একটা কথা আমরা সব সময়ই শুনি যে দেশের মানুষ খুবই খারাপ। মানুষের খারাপ কাজের কাহিনি গুলি সোসাল মিডিয়ায় বেশি দেখি।আমরা সবাই হতাশ হই যে দেশের কিছুই হবেনা।
কিন্তু আমি যখন খবই বড় বিপদে পড়েছিলাম তখন আমি আমার চারপাশে অনেক মানুষকে পেয়েছি যারা সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আত্নীয়, বন্ধু এবং কি অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে অনেক সাহাজ্য পেয়েছিলাম সেই ঘটনায়। তাদের পরে আর ব্যক্তিগত ভাবে কৃতঙ্গতা স্বীকার করা হয়ে উঠেনি। সেই সব ঘটনায় বুঝেছি মানুষ এখনো মানুষের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানুষকে সাহাজ্য করতে চেস্টা করি। আমি বিশ্বাস করি আপনি ভালো ব্যবহার করলে মানুষ আপনার সাথেও ভালো ব্যবহার করবে, বিপদে সাহাজ্য করবে।
বিপদে যেহেতু বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায় তাই আমার জীবনের বিপদের সময়ে মানুষের সাহাজ্য পেয়েছি সেটাই সেয়ার করবো আজ।
আপনারাও আপনার দেখা ভালো মানুষের কথা সেয়ার করুন।
ঘটনা ১:- সময় ২০১৩ দীঘ জীবনে এই প্রথম আসল বিপদের মুখমুখি হয়েছিলাম। আমার পরিবারের এক সদস্য হাসপাতালে দেশে যেতে হবে, অফিসে বলাই ছিলো, ছুটি নিলাম, ২ জন বস/কলিজ ডেকে অবস্থা জিঙ্গাসা করলো এবং টাকা পয়সা লাগবে কিনা সেটাও জিঙ্গাসা করলো। বললো যদি দেশে দরকার হয় তবে জানাতে তারা ব্যবস্থা করবে।
ঘটনা ২:- বিকেলে ফ্লাইট, এক সহ বন্ধু/সহকমীকে ওহিদ ভাইকে ফোন করে জানালাম রাতে বাড়ি যাচ্ছি। জিঙ্গাসা করলাম টাকা আছে কিনা? বল্লো আমি আসতেছি দেখা করতে। তিনি ১ লক্ষ টাকা এটিএম থেকে তুলে নিয়ে হাতে দিলেন বললো দেশে গিয়ে জানাতে আরো ব্যবস্থা করবে প্রয়োজন হলে। আমাকে বললেই হতো যে ভাই হাতে টাকা নাই। তা না বলে নিজেই তুলে এনে হাতে দিয়ে গেলো।
ঘটনা ৩:- দেশে স্কয়ার হাসপাতালে ৬ দিনের যুদ্ধের সময় । বন্ধু দেখা করতে এসে ২টা এটিএম কাড দিলো বললো এতে ১ লক্ষ টাকা আছে ব্যবহার করতে পারবো। বাড়ীতে আরো ১ লক্ষ ক্যাস আছে লাগলে দিয়ে যাবে।
ঘটনা ৪:- হাসপাতালে সারা দিন থাকতাম এনআইসিউর সামনে। একদিন বন্ধুকে রক্ত লাগবে বলে ফোনে কথা বলার পরে পাশের লোকটি বললো তার স্ত্রার জন্য রক্ত ব্যবস্থা করা আছে সেটা সম্ভবত লাগবেনা। তিনি আমাকে সাথে নিয়ে নাস`কে বলেদিলেন ডাক্তারের কাছে জিঙ্গাসা করে যদি সেটা না আমাকে দিয়ে দিতে। উনিও বক্ষব্যাধীর ডাক্তার, তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সন্তান ডেলিভারির জন্য। তার সাথে হাসপাতালের বেঞ্চেই পরিচয়।
ঘটনা ৫:- আরেক বন্ধুকে ফোনে বলছি দোস্ত রক্ত লাগবে, ফোনেই বন্ধু তার পাসের বন্ধুকে বললো তোর রক্তের গ্রুপ কি ও+ ? বললো বাইকে উঠ বন্ধুর মেয়ের জন্য রক্ত লাগবে। ৪০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলো তারা।
ঘটনা ৫:- আরেক আত্নীয় স্কয়ারের একাউন্টে ১ লক্ষ টাকা জমা করেছে আমার রোগীর জন্য।
ঘটনা ৬:- হাসপাতালে ৪থ` দিন ডাক্তার এটা ওষুধ লিখলো বললো এটা দেশে পাওয়া যাবেনা, কলকাতাতে পাওয়া যাবে। তবে একটা ঠিকানা দিলো ঢাকাতে যে তার কাছে থাকতে পারে কারন তিনি তার বাচ্চার জন্য আনিয়েছিলেন কিছুদিন আগে।
আমি ফোন করে ভদ্রলোককে খুলে বললাম। তিনি বললো আপনার কোথায় লাগবে ঔষুধ গুলি। বললাম আমি আসছি আপনার বাসায়। পৌছে ঔষুধ নিয়ে উনাকে বললাম কত দিতে হবে? উনি অবাক হয়ে বললো, কিছুই দিতে হবেনা। উনার কাছে ৬ বোতল ওষুধ আছে উনি আমাকে ৪ বোতল দিলেন। উনি বললেন উনিও এই ভাবেই পেয়েছেন তাই আমার কাছ থেকেও কোন টাকা নিলো না।
যে কেউই তখন ১ বোতলের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতেও রাজি হোত। নাহলে ঐ ওষুধ কলকাতা থেকে আনাতে হতো।
পরের দিন আমিও একটা কল পেলাম আরেক বাবা আমাকে কল করেছে এই ওষুধ তার বাচ্চার দরকার তাই। আমিও নাস`কে তাকে ২ বোতল দিতে বললাম। উনি জিঙ্গাসা করলেন কত দিতে হবে। আমি তাকে বললাম আমাকেও একজন দিয়েছেন তাই কোন টাকা লাগবেনা। যদি কেউ আপনার কাছে আসে তবেও আপনি সাহাজ্য করবেন।
ঘটনা ৭:- সময় ২০১৮ দুবাই, আমরা যেই সপিং মলে কেনাকাটা করি সেখানে একটা পপকনে`র দোকানে সব সময় আমার মেয়ের জন্য ১ দিরহামের ছোট প্যাকেট পপক`ন কিনি। নেপালী দোকান দারকে হাই, হ্যালো দেওয়া হয় যখন মলে যাই। একদিন ভাঙতি ১ দিরহাম নাই। মেয়েকে বললাম বাবা ভাংতি নাই পরে কিনবো। মেয়ে মন খারাপ করলো। আমরা যখন গাড়ীতে উঠছি তখন দেখি ঐ দোকানী এক পেকেট পপক`ন নিয়ে এসেছে। নেপালী তাই বুঝতে পেরেছে আমার কাছে ভাঙতি ছিলোনা, মেয়ের মন খারাপ দেখে দোকানী গাড়ীর পাকিং পযন্ত এসেছে পপক`ন নিয়ে। উনি ঐ পপক`নের টাকা গ্রহন করেনাই। তিনি দোকান খালি রেখে পাকি`ং পযন্ত এসেছিলো কারন তার প্রতি দেখানো সুভেচ্ছাটুকু। ১ দিরহামের পপক`ন কিন্তু ভালোবাসা ছিলো অনেক যেটা টাকা দিয়ে কেনা যায়না।
এই ঘটনা গুলি মানুষের কাছে পাওয়া অনেক বড় উপকার যেটা বিপদের সময়ে পেয়েছিলাম। তাই আমি মনে করি এখনো অনেক মানুষ আছে দেশে যারা বিপদে সাহাজ্যর হাত বাড়িয়ে দেয়। আরো ছোট খাটো সাহাজ্য অপরিচিত, পরিচিত মানুষের কাছে পেয়েছি চলার পথে। তাই আমি বিশ্বাস করি যদি আমরা আমাদের পাশের মানুষটির সমস্যায় সাহাজ্য করি তবে সেটা হয়তো অন্য কোন সময় কোন না কোন ভাবে ফিরে আসে।
আসুন আমরা সবাই আমাদের পাশের মানুষের জন্য সাহাজ্যের হাতটি বাড়িয়ে দেই, যখন দরকার হবে তখন আমরাও কারুর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি পাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১