গতকাল আমাদের রাষ্ট্রপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষদের দুর্নীতি না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। উনি পদাধিকার বলে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথা। উনার অধীনস্থ ভিসি এবং শিক্ষকগণ দুর্নীতি করেন উনি এটা ভাল করে জানেন। এখন এই জানার পরে উনি উনাদেরকে অনুরোধ করছেন দূর্নীতি না করার জন্য। আপনি যদি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হোন এবং আপনি যখন জানবেন আপনার প্রতিষ্ঠানের কোন অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছে, হওয়ার চেষ্টা করছে তখন কি আপনি তাদের বিরুদ্ধে অনুরোধের ঢেঁকি নিয়ে অনুরোধ করতে থাকবেন?
না, আপনি অনুরোধ করবেন না, আপনি তাদেরকে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে তাদেরকে অব্যাহিত দিবেন অথবা আপনার হাতে যদি শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে আপনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন।
আমাদের দেশের ছাত্র রাজনীতির কারণে শিক্ষকরাও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এই জড়িয়ে পড়তে গিয়ে উনারা নিজেদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে, নিজেদের আসল কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখে। উনাদের শিক্ষার্থীরা উনাদের খুব একটা সম্মানের চোখে দেখেনা এবং এটা নিয়ে সেইসব শিক্ষকদের খুব একটা আক্ষেপও শোনা যায় না। এসব শিক্ষকগণ নিজেদের যোগ্যতাবলে পদোন্নতি আশা না করে বিভিন্ন অসৎ উপায়ে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য লবিং করে। উনাদের মাথার উপর জাতির কত বড় দায়িত্ব এগুলি ওনাদের মাথায় কাজ করে না।
আমাদের রাষ্ট্রপতি একজন রসিক মানুষ, উনি খুব মজা করে কথা বলেন। বিভিন্ন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উনি উনার স্ত্রী এবং নিজের ডায়াবেটিসের গল্প বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে উনার অক্ষমতার উদাহরণ দেন। সেসব শুনে উপস্থিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা হাসতে হাসতে হাততালি দিতে থাকে। যাক গতকাল উনি ভিসি ও তার শিক্ষকদের দুর্নীতি সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছেন তবে উনি এসব কথা আরেকটু কঠোর ভাষায় বলতে পারতেন। এমন মোলায়েম সুরে অনুরোধ করলে সে অনুরোধ কেউ রাখার কথা না।
রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে গড়ে তোলা উনার দায়িত্ব। উনি কখনো কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিজ্ঞেস করেছেন কি না যে, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএস, এমফিল কিংবা পিএইচডির আউটপুট কেমন? স্নাতকোত্তর শেষ করার পর কি পরিমান শিক্ষার্থী চাকরি-বাকরি না খুঁজে নিজেদেরকে গবেষণার কাজে নিয়োজিত করে? গবেষণা করার জন্য যেটুকু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া আছে সেগুলোর কি পরিমান ব্যবহার হয়? আপনার শিক্ষকদের মাঝে কি পরিমান শিক্ষক গবেষণাকর্মে সময় ব্যয় করেন? বিশ্বের এক হাজার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় আসার জন্য আপনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?
না, উনার কোন সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তব্যে আমি এই ধরনের কথা শুনিনি। অথচ উনার রস গল্পের চেয়ে এসব প্রশ্ন তোলা এবং সে অনুযায়ী ভিসিদের নির্দেশ দেওয়ার দরকার ছিল। এসব করলে শেখ হাসিনা নিশ্চয় উনাকে বারণ করতেন না! উনার সামর্থ্যের ভিতর এগুলো উনি চাইল করতে পারেন অনায়াসে।
এখন উনি যদি বলেন উনি চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন না, ওনার হাত-পা বাঁধা। তাহলে সে বাঁধা হাত-পা খোলার জন্য উনি সাংসদদের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। সাংসদরা সাহায্য না করলে জনগণ উনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতে পারে হয়তো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৩