somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেল। রাসেলের ছিলো নেতৃত্বসুলভ আচরন। ঢাকায় তার খেলার সাথী তেমন একটা ছিলো না কিন্তু যখন তারা টঙ্গিপাড়ায় বেড়াতে যেত, সেখানে তার খেলার সাথি ছিলো অনেক। সেই বাচ্চাদের জড়ো করতো এক জায়গায়, তাদের জন্য খেলনা বন্দুক বানাতো আর সেই বন্দুক হাতেই তাদের প্যারেড করাতো। আসলে রাসেলের পরিবেশটাই ছিলো এমন। রাসেলের খুদে বাহিনীর জন্য জামা-কাপড় ঢাকা থেকেই কিনে দিতে হতো। প্যারেড শেষে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা থাকতো। তখন যদি রাসেলকে কেউ জিজ্ঞেস করতো বড় হয়ে তুমি কি হবে? রাসেল বলতো ‘আর্মি অফিসার হবো’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মানবতার ঘৃণ্য শত্রু-খুনি- ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আর্মি অফিসার হতে চাওয়া বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেল। তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে নরপিশাচরা নিষ্ঠুরভাবে তাকেও হত্যা করেছিল। মৃত্যুকালে তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা তাকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ, শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কাছে ভালবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ, অধিকার বঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে গ্রাম-গঞ্জ-শহর তথা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ-লোকালয়ে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছেন। মানবিক চেতনা সম্পন্ন সব মানুষ শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আজ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৬৪ সালের আজকের দিনে তিনি ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।


শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা অঞ্চলের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত। রাসেলের জন্মের দু’বছর পূর্বে ১৯৬২ সালে কিউবাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডি এবং সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেফ-এর মধ্যে স্নায়ু ও কূটনৈতিক যুদ্ধ চলছিল। যেটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই বিশ্বমানবতার প্রতীক হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল। তাঁরই আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বঙ্গবন্ধু তার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম করন করেন রাসেল। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে রাসেল সর্বকনিষ্ঠ। বড় চার ভাই-বোনের পর রাসেলের জন্ম সবাইকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে। ভাই-বোনের মধ্যে অন্যরা হলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক শেখ কামাল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা শেখ জামাল এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ শেখ রেহানা। শিশু রাসেল ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। রাসেলের জন্মের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময়ে নানান কারনে জেলবাস করতেন। তাই শিশু রাসেলের বাবার সান্নিধ্য পাবার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। রাসেলের সব থেকে প্রিয় সঙ্গী ছিলো তার হাসুপা (শেখ হাসিনা)। তার সমস্থ সময়ই জুড়েই ছিলো হাসুপা। রাসেলের তার বাবাকে পাবার সুযোগ খুব কমই হয়েছে, তাই বাবাকে যখনই কাছে পেত সারাক্ষন তার পাশে ঘোরাঘুরি করত। খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাবাকে এক পলকের জন্য হলেও দেখে আসতো। এরই মাঝে জন্ম হয় শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের। জয়কে পেয়ে তো রাসেল মহা খুশি। সে তার খেলার নতুন এক সঙ্গী পেয়ছে। সারাটা সময়জুড়েই জয়ের সাথে মেতে থাকতো রাসেল।


সময়টা ১৯৭৫, আগষ্টের কিছুদিন আগে। হাসুপা তার স্বামীর কাছে জার্মানী চলে যাবেন। সাথে বোন রেহানাও যাবে। অবশ্য হাসুপা তার সঙ্গে রাসেলকেও নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তখন রাসেলের শরীরের অবস্থা খুব ভালো ছিলো না, তার জন্ডিস ধরা পরেছিলো। তাই সেদিন আর রাসেলের তার হাসুপা’র সাথে যাওয়া হয়নি। আর এটাই হয়তোবা শিশু রাসেলের জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। সময়টা ১৯৭৫, আগষ্টের কিছুদিন আগে। হাসুপা তার স্বামীর কাছে জার্মানী চলে যাবেন। সাথে বোন রেহানাও যাবে। অবশ্য হাসুপা তার সঙ্গে রাসেলকেও নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তখন রাসেলের শরীরের অবস্থা খুব ভালো ছিলো না, তার জন্ডিস ধরা পরেছিলো। তাই সেদিন আর রাসেলের তার হাসুপা’র সাথে যাওয়া হয়নি। আর এটাই হয়তোবা শিশু রাসেলের জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। ঐদিন শিশু রাসেল যদি হাসুপা’র সাথে জার্মানী যেত তাহলে হয়তো তাকে অমানবিকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন দিতে হতো না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রত্যূষে একদল তরুণ সেনা কর্মকর্তা ট্যাঙ্ক দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডিস্থ ৩২ নম্বর বাসভবন ঘিরে ফেলে শেখ মুজিব, তার পরিবার এবং তার ব্যক্তিগত কর্মচারীদের সাথে শেখ রাসেলকেও হত্যা করা হয়। শেখ মুজিবের নির্দেশে রাসেলকে নিয়ে পালানোর সময় ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ রাসেলকে অভ্যুত্থানকারীরা আটক করে। আতঙ্কিত হয়ে শিশু রাসেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, "আমি মায়ের কাছে যাব"। পরবর্তীতে মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিলেন "আমাকে হাসু আপার (শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দাও"। এক ঘাতক এসে ওকে বললো, 'চল তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি'। সে রাসেলকে ভিতরে নিয়ে গেল এবং তারপর ব্রাশ ফায়ার করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।


শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগ্রত রাখার জন্য ১৯৮৯ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে করে এই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রিয়া সংগঠনের মাধ্যমে শিশু শেখ রাসেলের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বন্ধবন্ধুর আদর্শ ধারন করে এই দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সেই লক্ষ্যে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত। এছাড়াও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র নামে একটি ফুটবল ক্লাব গঠন করা হয়। এটি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল ক্লাব। ক্লাবটি ১৯৯৫ সালে পাইওনিয়ার ফুটবল লীগে খেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। আজ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী। কত দীর্ঘ সময়, কেমন দ্রুতই চলে যায়, আবার কেমন যেন আটকে থাকে ঠিক সেই একই জায়গায়। সেই জন্যই হয়তো আজ আবার ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ নয়, ২০২০। ৪৫টা বছরের পার্থক্যই শুধু। এই ৪৫ বছরে অবশ্য পাল্টে গেছে পৃথিবীর অনেক কিছুই, মুছে গেছে রাসেলের গা থেকে চুইয়ে পড়া তাজা রক্তের দাগ। তবুও কেন যেন মনে হয় রাসেল আজও আছে। শেখ রাসেল তার সোনালি শৈশব পেরুতে পারেনি আজও। তবে মরেছে কি? না মরেনি, তোমাদের মাঝেই রাসেল বেঁচে থাকবে চিরদিন, সেই ছোট্ট রাসেল হয়ে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:৩৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×