বেশ কয়েকদিন আগে আমার এক বন্ধুর ছোট ভাইয়ের সাথে রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম। ছোট ভাইটি কয়েক মাস আগে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে এবং এলাকার হওয়ার কারণে তার এসএসসি এবং এইচএসসি রেজাল্ট সম্পর্কে আমি জানি।
দুটোতেই সে জিপিএ ৫ পেয়েছিল। হঠাৎ করে সে আমাকে একটা প্রশ্ন করে, আচ্ছা ভাই আমার একটা জিনিস মাথায় ধরে না, এই যে বলে গাড়ির ফিটনেস ব্যাপারটা আসলে কি? গাড়ির আবার ফিটনেস কিসের, গাড়ির কি মানুষের মত শরীর আছে? প্রথম ভাবছিলাম সে আমার সাথে মজা করছে। কিন্তু আমার হাসি দেখে সে আমাকে আবারো একই কথা জিজ্ঞেস করে এবং আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি সে আসলে সিরিয়াসলি আমাকে প্রশ্নটি করছে।
আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম তার এই ধরনের প্রশ্ন দেখে আর ভাবছিলাম আসলে আমাদের জাতির সামনে কি রকম দিন অপেক্ষা করছে। একটা জিপিএ ৫ পাওয়া ছেলে যদি এমন প্রশ্ন করে তাহলে বুঝা যাচ্ছে জাতি কোন দিকে এগুচ্ছে!
২. গার্মেন্টস এক্সসারিজ বিজনেস এর সুবাদে আমাকে বিভিন্ন বায়িং হাউজ ও গার্মেন্টসে প্রতিনিয়ত যেতে হয়। আমার এক পরিচিত ছোট ভাই এক বায়িং অফিসে চাকুরী করে জুনিয়র মার্চেন্ডাইজার হিসাবে। আমি তাকে খুব ভালভাবেই চিনি কিন্তু খুব একটা কথা তার সাথে হয় না। এই ছেলেটির এসএসসি ও এইচএসসি রেজাল্টও মোটামুটি ভালো।
তো একবার আমি সেই অফিসে গেলাম এবং তার ডেস্কের সামনে বসে ফোনে কথা বলছিলাম। সে সময় সেও সম্ভবত কোন ফরেনারের সাথে কথা বলছিল মোবাইলে। একপর্যায়ে কথা বলতে গিয়ে তাকে দেখলাম সে অপরপ্রান্তের কলার কে বলছে “প্লিজ হারি, শিপমেন্ট উইল বি ডিলেট!” আমি খুব অবাক হলাম তার এরকম কনভার্সেশন দেখে। শুধু এটা না সে খুব অস্বাভাবিক অস্বাভাবিক ভুল ইংরেজি শব্দ বলে যাচ্ছিল।
৩। গত কয়েকদিন থেকে দেশের এক ধরনের গুজব চালু হয়েছে। পদ্মা সেতুতে এক লক্ষ মানুষের মাথা লাগবে এবং সে মাথা সংগ্রহ করার জন্য ছেলেধরা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন একটি গুজব কে বিশ্বাস করে অনেক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল বাড্ডায় এক মহিলা তার বাচ্চার স্কুলে ভর্তির খবর নিতে এসে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা গেছে। মহিলাটি নিশ্চয়ই বার বার বলেছিল আমি ছেলেধরা নই আমাকে মাফ করুন, আমি আমার মেয়ের খোঁজ নিতে স্কুলে এসেছি। উপস্থিত যারা তাকে মারধোর করছিল তারা নিশ্চয়ই এটা শুনে ছিল কিন্তু তারা এতে কর্ণপাত করেনি।
মানুষের মধ্যে সঠিক শিক্ষা না থাকলে মানুষ বিবেকহীন হয়ে পড়ে। অতীতের অন্য সময় থেকে এখন মানুষ পড়ালেখার সুযোগ কিছুটা হলেও বেশি পাচ্ছে কিন্তু সুশিক্ষা, প্রাকৃতিক জ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এসব সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পাচ্ছে না।
আমি দেখেছি, বুয়েটে পড়া ছাত্র অমুসলিমের হাতে রান্না করা খাওয়া খেতে চায় না! এক ডাক্তার আল্লাহর নাম নিয়ে খেলে বিষ হজম হয়ে যায় এটা বিশ্বাস করে বসে আছে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমাকে তার মোবাইলে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গিয়েছে সেটা দেখিয়েছিল! কি একটা প্রতিযোগীতায় নাসার আমন্ত্রণে চার শিক্ষার্থী আমেরিকায় যাবে, তাদের সাথে যাবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১৬ কর্মকর্তা। ১৬ জনের ভিসা হয়েছে তারা আমেরিকা গিয়ে বসে আছে প্রতিযোগিদের জন্য, প্রতিযোগীদের এখনো ভিসা হয়নি!
এগুলো কিসের লক্ষণ? এরকম দুই একটি অভিজ্ঞতা কি আপনারা আছে থাকলে আমাকে জানান।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৩৪