নাসরীন খান
আজ আকাশটার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না।হাসপাতালের বারান্দায় পায়চারি করছি বারবার। অস্থির মনটার কাছে সব সৌন্দর্যই ম্লান।বারান্দার ফাঁক দিয়ে জোৎস্না উঁকি দিচ্ছে।স্বচ্ছ রাত,জগতের সকল সৌন্দর্যের এক সৌন্দর্য এই রকম একটি রাত।তবুও আমি আজ চাইনি সেই সৌন্দর্য।
নাবিলা ব্যাথায় ছটফট করছে। আমি যেতে পারছি না ।ইচ্ছে করছে ওর দুটো হাত বুকে
ধরে বলি-কিচ্ছু হবে না তোমার,ভয় পেওনা,আমি তোমাকে ভীষন ভালবাসি,ভী--ষ---ন। রাতটা যেন শেষ হতে চাচ্ছে না।ভাবতে ভাবতে কেমন যেন তন্দ্রা মতন এলো চোখের পাতায়।
চোখ খুলতেই মনে হলো ভোরের গন্ধ আসছে বাতাসে।কিছুক্ষন পর আলো উঠতে শুরু করবে আকাশে।
সুমনা চেয়ারে হেলান দিয়ে।মা তজবি পড়ে আল্লাকে ডাকছে।মা র শব্দ করে তজবি জপা অসহ্য লাগছে।
-এত শব্দ করে পড়ছ কেন?
-বাবা ,এ সময় আল্লাকে ডাকতে হয় বেশী করে।
-তোমাকে ডাকতেতো নিষেধ করেনি কেউ।মনে মনে ডাক
রোম্পাটার এ সময় আবার পরীক্ষা শুরু হয়েছে।এ সময়টায় নাবিলার কাছে ওর থাকাটা জরুরী ছিল।তারপরও পরীক্ষা শেষ করেই রোম্পা রওয়ানা হয়েছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ।ওর মাও সাথেই আছেন।
নাবিলার রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেছে ।গত মাসেই রক্ত দেয়া হয়েছে একবার ।রোম্পা এলে ওর কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হলে তবেই নাবিলাকে সিজারে নেয়া হবে।ওর হাত-পায়ের পাতা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।নার্সরা ছোটাছুটি করছে।ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।এরিমধ্যে দুবার ডাক্তার সাহেব খোঁজ পাঠিয়েছেন ডোনার এসেছে কিনা।
এখন আরো অসহ্য লাগছে সবকিছু।রোম্পাকে ফোন দিচ্ছি বারবার এক কথাই বলছে-ধানমণ্ডিতেই এখনো ,জ্যামে আটকে আছে। উঃ!অসহ্য ।এই জ্যামের জন্যই যদি মারা যায় আমার নাবিলা কিংবা আমার আগত সন্তান ?তাহলে কি হবে আমার?না!আমার নিজের হাত পা এখন ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।
পাশে বসা এক মধ্যবয়সী রমনী কান্না করছেন।তার মেয়েকে সিজারে নেয়া হয়েছে কিন্তু রোগীর অবস্থা আশংকাজনক।তার মেয়ের জামাই বায়িং হাউজে চাকুরী করেন।বায়ারদের সাথে মিটিং চলছে তাই আসতে পারছে না।রোগিনীর সম্ভবত জন্ডিস হয়েছে।ডাক্তার বলছেন রোগীকে বাঁচানো কঠিন।অপারেশনের পর এ ধরনের রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে বেশী। মা কাছে গিয়ে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।
-কান্না করা ছাড়া কি আর করব বোন,জামাইটা আজ আসতে পারছে না।বদ্মাইশ বাবা -মা গুলিও আসলো না।ডাক্তার কত বার বুঝিয়ে বলেছে তাদেরকে মেয়েটাকে বেড রেষ্টে রাখার কথা।ওরা আমার মেয়েটাকে দিয়ে সারাক্ষন কাজ করিয়েছে।জন্ডিস একটুও কমেনি বরং বেড়েছে।আমি কতবার নিতে এসেছি ,দেয়নি।বলেছে আমার বাসা ছোট,ওখানে নাকি মেয়ের কষ্ট হবে।এখন দেখেন মেয়েটার এই অবস্থা !একটা মানুষও এলো না ওরা।জামাই ভালো কিন্তু ওই গুলি সব অমানুষ।
-জামাই ভালোতো,মেয়েটাকে আলাদা রাখতো অথবা আপনার কাছে রেখে আসতো।
-কেমন করে বলব জানিনা আপা ,দোয়া করেন আমার মেয়েটা যেন বাঁচে।সন্তানটা মরে গেলে
যাক ।
রোম্পা এসেছে দেখে আমি যেন আকাশ পেলাম মনে হচ্ছে। দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে ওকে নিয়ে গেলাম রক্তের পরীক্ষা গুলি করাতে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪