আমাদের পাড়ায় বাজার পথে যে তেঁতুল গাছটা ছিল
আসতে যেতে দেখতাম আমরা গাছটা মাঠের কোণে
অপরাজিতা ফুল গাছটার দিকে ঝুঁকে থাকতে তাকে
ঝড় ঝাপটা বয়ে গেলে আমরা দেখতাম তেঁতুল গাছটা
অপরাজিতার দিকে একটু একটু ঝুঁকেছে আরেকটু
দেখে ভারী হাসি পেত আমাদের; আমরা তরল হাসিতে
এর ওর পিঠ চাপড়ে ঢলে পড়তাম বিপুল আমোদে।
একদিন অপরাজিতা গাছটায় অনেক ফুল ফুটেছে
ওইটুকু গাছটায় একসঙ্গে এত এত ফুল! বিস্ময়ে
ওপাশ বাড়ির অভিভূত মেয়েটির চাই অপরাজিতাকে
দারোয়ান প্রাক্তন অভিজ্ঞ কৃষক, গাছেদের জানে খুব;
খুব অনায়াসে শেকড়-মাটিসুদ্ধ অপরাজিতা চলে এল
রঙিন আর বাহারি ফুলের টবে শুরু তার জীবন
মাটি-সারে যত্নে সতেজ কৃত্রিম, ফুলও ফোটে নিত্য।
ফুলের টবের জীবনে আছে বেঁচে থাকা, আছে জীবন
ফুল আছে সতেজতা আছে, দেখে সকলে, অপরাজিতা
জানে সে জীবনে প্রাণ নেই; আর জানে তেঁতুল গাছটা
শেকড় মাটিতে নিবদ্ধ, অপরাজিতা যেমন টবে আবদ্ধ
মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ায় প্রবল নড়ে ওঠে তেঁতুল গাছ
দুলে ওঠে অপরাজিতাও, উপড়ে ফেলতে চায় শেকড়
তেঁতুল গাছটা ঝুঁকতে ঝুকতে কাত হয়ে রাস্তা পেরোয়।
একদিন প্রকৃতি সাজাতে সভ্যতা আসে আমাদের পাড়ায়
নিড়ানি চালায় সর্বত্র, হতাহত হয় ছোটবড় ঝোপঝাড়
তেঁতুল গাছটা তবু রয়ে যায়, ঝুঁকে ফিসফিসায় হাওয়ায়
অপরাজিতার পাতা নড়ে; সভ্যতা পৌঁছে যায় ও বাড়িতে
মালপত্রর সঙ্গে অপরাজিতা গাছটার টবও ঠেলাগাড়িতে
হাওয়ার দোলে তেঁতুল গাছ, ডাল-পাতা নাড়ে অপরাজিতা
কদিন পরে রাস্তার ধারে মুখ থুবড়ে পড়ে তেঁতুল গাছটা।
আমাদের পাড়ায় এখন আর স্যাতা পড়া ঘরবাড়ি নেই
নেই শেকড় উপড়ে পড়া তেঁতুল গাছটার মতো গাছেরা
সভ্য সভ্য উঁচু উঁচু বাড়িতে টইটুম্বুর এখন আমাদের পাড়া
ফ্ল্যাটে বেড়েছে প্রাণহীন জীবনপূর্ণ নীল অপরাজিতার চাষ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ৯:০২