ফেসবুকে একটা ভিডিও গত দুইদিন থেকে খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য দেওয়ার সময় দর্শক সারির মাঝখান থেকে কেউ একজন আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করে ওঠে। এতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভীত হয়ে মঞ্চ থেকে দৌড়ে নেমে যেতে চায় পরে অবশ্য তার বডিগার্ডরা থাকে ঘিরে ধরে আশ্বস্ত করে এবং আল্লাহু আকবার কে বলেছে তাকে খুঁজতে থাকে। ভিডিওটির কমেন্টে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার কমেন্টে সয়লাব হয়ে গেছে।
এই আল্লাহু আকবার বলার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভীত হয়েছে এটা মুসলমানদের খুব আনন্দ দিচ্ছে। তারা বলছে আল্লাহু আকবার শুনে শয়তান ভয় পেয়েছে, সবার সামনে অপমানিত হয়েছে। আল্লাহু আকবারের ফজিলত দেখে তারা নিজেরা বিস্মিত হচ্ছে এবং আল্লাহকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। এখন আপনি বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প আল্লাহু আকবার শুনে কি পরকালের ভয়ে, না আল্লার শাস্তির ভয়ে ভীত হয়ে স্টেজ থেকে নেমে যেতে চেয়েছে? নাকি সে তার গর্দানে হাত দিয়ে দেখতে চেয়েছে সেটা ঠিক জায়গামত আছে কিনা? নিশ্চয়ই তার মাথায় দ্বিতীয়টি কাজ করেছে এবং তার জন্য সে দৌড়ে পালাতে চেয়েছে। এখন এই আল্লাহু আকবার বলার কারনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভীত হওয়া আপনাকে আনন্দ দেওয়ার কথা নয় বরং লজ্জা পাওয়ার কথা। আল্লাহু আকবার হলো সৃষ্টিকর্তার মহত্ব প্রকাশ করার একটি শব্দ। এখন এই শব্দ শুনে তো কারো ভয় পাবার কথা না বরং ভয় পেলে বুঝতে হবে তার কাছে সৃষ্টিকর্তার মহত্ব প্রকাশের শব্দটি ভীতিকর শব্দ।
আসলে আমাদের মুসলমানদের একটা অংশ ইসলামটাকে একটি ভীতিকর অবস্থা নিয়ে এসেছে। এখন ইসলামের নাম ও উপাসকের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভীতিকর পরিস্থিতি ভেসে উঠে। তবে এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না। ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবে এটার নাম শুনলে কেন অন্য আরেকজন লোক ভয় পাবে? কেন তার সামনে ভীতিকর পরিস্থিতি ভেসে উঠবে? মুসলিম হিসেবে এটা আমাদের জন্য অবশ্যই একটা লজ্জার বিষয় এতে আনন্দ বা গর্ববোধ হওয়ার মত কিছু দেখছি না।
মুসলমানরা একটা সময় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশ শাসন করেছে। সময়টি তখন ছিল দৈহিক শক্তি প্রদর্শনের যুগ, তখন ঢাল তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করে অন্যদেরকে পরাস্ত করা হতো, তাদেরকে শাসন করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। অত্যাধিক মাত্রায় ধর্মকে সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর প্রয়োগ করার কারনে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় সেই ধর্ম বাধা সৃষ্টি করে। আর যার ফলশ্রুতিতে মুসলমানদেরকে বাকি বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়তে হয়। এই পিছিয়ে পড়েও এখনো মুসলমানরা বুঝতে পারছে না যে, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ছাড়া বর্তমান আধুনিক বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করা সম্ভব না।
আল্লাহু আকবার বলে কারো মনে কাঁপন ধরিয়ে দিতে পারা যাবে, কাউকে ভীত করে দিতে পারবে কিন্তু তার সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারবে না। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমকক্ষ হয়ে উঠতে হলে অবশ্যই ধর্মকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে নিজেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত করতে হবে।
আজকের ডোনাল্ড ট্রাম্প আল্লাহু আকবর শুনে যেভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছে সেটা মুসলমান ও তার ধর্ম সম্পর্কে পুরো পশ্চিমা বিশ্বের ধারনার একটি সিম্বল। আর এইটা কোনভাবেই মুসলমানদের জন্য ভালো কিছুর সিম্বল নয়। এর থেকে মুসলমানদের বের হয়ে আসা উচিৎ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫৬