somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশপের গল্প! আধুনিক সংস্করণ !!

২১ শে জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈশপের গল্প! আধুনিক সংস্করণ !!
নূর মোহাম্মদ নূরু

কোনো এক বনে বউকে নিয়ে বাস করতো এক কাঠুরিয়া। ভারি গরিব ছিলো তারা। রোজ কাঠ কাটতে বিনে যেত সে। দৈনিক কাঠ বিক্রি করে যা রোজগার করত তাই দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-না খেয়ে দিন চলত তাদের। বউটি ছিলো বেজায় লোভী আর ঝগড়াটে। বউয়েরা যেমন হয়! সংসারের অভাব নিয়ে বউ প্রতিদিন তার সাথে ঝগড়া করতো। একদিন বউয়ে উপর রাগ করে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়েএক নদীর ধারে সে গেল কাঠ কাটতে। সেখানে গিয়ে একটা গাছে যেই কুড়াল দিয়ে ঘা মেরেছে, অমনি তার হাত ফসকে কুড়ালটা গভীর পানির মধ্যে পড়ে গেল। খরস্রোতা নদী। তা ছাড়া তাতে কুমিরের ভয় ছিল ভয়ানক। তাই নিরুপায় হয়ে কাঠুরিয়া সেই গাছের গোড়ায় বসে কাঁদতে লাগল।
সে এতই গরিব যে তার আবার একটা কুড়াল কেনার মতো সংগতি ছিল না। তাই কী উপায় করবে, গাছের গোড়ায় বসে বসে সে ভাবতে লাগল। যত ভাবে ততই তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
এমনি করে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর হঠাৎ এক জলপরী নদীর মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন?
কাঠুরিয়া বলল, আমি বড় গরিব, আমার কুড়ালটা পানিতে পড়ে গেছে, তাই কাঁদছি।
জলপরী বলল, আচ্ছা তোমার কুড়াল আমি এনে দিচ্ছি, তুমি কেঁদো না। এই বলে তৎক্ষণাৎ নদীতে ডুব দিয়ে একখানা সোনার কুড়াল তুলে এনে জলপরী জিজ্ঞাসা করল, এটা কি তোমার ?
কাঠুরিয়া ভালো করে দেখে বলল, না।
সঙ্গে সঙ্গে আবার পানির মধ্যে ডুব দিয়ে একটা রুপার কুড়াল নিয়ে এসে জলপরী জিজ্ঞাসা করল, তবে এটা কি তোমার ?
এবারও কাঠুরিয়া বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করে বলল, না, এটাও নয়।
তখন জলপরী আবার ডুব দিয়ে একটা লোহার কুড়াল এনে তাকে দেখাল। কাঠুরিয়া এতক্ষণ পরে নিজের কুড়ালখানি চিনতে পেরে সানন্দে বলে উঠল, হ্যা, এটাই আমার।

জলপরী কাঠুরিয়ার এই সততা দেখে মুগ্ধ হল। সে তাকে তার নিজের কুড়ালটি তো ফিরিয়ে দিলই, উপরন্তু সোনার ও রুপার কুড়াল দুটিও উপহার দিয়ে পানির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঈশপের নীতি কথার এই গল্পটি মোটামুটি কম বেশী সবার জানা!
গল্পটির আধুনিক সংস্করণঃ
কাঠুরিয়া খুশি মনে সোনা, রূপা ও লোহার তিনটি কুড়াল নিয়ে যখন বাড়ি ফিরে বউকে সব খুলে বললো, লোভী বউটি পরদিন আবার কাঠুরিয়াকে সেই নদীর ধারে কাঠ কাটার জন্য যেতে বললো আর পরামশ' দিলো ইচ্ছা করে লোহার কুড়ালটি নদীতে ফেলার জন্য। কিন্তু তার লজ্জা বোধ হওয়াতে কাঠুরিয়া তাতে রাজী হলোনা। বউ অনেক গাল মন্দ করার পরেও যখন তাকে রাজী করানো গেলোন তখন রাগে গজরাতে গজরাতে নিজেই লোহার কুঠারটি নিয়ে সেই নদীর কাছে গিয়ে কাঠ কাটার অভিনয় করতে লাগলো। কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে কাঠ কাটার সময় পা পিছলে ওই নদীতে পড়ে গেলো। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয় কিন্তু বউয়ের বাড়ি ফিরার নাম গন্ধ নাই। চিন্তায় পড়ে গেলো কাঠুরিয়া। ঝগড়া করুক আর গাল মন্দ করুক দুবেলা দু মুঠো রান্নাতো করতো! তা ছাড়া এই বনে সেইতো ছিলো একমাত্র সুখ দঃখের সাথী। পুরুষ মানুষ যেমন হয়! বউয়ের খোঁজে কাঠুরিয়া সেই নদীর ধারে গিয়ে দেখতে পেল সেখানে কুঠারটি আছে কিন্তু বউ নাই। বউ নদীতে পড়ে গেছে বুঝতে পেরে অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো কাঠুরিয়া।
এমনি করে কিছুক্ষণ কেটে যাবার পর আবার সেই জলপরী নদীর মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন?
কাঠুরিয়া বলল, আমি বনের মাঝে আমার বউকে নিয়া বাস করতাম, সে ছিলো আমার সুখ দুঃখের সাথী। আমি সারা দিন বনে বনে কাঠ কাটি আর বউ আমার জন্য দু'বেলা দু'মুঠো রান্না করে খাওয়াতো। সেই বউটা নদীতে পড়ে গেছে, তাই কাঁদছি। জলপরী কাঠুরিয়ার দুঃখে অনেক মায়া হলো।
জলপরী বললো, আচ্ছা তুমি কেঁদোনা। আমি তোমার বউকে এনে দিচ্ছি। এই বলে তৎক্ষণাৎ নদীতে ডুব দিয়ে এক রাজকন্যাকে তার সামনে হাজির করে বললো এটাইকি তোমার বউ?
কাঠুরিয়া সাথে সাথে জবাব দিলো হ্যাঁ, জলপরী এটাই আমার বউ। যার সাথে আমি বহুদিন ধরে এই বনে বাস করছি

জলপরী তাজ্জব বনে গেলো কাঠুরিয়ার লোভ দেখে! যে কঠুরিয়ার সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে সোনা রূপার কুঁড়াল উপহার দিয়েছিলো, সে কিনা রূপবতী রাজকন্যার লোভে তার এত দিনের সুখ দুঃখের সাথী বউকে ভুলে গেলো! না হয় তার বউ ঝগড়াটে আর একটু বেশী লোভ ছিলো! জলপরী কোন ভাবেই আগের সৎ কাঠুরিয়ার সাথে এই লোভী কাঠুরিয়ার মাঝে মিল খুঁজে পাচ্ছেনা। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়! তবে সে রাগ না করে ভাবতে লাগলো সমস্যা কোথায়!

কোন সুরহা করতে না পেরে জলপরী কাঠুরিয়াকে প্রশ্ন করলো। তুমি মিথ্যা কেনো বলছো? আনি জানতাম তুমি আকজন সৎ মানুষ! তোমার কোন লোভ নাই, মিথ্যা বলোনা। আজ সুন্দরী রাজকন্যাকে দেখে তোমার কোভ কেনো হলো? তাহলে লোকে যে বলে স্যন্দরী নারীর কাছে দেবতারাও বশ হয়; তাই সত্য?
কাঠুরীয়া হাত জোড় করে বিনয়ের সাথে বললো, যদি অভয় দাও তা হলে সত্যি বলবো! জলপরী তাকে অভয় দিলে কাঠুরিয়া বললোঃ
আগের বারে আমার লোহার কুঠার পানিতে পড়ে গেলে তুমি পর পর আমাকে সোনা, রূপার কুঠার দেখাও। আমি সত্যি বলায় তুমি আমাকে সোনা, রূপা এবং আমার লোহার কুঠারসহ তিনটি কুঠার উপহার দিয়েছিলে। জলপরী বললো হ্যাঁ, আমার তা স্মরণ আছে। কিন্তু আজ সুন্দরী রাজকন্যা দেখে তুমি তোমার লোভ সম্বরণ করতে পারো নাই, তাই আমি খুবই অসন্তষ্ট তোমার উপর।
কাঠুরিয়া আবারো তাকে রাগ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলতে লাগলো,
জলপরী আমি যদি রাজকন্যাকে দেখে বলতাম এটা আমার বউ না, তা হলে পরের বার মন্ত্রীর সুন্দরী কন্যাকে দেখিয়ে বলতে এটা আমার বউ কিনা; আমি তাকেও আমার বউ না বললে তুমি আমার আসল বউকে হাজির করতা আর আমি বলতাম হ্যা এটাই আমার বউ। তখন তুমি আনার সততায় মুগ্ধ হয়ে রাজকন্য, মন্ত্রী কন্যাসহ তিনটি বউ উপহার দিতে!
তখন আমি পড়তাম মহা যন্ত্রণায়! একটা বউ নিয়ে আমি যে যন্ত্রণায় আছি সেখানে তিন তিনটি বউ নিয়ে আমি নরক যন্ত্রণা ভোগ করতাম। তাই তুমি যাতে মিথ্যা বলায় আমার উপর রাগ করে আরো দুইটা বউ উপহার দিতে না পারো তাই এই বুদ্ধিটা করলাম! আশা করি আমার দূরবস্থার কথা বুঝতে পারছো! এখন আমার আসল বউটি রেখে বাকী দুইটি ফিরিয়ে নিয়ে আমাকে দয়া করো।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু
প্রকাশকালঃ ঢাকা-২১ জুন ২০২২ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:৫৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×