somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা উপন্যাসে জনপ্রিয়তার শীর্ষবিন্দু স্পর্শকারীদের অন্যতম ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের পর বিশ শতকের তিনের দশক শুরুর প্রাকলগ্নে বাংলা উপন্যাসের প্রবহমান ধারায় তিনি যুক্ত হন। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯২৯ সালে পথের পাঁচালী নিয়ে উপন্যাসের ভুবনে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। এরপর তাকে আর ফিরে ডাকাতে হয়নি। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও কয়েকটি ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৮৯৪ সালের সালের আজকের দিনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ তাঁর ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


বিভূতিভূষণ ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-সুরারিপুর গ্রামের মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বারাকপুর গ্রামে। চিকিৎসার কাজেই বিভূতিভূষণের প্রপিতামহ চালকি-বারাকপুর-এ এসেছিলেন। পরে তাঁর পুত্র অর্থাৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ বারাকপুরকেই তাঁর স্থায়ী কর্মস্থল নির্বাচন করে সেখানে থেকে যান। তাঁর পুত্র মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র বিভূতিভূষণ।
পৈতৃক পেশা কবিরাজি ছেড়ে মহানন্দ পৌরোহিত্য ও কথকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। কিন্তু দারিদ্র্য তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে।তার পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। বিভূতিভূষণের পড়ালেখার পাঠ শুরু হয় পিতার কাছে। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন। নিজ গ্রাম ও অন্য গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়াশোনার পর বনগ্রাম উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় পিতা মারা যান। এর পর ১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৯১৬ সালে কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায়ও ডিস্টিইংশনসহ পাশ করেন। এরপর তিনি এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ার দ্বারকানাথ হাইস্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পাঠ্যরত বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাখ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। পরে ১৩৪৭ সালের ১৭ অগ্রহায়ন (ইংরেজি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪০) তারিখে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন।


বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। এসময় কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক হিসেবে বাংলা, ত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। পরে খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি, গৃহশিক্ষক এবং তাঁর এস্টেটের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন আবার ধর্মতলার খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর যোগ দেন গোপালনগর স্কুলে। এই স্কুলেই তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে (১৩২৮ বঙ্গাব্দ) প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় উপেক্ষিতা নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন। এই বই লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে। এটিই বিভূতিভূষণের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রচনা। তার মোট উপন্যাসের সংখ্যা ১৪টি। এগুলো হলোঃ ১। পথের পাচালি ২। অপরাজিত (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড, ৩। দৃষ্টিপ্রদী, ৪। আরণ্যক, ৫। আদর্শ হিন্দু হোটেল ৬। বিপিনের সংসার ৭। দুই বাড়ি, ৮। অনুবর্তন, ৯। দেবযান, ১০। কেদার রাজা, ১১। অথৈ জল, ১২। ইছামতী, ১৩। দম্পতি ও ১৪। অশনি সঙ্কেত। বিভূতিভূষণ গ্রামজীবনের রূপকার এবং আপাদমস্তক একজন প্রকৃতিপ্রেমিক। তিনি অরণ্য-জঙ্গল-ঝোপঝাড়ের গাছ-গাছালির মধুর সৌন্দর্য শুধু নিজেই বিমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেননি, পাঠকদের কাছেও সেই সুন্দর মনোহর রূপটি তুলে ধরেছেন। পথের পাঁচালী থেকে শুরু করে অশনি সঙ্কেত পর্যন্ত তার সাহিত্য পরিক্রমায় এ পরিচয় চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। গ্রামীণ মানুষ ও সমাজের সরল, অবিকল উপস্থাপন, প্রকৃতির কোলে লালিত ও পরিশীলিত মনন আর সুন্দর রুচির কারণে তার উপন্যাসগুলো হয়ে উঠেছে অনবদ্য। এগুলোর আবেদন পাঠক হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়, যাবে আরো বহুদিন। 


এই মহান কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিকের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×