somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর কুখ্যাত ১৫জন নারীঃ যারা ছিলেন বিশ্বের ত্রাস!!

০৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নারীরা পুরুষ একে অন্যের প্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করছেন যুগ যুগ ধরে। নারীদের বলা হয়ে থাকে কোমলতা, ভালবাসা ও শান্তির প্রতীক। প্রকৃতিই তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়েছে। কিন্তু সেই রী যদি হয়ে উঠে অপরাধী তাহলে স্বভাবতই আমাদের মনে সেগুলো ভয়াবহ চিত্র হিসেবেই দাগ কাটবে। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভয়ঙ্কর সব অপরাধীর বিচরণ ছিল বা আছে। বহু কুখ্যাত মহিলাই আজ পুরুষদের পেছনে ফেলে দিয়েছে নানা অসামাজিক কাজকর্মের দ্বারা। কিন্তু এই পৃথিবীতে এমন কয়েকজন নারী রয়েছেন এদের কারো কারো অপরাধের মাত্রা এবং বিভৎসতার ঘটনা পড়লে গায়ে রীতিমত কাঁটা দেয়। আজ এমনই পনেরজন কুখ্যাত নারীর কাহিনী তুলে ধরা হল যারা নিজেদের অসামাজিক কাজকর্মের দ্বারা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন।


১৷ অ্যানা গ্রিস্টিনাঃ
২০১২ সালে মার্কিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দুনিয়াজুড়ে খবরের শিরোনামে আসেন অ্যানা গ্রিস্টিনা। অভিজাত সমাজে দেহব্যবসার সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল তার। প্লেবয় এবং পেন্টহাউস ম্যাগাজিনে কাজ করা মডেলরা অ্যানার হয়ে কাজ করত। ধরা পড়ার আগে প্রতি ক্লায়েন্টের কাছে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কামিয়েছিল অ্যানা। বিশ্ব জুড়ে চলত সেক্স ব়্যাকেট। গ্রেফতার হওয়ার সময় তিনি জানান, তিনি একটি অনলাইন ডেটিং সাইট চালান। কিন্তু পরে আসল সত্য স্বীকার করে নেন অ্যানা। তাকে ছয় মাসের জেল ও পাঁচ বছর গৃহবন্দী হয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তবে শোনা যায় এই সময়ও নাকি তিনি কয়েক শো কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।


২৷র‌্যাফেলা অল্টারিওঃ
গডমাদার হবার সব গুণে গুণান্বিত নারী র‌্যাফেলা। ঘটনাক্রমে স্বামী নিকালো পায়ানস-এর কালো ব্যবসা চালিয়ে নিতেই তার এ জগতে আগমন। স্বামীকেও অতিক্রম করে ফেলেন ইতালিয়ান এ নারী। অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ক্যামোরা পরিবারের হওয়ায় খুব সহজেই অন্ধকার জগতের রানীতে পরিণত হন র‌্যাফেলা। ২০০৬ সালে স্বামী নিহত হলে অন্ধকার জগতের একচ্ছত্র মক্ষিরানী হয়ে ওঠেন র‌্যাফেলা। খুন, মাদক পাচার, অবৈধ টাকাসহ আরও নানা অবৈধ কাজ অল্টারিওর নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে বারবার বন্দুক যুদ্ধে বেঁচে ফেরেন তিনি। আর এ কারণেই মাফিয়া জগতে তার উপাধি হয়ে দাঁড়ায় "The Big Kitten ", মিকোনিয়া বা বড় বিড়ালছানা। পুলিশের খাতায় র‌্যাফেলা একজন মোস্ট ওয়ান্টেড লেডি গ্যাংস্টারে পরিণত হন। অত্যন্ত দুর্ধর্ষ এ গডমাদার তার সমস্ত অপকর্মসহ ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গড়ে প্রতি বছর ২১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করতে থাকেন। ২০১২ সালে পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালালে অল্টারিও ধরা পড়েন। সঙ্গে তার ৬৫ জন সহযোগীও ধরা পড়ে।২০ বিলিয়ন ডলার জব্দ করা হয়। টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল থেকে শুরু করে সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তার ধরা পড়ার খবর। অবসান হয় র‌্যাফেলা গডমাদারের দৌরাত্ম্য।


৩৷ জেমেকার থমসনঃ
‘কুইন পিন’ থম-সন নামেই বেশি প্রসিদ্ধ ছিল সে। খুব খারাপ পরিবেশের থেকে এসেছিলেন যা বেঁচে থাকার জন্য তাকে অপরাধী হতে বাধ্য করেছিল।স্বামীর সঙ্গে কোকেনের ব্যবসা করতো থমসন। ১৯৮০ সালে লস এঞ্জেলেসে এক নম্বর ড্রাগ ডিলার ছিল। একদিন গাড়ি ধোয়ার সময় থমসনের স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এখনও মাদক বেঁচে কোটি কোটি টাকা আয় করছে জেমেকার। এরপর নতুন সহযোগীর সাথে ব্যাবসা চালিয়ে যান কিন্তু সেই সহযোগি ধরা পরে ও জেরায় থমসনের নাম নেয়। হেরোয়িন ব্যবসায় একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তার৷ সঙ্গে তার স্বামী৷ তবে নিয়তির বিধানে এই অসৎ পথই তার জীবন কেড়ে নিয়েছিল৷ একদিন বাড়ির সামনে গাড়ি পরিষ্কার কারার সময় আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হয় জামকার থমসনে।


৪৷ রসেট্টা কুটোলোঃ
ইটালির কুখ্যাত মাফিয়া রাফায়েল কুটোলোর বোন। রোসেটা একটি দূর্গ কিনেছিল।সেখানেই আড়ালে চলতো চোরাচালান ব্যবসা। ১৬ শতকে তৈরি এই দূর্গে ৩৬৫টা ঘর ছিল। ছিল টেনিস কোর্ট, সুইমিং পুল। ইতালির কুখ্যাত মাফিয়া রাফায়েল কুটোলোর বোন। তার ভাই মাদক সম্রাট রাফায়েল জীবনের অধিকাংশ সময় জেলেই বন্দি ছিলেন। জেলবন্দি থাকা অবস্থায় মাদক চোরাচালান ব্যবসার দায়িত্ব নেয় রোসেটা। জেল থেকে রাফায়েল যে নির্দেশ এবং পরামর্শ দিতেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন রোসেটা। পনের বছরের অধিক সময় ধরে গোলাপ চাষের আড়ালে ভাইয়ের মাদক সম্রাজ্যে ভাইয়েরই নির্দেশে নিভৃতে কাজ করে গেছেন এই নারী। ভাইয়ের এই সংগঠনের দায়-দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করার কারণে জেলে থেকেও রাফায়েল তার মাদক সাম্রাজ্যকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, রোসেটা সেসময় থেকেই এই সংগঠনকে শক্ত হাতে ধরতে না পারলে এই সংগঠন ভেঙ্গে পড়তো। রোসেটা একটি দূর্গ কিনেছিলেন। সর্বশেষ, ১৯৯৩ সালে পুলিশের কাছে ধরা দেন রোসেটা কুটোলো।দুনিয়া জুড়ে সাড়া জাগানো কুখ্যাত ৫ দুর্ধর্ষ নারী মাফিয়া ইতালির কুখ্যাত রাফায়েল কুটোলোর বোন রোসেটা। ১৯৩৭ সালে জন্ম নেয়া রোসেটা কুটোলোকে মাফিয়া সাম্রাজ্যের ‘সিস্টার অফ রাফায়েল’ নামেও ডাকা হত। জীবনের শুরুতে এই ধূসর চুলের নারী খুবই ধার্মিক ছিলেন। মায়ের সাথে একাকী ইতালির নেপলসের একটি গ্রামে বসবাস করতেন। গোলাপের চাষ করতেন।১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করা কুটোলোর পরিচয় ছিল তিনি ছিলেন কুখ্যাত ক্রিমিনাল রাপায়েল কুটোলোর দিদি ও নুয়োভা ক্যামোরা অর্গানাইজেশনের প্রধান৷ যেহেতু তার দাদা বেশির ভাগ সময়ই জেলে থাকত তাই অপরাধ জগতের দেখাশোনার বহার ছিল বোন রসেট্টার উপরই৷ নিজেও নয় বছর জেলের ঘানি টেনেছেন রয়েট্টা৷


৫৷ মারিয়া লিওনঃ
স্প্যানিশ অভিনেত্রি মারিয়া লিওন নন। ইনি অপরাধ জগতের কুখ্যাত ডন মারিও লিওন। ১৩ সন্তানের জননী এই মারিও লিওন লস এঞ্জেলসের মাফিয়া জগতের মাথা। তার তত্বাবধানেই চলত একটি বৃহৎ অপরাধমূলক কাজের গ্যাঙ৷ স্মাগলিং, খুন ও পাচারসহ একাধিক অপরাধের নজির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে৷ একসময়ে লস এঞ্জেলসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মাফিয়া হয়ে উঠেছিল সে৷ মাদক চোরাচালান থেকে সুপার কিলিং, হিউম্যান ট্রাফিকিং- সব জায়গায় তার নাম নানাভাবে জড়িয়ে আছে।২০০৮ সালে লস এঞ্জেলসে পুলিশের গুলিতে মারিয়ার ছেলে ড্যানি মারা যায়। ফলে লস এঞ্জেলসে থাকা মারিয়ার কাছে আর নিরাপদ মনে হয়নি। গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য চলে আসে মেক্সিকোতে। বেআইনিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে মৃত ছেলের শেষকৃত্যে সামিল হতে গিয়ে ধরা পড়ে। পরবর্তী সময়ে মারিয়াসহ এই গ্রুপের অনেক সদস্যই ধরা পড়ে। আদালতে মারিয়ার ৮ বছরের সাজা হয়।


৬৷ থেলমা রাইটঃ
তার স্বামী জ্যাকি রাইট ছিল ড্রাগ ব্যবসায় অন্যতম বড়ো নাম৷ ১৯৮৬ সালে খুন হয় সে৷ স্বামীর মৃত্যুর পর মাদক ব্যবসার দেখভাল শুরু করে থেলমা। ব্যবসার সম্পূর্ণ দেখাশোনার দায়িত্ব পরে থেলমার উপরই৷ কিছুদিনের মধ্যে ফিলাডেলফিয়ায় এক নম্বর ড্রাগ ডিলারে পরিণত হয় সে। মাদক বেচে প্রতি মাসে ৪ লাখ ডলার আয় ছিল থেলমার।


৭৷ জুডি মর্নঃ
পারিবারিক ড্রাগ পাচারের ব্যবসায় একচ্ছত্র অধিপত্য ছিল মর্নের৷ হিউম্যান ট্রাফিকিং’ থেকে শুরু করে মাদক চোরাচালানের পারিবারিক ব্যবসা। সেই সূত্র ধরে অপরাধ জগতের মক্ষীরানি হয়েছিল জুডি। সে ‘ভিসকোআস’গ্যাং নামে একটি অপরাধী সংগঠনের নেত্রী হয়েছিল। বোনের বরকে খুন করে জেলে গিয়েছিল জুডি। তার নামে কাঁপত মেলবোর্নের অপরাধ জগৎ৷ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ২৬ বছরের জেল হয়েছিল তার৷


৮। ক্লদিয়া ওছাওয়া ফেলিক্সঃ
ক্লদিয়ার বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ফ্যাশনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় নারী। আমেরিকার কুখ্যাত মাদক চোরাচালানকারী সংগঠন ‘লস অ্যানট্রাক্স’-এর সদস্য সে। তিনি মারিও পুজোর লেখা ‘গডফাদার’ চরিত্র না হলেও অপরাধ দুনিয়ায় বিশেষভাবেই পরিচিত ‘গডমাদার’ নামে। অনেকে আবার ‘দ্য বস’ নামেও ডাকে। ১২ এপ্রিল ১৯৬১ সালে জন্ম এই গড মাদার মেক্সিকোর সব থেকে বড় ড্রাগ চক্র Tijuana Cartel-এর মালিক। এর আগে এই গ্রুপ তার পাঁচ ভাইয়ের অধীনে ছিল। এনিডিনা তাদেরকে মানি লন্ডারিং এবং প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করতো। কিন্তু ২০০০ সালে তাদের প্রধান পরিকল্পনাকারীর পতন ঘটে। তখন থেকে এই গ্রুপের কর্তৃত্ব চলে আসে এনিডিনার হাতে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এনিডিনা বিশ্বের প্রথম ড্রাগ ব্যবসায়ী যে চক্রের সাথে সরাসরি যুক্ত না থেকে প্রথমে দলের আর্থিক দেখভাল করতো। পরবর্তীসময়ে তার ভাইদের গ্রেফতার আর কয়েকজন দলের কয়েজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে এই মাফিয়ার ড্রাগ সাম্রাজ্যে প্রবেশ ঘটে। বর্তমানে তিনি একমাত্র নারী ডন যার হাতে রয়েছে সবচেয়ে বড় ড্রাগ কারবারের কর্তৃত্ব।


৯। সান্দ্রা আভিলা বেলট্রানঃ
কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক সান্দ্রা। মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। ‘দ্য কুইন অফ দ্য প্যাসিফিক’বলেও ডাকা হয়। দু’বার দুই পুলিশ কর্মীকে বিয়ে করে বেলট্রান। পরে তার স্বামীরাও মাফিয়া ডন বনে যায়। সান্দ্রার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ আছে। পুলিশকে বেলট্রান জানিয়েছিল, কাপড় বেঁচে সংসার চালাতে হয় তাকে। ১১ অক্টোবর ১৯৬০ সালে জন্ম সান্ড্রা আভিলা বেলট্রানের। চোখে মুখে সবসময়ে লেগে থাকতো দুষ্টুমির ইঙ্গিত। তার মুচকি হাসি সকলকে মোহিত করে রাখতো। যখনই ফটোশুট করাতেন তখনই আরও মোহনীয় রূপ বেরিয়ে আসতো তার। কিন্তু তার এই হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকতো এক হিংস্র ইমেজ। তাকে কেন্দ্র করে মেক্সিকোতে গড়ে উঠে এক বিশাল মাদক জগত। দেশের সবচেয়ে বড় ড্রাগ ডিলার ও গ্যাংস্টার হয়ে উঠেন সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান। ৫৬ বছরের সান্ড্রা একসময় হয়ে উঠে মেক্সিকো সহ পুরো আমেরিকা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় ড্রাগ মাফিয়া। বেশ ধনী মহিলা সান্ড্রা বলতে গেলে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক। মাদক সাম্রাজ্যে তাকে ‘দ্যা কুইন অফ দ্যা প্যাসিফিক’ অনেকে ডেকে থাকেন। তার দু’চোখের সম্মোহনী সুধা যেকোনো পুরুষকেই কাছে টেনে নেয়ার মতই। এমন যাদু মাখানো তার দু’চোখ যে খোদ পুলিশ কর্তারা পর্যন্ত তার প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। গুলির লড়াই নয়, চোখের ইশারায় মেক্সিকোর দুই পুলিশ কর্তাকেই পকেটে পুরেছিলেন সান্ড্রা। দু’বার দুই পুলিশকে বিয়ে করেন বেলট্রান। পরবর্তীকালে দুই স্বামীকে ড্রাগ ব্যবসার কাজে নামিয়ে ছিলেন তিনি। পরে সুযোগ বুঝে দু’জনকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে সান্ড্রাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাদক, চোরাচালানের সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে পুলিশকে বেলট্রান জানিয়েছিলেন, কাপড় বেচে সংসার চালাতে হয় তাকে।


১০। গারট্রুড লিথোগঃ
বলা হয় অন্ধকার এ জগতের প্রথম নারীর নাম গারট্রুড লিথোগ। অ্যালকোহল চোরাচালানে গারট্রুড এতটাই পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন যে তাকে বাহামার মাদক সম্রাজ্ঞী উপাধিতে ভূষিত করা হয়। উনবিংশ সালের প্রথম দশকে আমেরিকায় মাদকদ্রব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। চোরাই পথে আসতে থাকে মাদক। আর ঠিক এ সুযোগে গারট্রুড বড় রকমের চোরাচালানে সফল হতে থাকেন। লন্ডনের এক মাদক রপ্তানিকারকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে নাসাউ-এ নিজের মদের ব্যবসা খুলে বসেন গারট্রুড। পরিসংখ্যানে দেখা যায় গারট্রুডের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাহামা থেকে চোরাপথে আসা মদের পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। যেখানে আমেরিকায় ১৯১৭ সালে মদ আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৭,৩০০ লিটার, ১৯২৩-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় নয় লাখ ৫০ হাজার লিটারে। যার অনেকটাই গারট্রুডের কাজ। নারী হওয়ার কারণে ব্যাপক সুবিধা করে এ পথে এগিয়ে যান গারট্রুড। কিছুদিনের মধ্যেই গারট্রুডের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। তাকে বাহামা কুইন বলা হতে থাকে। হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দী মাদক সম্রাজ্ঞী। ধরাও পড়েন গারট্রুড। অ্যামাজন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিউ অরলিন্স-এ এক হাজার কেস মদসহ গ্রেপ্তার হন এ মাদক পাচারকারী। কিছুদিনের ভেতরেই জেল হতে বেরিয়ে পড়েন। হঠাৎ আলোর পথে ফিরে আসতে চান তিনি। সফলও হন। নিজের মাদক চোরাচালানির রাজ্য ছেড়ে লস এঞ্জেলসে পাড়ি জমান। ৮৬ বছর বয়সে সেখানেই দেহত্যাগ করেন।


১১। মার্লোরি ডেডিয়ানা চ্যাকোন রোসেলঃ
১৯৭২-এ জন্ম নেয়া গুয়েতেমালার এ নারীকে ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় আর শক্তিশালী মাদক ব্যবসায়ী। তিনি শুধু মাদক স্মাগলারই নন, গুয়েতেমালার সবচেয়ে বড় কালো টাকাকে সাদা টাকায় রূপান্তরকারীও। তিনি বিংগোটোন মিলানোরিও নামে একটি লটারির ব্যবস্থা করেন। এ লটারির আড়ালে চলতে থাকে কালো টাকা সাদায় রুপান্তর করার কাজ। মার্লোরির কর্মকাণ্ড এফবিআই ও ওএফএসি বিভাগের ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারিতে পড়ে। ম্যাক্সিকান মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অপরাধে তাকে ধরার চেষ্টা হয়। কিন্তু অত্যন্ত ধূর্ত এ গডমাদার প্রতিবারই জাল ফসকে বেরিয়ে পড়েন। আজ পর্যন্ত মার্লোরির বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রমাণ আনা সম্ভব হয়নি। ফলে এখনও এ গডমাদার খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।


১২। হেলেন গিলিসঃ
'বেবি ফেস নেলসন’ গ্যাংয়ের সদস্য লেস্টারের স্ত্রী ছিলেন হেলেন জিলিস। তার সময়ে তিনি ছিলেন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। স্বামী-স্ত্রী মিলে জন দিলিঙ্গারের হয়ে অনেক অপকর্ম করলেও বিভিন্ন গ্যাংদের মধ্যে এই দম্পতি ছিলেন আদর্শ। তাই মৃত্যুর পরেও হেলেন জিলিসকে তার স্বামীর পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। মোট পঞ্চাশ বছর ধরে তারা একসঙ্গে জীবনযাপন করেছিলেন। হেলেন গিলিস ছিলেন ডিলিঙ্গারের টেরর গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য এবং কুখ্যাত গ্যাং লিডার বেবি ফেস লিনসনের স্ত্রী। স্বামী বেবি ফেসের সব অপরাধের সঙ্গীনী হিসেবে কাজ করার কারণেই পুলিশের খাতায় গ্যাং লিডার হিসেবে তার নাম ওঠে। ১৯৩৪ সালে একবার গ্রেপ্তার হন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো স্বামীর সঙ্গে অপরাধ জগতে যুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু দিন পরই ডিলিঙ্গারের মৃত্যু হলে তাদের গ্যাং ভেড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত কয়েক মাস জেল খেটে তার গ্যাংস্টার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।


১৩। ভার্জিনিয়া হিলঃ
ভার্জিনিয়া হিল পরিচিত ছিলেন ফ্লেমিঙ্গো এবং নারী গ্যাংস্টারদের রাণী হিসেবে। হিল গ্যাংস্টার বাগসি সিগেলের স্ত্রী হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেন। প্রথম জীবনে অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বড় হওয়া হিল সৌভাগ্যের খোঁজে লস অ্যাঞ্জেলেসে যান। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় সিগেলের। তারপর পরিচয় থেকে পরিণয়। ১৯৪৭ সালে নিহত হয় সিগেল। সে সময় বাড়ির বাইরে থাকায় বেঁচে যান হিল। তবে ১৯৬১ সালে ঘুমের বড়ি খেয়ে তার মৃত্যু হয়। তবে কারো কারো মতে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।


১৪। বনি পার্কারঃ
যুক্তরাষ্ট্রের নারী গ্যাংস্টারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বনি পার্কার।পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। মাত্র চার বছর বয়সেই বাবা মারা যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে তাদের বিভিন্ন স্থানে জীবিকার সন্ধানে ঘুরতে হয়। পরবর্তী সময়ে রয় থর্টন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ও বিবাহ হয়। এই বিবাহ পরবর্তী সময়েই অপরাধ জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক হয়ে বনি পার্কারের এবং তৎকালীন টেক্সাসে আইনের ফাঁক গলে অনেক কুকর্ম ঘটিয়েছেন তিনি। বিখ্যাত বলা হচ্ছে কারণ বনি পার্কার আর দশজন তারকার মতই মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন। অপরাধ করার ক্ষেত্রে তার সঙ্গী ছিলেন আরেক পুরুষ গ্যাংস্টার ক্লাইড বরো। দুজনকে মানুষ চিনত বনি ও ক্লাইড নামে। মূলত ব্যাংক ডাকাতির জন্যই এরা কুখ্যাতি লাভ করে। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ এই তিন বছর গ্যাংস্টারগিরি করেন তারা। কারণ ১৯৩৪ সালেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে বনির মৃত্যু হয়।


১৫। গ্রিসেল্ডা ব্ল্যাঙ্কোঃ
গ্রিসেল্ডা ছিলেন মেডেলিন কার্টেলের অন্যতম মাদক চোরাচালানি। ১১ বছর বয়সেই তিনি শিশু অপহরণের মতো অপরাধে জড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সেই ডাকসাইটে পকেটমার হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে যায়। গ্রিসেল্ডা তার মায়ের সঙ্গে না থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় স্বামীর সহায়তায় নিউইয়র্কে তিনি কোকেন ব্যবসা শুরু করেন।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৩৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×