বেগম জিয়ার সাজা হওয়ার পর তারেক রহমানকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হয় এবং তার নেতৃত্বে সবাইকে কাজ করার জন্য বেগম জিয়া অনুরোধ করেন। একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি আরেকজন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে দলের দ্বায়িত্ব দিয়েছেন! বিএনপির জন্য এটি খুবই অস্বস্তিকর সিদ্বান্ত ছিলো। এই সিদ্বান্তের কারনে বহির্বিশ্বে তাদের অবস্থান নেতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। আওমীলীগ তাদের এই ভুল সিদ্ধান্তের পুরোপুরি ফায়দা নিয়েছে। বহির্বিশ্বে তারেক জিয়াকে আরো বেশি নেতিবাচক হিসাবে উপস্থাপন করেছে তারা।
কিছু দেশ ও সংগঠন বিএনপিকে সমর্থন করলেও প্রকাশ্য কিছু জোর দিয়ে বলতে পারছে না, কেননা সব দেশ, সংগঠন আনুষ্ঠানিক ভাবে দুর্নীতির বিপক্ষে থাকে। বিএনপির পক্ষে গিয়ে সরাসরি কিছু বলতে গেলে তাদের কাছে অস্বস্তিকর লাগবে।
তারেক জিয়া দুটি মামলায় আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত এবং তার বিরুদ্ধে আরো অনেকগুলো অভিযোগ আছে। তার তৃণমূল সমর্থকেরা যতই ভাবুক এসব মিথ্যা মামলা, মিথ্যা অভিযোগ, ভুল রায় কিন্তু তাদের মত করে সবাই ভাবে না। তারেক জিয়া ও বিএনপির পক্ষে যদি কোন দেশ, সংগঠন বিবৃতি দিতে চায় তবে তারা কিছুটা হলেও এনালাইসিস করে দেখবে আদালতের রায় ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কতটুকু সত্য। তারা খোঁজ নিলে দেখতে পাবে মামলা,রায়, এবং অভিযোগগুলি ফেলে দেওয়ার মত নয়। এগুলো জানার পর কোন দেশ, সংগঠন বিএনপি, তারেক জিয়ার পক্ষ নিয়ে কোন বিবৃতি দেওয়াও তাদের জন্য যথেষ্ঠ বিব্রতকর।
তারেক জিয়া দশ বছর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সহপরিবারে লন্ডনে যায় এরপর আর ফিরে আসেনি। বিএনপি সবসময়েই বলে এসেছিলো তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনে আছেন। তবে এই বছরের প্রথম দিকে আমরা জানতে পারি তারেক জিয়া লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে। হয়ত কর্মীদের মাঝে মনবল ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের কথা চেপে গিয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েও তারেক জিয়া দলের চেয়ারপারসন এবং দল পরিচালনা করে যাচ্ছে। এগুলি কোন দেশ বা গণতন্ত্রের জন্য ভালো কোন উধারারণ নয়। কোন দেশ এবং সংগঠন এমন দল ও নেতার পক্ষ নিয়ে জোর গলায় কিছু বলার মত বোকামি করার কথা নয়। আমার ধারণা বিএনপি'র আন্তর্জাতিক লবিং গুলি এই কারণেই মুখ থুবড়ে পড়ে।
বিএনপি চাইলেও তারেক জিয়া ও বেগম জিয়ার নেতৃত্ব থেকে সরে আসা তাদের জন্য সহজ হবেনা। কারন বিএপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের পর আর কোন পদেকে দল পরিচালনা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। কেননা এই দুজন ছাড়া আর কেউ দলের নীতিনির্ধারনী ফোরামের সভা ডাকতে পারে না। আর এই সভা না হলে কোন সিদ্ধান্ত অনুমোদন পায় না।
তবে আপাতত মনে হচ্ছে বিএনপির অধিকাংশ নেতাই দলের নেতৃত্বের পরিবর্তন চায়, তারা দলটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করছে। এবং এছাড়া ভিন্ন কোন উত্তম বিকল্প দলটির হাতে নেই। তবে সেটা কিভাবে হবে, কবে হবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। দলের নেতাদের ঘনঘন লন্ডন সফর এই কারণেই বলে মনে হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩