somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অগোছালো কথা (১)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা থেকেই ছিলেম প্রচন্ড ডানপিটে। এমন দিন খুব কমই ছিলো যেদিন বকুনি বা মার খাইনি। স্কুল পালানো, ঘুড়ি উড়ানো, ব্যাঙ কিংবা মাছ ধরা ছিলো সবচেয়ে প্রিয় কাজ। খুব মনে পরে সেইদিনটির কথা… একটুকরো প্লাষ্টিকের কাগজে ঝাড়ুর শলাকা বেধে উড়ানোর জন্য সেকি প্রচেষ্টা…। কিছুতেই উড়াতে পারছিলাম না, সুতো বেধে উল্টা হয়ে দৌড় দৌড়… আর ঘুড়ি ঘুরছিলো পাগলা লাটিমের মতো। হঠাৎ করে মাটিতে পরতেই একটুকরো খড় বেধে গেলো শলাকার সাথে। কি এক জাদুবলে ঘুড়ি সোজা উঠে গেলো আকাশে। আমার বিস্ময়, সেই ঘুড়ি আজো মনের কোনে পরশ বুলায়।

স্বাভাবিকের চেয়ে রোগাপটকা ছিলাম দেখতে, ছোট্টখাট্টো। বন্ধুরা কত্ত খেপিয়েছে। অনেকের সাথে কথা বলাও ছেড়ে দিয়েছিলাম খেপানোর জন্য। মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। একবার বর্ষার সন্ধ্যায় আকাশ জুড়ে নামলো গাঢ় কালো মেঘ, আর সেকি বাতাস। সাথে গুড় গুড়, গুড় গুড় শব্দ। মাঝে মাঝে বিজলীর আলোর ঝলকানি মুছে দিচ্ছিলো আধাঁরটুকু। সেই ঝলকানির আলোকে হঠাৎই দেখলাম কি যেন লাফালাফি করছে বাড়ির উঠোনে। ব্যাঙ ভেবে যেই ধরতে গিয়েছি, ওমনি দেখি এতো মাছ। গায়ে চকচকে নীলাভ দ্যূতি ছড়ানো মাছ। আম্মা, মাছ…। সেই প্রথম আমার কৈ মাছ চেনা। সেবার ১৩টা কৈ মাছ ধরেছিলাম উঠোন থেকে।

বৃষ্টির প্রতি একটা ভালোলাগা ছিলো ছোটবেলা থেকেই। বাসায় আব্বা না থাকলে আমার বৃষ্টিতে ভেজা কেউ আটকাতে পারতো না। এমনই এক বৃষ্টির বিকেলেই আব্বা আমাকে রেখে ফিরে গিয়েছিলেন ঢাকাতে। সেই প্রথম স্বাধীনতার স্বাধ… নিজের পরিচিত গন্ডির বাহিরে আসা… সম্পূর্ণ একা। আপনারা যারা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন, তারা নিশ্চই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাবের পাশ দিয়ে শেষ মোড়ের দিকে চলে যাওয়া সোজা রাস্তাটির কথা জানেন। জানি না রাস্তাটি এখন কেমন হয়েছে, কিন্তু গত দু’বছর আগেও যখন শেষ গিয়েছিলাম, দু’ধারে ছিলো নানা জাতের গাছের সমাহার। সেই রাস্তাটিরই মাঝামাঝি এক জায়গায় এসে পিতা-পুত্রের গন্তব্য ছিলো দু’দিকে। রাস্তায় ছিলো একটিই রিকসা। তাতে আব্বাকে ঢাকার বাস কাউন্টারের দিকে পাঠিয়ে, উল্টোদিকে হেটে হেটে ফিরছিলাম হলে। মাঝরাস্তাতেই মুষলধারের বৃষ্টিটুকু ধুয়ে নিয়ে গিয়েছিলো চোখের লোনাজল। পরিবারের প্রতি নাড়ীর টান সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম গভীরভাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর চেয়ে রাতগুলো ছিলো বেশী প্রিয়। সন্ধ্যার পর পরই নদীর ধারের আড্ডা, লেকের পাড়ের গান আজো মনকে উদাসী করে। ভালো ছাত্র বলতে যা বোঝায়, সেরকম ছিলামনা খুব একটা। কিন্তু কেন যেন মনে হলো বদলে দেবো সবকিছু। হয়তো বদলাতে পেরেছিলামও কিছুটা। অনেকটা পরিশ্রম করতে হয়েছিলো সেজন্য। প্রথম বর্ষের রেজাল্ট শেষে শিক্ষকদের নজরে পরা শুরু করেছিলাম। অনেক চড়াই উৎড়াই পার হয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথম কয়েকজনের মাঝে নিজের স্থানটুকুও করে নিতে পেরেছিলাম। খুব অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়েছিলো তখন। মনে হয়েছিলো, আমি পারবোই। অনার্স শেষে একবুক আশাও ছিলো, হয়তো নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই পরবর্তী জীবনের কর্মসংস্থানটুকু হবে। বড় বড় রাঘববোয়ালের খেলায় তা আর সম্ভব হয়নি। পেয়েছিলাম জীবনের সবচেয়ে বড় আশাভঙ্গের বেদনা। সুদীর্ঘ ৭ টি বছরের স্বপ্ন মাত্র কয়েকটি মিনিটেই ভেঙ্গে গিয়েছিলো।

হাসপাতালের মেঝেতে বসে, বারান্দার লাইটের আলোতে লিখেছিলাম মাষ্টারর্স-এর থিসিস পেপার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি – বাবা, হার্টের ব্লকের কারণে তিনটি দিন আই.সি.ইউ-তে, অতঃপর অর্থাভাবে অপারেশন করাতে না পারায় সাধারণ বেডে। বুঝতে পারছিলাম, ছেলের চাকুরী না পাওয়া, ব্যাংক লোন পরিশোধের চাপ, পরিবারের ব্যায়ভার বহনের অসার্মথ্যতাটুকুই উনাকে সেই অবস্থায় পৌছুতে সাহায্য করেছিলো। খুব জেদ ধরে গিয়েছিলো মনে, যেভাবেই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী পেতেই হবে। অনেক সাধনায় পেয়েওছিলাম, নিজের চেনাজানা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সম্পূর্ণ অপরিচিত, অজানা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ উচ্চশিক্ষার্থে দেশের বাহিরে। এই পরবাসে সারাটাদিনের ক্লান্তিকর মুহুর্ত্বগুলো শেষে যখন দেশে ফোন করি, কথা বলি আব্বা-আম্মা, ভাগনির সঙ্গে, মনে হয় এইতো আমার সুখ, এইতো আমার শান্তি। সৃষ্টিকর্তার কাছে লক্ষ-কোটি শুকরিয়া…


সবাই ভালো থাকবেন...



ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট
অন্যান্যঃ ফারুক হাসান-এর ব্লগে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৭
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×