আলুটিলা গুহা (Alutila Cave) পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলায় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক গুহা । স্থানীয়দের কাছে আলুটিলা গুহা ‘মাতাই হাকড়’ বা ‘দেবতার গুহা’ নামে পরিচিত। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্র সমতল থেকে ৩ হাজার ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট আলুটিলা বা আরবারি পাহাড়ে আলুটিলা গুহা বা রহস্যময় সুড়ঙ্গ অবস্থিত। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত। নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বত শ্রেণী। বিশ্বে যতগুলো প্রাকৃতিক গুহা আছে আলুটিলা সুড়ঙ্গ বা গুহা তার মধ্যে অন্যতম। এ গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল।
আলুটিলা গুহার দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। গুহার ভেতরে সব সময় অন্ধকার থাকে এজন্য গুহায় প্রবেশ করতে হলে মশালের প্রয়োজন হয়। চাইলে মশালের বিকল্প হিসাবে মোবাইল টর্চ বা চার্জ লাইট নিয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া গুহার অভ্যন্তরের পাথর গুলো বেশ পিচ্ছিল তাই ভালো গ্রিপের জুতা পড়ে যাওয়া উচিত। আলুটিলা গুহায় প্রবেশের আগে মূল গেটের কাছ থেকে ১০ টাকা দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। গুহার এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হতে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে।
▪ কিভাবে যাবেন
আলুটিলা গুহা দেখতে যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। তারপর খাগড়াছড়ি থেকে স্থানীয় পরিবহণে আলুটিলা গুহায় যেতে হবে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে মাটি রাঙ্গা উপজেলায় আলুটিলা গুহা অবস্থিত।
▪ ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি
ঢাকা হতে শান্তি, হানিফ, এস আলম, শ্যামলী, ইকোনো এবং ঈগল পরিবহনের এসি/নন-এসি বাসে চড়ে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়ার পরিমান নন এসি ৫২০ টাকা এবং এসি ৮৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
▪ চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি
চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে বি আর টি সি ও শান্তি পরিবহণের বাস খাগড়াছড়ি ছেড়ে যায়। সকাল ৭টা থেকে শান্তি পরিবহনের বাস ১-২ ঘন্ট পর পর ছেড়ে যায়। এছাড়া বেশ কিছু লোকাল বাসও খাগড়াছড়ি যায়। নন এসি এইসব বাসের ভাড়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। চট্টগ্রাম থেকে যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।
▪ খাগড়াছড়ি থেকে আলুটিলা গুহা
খাগড়াছড়ি শহর থেকে চান্দের গাড়ি, সিএনজি, মোটরবাইক অথবা লোকাল বাস পাওয়া যায়। আপনারা একসাথে কতজন যাবেন সেই অনুযায়ী সুবিধামত পরিবহণ ব্যবস্থা ঠিক করে নিতে হবে। গাড়ি ঠিক করার সময় কোথায় কোথায় ঘুরবেন তা বলে নিবেন। সব গুলো জায়গা ঘুরতে সাধারণত চান্দের গাড়ি (১০-১৫ জনের জন্যে) রিসার্ভ করতে লাগবে ২০০০-৩০০০ টাকা, সিএনজি রিসার্ভ করতে লাগবে ৮০০-১০০০ টাকা। এই জায়গা গুলো ঘুরে দেখতে ৪-৫ ঘন্টা লাগবে। আর অবশ্যই ভাড়ার জন্যে দরদাম করে নিবেন।
▪ কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়ি (Khagrachari) শহরে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম দেখে দরদাম করে আপনার পছন্দমত হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। হোটেলে ভেদে এক রাত অবস্থানের জন্য আপনাকে ৪০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে। খাগড়াছড়ি শহরে ভালো মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে রয়েছে –
• পর্যটন মোটেল : শহরের চেঙ্গী নদী পাড়ে অবস্থিত এই মোটেলের দুই বেডের এসি রুম ভাড়া ২১০০ টাকা এবং নন এসি রুম ভাড়া ১৩০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
• হোটেল গাইরিং : খাগড়াছড়ি শহরে অবস্থিত এসি, নন এসি, ভিআইপি এসি ও গ্রুপ রুমের সুবিধা সহ শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০৩৭১-৬১০৪১, ০১৮১৫-১৬৩১৭৩
• অরণ্য বিলাস : শহরের নারিকেল বাগান অবস্থিত এই হোটেলে টুইন বেড এসি ২৫০০ টাকা, কাপল এসি ২০০০ টাকা, সিঙ্গেল বেড এসি ১৫০০ টাকা, টুইন নন এসি ২০০০ টাকা এবং কাপল নন এসি ১৫০০ টাকা ভাড়া । যোগাযোগঃ ০১৮৩৮-৪৯৭২৫৭
▪ সতর্কতা ও টিপস
গুহা ও আশেপাশের পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
গুহার ভিতর বেশ পিচ্ছিল, তাই ভাল গ্রিপের জুতা পড়া উচিত এবং সাবধানে হাটা উচিৎ।
গুহার ভিতর উচ্চস্বরে কথা ও উল্লাস করা থেকে বিরত থাকুন।
মশাল নিয়ে গেলে তা গুহার ভিতর না ফেলে বাইরে নিয়ে এসে নির্দিষ্ট স্থান ফেলুন।
চিপস, পানীয় ও খাবারের প্যাকেট গুহায় না পেলে নিদিষ্টস্থানে ফেলুন ।
যাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা আছে তাদের গুহার ভিতরে প্রবেশ না করায় উত্তম ।
গুহার মধ্যভাগে বাতাস চলাচলের অপ্রতুলতার কারনে অক্সিজেন ঘাটতি থাকে।
ওয়াচ টাওয়ার থেকে মনোরম র্দৃশ্য । এখান থেকে খাগড়াছড়ি শহরের বেশ কিছুটা অংশ দেখা যায়। অবলোকন করা যায় আকাশ-পাহাড় আর মেঘের মিতালীর মায়াবী এক আবহ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, খাগড়াছড়িতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাদ্যের অভাব প্রচণ্ডভাবে দেখা দিলে এলাকার মানুষজন খাদ্যের সন্ধানে এই পর্বত থেকে বুনোআলু সংগ্রহ করে তা খেয়ে বেঁচে ছিল। সেই থেকে পর্বতটির নাম হয়ে যায় আলুটিলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৬