শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাকশাল করেছিলো তখন তিনি বাকশালের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষের সাথে সেভাবে কথা বলেনি। তিনি কেনো বাকশাল করতে চাচ্ছেন, বাকশাল করলে কি উপকার হবে, কিভাবে বাকশাল গঠিত হবে এগুলি নিয়ে কোন সভা-সেমিনার, চোখে পড়ার মতো হয়নি। তখনকার ৮০ভাগ মানুষ পড়ালেখার জানতো না, ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় পত্র-পত্রিকা দুইদিন পরে যেত। তাই সেই সময়ের মানুষ শেখ মুজিব কেনো বাকশাল করতে চায় সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পায়নি।
বাকশাল নিয়ে শেখ মুজিব বিবিসিতে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন কিন্তু তখনকার সময় বিবিসি কি সেটাই অনেকেই জানতো না। বাকশাল নিয়ে যদি শেখ মুজিব গ্রামেগঞ্জে যেতেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকতেন, তাদেরকে বুঝাতেন তাহলে এগুলোর পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট এখন দেখা যেত। বেগম জিয়াও মানুষকে বুঝাতে পারতেন না বাকশাল হলো ফেরাউনের তন্ত্র। যাইহোক বাকশাল করলে তাতে পুঁজিবাদীদের কি সমস্যা হবে তারা তখন সেটা বুঝতে পেরেছিল। তারা শেখ মুজিবকে চরমভাবে অপছন্দ করা শুরু করে, ভিতরে ভিতরে মানুষকে ভুল বোঝাতে থাকে। এবং এক পর্যায়ে শেখ মুজিবকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু মিলিয়ে শেখ মুজিব তাদের কাছে পরাজিত হন।
শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার উচ্চারিত কথাগুলোই বেশ আক্রমণাত্মক। যদিও এখন পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না দুর্নীতি বিরোধী অভিযান লোক দেখানো কিনা! কারণ দুর্নীতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে যেসব ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে, যাদের ধরা হচ্ছে সেগুলো পুরোপুরি সঠিক পথ নয়। কেননা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের ধরলেও পুঁজিবাদী ও সরকারি আমলাদের ব্যাপারে এখনও নিশ্চুপ।
তারপরেও শেখ হাসিনা যদি সত্যিকার অর্থে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মল করতে চায়, তার উচিত হবে দুর্নীতি কিভাবে নির্মূল করতে চায়, নির্মূল করতে গিয়ে কি কি সমস্যা হচ্ছে, নির্মূল হওয়ার পরে কি কি উপকার জাতি পাবে সেগুলি নিয়ে বেশি বেশি সভা-সমাবেশ করে তৃণমূল কর্মী এবং সাধারন জনগনের আরো বেশি সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা। শেখ হাসিনার আশেপাশে যেসব পুঁজিবাদী, আমলা ও রাজনীতিবিদ আছে এদের বেশিরভাগই অসৎ এবং দুর্নীতিবাজ। শেখ হাসিনার এমন অবস্থান তাদের কাছে নিশ্চয়ই স্বস্তিকর নয়। তাই সাধারণ জনগণ ও তৃণমূল কর্মীদের যদি এই অভিযানের পক্ষে জোরালো সমর্থন থাকে তাহলে তাকে সরিয়ে দেওয়া খুব একটা সহজ হবে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তার বাবা শেখ মুজিব পরাজিত হলেও তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা এখনো আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:২৫