এবারের ঈদে গ্রামের বাড়িতে আমার এক পরিচিত সরকারি কর্মকর্তার সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। একপর্যায়ে তাকে আমি বলেছিলাম আসলে দেশের জিডিপি এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য দেশের মধ্যে সম্পদ সৃষ্টি করতে হবে। জবাবে সে আমাকে বলল দেশে আর কি সম্পদ সৃষ্টি করবে, আমাদের দেশে তো সীমিত সম্পদ। যা কতটুকু আছে প্রাকৃতিক গ্যাস, সেটাও শেষ হওয়ার দিকে। তার কথা আমি কিছুটা অবাক হলাম এবং সে সম্পদ বলতে খনিজ সম্পদকে বুঝেছে!
সরকারের বিভিন্ন পদে এমন মগজদারী লোকজন কম নয়। এরাই জাতির উন্নয়নের জন্য, জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন নীতি অবলম্বন করে যেগুলোর কোনটাই ফলপ্রসূ হয় না শেষ পর্যন্ত। এদের জন্যই জাতি কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে চলছে বাকি বিশ্বের সাথে।
বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার বৃহৎ একটা অংশ আসে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে। তবে এই সেক্টরের ৯০% কাঁচামাল চায়না থেকে আমদানি করা হয়। গার্মেন্টস এমন একটা সেক্টর যেখানে এমন কিছু নেই যার প্রয়োজন হয়না। ছোট ছোট যে এক্সেসরিজ গুলি প্রয়োজন হয় তার ৯৫ ভাগ চায়না এবং তাইওয়ান থেকে আমদানি করা হয়। অথচ এই শত পদের এক্সেসরিজ গুলো দিয়ে ১০ হাজারের বেশি মাঝারি ও ক্ষুদ্র উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব। গার্মেন্টস এক্সেসরিজ সাপ্লাইয়ের সাথে কিছুটা ইনভলভমেন্ট আছে, তাই বলতে পারি ঢাকা, চট্রগ্রাম মিলিয়ে শুধু গার্মেন্টস এক্সেসরিজ আমদানি করার জন্য হাজার খানেক প্রতিষ্টান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান গুলো গড়ে প্রতি মাসে ৩ লাখ ডলারের মত গার্মেন্টস এক্সেসরিজ আমদানি করে। এই আমদানিকৃত পণ্য গুলো এখানেই উৎপাদন করা সম্ভব। এটা করা গেলে বিশাল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে থেকে যাবে।
আমি শুধু গার্মেন্টস সেক্টরের কথা বললাম, আসলে এমন অনেক সেক্টর ও পণ্য আছে যেগুলো অনায়াসে আমাদের এখানে উৎপাদন করা সম্ভব। এসব আমদানিকৃত পণ্য গুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো এখানে তৈরি করার জন্য দক্ষ লোকজন বের করে নিতে হবে। যারা এসব পণ্য উৎপাদন করতে চায় তাদের সম্পর্কে যাচাইবাছাই করে সহজ ও কম সময়ে ঋণ দিয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হবে। ঋণ দিয়েই বসে থাকলে হবে না, তাদের ফলোআপে রাখতে হবে, দেখতে হবে তারা সঠিক ট্রাকে আছে কিনা। এই ফলোআপের বিষয়টি আমি চাইনিজদের মধ্যে দেখেছি। তারা গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার পর ব্যাংকের দুইজন লোক প্রতিমাসে তার প্রতিষ্ঠানে ভিজিট করে এবং বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়। দিক নির্দেশনার মধ্যে তারা সে প্রতিষ্ঠানকে তাদের পণ্যের কাস্টমার খুঁজে পেতেও সাহায্য করে।
দেশের সম্পদ সৃষ্টি হলে দেশে চাকুরীও সৃষ্টি হবে। মানুষ নিজের জন্য নিজে চাকুরী সৃষ্টি করবে, সরকার শুধু তদারকির কাজটুকু করবে। আসলে এমন কর্মযজ্ঞ করার মত দক্ষ ও নিবেদিত লোক আমাদের সরকারি দপ্তর গুলোতে নেই। আমাদের সরকারি লোকজনরা বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, ওরিয়নের পিছনে টাকার বস্তা নিয়ে ঘুরে, তাদের হাতেপায়ে ধরে তাদের ঋণ দেয় এবং এদের যে পরিমান ঋণ দেয় এরা সে পরিমানে চাকুরী সৃষ্টি করে না।
সঠিক কাজ হবে মাঝারি ধরনের উৎপাদন শিল্প গড়ে তোলা কেননা এই মাঝারি ধরনের উৎপাদন শিল্পই দেশের অর্থনীতি ও চাকুরীর বাজারের স্থিতিশীলতা আনতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৭