‘চলতি বসন্তে আমাদের বন্ধুত্ব দু’জনের
আসছে বসন্তে আমরা দ্বিগুন হবো
অতঃপর আবার’- প্রেমের অনুভূতি সবসময় ইতিবাচক দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এবার তবে গাণিতিক একটা বিষয় বলি। বিয়োগ এবং ভাগ যেহেতু সংখ্যার মান কমায়, তাই আলোচনাটা হোক যোগফল এবং গুনফল নিয়ে।
২+২=৪
২*২=৪
২ এবং ২ কে কিছু না করে পাশাপাশি রেখে দিন। কত হয়? ঠিক ধরেছেন, ২২।
নতুন প্রেম পুরনো স্মৃতিকে সহনীয় করে তোলে। এই যেমন নিত্য আনন্দের হাটে শোক চিহ্ন বেশিদিন থাকে না। প্রেমে পড়াকে যন্ত্রণাদায়ক সময় খরচের একটা উপায় বলা যেতে পারে। জীবনের স্টেশন হয়তো বার বার আসে না তবে প্রেম আসে। সেকারণেই প্রেমিকের প্রতি লয়াল থাকতে হয়। আমি যে ইরতেজাকে প্রেমিকের নজরে দেখি এতে ইরতেজার কোনো দোষ নেই। আবার ইরতেজা সাহেব যে আমাকে ভালোবাসেন না, সেখানে আমারইবা দোষ কোথায় বলুন। ইরতেজা আমায় জোর করেন নি, বরং বলা ভালো তিনি আমায় জয় করে নিয়েছেন। সম্বোধন বদলায় সম্পর্কের তাপমাত্রা অনুযায়ী। আপাতত তাকে আমি ইরতেজা বলেই ডাকি, কেমন? আজকাল আমি চোখ মেলে অন্ধকার খুঁজি অথবা ইরতেজাকে। ভালো না বেসেও ভালোবাসার অভিনয় করে জীবন কাটানো যায়, কিন্তু ভালোবেসে ভালোবাসি না বলে থাকা যায় না!
আমরা সম্ভবত সেটাই ভাবতে চাই যা ভাবতে আমাদের ভাল লাগে। অথবা ভাল লাগে বলেই আনন্দ নিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ভেবে যাই। আমি মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। তবে বিজ্ঞানে আমার অগাধ বিশ্বাস। বিজ্ঞানের বিক্রিয়া টার্মটার থেকে জ্ঞান ধার করে বলি, আমরা জানি অনুপাত ঠিক রেখে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মেশালেই পানি হয়। কিন্তু বিজ্ঞান তার পূর্বশর্তে বলে, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলেই কেবল গবেষণাগারে উক্ত বিক্রিয়াটি কাজ করতে পারে। এবার আসি মূল কথায়। দু'জন মানুষ একে অপরকে ভালোবাসলেই যে বিয়ে হবে এমনটা নাও হতে পারে। আর বিয়ে না হলেই যে একে অপরের শত্রু হয়ে যেতে হবে; বিষয়টা তেমনও নয়। বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বেশ বড় এবং গুরুত্বপূর্ন একটি ফ্যাক্টর। বিয়ের লক্ষ্য নিয়ে প্রেম করা, ব্যাগে টাকা নিয়ে শপিং করতে যাওয়ার মতো। প্রেম এনজয় করতে হলে সেই প্রেমটা হোক প্রেম। বিয়ে করলে সামাজিক স্বীকৃতি মিলে ঠিক আছে, তাই বলে প্রেমের পরিনতি বিয়ে হতেই হবে; কেন? যদিও আমাদের সমাজে বিয়ের জন্য প্রেমের উদাহরণ অসংখ্য। 'বিবাহ না করিয়া ঠকা ভাল, বিবাহ করিয়া ঠকিলেই মুশকিল'- চোখের বালি উপন্যাসটা পড়ে দেখতে পারেন।
প্রেম থেকে সেকে নিতে হয় পুরনো হৃদয়। সম্রাটের মতো উদারতার সাথে সাথে প্রেমে থাকতে হয় আপোষহীন রাজকীয় রুচির পরিচয়। প্রেমে থাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ। যারা শ্রীকান্ত উপন্যাসটা পড়েছেন তারা হয়তো মনে করতে পারবেন উপন্যাসে একটা লাইন আছে এমন, পুরুষরা দুইজন নারীর সামনে স্বেচ্ছায় মাথা নত করেন একজন তার মা, অন্যজন তার ভালোবাসার নারী। প্রতিটি মানুষের হৃদয় স্বতন্ত্র, বিশ্বাস ভিন্ন। তবে নিরাশ্রয় প্রেমের প্রতি আমার রয়েছে প্রবল আপত্তি।
সুমন চট্টোপাধ্যায়ের একটা লেখা আছে এমন, ‘খোদার কসম আমি রবীন্দ্রনাথকে ঈর্ষা করিনা, ঈর্ষা করি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহকে, তার লেখা দুটো চরণের জন্য। চরণ দুটো হল “ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো”’। আমি ঈর্ষা করি আরণ্যক বসুকে, তার লেখা দুটো লাইন দিয়ে আজকের লেখার ইতি টানা যাক-
‘এ জন্ম কেটেই গেলো অসম্ভবের অসঙ্গতে
পরের জন্মে মানুষ হবো
তোমার ভালোবাসা পেলে
মানুষ হবোই- মিলিয়ে নিও!’
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১১