরিব মহিলাদের শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে হচ্ছে।
সম্প্রতি মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ঋণদাতাদের হাত থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রক্ষা করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা সুধা সুন্দররামনের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিজিওন্যাল ডিরেক্টারের সঙ্গে দেখা করে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
ধরুন অন্ধ্র প্রদেশের ক্ষুদ্র ঋণদাতা বেসরকারী সংস্থা ‘এস কে এস’-র কথা। সম্পূর্ণ বহুজাতিক কাঠামোয় তৈরি এই সংস্থা ক্ষুদ্র ঋণদাতার ব্যবসা ফেঁদে কাড়ি কাড়ি টাকা মুনাফা লুটছে। চড়া সুদের হারে গরিব মানুষকে শুধু ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলাই নয়, সেই ঋণ শোধার জন্য যেভাবে গরিবের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে তা আজ প্রকাশ্যে এসে গেছে। মহিলা সমিতি জানিয়েছে, ঋণ শোধার জন্য গরিবের ওপর চাপ সৃষ্টি করা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এই ঘটনা ঘটছে গোটা দেশজুড়েই। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের সাহায্য করার দেশের ব্যাঙ্কগুলির যে কাঠামো তৈরির প্রয়োজন তা না থাকায় ব্যাঙের ছাতার মতোই গজাচ্ছে বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণদাতার সংখ্যা। যার পরিণতি ভয়াবহ। ভাবতে পারেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের ঋণ দেয় এরকম মাত্র ৩৫টি বেসরকারী ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থা দেশের ৮৫শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে। এই ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থাগুলির হাত থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের বাঁচানোর দাবি জানানো হয়েছে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জিকে দেওয়া চিঠিতে।
কী ধরনের অত্যাচারের কথা বলা হচ্ছে? এপ্রিল ২০১০, হায়দরাবাদ ডেটলাইনে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকা জানাচ্ছে : ‘কিছু কিছু ঋণ সংগ্রাহক ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কী কী উপায়ে ঋণ সংগ্রহ করছে সে ব্যাপারে রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সবচেয়ে লঘু শাস্তিগুলোর মধ্যে কী কী পড়ে? ঋণখেলাপিকে প্রচন্ড রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা, গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা এবং খোলা মাঠের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চক্কর খাওয়ানো।’ অসহ্য নির্যাতন! অন্ধ্র প্রদেশে ৪০টি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা ওই রাজ্যে ঋণ প্রদান করে থাকে। ঋণ বিতরণের পরিমাণ তিন হাজার কোটি টাকা। যেসব গরিব মহিলা ইতোমধ্যে ‘ইন্দিরা ক্রান্তি পাথম’-এর ব্যানারে ‘সেলফ হেলপ গ্রুপ’-র অন্তর্ভুক্ত তাদের অধিকাংশকে জোরপূর্বক এই ঋণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। চলছে মধ্যযুগীয় কায়দায় এই ঋণ বিতরণ এবং আদায়।
মহিলা সমিতির অভিজ্ঞতা, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার বাড়বাড়ন্ত সবচেয়ে বেশি অন্ধ্র প্রদেশে। তারা চড়া সুদে গরিব মহিলাদের ঋণ দিচ্ছে। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পাওয়ায় গরিবরা ঋণ নিতে হচ্ছে বাধ্য হচ্ছেন ঐ বেসরকারী সংস্থার কাছ থেকেই। ঋণ শোধ করতে না পারলে তার জীবন হয়রানি করে তুলছে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার কর্মীরা। গত কয়েক মাস ধরে, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার কর্মীদের আতঙ্কে অন্ধ্র প্রদেশে অন্তত ৩০জন আত্মহত্যা করেছেন। দেখা যাচ্ছে, অন্ধ্র প্রদেশে সবচেয়ে বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী থাকায় ঐ রাজ্যেই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার বাড়বাড়ন্ত। প্রায়ই এইসব সংস্থা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনকল্যাণের নামে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ঐ কর্মসূচীর অজুহাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরিব মহিলাদের এক জায়গায় জড়ো করে তাদের বোঝানো হয় এবং ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলা হয়। অথচ, এই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থাগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কারবার। তারা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিচ্ছে যৎসামান্য সুদের হারে। আর গরিব মানুষকে ঋণ দিচ্ছে চড়া সুদে।
ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার হয়রানি এখন অন্ধ্র প্রদেশে সামাজিক সমস্যা। রাজ্যের সরকারী হিসেবে এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ৯লক্ষ ৩৫হাজার। আর ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন করার কাগজপত্র রয়েছে মাত্র ৪লক্ষ ৩০হাজার গোষ্ঠীর। রাজ্য সরকার ঠিক করেছিলো চলতি য়ছরে ১২হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে। কিন্তু বছর শেষে দেখা যাচ্ছে সরকার মাত্র ১হাজার ৮৯০কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ২০০৮সাল থেকে ঋণের জন্য সুদের হার প্রতি মাসে ২৫পয়সা অথবা বার্ষিক ৩শতাংশ কার্যত বন্ধই হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে রাজ্যের ৪০শতাংশ মহিলা ছুটছেন ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার কাছে। সমীক্ষা করে দেখা গেছে শুধু অন্ধ্র প্রদেশেই ৩০টি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা ২৫হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে।
ওড়িশায়ও এই ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার হয়রানির প্রতিবাদে গত ৩০শে সেপ্টেম্বর রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন। বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ভুবনেশ্বরের রাস্তায়। মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অফিসার এবং ওড়িশার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদপত্র জমা দেন। মহিলা সমিতি সমীক্ষা করে দেখেছে, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা ঋণের ওপর গড়ে ১৫থেকে ৪৫শতাংশ সুদ বসাচ্ছে। একই অবস্থা দিল্লিতেও। প্রায় ১৫০থেকে ২০০ এন জি ও রাজধানীতে ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার ভূমিকা পালন করছে। তারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছ থেকে গড়ে ২৫থেকে ৫০শতাংশ সুদ নিচ্ছে।
মহিলা সমিতি দাবি জানিয়েছে, অবিলম্বে এইসব এন জি ও এবং ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার ওপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। আঞ্চলিক স্তরে কোনো সরকারী পদ্ধতি আনা প্রয়োজন যাতে ঐসব সংস্থার ওপর নজরদারি বাড়ানো সম্ভব। ঐসব ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার তালিকাভুক্তকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ আনাও জরুরী। যেসব ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা মহিলাদের ওপর হয়রানি কিংবা নির্যাতন চালায় তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারির জন্য জাতীয় এবং রাজ্যস্তরে আলাদা মন্ত্রক গঠনেরও দাবি তুলেছে মহিলা সমিতি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×