দেশ স্বাধীন হওয়ার আগের ছাত্ররাজনীতি আর দেশে এখন যে ছাত্র রাজনীতি আছে তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আসলে এখন ছাত্ররাজনীতি সেই অর্থে দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। তবে একান্তই ছাত্র রাজনীতি যদি রাখতে হয় তাহলে সেটির পরিধির ব্যাপকতা অনেক কমিয়ে আনা উচিত হবে। দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি এই সবগুলো মিলিয়ে রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি যারা করবে তারা এগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, সভা, সেমিনার করবে, সেখান থেকে বর্তমান দেশের চলমান সমস্যা গুলোর ভুলগুলো ধরিয়ে দেবে, সঠিক নির্দেশনার প্রস্তাব দেবে। এর বাইরে যারা ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়, সেসব সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা গুলো শুনবে সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করবে। আসলে উপরে যেগুলো বলছি সেগুলো করার জন্যও রাজনীতি করার দরকার নেই। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারন শিক্ষার্থীদের একটি নিজস্ব সংগঠন থাকে, যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু আছে। এমন প্লাটফর্মের ভিতর থেকেও এসব কাজ গুলি খুব সুন্দর ভাবে করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের আগে ছাত্র রাজনীতি যারা করতো তারা আদর্শের জন্য লড়াই করতো এক পক্ষ বলতো “তোমার আমার ঠিকানা মক্কা আর মদিনায়” ছাত্ররা বলতো “তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা”
এক পক্ষ বলতো ঢাকা না পিন্ডি! ছাত্ররা বলতো ঢাকা ঢাকা, একপক্ষ বলতো নারায়ে তাকবীর, ছাত্ররা বলতো জয় বাংলা। এসব আদর্শিক লড়াইয়ে তখনকার ছাত্ররাজনীতি জয়ী হয়েছে, বর্তমানে এরকম আদর্শিক লড়াই হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আন্দোলন সংগ্রাম করার মতো কোনো বড় ধরনের ইস্যু আসার সম্ভাবনা নেই। আসলেও ছাত্রদের সংগঠিত করার জন্য, নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এরকম ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার দরকার নেই। দেশের ক্রান্তিলগ্নে ছাত্ররা যেকোনো একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে ছাত্ররা এক হয়ে যেতে পারবে এবং এরকম এক হওয়ার উদাহরণ অনেক আছে।
এই বিংশ শতাব্দীতে এসে একটি স্বাধীন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করার কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে? অর্থসম্পদের মালিক হওয়া এবং ক্ষমতা প্রদর্শন করা ছাড়া আপাতত ছাত্ররাজনীতির কোন মৌলিক উদ্দেশ্য চোখে পড়ে না। স্বাধীনতার পর থেকে ছাত্র রাজনীতি যারা করেছে এরা কি কখনো দেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, দুর্নীতি এগুলি নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছে? কোন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে? সমাজের অসঙ্গতি গুলো দূর করার জন্য যারা দায়িত্বে আছে তাদের তথ্য দিয়ে সভা সেমিনার করে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে? এখন উপনিবেশ নেই, ইয়াহিয়া, আইয়ুব খানের ভুল গুলি যেভাবে চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে এখন কি যারা দেশ চালাচ্ছে তাদের ভুলগুলি এসব ছাত্র রাজনীতিবিদগণ ধরিয়ে দেয়?
ছাত্ররাজনীতি যারা করে এরা নিজেরা পড়াশোনা করে না, অন্যদের পড়াশুনার ক্ষতি করে। নিজের সমর্থিত দলের হুকুম মেনে চলে। এই মেনে চলতে গিয়ে নিজেরা বিভিন্ন অপরাধের সাথে নিজেদের যুক্ত করে ফেলে। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে যখন এরা মূল ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে তখন এদের জ্ঞানের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা জ্ঞানের বিশাল পার্থক্য থাকে। জাতি এদের কাছ থেকে যে পরিমাণ আউটপুট পাওয়ার কথা তার সামান্য পরিমাণ পায়না। শুধু শুধু এদের পিছনে দেশের অর্থ খরচ করে টেক্সের টাকার অপচয় ঘটানো হচ্ছে। শেখ হাসিনার হাতে এখনই উপযুক্ত সময় ছাত্ররাজনীতির দাঁত ভেঙ্গে দেওয়ার। ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারুক অন্তত নখদন্তহীন ছাত্র রাজনীতি চালু করে দিতে পারে। সেটাও জাতির জন্য শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে অনেক বড় উপহার হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৪