somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের চারপাশের ভালো মানুষগুলির গল্প। Whats goes around come around.

২৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটা কথা আমরা সব সময়ই শুনি যে দেশের মানুষ খুবই খারাপ। মানুষের খারাপ কাজের কাহিনি গুলি সোসাল মিডিয়ায় বেশি দেখি।আমরা সবাই হতাশ হই যে দেশের কিছুই হবেনা।
কিন্তু আমি যখন খবই বড় বিপদে পড়েছিলাম তখন আমি আমার চারপাশে অনেক মানুষকে পেয়েছি যারা সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। আত্নীয়, বন্ধু এবং কি অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে অনেক সাহাজ্য পেয়েছিলাম সেই ঘটনায়। তাদের পরে আর ব্যক্তিগত ভাবে কৃতঙ্গতা স্বীকার করা হয়ে উঠেনি। সেই সব ঘটনায় বুঝেছি মানুষ এখনো মানুষের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানুষকে সাহাজ্য করতে চেস্টা করি। আমি বিশ্বাস করি আপনি ভালো ব্যবহার করলে মানুষ আপনার সাথেও ভালো ব্যবহার করবে, বিপদে সাহাজ্য করবে।

বিপদে যেহেতু বন্ধুর পরিচয় পাওয়া যায় তাই আমার জীবনের বিপদের সময়ে মানুষের সাহাজ্য পেয়েছি সেটাই সেয়ার করবো আজ।

আপনারাও আপনার দেখা ভালো মানুষের কথা সেয়ার করুন।

ঘটনা ১:- সময় ২০১৩ দীঘ জীবনে এই প্রথম আসল বিপদের মুখমুখি হয়েছিলাম। আমার পরিবারের এক সদস্য হাসপাতালে দেশে যেতে হবে, অফিসে বলাই ছিলো, ছুটি নিলাম, ২ জন বস/কলিজ ডেকে অবস্থা জিঙ্গাসা করলো এবং টাকা পয়সা লাগবে কিনা সেটাও জিঙ্গাসা করলো। বললো যদি দেশে দরকার হয় তবে জানাতে তারা ব্যবস্থা করবে।

ঘটনা ২:- বিকেলে ফ্লাইট, এক সহ বন্ধু/সহকমীকে ওহিদ ভাইকে ফোন করে জানালাম রাতে বাড়ি যাচ্ছি। জিঙ্গাসা করলাম টাকা আছে কিনা? বল্লো আমি আসতেছি দেখা করতে। তিনি ১ লক্ষ টাকা এটিএম থেকে তুলে নিয়ে হাতে দিলেন বললো দেশে গিয়ে জানাতে আরো ব্যবস্থা করবে প্রয়োজন হলে। আমাকে বললেই হতো যে ভাই হাতে টাকা নাই। তা না বলে নিজেই তুলে এনে হাতে দিয়ে গেলো।

ঘটনা ৩:- দেশে স্কয়ার হাসপাতালে ৬ দিনের যুদ্ধের সময় । বন্ধু দেখা করতে এসে ২টা এটিএম কাড দিলো বললো এতে ১ লক্ষ টাকা আছে ব্যবহার করতে পারবো। বাড়ীতে আরো ১ লক্ষ ক্যাস আছে লাগলে দিয়ে যাবে।



ঘটনা ৪:- হাসপাতালে সারা দিন থাকতাম এনআইসিউর সামনে। একদিন বন্ধুকে রক্ত লাগবে বলে ফোনে কথা বলার পরে পাশের লোকটি বললো তার স্ত্রার জন্য রক্ত ব্যবস্থা করা আছে সেটা সম্ভবত লাগবেনা। তিনি আমাকে সাথে নিয়ে নাস`কে বলেদিলেন ডাক্তারের কাছে জিঙ্গাসা করে যদি সেটা না আমাকে দিয়ে দিতে। উনিও বক্ষব্যাধীর ডাক্তার, তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন সন্তান ডেলিভারির জন্য। তার সাথে হাসপাতালের বেঞ্চেই পরিচয়।

ঘটনা ৫:- আরেক বন্ধুকে ফোনে বলছি দোস্ত রক্ত লাগবে, ফোনেই বন্ধু তার পাসের বন্ধুকে বললো তোর রক্তের গ্রুপ কি ও+ ? বললো বাইকে উঠ বন্ধুর মেয়ের জন্য রক্ত লাগবে। ৪০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলো তারা।

ঘটনা ৫:- আরেক আত্নীয় স্কয়ারের একাউন্টে ১ লক্ষ টাকা জমা করেছে আমার রোগীর জন্য।

ঘটনা ৬:- হাসপাতালে ৪থ` দিন ডাক্তার এটা ওষুধ লিখলো বললো এটা দেশে পাওয়া যাবেনা, কলকাতাতে পাওয়া যাবে। তবে একটা ঠিকানা দিলো ঢাকাতে যে তার কাছে থাকতে পারে কারন তিনি তার বাচ্চার জন্য আনিয়েছিলেন কিছুদিন আগে।

আমি ফোন করে ভদ্রলোককে খুলে বললাম। তিনি বললো আপনার কোথায় লাগবে ঔষুধ গুলি। বললাম আমি আসছি আপনার বাসায়। পৌছে ঔষুধ নিয়ে উনাকে বললাম কত দিতে হবে? উনি অবাক হয়ে বললো, কিছুই দিতে হবেনা। উনার কাছে ৬ বোতল ওষুধ আছে উনি আমাকে ৪ বোতল দিলেন। উনি বললেন উনিও এই ভাবেই পেয়েছেন তাই আমার কাছ থেকেও কোন টাকা নিলো না।

যে কেউই তখন ১ বোতলের জন্য ৫০ হাজার টাকা দিতেও রাজি হোত। নাহলে ঐ ওষুধ কলকাতা থেকে আনাতে হতো। :)

পরের দিন আমিও একটা কল পেলাম আরেক বাবা আমাকে কল করেছে এই ওষুধ তার বাচ্চার দরকার তাই। আমিও নাস`কে তাকে ২ বোতল দিতে বললাম। উনি জিঙ্গাসা করলেন কত দিতে হবে। আমি তাকে বললাম আমাকেও একজন দিয়েছেন তাই কোন টাকা লাগবেনা। যদি কেউ আপনার কাছে আসে তবেও আপনি সাহাজ্য করবেন।

ঘটনা ৭:- সময় ২০১৮ দুবাই, আমরা যেই সপিং মলে কেনাকাটা করি সেখানে একটা পপকনে`র দোকানে সব সময় আমার মেয়ের জন্য ১ দিরহামের ছোট প‌্যাকেট পপক`ন কিনি। নেপালী দোকান দারকে হাই, হ্যালো দেওয়া হয় যখন মলে যাই। একদিন ভাঙতি ১ দিরহাম নাই। মেয়েকে বললাম বাবা ভাংতি নাই পরে কিনবো। মেয়ে মন খারাপ করলো। আমরা যখন গাড়ীতে উঠছি তখন দেখি ঐ দোকানী এক পেকেট পপক`ন নিয়ে এসেছে। নেপালী তাই বুঝতে পেরেছে আমার কাছে ভাঙতি ছিলোনা, মেয়ের মন খারাপ দেখে দোকানী গাড়ীর পাকিং পযন্ত এসেছে পপক`ন নিয়ে। উনি ঐ পপক`নের টাকা গ্রহন করেনাই। তিনি দোকান খালি রেখে পাকি`ং পযন্ত এসেছিলো কারন তার প্রতি দেখানো সুভেচ্ছাটুকু। ১ দিরহামের পপক`ন কিন্তু ভালোবাসা ছিলো অনেক যেটা টাকা দিয়ে কেনা যায়না।





এই ঘটনা গুলি মানুষের কাছে পাওয়া অনেক বড় উপকার যেটা বিপদের সময়ে পেয়েছিলাম। তাই আমি মনে করি এখনো অনেক মানুষ আছে দেশে যারা বিপদে সাহাজ্যর হাত বাড়িয়ে দেয়। আরো ছোট খাটো সাহাজ্য অপরিচিত, পরিচিত মানুষের কাছে পেয়েছি চলার পথে। তাই আমি বিশ্বাস করি যদি আমরা আমাদের পাশের মানুষটির সমস্যায় সাহাজ্য করি তবে সেটা হয়তো অন্য কোন সময় কোন না কোন ভাবে ফিরে আসে।

আসুন আমরা সবাই আমাদের পাশের মানুষের জন্য সাহাজ্যের হাতটি বাড়িয়ে দেই, যখন দরকার হবে তখন আমরাও কারুর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটি পাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×