
সন্ধ্যার সময় চেম্বারে এসেই নাবিলা রিসিপসনিস্টকে ফোন করে ওর জন্য অপেক্ষায় থাকা রুগীদের (পেশেন্ট) পাঠাতে বললো। একটু পরেই অল্পবয়সী শাড়ি পড়া একটা মেয়ে (পেশেন্ট) ফাইল হাতে নিয়ে ওর চেম্বার এসে ঢুকলে, মেয়েটার হাত থেকে সেই ফাইলটা নিয়ে প্রাথমিক তথ্যগুলি দ্রুতই দেখে নিল নাবিলা। ফাইলটা একদম নতুন, তার মানে মেয়েটা আজকেই প্রথম এসেছে।
*নাম - মেহের আফরোজ. ডাক নাম - লাবনী।
*বয়স - ২২ বছর।
*বৈবাহিক অবস্থা - বিবাহিতা। বিয়ে হয়েছে গতবছর। এখনও কোন সন্তান হয়নি।
*পেশা - ছাত্রী, স্নাতক পর্যায়ে দ্বিতীয় বর্ষ, লালমাটিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
*বর্তমান ঠিকানা - খিলক্ষেত, হ্যাজবেন্ডের সাথে শ্বশুরবাড়ীতে থাকে।
*স্বামী - মোঃ মাহবুবুর রহমান। ডাক নাম - লাবীব। স্বামীর পেশা - চাকুরী, ব্যাংকে।
*অন্যান্য - এক ভাই এক বোন। বাবা মারা গেছেন, মা গৃহিণী।
*সমস্যা – ফাঁকা। তার মানে পেশেন্ট নিজের মুখেই সমস্যার কথা বলতে চাচ্ছে।
লাবনী সামনে চেয়ারে বসার পর, নাবিলা ওকে এককাপ চা খেতে দিল। প্রতিটা মানুষের চা খাবার ভঙ্গি একেক রকম। নাবিলা দেখতে চাচ্ছে লাবনী কিভাবে চা খায়? ঘন ঘন চুমুকে বেশ দ্রুতই চা শেষ করে ফেলল লাবনী, ওর চা খাবার ধরন দেখে নাবিলার মনে হলো মেয়েটা বেশ অস্থির আর চঞ্চল স্বভাবের এবং কোন কারনে কিছুটা চিন্তিত। মানুষের মন খুবই বিচিত্র, আর তারচেয়েও বিচিত্র সব সমস্যা এরা নিজেরাই সৃষ্টি করে বেড়ায়। নাবিলা লাবনীকে নিয়ে নরম একটা সোফায় এনে বসালো আর বড় লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে হাল্কা আলোর (পাওয়ারের) একটা লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে একটু দূরে যেয়ে বসল। লজ্জা, জড়তা এইসব সমস্যার কারনে অনেক সময় রুগীরা (পেশেন্ট) ওর মুখোমুখি বসে ঠিকমতো কথা বলতে পারে না, তাই ও এই ব্যবস্থা করেছে।
-লাবনী, তুমি কি আমার কাছে স্বেচ্ছায় এসেছ? না কেউ তোমাকে আমার কাছে আসতে বলেছে? (সাজেস্ট করেছে)?
-আপনার কথা আমার এক সিনিয়র আপুর কাছে শুনেছি। আমি নিজেই আপনার কাছে এসেছি, আমি যে আপনার কাছে এসেছি এটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না।
-তোমার কেন মনে হলো আমার কাছে তোমাকে আসতেই হবে?
-আমি আসলে আত্মপরিচয় সঙ্কটে (আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে) ভুগছি। সমস্যাটা এতই জটিল যে আমি একা একা এর সমাধান করতে পারছি না।
-তোমার সমস্যা যত জটিলই হোক সেটার গ্রহনযোগ্য সমাধান দেবার জন্য আমি চেষ্টা করব। কিন্তু সেজন্য তোমার পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি তোমার চিকিৎসার প্রয়োজনে ঠিক এখন থেকে আমাদের মধ্যে সমস্ত কথাবার্তা এবং সমস্যার বিবরণ (রের্কড) লিপিবদ্ধ করে রাখবো। তবে সেগুলি আমি ছাড়া আর কেউ কখনই শুনবে না। আচ্ছা, তোমার এই সমস্যাটা কতদিন ধরে হচ্ছে?
-প্রায় সাতমাস। আমার বিয়ের পর থেকে।
-তোমার কি কোন শারীরিক সমস্যা আছে? যেমন ধর, হ্যাজবেন্ডের সাথে শারীরিক সর্ম্পক (ফিজিক্যাল রিলেশন) করতে গেল প্রচন্ড ব্যথা পাও। অথবা কোন মানসিক সমস্যা যে কারনে ছেলেদের তুমি ঠিক অপছন্দ করো বা এদের এড়িয়ে চলো।
-না। আমার স্বামীর (হ্যাজবেন্ডের) সাথে শারীরিক সর্ম্পকের (ফিজিক্যাল রিলেশনের) সময় আমার এই ধরনের কোন সমস্যা হয় না। তবে আমার স্বামী (হ্যাজবেন্ড) ছাড়া আমার আর কোন ছেলের সাথে কখনও কোন সর্ম্পক হয়নি।
-তোমার স্বামীর (হ্যাজবেন্ডের) সাথে ঝগড়া, গন্ডগোল কিংবা মারামারি এই ধরনের কোন কিছু কি হয়? যৌতুক কিংবা হঠাৎ কোন কারনে টাকাপয়সা চাচ্ছে তোমার বাসা থেকে?
নাবিলার কথা শুনে লাবনী প্রায় সাথে সাথেই চমকে উঠল।
-ছি ছি ম্যাডাম এইসব কি বলছেন আপনি? টাকাপয়সা কিংবা যৌতুক চাইবার তো প্রশ্নই উঠে না। লাবীব এটা শুনলে ভীষন লজ্জা পাবে। ও তো আমাকে অনেক আদর করে। আমাকে খুব ভালোবাসে।
কথাগুলি শেষ করার সাথে সাথেই লাবনী যেভাবে লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠল সেটা দেখে নাবিলা অবাক হয়ে গেল। এইরকম অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ কেউ কৃত্রিমভাবে করতে পারবে না।
-তোমার স্বামীর (হ্যাজবেন্ডের) সর্ম্পকে আমি তোমার কাছ থেকে সত্যকথা (অনেস্ট অপনিয়ন) শুনতে চাচ্ছি। একদম সত্যকথা বলবে। ছেলে হিসেবে তোমার স্বামী (হ্যাজবেন্ড) কেমন?
-ও খুব ভালো ছেলে। আমাকে খুব আদর (কেয়ার) করে। আমার খুঁটিনাটি বিষয় সব ওর মুখস্ত। ধরতে গেলে মুখ ফুটে ওর কাছে আমার প্রায় কিছুই চাইতে হয় না। চাইবার আগেই ও সেইগুলি এনে হাজির করে। অফিস থেকে ফিরে বাসায় এসেই সারাক্ষণ আমার কাছে ঘুর ঘুর করে। বাসায় যে আমার শ্বশুর শাশুড়ী ননদ আছে সেটাও বুঝতে চায় না। যা শরম লাগে।
-আচ্ছা লাবীবের কি বিয়ের আগে অন্যকোন মেয়ের সাথে সর্ম্পক ছিল? কিংবা তোমার সাথে বিয়ের পর আবারও সেই মেয়ের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে?
-না ম্যাডাম। লাবীব আমাকে পছন্দ করেই বিয়ে করেছে। ও আমাকে অনেকবার প্রেমের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে (এ্যাফিয়ারের জন্য প্রপোজ করেছে)। আমি কিছুতেই সেই প্রস্তাবেই রাজী হচ্ছি না দেখে শেষে বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে অনেক ঝামেলা সামলিয়ে আমাকে বিয়েই করে ফেলেছে। আমি ছাড়া আর কোন মেয়েকেই পছন্দ করেনি ও আগে। এটা আমি নিশ্চিত।
কথাগুলি শেষ করার পর লাবনী কেমন যেন নিজের মধ্যে হারিয়ে গেল। অন্যমনস্কভাবে হাতের চূড়িগুলি নড়াচড়া করছে। নাবিলার মনে হলো মেয়েটা কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু কোন কারনে মনের ভিতরে বড় কোন বাধার দেয়াল অতিক্রম করতে পারছে না।
বেশ কিছুক্ষন সময় পরে লাবনী হুট করে বলে উঠল-
-ভালোবাসা একসাথে দুইপাত্রে রাখা যায় না সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। কিন্তু আমি কোনভাবেই যে একপাত্রে আমার ভালোবাসা কিছুতেই ধরে রাখতে পারছি না। এখন আমি কি করবো? আপনিই বলুন?
নাবিলা মনোযোগ দিয়ে অপেক্ষা করছিল লাবনীর আবার কথা বলা শুরু করা জন্য। প্রশ্নটা শুনে নাবিলা সামনে বসা এই তন্বী রূপসী মেয়েটার দিকে এবার ভালো করে তাকালো। বড় আশা নিয়ে মেয়েটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা জড়তা কাটিয়ে আবার যেয়ে কথা বলতে শুরু করেছে সেটা খুব ভালো লক্ষন।
-তোমার ভালোবাসা ঠিক কোন পাত্রে রাখাটা তোমার জন্য উপযুক্ত হবে, কোন পাত্রে হবে না, সেটা কি তুমি জান?
-জানি না ম্যাডাম। আর ঠিক সেজন্যই আমি আপনার কাছে এসেছি।
কথাটা বলার পর লাবনী প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। নাবিলার দিকে কেন যেন তাকাতেই সাহস পাচ্ছে না।
-লাবনী তোমাকে এখন অনেক উত্তেজিত আর স্নায়বিক চাপের মধ্যে রয়েছ (টেন্সড) মনে হচ্ছে। তোমার কাহিনী শুনার আগে তোমার নার্ভগুলিকে প্রথমে রিলাক্স করে দেয়া দরকার। তুমি আগামী পাঁচমিনিট তোমার ফেলে আসা শৈশবের কোন মধুর চমৎকার স্মৃতির কথা মনে করা শুরু করো। মন এমনিতেই শান্ত হয়ে আসবে। (রিলাক্সড হয়ে) তোমার মন শান্ত আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পরেই আমি তোমার সাথে আবার কথা বলা শুরু করব!
নাবিলার কথাগুলি শুনার পর লাবনী যেন বিশাল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তীব্র অস্বস্তির নিঃশ্বাসটা বড় হয়ে বের হয়ে যেতেই বুক থেকে যেন সেই পাষান পাথরটাও নেমে গেল। হাজার চেষ্টা করেও এখন ও আর কোন কথা বলতে পারতো না। চোখ বন্ধ করে লাবনী নাবিলার কথামতো ওর ছোটবেলায় ওর মা’র সাথে মেলায় যাবার একটা চমৎকার স্মৃতি মনে করতে লাগলো।
প্রায় পাঁচমিনিট পরে লাবনী আবার মৃদুস্বরে কথা বলা শুরু করল। কিন্তু লাবনীর মুখ থেকে এবার যা শুনল নাবিলা, সেটা একদমই অপ্রত্যাশিত ছিল............
এক
আমি মেহের আফরোজ লাবনী। এখন লালমাটিয়া কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করছি। আমি নিজে কিছুটা চুপচাপ একা টাইপের মেয়ে। ক্লাসে অনেক মেয়ের সাথেই বন্ধুত্ব হলেও কিন্তু কেন যেন কারও সাথেই খুব বেশী আপন হতে (ক্লোজ হতে) পারলাম না।
একদিন দেরি করে ক্লাসে যেয়ে দেখি সামনের দিকে কোন সিট নেই। বাধ্য হয়েই একদম পিছনের সিটে যেয়ে বসতে হলো। বসার পর দেখি এখানে অপরিচিত একটা মেয়েই বসে আছে, সেখানেই ওর সাথে পরিচয় হলো। ওর নাম মীরা, এরপর থেকে আমি আর মীরা একসাথেই বসতাম। যে আগে যেতাম ক্লাসে, অপরজনের জন্য একটা জায়গা রেখে দিতাম। প্রথমবছরটা দেখতে দেখতেই হুট করে কেটে গেল।
ওর বাসা কলেজের খুব কাছেই। প্রায় সময়ই ক্লাস না থাকলে আমরা দুইজন ওর বাসায় যেয়ে আড্ডা দিতাম। খুব দ্রুতই ও আমার জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হয়ে উঠলো। ও খুবই ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মেয়ে। আমি ছাড়া আর মেয়ের সাথে ও প্রায় কথাই বলতো না। অনেকটাই আমার মতন।
আমরা দুইজনের মধ্যে সব কথা, গল্প আর অনুভূতিগুলি ভাগাভাগি করে নিতাম (শেয়ার করতাম)। যতরকমের দুষ্টামী আছে একসাথেই করতাম। একজনের কাপড় নিয়ে আরেকজন পড়তাম।
একদিন দ্বিতীয়বর্ষে ক্লাস তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলে আমরা দুইজন ওর বাসায় গেলাম। বাসায় ওর আব্বা আম্মা থাকেন না। দুইজনই চাকুরী করেন। ওর রুমে বেশ কিছুক্ষন দুষ্টামি আর আড্ডা দেয়ার পর মীরা গেল গোছল করতে। রুমের ভিতরেই লাগোয়া বাথরুম। আমি বিছানায় বসে আছি। হঠাৎই মীরা বাথরুম থেকে বের হয়ে আসল একটা গোলাপী রংয়ের টাওয়াল পেঁচিয়ে। সারা শরীর ভেজা ভেজা। চুল থেকে হালকা করে জল ঝরছে। আমি এখন ঠিক বলে বুঝাতে পারবো না ঐমুহূর্তে ওকে দেখে আমার প্রথম অনুভূতিটা কেমন হয়েছিল! আমি যেন চন্দ্রাহতের মতো মুগ্ধ হয়ে মীরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। কী যে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে ওকে! সারা শরীর যেন আমার হুট করেই কাঁটা দিয়ে উঠল। ও আমার দিকে চোখ পাঁকিয়ে বললঃ
-কিরে, কী দেখছিস অমন করে?
-তোকে না খুব হট লাগছে!
বজ্জাতটা দুষ্টামী করে টাওয়ালটা খুলে সামনের দিকে মেলে ধরে আমাকে জিজ্ঞেস করলোঃ
-আগে হট লাগলে এখন কেমন লাগছে?
আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। আমার সারাদেহে যেন সহসাই সহস্র বজ্রপাত এসে তীব্র আঘাত করলো। যেন ইলেকট্রনের একটা অমানবিক স্রোত আমার লুকায়িত একসত্ত্বাকে একধাক্কায় জাগ্রত করে তুললো। মীরা কিছুটা এগিয়ে এসে আমার দিকে ওর দুইহাত এগিয়ে দিল আর আমি কম্পিত শরীরে পাগলের মতো যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর ঠোটের সাথে কিভাবে যেন আমার ঠোট স্পর্শ করলো! এরপরে আসলে কী আর কেন ঘটলো সেটা আমি জানি না। আমার যখন লুপ্ত চেতনা পুরোপুরি ফিরে এলো, তখন দেখলাম আমি সর্ম্পুন নগ্ন হয়ে মীরা’কে জড়িয়ে ধরে ওর দুইবুকের মাঝখানে শুয়ে আছি।
সেইদিনের পর থেকে মীরা যেন আমার আত্মার চেয়েও আপন হয়ে উঠল। আমাদের অন্তরঙ্গতা সময়ের সাথে সাথে খুবই গভীর হয়ে উঠল। একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকার কথা চিন্তাই করতে পারি না এখন!
পরেরদিন দুপুরবেলা লাঞ্চ শেষ করে নাবিলা ওর বাসার স্ট্যাডিরুমে লাবনী’র লিপিবদ্ধ করা (রের্কড করা) কাহিনী মনোযোগ দিয়ে বারবার শুনছিল। পরপর তিনবার শুনার পরও বেশ কিছু জায়গায় ওর সন্দেহ কোনভাবেই দূর হলো না। লাবনীর ফাইল খুলে দ্রুত হাতে ওর মনের সেই সন্দেহগুলি নোট করে ফেললো, লাবনীর সাথে ঠিক এই বিষয়গুলি নিয়েই এর পরেরবার বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে হবে। কেন যেন নাবিলা’র মনে হচ্ছে ওকে যা শুনানো হয়েছে সেটাই সবকিছু নয়। এর বাইরেও আরও কিছু শুনতে এখনও বাকি আছে।
দুই
পাঁচদিন পরে নাবিলা আবার লাবনীকে নিয়ে দ্বিতীয় সেশন বসে দ্রুতই কথা শুরু করলঃ
-লাবনী, তোমার সাথে মীরার যে সর্ম্পক, সেটাকে কি বলে তুমি জান?
-জী জানি। এটা নিয়ে আমি কিছুটা পড়াশুনা করেছি, ইন্টারনেটে এই বিষয়ে প্রচুর ডকুমেন্টস আছে। এটাকে বাংলায় বলে সমকামিতা।
-তার মানে দাড়াল যে, তুমি সমকামি। আর তাই যদি হয় তাহলে তোমার আর মীরার মধ্যে কে “বুচ”আর কে “ফেমিনি”এটা আমি জানতে চাই। তুমি নিশ্চয়ই এই দুইটা টার্মের মানে কি জানো?
-কিছুটা জানি। আমাদের মধ্যে আসলে এটা এখনও পুরোপুরি নির্দিষ্ট হয়নি। আমাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সর্ম্পক বেশ কয়েকবার হলেও আমরা নিজেরা এটা এখনও ফিক্সড করতে পারিনি।
-কেন?
-আমরা শারীরিক সর্ম্পকের সময় দুইজনই অপরজনকে অনেক বেশী ভালোবাসি। আমাদের মাঝে শারীরিক সর্ম্পকের চেয়ে মানসিক সর্ম্পকটাই বেশী গভীর।
-কেন? সুযোগের অভাব নাকি চাহিদা কম?
-ঠিক বলতে পারবো না। তবে আমরা সবচেয়ে বেশী পছন্দ করি খুব অন্তরঙ্গ হয়ে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতে। দুইজন খুব কাছাকাছি স্পর্শ করে জড়িয়ে ধরে থাকতে।
-এই অন্তরঙ্গ মুহুর্তে তোমরা কি পুরো নগ্ন হয়ে থাকো?
-সবসময় না। তবে নগ্ন হয়ে থাকতেও বেশ ভালোলাগে।
নাবিলা ভালো করে লাবনী’র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। মেয়েটার মুখের অভিব্যক্তিগুলিতে (ফেস এক্সপ্রেশন) কী ফুটে উঠেছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে ও। খুবই ভালো হতো যদি মীরা’র সাথে এই কথাগুলি কাউন্টার চেক করে নেয়া যেত!
-লাবীবের সাথে শারীরিক সর্ম্পকের ব্যাপারে তোমার অনুভূতি কি রকম? এটা কি স্বেচ্ছায় হয় তোমার সাথে?
-ও খুব আন্তরিকভাবেই আদর করে আমাকে। বিয়ের পর আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ও চাইলে আমি কিভাবে করবো ওর সাথে? ভয়ে বাসর রাত থেকে পর পর চাররাত ওর প্রস্তাবে আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলাম না। সত্যিকথা বলতে কী, ওর সাথে এতটা কিছুতেই সহজ হতে পারছিলাম না আমি। তাই পরেরদিন লাবীব বাইরে নিয়ে গেল ঘুরে বেড়ানোর জন্য। যেখানে যেতে চাইলাম সেখানেই নিয়ে গেল, সারাদিন ইচ্ছেমতো মজা করে ডেটিং করলাম দুইজন। রাতে খুব দামী একটা রেস্টুরেন্টে ডিনার করার পরে, বাসায় ফিরে রাতের বেলা যখন বিছানায় ও আমার খুব কাছাকাছি হলো, জড়িয়ে ধরল আমাকে, কেন যেন আমি আর ওকে সেদিন না করতে পারলাম না। ওকে আর ঠকাতে ইচ্ছেও করলো না। এত্ত ভালোবাসে আমাকে, কিভাবে এরপর না করি বলুন? সেইরাতে ও আমাকে অনেক অনেক আদর করেছিল। ওকে নিয়ে আমার সব ভয় একরাতেই কেটে গিয়েছিল। এরপর থেকে ও চাইলে আমি আর না করি না। আমিও চাই ও আমাকে আদর করুক।
-লাবনী, মনে হচ্ছে প্রেম ভালোবাসা এইসব টার্ম নিয়ে তোমার ধারণা মোটেও পরিষ্কার নয়। অবশ্য তোমার বয়সটাও খুবই কম এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকার জন্য। নিজের যৌন চাহিদা (সেক্সুয়ালিটি) সম্পর্কে অন্যকারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটা তোমার মোটেও ঠিক হয় নি।
-কেন এই কথা বলছেন ম্যাডাম?
-দেখ লাবনী, বাইবেলে একটা লাইন আছে; "You can’t be a Christian and be a Gay. The Bible says you must be either hot or cold, but not lukewarm.” তুমি একইসাথে একদম বিপরীতধর্মী দুইটা সর্ম্পক (রিলেশন) বেশীদিন কোনভাবেই চালিয়ে যেতে (কন্টিনিউ করতে পারবে) না।
-আমি জানি, আমার এখনই খুব সমস্যা হচ্ছে দুইটা সর্ম্পক একসাথে মানিয়ে নিতে। (সিডিউল মেইন্টেইন করতে)।
-লাবীব কিংবা মীরা, এদের কেউ কী তোমার এই দ্বৈত-সর্ম্পকের কথা জানে?
-মীরা জানে, ওকে বিয়ের পরই জানিয়েছি। লাবীব জানে না। ওকে বলতেই সাহস পাচ্ছি না। ওকে কিভাবে যে বলব আমি?
-মীরা তোমার বিয়ের কথা জানে? তোমার বিয়ের সময় ও কোন বাধা দেয় নি? আপত্তি তুলে নি?
-লাবীবের পরিবার খুব বনেদি। ছেলে হিসেবেও খুব আকর্ষনীয়। বাসার সবাই আমাকে এই বিয়ের জন্য এতই চাপ দিয়েছিল, ভয়ে আমি মীরা’কে জানাই নি। তাছাড়া কেন যেন ঐ সময়ে ও ঢাকায় ছিল না। জানলে ও অবশ্যই মহা ঝামেলা করতো।
-মীরা জানার পর কী ধরণের প্রতিকৃয়া দেখিয়েছিল?
-অনেক কান্নাকাটি করেছে। আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেকবার বুঝানোর পর যখন আমি ওয়াদা করলাম আমি ওর সাথে সর্ম্পক আমি ভেঙ্গে দিবো না, আগের মতোই চলবে তখন কিছুটা শান্ত হয়েছে।
-তোমার বাসায় কেউ কী মীরার সাথে এই সর্ম্পকের কথা জানে?
-না। আমাদের সর্ম্পকগুলি হয় মীরার বাসায়। দিনেরবেলা মীরার বাসা অনেকসময়ই একদম ফাঁকা থাকে।
-মীরা ছাড়া আর অন্যকোন মেয়ের সাথে কী এটা হয়েছে তোমার?
-না। আমার এত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার (অ্যাডভেঞ্চার) করার সাধ নেই। একজনকে নিয়েই যে বিপদে আছি এখন আমি!
-যেহেতু তুমি আর অন্যকোন মেয়ের সাথে এসব করো নি, তাহলে তুমি কিভাবে একশভাগ নিশ্চিত হলে যে তুমি সমকামি?
-আমি মীরা’র জন্য বুকের ভিতর তীব্র আর্কষন অনুভব করি। অথচ আমার দাম্পত্যজীবনে কোন অসুবিধাই নেই। তারপরও কয়েকদিন পর পর মীরা’র সাথে দেখা করতে না পারলে প্রচন্ড অস্থির হয়ে যাই। ওকে জড়িয়ে ধরতে না পারলে, ওর কাছে যেতে না পারলে আমার মন কিছুতেই শান্ত হয় না।
-শুধু এইজন্যই নিজেকে সমকামি বলে দাবী করছ?
-একজন মেয়ে হয়ে কেন আরেকটা মেয়ের প্রতি আমার এত তীব্র আর্কষন থাকবে? এটা মনে হয় আমার শারীরিক সমস্যা। এভাবেই আমাকে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে হবে।
-লাবনী, সমকামিতা ব্যাখ্যা করার জন্য বহুরকম তত্ত্ব এখন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে সমকামিতা কেন হয়, বা তার উৎস কী, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও সার্বজনীন তত্ত্ব কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। তাহলে তুমি কেন আন্দাজে নিজেকে দায়ী করছ?
-মীরা একজন ডাক্তারের সাথে নাকি কথা বলেছিল। উনি বলেছেন এটা নাকি আমাদের দেহের জ্বিনগত সমস্যা।
-একজন ডাক্তার হিসেবে কিভাবে উনি এই কথা বলেছেন আমি জানি না। তবে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের প্রাণপুরুষ সিগমণ্ড ফ্রয়েডও এটিকে মানসিক রোগ হিসেবেই চিহ্নিত করেছিলেন। এটা কোনভাবেই জ্বিনগত সমস্যা নয়। যিনি এটা বলেছেন, আমি নিশ্চিত তিনি রোগীর ভুলরোগ নির্ণয় (ডায়াগনোসিস) করেছেন।
-ডাক্তার সাহেব ভুল বলেছেন তাহলে? এটা কিভাবে সম্ভব?
-অবশ্যই! সমকামিতা সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকেই তৈরী হয়। সমকামিতা বিশেষ একধরনের আবেগ, কৌতূহল। নিষিদ্ধের প্রতি তীব্র আকর্ষন থেকে হুট করেই এটা সৃষ্টি হয়, তবে এটা স্বল্পস্থায়ী যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যায়। এই পৃথিবীতে শত শত এইধরনের মানসিক রুগী তার সমকামিতার সমস্যা ত্যাগ করে সুস্থ জীবনের ফিরে গেছে এবং আর কখনই এটাতে ফিরে আসেনি। সত্যই যদি এটা জ্বিনগত বা জেনেটিক সমস্যা হতো তাহলে কোনদিনই এটা সম্ভব হতো না।
-আপনার কথা আমি বুঝতে পারি নি!
-দেখ লাবনী, মানুষের মানসিক সমস্যা বা মনঃবিকৃতি হতেই পারে। তার মানে এই না যে, সেই বিকৃতিকে আমরা হ্যাঁ বলে দিব, তাকে আরও উৎসাহ দিব যেন সে আর বেশী ভুল পথে যেতে পারে। বরং আমাদের কাজ হবে, সেই বিকৃতি থেকে কিভাবে তাকে সুস্থ করা যায় তার পথ খুঁজে বের করা আর যদি পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব নাও হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যেন আবার একই সমস্যা সৃষ্ট না হয়। যেভাবেই হোক সেটার কাউন্টার এবং কারেকটিভ মেজারস নেয়া। আমরা যদি তা না করি, যদি উল্টা একেই সমর্থন দেয়া শুরু করি, স্বীকৃতি দেই, তাহলে তুমিই বল পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে? আজকে যেমন তোমার দাম্পত্য সর্ম্পক প্রচন্ড হুমকির সম্মুখীন, ঠিক তেমনি বাকি সবার বেলাও একই ঘটনাই যেকোন সময়ই ঘটতে পারে।
লাবনী আর কোন কথা না বলে চুপ করে নাবিলা'র দিকে তাকিয়ে রইল। ওর মাথার মধ্যে এখন একই সাথে অনেক কিছু ঘুরছে। নাবিলার কথাগুলি বুঝার চেস্টা করছে ও। ওর এতদিনের জানা তথ্যগুলির মধ্যে যে অস্পষ্টতা আছে সেটা মেনে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ওর। লাবনীর চেহারাতেই ফুটে উঠল কতটা আভ্যন্তরীণ ঝড়ঝাপটার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ও এখন।
নাবিলা লাবনীর দিকে তাকিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিল। মেয়েটার ভিতরে সুপ্ত মেয়েলীসত্ত্বা কতটুকু জাগ্রত আছে সেটা পরীক্ষা করার সময় চলে এসেছে।
-লাবনী তোমার সাথে লাবীবের বিয়ে হয়েছে প্রায় সাতমাস। তুমি যদি মীরাকেই এতই ভালোবাস তাহলে লাবীবের সাথে কিভাবে এতদিন সংসার করলে? নিশ্চয়ই তোমাদের দাম্পত্য সর্ম্পকের মাঝে বিরাট দুরত্ব তৈরী হয়েছে, ভুল বুঝাবুঝিও বেশী হয়!
-না। তা কেন হবে? ওর সাথে আমার কোন ঝামেলাই নেই। ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।
-তাই! লাবীবকে তুমি ভালোবাস না?
-আমি কি লাবীব’কে কী ভালোবাসি? জানি না। আসলে আমি নিশ্চিত না। তবে ওকে আমি খুব পছন্দ (ফিল) করি।
-লাবীব আর মীরা, এই দুইজনের মধ্যে একজনকে যদি বেছে নিতে হয়, তবে কাকে তুমি বেছে নেবে?
প্রশ্নটা শুনে চমকে উঠল লাবনী। দিশেহারা হয়ে নাবিলার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই ভয়ংকর কঠিন প্রশ্নের যে একদিন ওকে উত্তর দিতে হবে সেটা ও জানতো। কিন্তু এটার উত্তর কী আসলেই ও জানে?
এরপর থেকে পরবর্তি আরও দশমিনিট নাবিলার বাকি প্রশ্নগুলির একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দেয়া শুরু করল লাবনী। লাবনী’র এইধরনের উত্তর দেয়ার ধরন দেখে নাবিলা খুব ভালো করেই বুঝতে পারল লাবনী খুব জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এইক্ষেত্রে লাবনী’র কাউন্সিলিং কিছুটা ধীর গতিতে শুরু করতে হবে যেন লাবনী’র আত্ম-উপলব্ধি (রিয়ালাইজেশন) ওর ভিতর থেকেই সৃষ্টি হয়।
-লাবনী, তোমার চিকিৎসার জন্য লাবীব, মীরা, তোমার নিজের বাসা এবং তোমার শ্বশুরবাড়ির (কন্ট্যাক্ট) ফোন নাম্বার এবং বাসার ঠিকানা (ফুল এ্যাড্রেস) আমার দরকার। এইগুলি দ্রুতই আমার কাছে পাঠিয়ে দেবে। তোমার সাথে লাবীব এবং তোমার সাথে মীরার সাম্প্রতিককালে তোলা (খুব রিছেন্ট) কিছু ছবি দরকার, প্রত্যেক ক্ষেত্রে পাঁচটা করে, মোবাইলে তোলা হলেও চলবে। আমার ইমেইলেই ছবিগুলির সফটকপি পাঠিয়ে দিলেও হবে। এছাড়াও আমার আরও দুইটা জিনিস দরকার। ১) মীরাকে তুমি কেন ভালোবাস, ২) লাবীবের কী কী তোমার ভালো লাগে। প্রত্যেকটা বিষয় আলাদা একটা সাদা কাগজে নিজের হাতে লিখবে। কোন কিছু গোপন কিংবা লুকানো কিংবা মিথ্যা তথ্য দেয়ার চেস্টা করবে না। আমি এই বিষয়ে খুব সিরিয়াস। মনে রাখবে, একমাত্র তুমি নিজেই এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। আমার কাজ হবে অনেকটাই পথ প্রদর্শকের মতো। (তোমাকে গাইড করা)। এক্ষেত্রে তোমার নিজের ইচ্ছা না থাকলে কোন কিছুই সম্ভব না। আমি যা যা চেয়েছি সবকিছু আমার হাতে পাবার পরই তোমার সাথে পরবর্তি সেশনে বসব। তাছাড়া মীরার সাথেও আমাকে কথা বলতে হবে। ও কেন এই সর্ম্পকে জড়িয়ে পরলো সেটাও আমার জানা দরকার।
লাবনী খুব আশাহত হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল। ও তাড়াতাড়ি একটা সুন্দর সমাধান (সলিউশন) চাচ্ছিল, ম্যাডাম কেন যে ইচ্ছে করেই দেরি করাচ্ছে! কিন্তু ওর উপায়ও যে নেই, ওকে এই সমস্যার সমাধান করতেই হবে। এখানে আবার ওকে ফিরে আসতেই হবে!
প্রথম পর্ব এখানেই শেষ
কৃতজ্ঞতাঃ
১. বই – “সমকামিতা বিজ্ঞান এবং ইসলাম”
২. ইন্টারনেটে এই বিষয়ে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যসমূহ
৩. Book – “Hadith Sahih on behaviour of LGBT”
এই ব্যাপারে যারা আরও কিছু বিস্তারিত ভাবে জানতে চানঃ
https://www.focusonthefamily.com/socialissues/citizen-magazine/can-you-love-thy-neighbor-and-defend-marriage/love-thy-neighbor-part-1
https://rosariabutterfield.com/
http://www.oneby1.org/testimony-maria.cfm
https://www.amazon.com/All-Things-New-Lesbians-Lifelong/dp/1935769324
https://www.amazon.com/Free-Indeed-Womans-Victory-Lesbianism/dp/0931593581
না বলা কথা:
আমার আগের গল্পটাতে জনৈক মূর্খ এবং অর্বাচীন ব্লগার প্রশ্ন তুলেছিলেন আমার লেখার যোগ্যতা আর বিষয় নিয়ে। আমার শ্রদ্ধেয় পাঠকরা তাকে খুব ভালো বুঝিয়ে দিয়েছেন আমি কে আর আমি কি ধরনের লেখা লিখি। তারপরও নিজেকে চ্যালেঞ্জ করেই এই গল্পটা লিখতে বসেছিলাম। এটার জন্য আমাকে কি পরিমান স্ট্যাডি করতে হয়েছে সেটা শুধু আমি আর আমার সৃষ্টিকর্তাই জানেন। প্রতিটা গল্পেই আমি আমার সম্মানিত পাঠকদেরকে একটা মেসেজ দিয়ে যাই। আশা করছি এই গল্পের মেসেজটাও সবাই উপলব্ধি করতে পারবেন!
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, সেপ্টেম্বর ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



