১. বেশ কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বাজারে প্রচলিত পাস্তুরিত তরল দুধ পরীক্ষা করে জানিয়েছেন দুধে অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যেগুলো মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তার গবেষণা প্রকাশ হওয়ার পর সরকারের একজন আমলা(প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব) তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। সরকারের আমলারা জনসম্মুখে কাউকে এভাবে হুমকি দিতে পারে কিনা আমার ঠিক জানা নেই। তারপরও উনি যদি হুমকি দিতে চান, উনার আগে উচিত ছিল গবেষণাটি পুনরায় করা এবং ফলাফল আগের গবেষকের বিপরীত হলে সেই গবেষককে চ্যালেঞ্জ করা। কেননা গোখাদ্যে অনেক ধরনের রাসায়নিক আজকাল ব্যবহার হচ্ছে, এতে করে গরুর দুধে এমন এন্টিবায়টিক আসতে পারে। বিস্তারিত স্টাডি না করে, সময় না নিয়ে জনগণের কর্মচারী হয়ে একজন আমলা এভাবে জনসম্মুখে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার মানে কি দাঁড়ায়?
উনি কি ভয় পেয়ে হুমকি দিয়েছেন, নাকি এই গবেষণার ফলে উনার চাকুরী হারানোর সম্ভবনা ছিল? এদেশে এত সহজে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকুরী যায় না, উনার মেজাজ আরেকটু ঠান্ডা রাখা উচিত ছিল।
২. এক সরকারি আমলার জন্য ফেরি অপেক্ষা করতে গিয়ে এক অসুস্থ্য স্কুল ছাত্র এম্বুল্যান্সের ভিতরে মারা গিয়েছে। আইন অনুযায়ী একজন সরকারি আমলার জন্য ফেরি,লঞ্চ, জাহাজ কিংবা ট্রেন অপেক্ষা করবে না তবে সেখানে লাইন থাকলে তাকে আগে যেতে দিতে হবে। উক্ত সরকারি আমলা হয়তো সেই ফেরিটি দাঁড় করাতে বলেছেন, নয়তবা উনি ফেরি দিয়ে পার হবেন এই খবরটি ফেরি কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন।
এখন উৎসাহী ফেরি কর্তৃপক্ষ উনার সম্মানে ফেরিটি দাঁড় করিয়ে রেখেছে যার ফলশ্রুতিতে অসুস্থ্য ছেলেটি মারা পড়ে। এখন সেই আমলার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তদন্তে কি বের হয়ে আসে কে জানে!
৩. আমার এলাকার এক সরকারি আমলাকে চিনি, উনাকে স্যার বলে সম্বোধন না করলে উনি রেগে যেতেন, যাদের উপর রেগে যেতে পারতেন না তাদের দিকে আড়চোখে তাকাতেন। উনি এখন অবসরে আছেন কিন্তু উনার প্রভাব কমেনি। এলাকার স্কুল, কলেজ, মসজিদ,মাদ্রাসা কমিটির সব পদ উনার এবং চট্টগ্রামে একটা বড় হোটেলের চেয়ারম্যান উনি। উনাকে দেখে আমার সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও অধিকারের সীমা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আমাদের এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবামুলক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে উনার সাথে কথা বলার জন্য আমি উনাকে একবার ফোন দিয়েছি, কথার এক পর্যায়ে উনাকে আমি কাকা বলাতে উনি ফোন কেটে দেন।
আমলা’ আরবি শব্দ। এর অর্থ আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন। যে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন করে তাদেরকে আমলা বলে। আর সরকার আমলাদের সেইসব আদেশ দিবেন যাতে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি থাকবে। আমাদের দেশের আমলারা তাদের কাছে যেন সাধারণ মানুষ পৌঁছাতে না পারে তার জন্য একটি অদৃশ্য দেওয়াল উঠিয়ে রাখে। তারা নিজেদেরকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পছন্দ করে।
আধুনিক আমলাতন্ত্রের জনক বলা হয় জার্মানির সমাজবিজ্ঞানী মাক্স ভেবারকে, উনি আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র দেখলে কেঁদে দিতেন আমি নিশ্চিত। আমাদের রাজনীবিদদের অদক্ষতার কারনে আমলারা মাথায় উঠে বসে পড়ে। সরকার যদি আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে এসব আমলারা ক্ষমতার অপব্যবহার, সমাজে নিজেদের ‘ব্রাক্ষ্মণ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। এগুলো আখেরে কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না। এতে জনরোষ সৃষ্টি হয় এবং মানুষ সব দোষ রাজনীতিবিদদের ঘাড়ে ফেলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৪