somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশিষ্ট বাঙালি চিকিৎসক, লেখক ও রাজনীতিবিদ হাকিম হাবিবুর রহমানের ৭৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্রে একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হাকিম হাবিবুর রহমান। তিনি ছিলেণ একাধারে ইউনানী চিকিৎসক, সাহিত্যসেবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। চিকিৎসক ছাড়াও হাকিম হাবিবুর রহমান সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে খুবই প্রভাবশালী ছিলেন। হাবিবুর রহমান নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। সে যুগের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের ব্যবহূত ভাষা উর্দু হওয়ায় একজন বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও হাকিম হাবিবুর রহমানের সকল রচনাই ছিল উর্দু ভাষায়। ঢাকার উপর রচিত তার দুইটি গ্রন্থ আসুদগান-এ-ঢাকা এবং ঢাকা পাঁচাস বারাস পেহলে ঢাকার উপর দুইটি মৌলিক তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ। তার পাণ্ডুলিপি, মুদ্রা, অস্ত্র এবং শিল্পকর্মের বিশাল সংগ্রহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে হাকিম হাবিবুর রহমান সংগ্রহ নামে সংরক্ষিত রয়েছে। তার জন্মস্থান ছোট কাটরা মহল্লার নিকটস্থ হাকিম হাবিবুর রহমান লেন তার স্মরণে নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৯৪ সালে তার স্মরণে হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। হার্বা‌ল ও ইউনানি চিকিৎসার গবেষণা এবং পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এটি স্থাপিত হয়। ১৯৯৬ সালে ভারতের হাকিম সৈয়দ জিল্লুর রহমানকে তার কৃতিত্বের জন্য পুরষ্কার প্রদান করা হয়। আজ হাকিম হাবিবুর রহমানের ৭৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। বিশিষ্ট বাঙালি চিকিৎসক, লেখক ও রাজনীতিবিদ হাকিম হাবিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


হাবিবুর রহমান ১৮৮১ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার ছোট কাটরা মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েদের মতো তিনি বাড়িতেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ঢাকা মাদ্রাসা ও কানপুর দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। লক্ষ্ণৌ, দিল্লিও আগ্রাতে ইউনানী চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ লাভের পর তিনি ১৯০৪ সালে চিকিৎসা পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। পূর্ব বাংলায় হাকিম হাবিবুর রহমান খিলাফত আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন। ১৯২০ এবং ৩০ এর দশকে তিনি ঢাকার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সর্দারদের সালিস ছিলেন। তিনি ১৯০৬ সালে উর্দু মাসিক পত্রিকা আল মাশরিক সম্পাদনা করতেন। ছাড়াও ১৯২৪ সালে তিনি খাজা আদেলের সঙ্গে যৌথভাবে যাদু নামে অপর একটি উর্দু মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি মাত্র দুই বছর টিকেছিল। হাকিম হাবিবুর রহমান প্রায়শ ‘আহসান’ ছদ্মনামে লিখতেন। খাজা আদিলের সাথে যৌথভাবে ১৯২৬ সালে তিনি উর্দু মাসিক পত্রিকা জাদু প্রকাশ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি ঢাকার তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ স্থাপন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত তিব্বিয়া হাবিবিয়া কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মেডিকেল কলেজ এবং সবচেয়ে পুরনো ইউনানি মেডিকেল কলেজ। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ইউনানি চিকিৎসার পথিকৃৎ হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। এখানে পড়াশোনা করা চিকিৎসকরা ডিইউএমএস (ডিপ্লোমা ইন ইউনানি মেডিসিন এন্ড সার্জারি) উপাধি পেত। একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইউনানি মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা হয় এবং বিইউএমএস (ব্যাচেলর ইন ইউনানি মেডিসিন এন্ড সার্জারি) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। পূর্ববাংলার মানুষকে ইউনানী চিকিৎসা সেবা দানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৯৩৯ সালে ‘শেফা-উল-মুলক’ খেতাবে ভূষিত করেন। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি প্রচুর লেখালেখি করেন।


হাবিবুর রহমান একজন উর্দু সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। তিনি আহসান ছদ্মনামে লিখতেন। তাঁর অসংখ্য লেখার মধ্যে রয়েছে আল-ফারিক, হায়াত-ই-সুকরত, আসুদগান-ই-ঢাকা এবং ঢাকা পঁঞ্চাশ বারাস পহলে। সর্বশেষ উল্লিখিত বইটিতে রয়েছে তাঁর সময়ে ঢাকা শহরের অধিবাসীদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রাঞ্জল বর্ণনা। আসুদগান-এ-ঢাকা এবং ঢাকা পাঁচাস বারাস পেহলে ছাড়াও তার অন্যান্য প্রধান রচনা হল আল-ফারিক (১৯০৪), সক্রেটিসের জীবনী হায়াত-এ-সুকরাত (১৯০৪), তাজকিরাতুল ফুজালা এবং মাসাজিদ-এ-ঢাকা। দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবত তিনি বঙ্গে লিখিত আরবি, ফারসি ও উর্দু বই সংগ্রহ করেছেন এবং সুলাসা গুসালা নামে একটি ক্যাটালগ প্রকাশ করেছেন। ইনশায়ে শায়েকে তিনি মীর্জা গালিব এবং ১৯ শতকে ঢাকার উর্দু কবি খাজা হায়দার জান শায়েকের মধ্যকার পত্রাবলী তিনি সঙ্কলন করেছেন। পূর্ববঙ্গ ও আসামে উর্দুর পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তিনি আঞ্জুমানে উর্দু সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় হাকিম হাবিবুর রহমানের। আজ তার ৭৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। বিশিষ্ট বাঙালি চিকিৎসক, লেখক ও রাজনীতিবিদ হাকিম হাবিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৩
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×