somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার অগোছালো কথা (২)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৮:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মনের অজান্তেই হাতটা চলে গেল হাতের কালো দাগগুলোতে। গত ১৮টা মাস ধরে একটা দু'টো করে এই দাগগুলোর সৃষ্টি। কোনটা কেটে যাওয়ায়, আবার কোনটা হয়েছে পুড়ে যাওয়ায়। বুকের গভীর হতে বেরিয়ে আসে একটা দীর্ঘশ্বাস। কোন সপ্তাহে তিনদিন, আবার কোন সপ্তাহে চারদিন... এই ছিলো কেএফসি-তে কাজের শিডিউল। সাথে ছিলো প্রফেসর-এর ল্যাবে সপ্তাহে কমপক্ষে তিনদিন পার্ট টাইম কাজ করা। আর নিজের পড়াশুনাতো ছিলোই। এভাবেই কেটে গেলো প্রবাসের গত ১৮টা মাস।

দেশে করতাম সরকারী চাকুরী। শিক্ষাছুটি নিয়ে এসেছি। দেশে থাকতে ভাবতাম আহা বিদেশ... কি মজা, কি সুখ। মজা আর সুখটা টের পেয়েছিলাম প্রাইভেট ষ্টুডেন্ট হিসাবে আসার পরে। প্রতিটি সেমিষ্টার শেষে টিউশন ফি-র চিন্তা। ছয়টি মাস খেটে যা আয় হতো, তা টিউশন ফি-র জন্য জমিয়ে রাখতে হতো। যদিও আমার ভাগ্য খুবই ভালো যে পিএইচডি-তে ভর্তি হওয়ার পর গত দুই সেমিষ্টারে একবারও টিউশন ফি দিতে হয়নি। কিন্তু সেমিষ্টার শেষ হলেই চিন্তাটা মাথায় ভর করতো।

গতবছর অক্টোবরের ১৯ তারিখ দেশে গিয়েছিলাম। ঠিক তার আগের দিন বিকালে স্কুল থেকে একটা মেইল এসেছিলো, আমি মনবুকাগাকুশো স্কলারশিপে আবেদন করতে চাই কিনা। দেশে যাওয়ার আগ মুহুর্ত্বের আনন্দ আর উচ্ছাসের মাঝেই রাতে আবেদন পত্রটা পূরণ করেছিলাম। একজন বাংলাদেশী ভাইকে দিয়েছিলাম জমা দেয়ার জন্য। তারপর দেশে থাকতেই শুনলাম প্রাইমারী সিলেকশনের কথা, সব ডকুমেন্ট রেডি করলাম, টেলিফোনে ভাইভা দিলাম।

তারপর যখন আবার ফিরে আসলাম, শুনলাম দুইজন প্রাইমারী সিলেকশন পেয়েছে। এবং দুইজনই বাংলাদেশী। তারপর অপেক্ষার প্রহর। স্কুল থেকে বলেছিলো মার্চের প্রথম সপ্তাহে রেজাল্ট পাওয়া যাবে। দিন দিন চিন্তা বাড়ছিলো। পার্ট টাইমের এই ধ্বকল, সাথে পড়াশুনার চাপ আর সহ্য হচ্ছিলোনা।

আজ দুপুরে স্কুল অফিসে গিয়েছিলাম পার্ট টাইম কাজের রিপোর্ট করতে। মি. সুকিশিমা আমার অফিশিয়াল ডকুমেন্টস দেখাশুনা করেন। উনি কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি মনবুকাগাকুশোর রেজাল্ট জানি কিনা। র্নিলিপ্ট মুখে তার এই প্রশ্নে, মনে আতংকের ছাপ। পর মুহুর্ত্বে একে একে বলে যেতে লাগলেন রেজাল্ট ও পরবর্তী ডকুমেন্ট প্রসেসিং-এর কথা। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না, আমি পেয়েছি।

সন্ধ্যায় স্কুলের কাজ শেষ করে বাসে করে বাসায় ফিরছি, আর মনে মনে ভাবছি সেই দিনগুলোর কথা। যখন সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠেই ক্লাসে যেতাম। ক্লাস শেষে ল্যাবের পার্টটাইম কাজ। বিকালে ল্যাবের কাজ শেষে কেএফসি-র পার্ট টাইম কাজে যাওয়া। রাত ১১ নাগাদ বাসায় ফেরা। তারপর একটু ফ্রেশ হয়ে রাত ২টা পর্যন্ত পড়াশুনা। পরদিন সকাল ৮ টায় আবার ঘুম থেকে উঠা...

মনে পরে যাচ্ছে সে দিনগুলোর কথা, যখন কাজ শেষে বাসায় ফিরে হাতের কাটা বা পোড়া ক্ষততে মলম লাগাতাম। প্রতি রাতে প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুমাতে যেতাম। মনের অজান্তেই হাতটা চলে গেলো হাতের সেই দাগগুলোতে। গত ১৮টা মাসে যে দাগগুলোর সৃষ্টি হয়েছে, হয়তো কেটে গিয়ে অথবা পুড়ে গিয়ে...

প্রবাসের নির্জনতায় এই ব্লগটাতেই আমার সকল আবেগ শেয়ারিং। আজ এই আনন্দের মুহুর্ত্বে আপনাদের সাথে তাই এই কথাগুলো বলা। একান্তই ব্যাক্তিগত কথা, কিন্তু বাস্তবতা। বাস্তবতাই আমাদের কখনো কাঁদায়, আবার কখনো হাসায়...

সৃষ্টিকর্তার কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া...। বাস্তবতার হাসি ফুটুক সবার মুখে। ভালো থাকবেন সবাই...

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৯
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×