somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নগরের আগুন কিন্তু মসজিদ-মন্দির চেনে না

১৫ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শিকল পাগলার একটা গান আছে "... আমি কেন মরি না, আজরাইল কি চিনে না আমারে..."

শ্রীলংকার ক্ষমতাসীনদের দুর্গতিতে আমাদের এখানে কিছু মানুষ এর মনে এই গানের কথারই অবস্থা বিরাজ করছে মনে হয়। তারা ভাবছে এখানেও হয়তোবা একই রকম কিছু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এটা ভাবছে না, অই পরিস্থিতি হলে তাদের নিজেদের এবং প্রিয়জনদের অবস্থা কিরকম হবে ? ঘর যখন ভাংগে, তখন সে ঘরে কারুরই থাকার জায়গা থাকে না। নগরের আগুন কিন্তু মসজিদ-মন্দির চেনে না। এরা তো বাবার সাথে মতান্তর হলে নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মানুষ। তাদের অবস্থা দেখে রোদ্দুর রায়ের "অই দেখ অই দেখ চাঁদ উঠেছে, চাঁদের আলোয় কিছু বোকা* দা জুটেছে" গানটা গাইতে খুব করে ইচ্ছে করছে !

বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে বিশ্বের মোড়লদের চোখে চোখ রেখে। জন্মের সময় ই যুক্তরাষ্ট্রের ততকালীন ফরেন সেক্রেটারি হেনরি কিসিঞ্জার যাকে "বটমলেস বাস্কেট" বলে উপহাস করেছিলেন। কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪০ টা বড় অর্থনীতির দেশের একটি।

আর এই সুর তো কিছুদিন পরপরই শুনছি "বাংলা হবে আফগান, আমরা হবো তালেবান।" কিন্তু স্বপন দেখা ছাড়া বিশ্ববাস্তবতায় এটাও হবার নয়।

আমাদের অনেক অনেক সমস্যার জঞ্জাল আছে, যাকে আমাদের উত্তর প্রজন্ম সাফ করবেই, সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

শ্রীলংকার আজকের যে অর্থনৈতিক দুর্গতি তার অনেক গুলো কারন আছে, কিছু নিচে তুলে ধরছিঃ

১) ক্ষমতাসীনদের লুটপাট, রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতার সাথে ভোটের রাজনীতিকে মাথায় রেখে রাষ্ট্রিয়ভাবে সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদের রেজাল্ট এটি। তামিল বিদ্রোহীদের নিঃশেষ করে তারপর ২০১৯ সালের আত্মঘাতী হামলার পর সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়কে নিষ্পেষন করে মাহিন্দ্রা উগ্র সিংহলি জাতীয়তাবাদকে চাষ করেছেন কারণ ৭০ শতাংশ ভোট বৌদ্ধদের।

২) পর্যটন নির্ভর দেশটির ২০১৯ সালের দেশব্যাপী জংগী হামলা এবং গত দু'বছর এর কভিড পরিস্থিতি তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন খাতকে একেবারে ধংস করে দেয়।

৩) অরগানিক খাদ্যশস্যকে টার্গেট করে নতুন কৃষিনীতি তাদের খাদ্য উৎপাদনকে ভয়ংকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে ফরেন কারেন্সি দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

৪) ভোটের চিন্তা মাথায় রেখে জনপ্রিয় বিপদজনক ডিসিশনে করহারের হ্রাসের খেসারত শ্রীলংকা আজ দিচ্ছে।

৫) চীন বিশ্ব রাজনীতির নতুন প্লেয়ার এটা আমরা এখন নিশ্চয়ই জানি। কিছুদিন আগে চীন প্রশান্ত মহাসাগরের সলমন আইল্যান্ডে সামরিক ঘাটি করার চুক্তি তে এসেছে, আর হাম্বানটটা বন্দর এর মালিকানার মাধ্যমে ভারত মহাসাগরে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যা মেনে নেবার কোন কারণই নেই। ইন্ডিয়ারও যা মেনে নেবার উপায় নেই। উপরিউক্ত বিষয়গুলোর ফলশ্রুতিতে মার্কিন-ইন্ডিয়ান যৌথ স্টেপে শ্রীলঙ্কাতে বিপুল দৃশ্যমান ঝামেলা সৃষ্টিই করা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াত্বের সুযোগে সেখানে চীন যেন স্টেপ ফেলতে না পারে।

শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এক নয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের মূল খাত দুটি - আরএমজি ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স, তবে দীর্ঘস্থায়ী উক্রেইন যুদ্ধ যাকে ঝুঁকির মাঝে ফেলে দিতে পারে। আমাদের এখানে কৃষিখাত অন্য যেকোনো খাতের চেয়ে শক্তিশালী। আমদের এখানে সুশাসনের অভাব, ব্যাপক লুটপাট আছে এটি তিক্ত সত্য, সেটি কাটিয়ে উঠাই বাংলাদেশ এর জন্য এখন মূল চ্যালেঞ্জ। শ্রীলঙ্কাকে দেখে আমাদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে কিন্তু আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিন্যান্স মিনিষ্ট্রি অলরেডি যথেষ্ট যৌক্তিক স্টেপ ফেলতে শুরু করেছে।

আর আইএমএফ ডাটা বলছে, বাংলাদেশের পাবলিক ঋণের পরিমান ১৩১.১৪ বিলিয়ন ডলার , যা ২০২০ সালের জিডিপির ৩৪.৭%; যা দক্ষিন এশিয়ার মাঝে সর্বনিম্ন। শ্রীলংকায় যা ছিল তাঁদের জিডিপির ১১২.২% ।

"মাইলস টু গো......"
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০২২ দুপুর ১:৪৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×