somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে আইন চাই...

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটভাই মিম একটা চমৎকার কথা বলছিলো। আমাদের মাইন্ডসেট বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ফিক্সড। এর বাইরের কিছু আমরা ধারণ করতে পারি না, বা মেনে নিতে পারি না। এই প্রিজুডিসের কারণে আমাদের সব কিছুতেই আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া থাকে। টু কাউন্টার দ্যাট, আমাদের আগে সেটা জিরো লেভেলে আনতে হবে, তারপরই আমরা নিজের বিবেচনাবোধ প্রয়োগ করতে পারবো। আমি কখনও আমার সমসাময়িক প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ বোঝাতে যাই না, কারণ তারা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। সেটা পক্ষে হোক বা বিপক্ষে। আমার টার্গেট অডিয়েন্স তরুণ প্রজন্ম, আমি তাদের সামনে তথ্য উপাত্ত যুক্তি দিয়ে মিথ্যা এবং সত্যের প্রভেদ করার উপাদান যোগান দিই। বিবেচনাবোধ খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাটা তারই থাকে।

একে খন্দকারের মেমোয়ারের (স্মৃতিকথা, ইতিহস নয়) পক্ষে বিপক্ষে তরুণ প্রজন্মের এবং বুড়োদের লড়াইটা দেখছিলাম গত কদিন ধরে। প্রাক সিদ্ধান্ত মানুষের বিবেচনাবোধকে কিভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে তার কিছু নমুনা দেখছিলাম। উভয়পক্ষই আবেগতাড়িত যা রাজনৈতিক মনোভাব দিয়ে প্রভাবিত। আরেকটা তৃতীয়পক্ষ রয়েছে যারা বাকস্বাধীনতার নামে এইসব গারবেজের প্রচারণাকে উস্কানি যোগায়। তো আমি কোন পক্ষ? যেহেতু আমি সমমনাদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে আইন চেয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছি, তাই আমার পক্ষ নির্দিষ্ট। আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনায় হাইপোথেটিকাল না, প্র্যাকটিকাল। আমি যুক্তি-তথ্য-প্রমাণে নিজের সিদ্ধান্ত নিই এবং উপস্থাপন করি বাকিদের সামনে। এবং এই বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের উপ-সেনাপতির বক্তব্যের বিপরীতে এবং বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণগুলো আগেও জানিয়েছি।

খেয়াল করুন। আমি দাবি জানিয়েছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত বন্ধ করার। এবং এই অবস্থানে আমার প্রতিপক্ষ একে খন্দকার নন, আমি প্রতিরোধ করতে চাই বিকৃতির এই চর্চাটা। প্রথমা প্রকাশণী গত কিছুদিন ধরেই যেই অপচর্চাটা মোটামুটি নিয়মিত বানিয়ে ফেলেছে। প্রথমে তারা ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার (যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত) অপারেশনাল কমান্ডার খাদিম হোসেন রাজার লেখা বই আনলো (আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান) এবং তার নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করে তাদের বাজারকাটতি দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশ করলো। সেই মিথ্যাচারিতার প্রতিবাদও আমি করেছি। কিন্ত এখন দেখা যাচ্ছে তারা নোটবই ব্যবসায়ীদের আদলে বিকৃত ইতিহাস বিপননে নেমেছে। একসময় স্কুল কলেজের নামী স্যারদের নামে নোটবই বের হতো, কিন্তু তারা তাদের নাম ব্যবহারের জন্য টাকা পেতেন মাত্র, নিজেরা লিখতেন না।

প্রথম আলো ঠিক তাই করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ যেমন দুইদিনের নোটিশে পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছিলেন, তেমনি আমরা বাজারে হঠাৎ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তৈরি লেখক পাচ্ছি। যে বইটা লিখেছেন একে খন্দকার বা শারমিন আহমেদ (ঐতিহ্য প্রকাশনী) সেটা নিয়ে তারা আগাম কোনো আভাস দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তারা দুজনের কেউই যে পান্ডুলিপিতে কলম ছোয়াননি সেটা আমি মাথার দিব্যি দিয়ে বলতে পারি। এই প্রথমাই এর আগে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর নামে তাদের বছর পাচেক আগেকার একটি গোলটেবিল বৈঠকের মাইনুট প্রকাশ করেছিলো। সেখানে একে খন্দকার ছিলেন, এবং তিনি বইয়ে যা লিখেছেন তা গোলটেবিলে মাইদুল হাসান এবং অন্যরা বলেছেন। তিনি কেন বলেননি? আজ কেনো তার এই উল্টো সুর।

যে অপচর্চায় আমি উদ্বিগ্ন তার নেপথ্যের বার্তাটা অনেকেই হয়তো ধরতে পারেননি। এটাকে আমি বলবো সুকৌশলে মুক্তিযুদ্ধ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা। শারমিন তার বাবাকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করিয়ে দিয়েছেন। আর খন্দকার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ করেছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এতে রাজনৈতিক কোনো অংশগ্রহণ কখনও ছিলো না। এবং প্রথমা প্রকাশনী তাদের পৃষ্টপোষক ও ভোক্তাবৃন্দ এটাই জানাতে চায় এবং বিশ্বাস করে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ এবং শেষ হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। এবং সেটা আসলে মেহেরজান ছবির চিত্রনাট্যের মতো প্রেমময় ও আত্মশ্লাঘায় ভরপুর ছিলো।

রাজনৈতিক ইতিহাসের ছাত্র এবং পাঠক মাত্রই মানবেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আসলে দীর্ঘ এক রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতামাত্র। সেই রাজনৈতিক সংগ্রামের একমাত্র এসেন্স ছিলো বাঙালী জাতীয়তাবাদ। উপনিবেশের নাগরিক হিসেবে নির্যাতিত, সবখাতে বৈষম্যে ভোগা বাঙালী তাদের পূর্বপুরুষদের দেখেছে মোগল এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়তে, স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কেনো ব্যতিক্রম হবে! ধরলাম ইসা খা, তিতুমির বা ফকির মজনু শাহদের লড়াই ছিলো নিতান্তই গালগল্প, বাহাদুর শাহ পার্ক আসলে ভিক্টোরিয়া পার্কই সেখানে কখনও কোনো সিপাহীর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়নি, কয়েকশো সিপাহী তো প্রশ্নই ওঠে না। সাদা চামড়ার ইংরেজরা প্রচন্ডে গরমে অস্থির আর বোরড হয়ে দুশো বছর পর দেশে চলে গেছে।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তো চারশো বছর আগের ঘটনা নয়। এর আগের এবং পরের পত্রপত্রিকাগুলো তো এখনও লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে, পাবলিক লাইব্রেরিতে আছে, জাতীয় আর্কাইভে আছে, অনলাইনেও আছে। সে সময়কার মানুষজনও সবাই মরেননি। ৭ মার্চের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন এমন শখানেক মানুষ আমার ফেসবুক বন্ধুতালিকাতেই আছেন। তারা কেনো এইসব কথা শোনেননি যা বাকিরা বলছে? একাত্তরের দিনগুলিতে কেনো এমন কোন লাইন জাহানারা ইমাম লিখলেন না যে রুমি এসে বললো আম্মা শেখ মুজিব এটা কি করলেন, উনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ বা জয় পাকিস্তান বা জিয়ে পাকিস্তান বলে তার বক্তৃতা শেষ করলেন!

আমার ধারণা রাজনৈতিক কারণেই বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ অনেকে জীবনে শোনেননি। কারণ তাদের জন্য তা হারাম করা হয়েছে। রাস্তাঘাটে বাজলেও তা এককান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছেন। কিংবা শুনলেও তা অনুধাবন করার চেষ্টা করেননি, ফরওয়ার্ড করে দেখেছেন জিয়ে পাকিস্তান কোথায় আছে। একবার শুনুন। তার আগে এটাও জানার চেষ্টা করুন তার আগে কি হয়েছিলো। ১ মার্চ ইয়াহিয়া যখন রেডিওতে ঘোষণা দিলেন জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে বাঙালী প্রতিবাদে ফেটে পড়লো। কি হতো অধিবেশন চললে? যদি নির্বিঘ্নে সেই সংসদ অধিবেশন চলতো তাহলে বঙ্গবন্ধু হতেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (নট অনলি পূর্ব পাকিস্তান), দেশের ক্ষমতা সামরিক বাহিনীর হাত থেকে সিভিলিয়ানদের হাতে চলে আসতো এবং আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন করতো এবং ছয় দফা বাস্তবায়ন করতো।

৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ম্যান্ডেট সেই ছয় দফাই তো ছিলো বাঙালীর মুক্তির সনদ। স্বায়ত্বশাসিত প্রদেশ আর স্বাধীনতায় তফাত তো ক্ষীনই। নামে পাকিস্তানের অংশ হয়ে থেকে বাঙালি নিজের ভুখন্ডকে শাসন করবে! এর আগে সামরিক পৃষ্টপোষকতায় বাঙালি প্রধানমন্ত্রী দুয়েকজন হয়েছেন, তারা জেনারেলদের ইচ্ছামতো চলতে বাধ্য হয়েছেন। শেখ মুজিব তো সে প্রকৃতির নন। সেনাবাহিনী তার অর্ডার মানবে, তিনি না। যাহোক অধিবেশন স্থগিত হওয়ার পর তিনি দিলেন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক। টানা হরতাল চললো। আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে শেখ মুজিব ৭ মার্চ আগামী দিনের দিক নির্দেশনা দিবেন। তিনি দিলেন। সে ভাষণ যারা শুনেছেন, যারা পড়েছেন তারা জানেন বঙ্গবন্ধু ঠিক সেদিনই পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা করে দিয়েছেন। সেদিন থেকে বাংলাদেশের কোনো অফিসে কার্যালয়ে পাকিস্তানী প্রশাসন কাজ করেনি। জনগনকে ট্যাক্স দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনো টাকা পয়সা পশ্চিম পাকিস্তানে না পাঠানোর নির্দেশ কড়াকড়ি পালন করা হয়েছে।

এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না, কিন্তু আমাদের টাকায় আমাদের বুকে গুলি চালানো আর বরদাস্ত করা হবে না। তিনি স্পষ্ট বলেছেন আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার কোনো ভাইকে হত্যা করা হয়, তাহলে তোমাদের উপর স্পষ্ট নির্দেশ রইলো, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। বক্তৃতায় এই কথাগুলা তিনি দুইবার বলেছেন। বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহল্লায় মহল্লায় সংগ্রাম কমিটি গঠন করতে। কিসের সংগ্রাম? স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। তাহলে? জনসভায় উপস্থিত ছিলেন না এমন লোকেরা বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেছেন জাতীয় তর্ক তোলার আড়ালে আসলে মূল কথাগুলো থেকে নজর সরাতে চায়। কারণ কেউ মন দিয়ে শুনলে, তলিয়ে দেখলে প্রজ্ঞা বিবেচনা ব্যবহার করলেই তো বুঝবেন বঙ্গবন্ধু যা বলার বলে দিয়েছেন।

এবং যে কথাটা এসব জ্ঞানপাপী কখনও আলোচনায় টানেন না তা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সেই বাণী, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের মুক্তি চাই। এসব কথার মানে কি একটু বলবেন আমাকে? কি বোঝায় এসবে। ইয়াহিয়া খান ঢাকা এসে কিসের আলোচনা করেছেন, কিসের সমঝোতার চেষ্টা করেছেন? যাতে আওয়ামী লীগ ছয় দফার দাবি থেকে পিছু হটে। এই সামান্য সমঝোতাটুকুর বিনিময়ে গোটা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব প্রস্তুত ছিলো বঙ্গবন্ধুর সামনে। তিনি আপোষ করেননি, তিনি বেঈমান ছিলেন না। যখন বোঝা গেলো বঙ্গবন্ধু পিছু হটবেন না, আওয়ামী লীগ পিছু হটবে না, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই অসহযোগ চলবেই, তখন ইয়াহিয়া প্লেনে চড়লেন, তার আগে দিয়ে গেলেন অপারেশন সার্চলাইটের সবুজ সংকেত।

যারা সেই অপারেশনের বিবরণ পড়েছেন তারা জানেন সেখানে কি বলা ছিলো কাদের ওপর আক্রমণের নির্দেশ ছিলো, কাদের মেরে সাফ করে ফেলা বাধ্যতামূলক ছিলো। জ্বি, এক নম্বর নামটা আওয়ামী লীগ, আই রিপিট আওয়ামী লীগ। দুইনম্বরে হিন্দু। যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার তালিকায় এক নম্বর নামটা শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দিন আহমেদ বা জিয়াউর রহমান নন। এবং গ্রেফতার করে তাকে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য সমঝোতা করতে কোনো রেস্ট হাউজে রাখা হয়নি। তিনি ছিলেন কারাগারে। তার বিচার চলছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার অপরাধে। যা মৃত্যুদন্ডযোগ্য রাজনৈতিক অপরাধ। জিয়াউর রহমান তখন স্বাধীনতার ঘোষক বলে নিজেকে দাবি করে কোনো গোপন স্থান থেকে ভিডিও বার্তা পাঠালে হয়তো বঙ্গবন্ধু এই দায় থেকে অব্যহতি পেতেন। আম্মুকে আব্বু এটা বলেছেন শোনেননি শারমিন তাই ইতিহাস মিথ্যা সারাদেশ জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনেছে ৫০ কিলোমিটার রেডিয়াসের রেডিও থেকে। তারপর তারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপ দিয়ে পড়েছে। দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।

কিছু প্রশ্ন কি জাগে না? বঙ্গবন্ধু যদি এতই অচলমুদ্রা হন তাহলে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধান কেনো তাকেই করা হয়েছিলো? কেনো তাজউদ্দিন তার জুতো সিংহাসনে রেখে যুদ্ধ পরিচালনা করলেন। বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করা জিয়াউর রহমানই বা কেনো বঙ্গবন্ধুকে অভিভাবক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার প্রথম রেডিও বক্তৃতায়? কেনো বাংলাদেশ সরকারের অধীনেই সামান্য সেক্টর কমান্ডার হিসেবে চাকুরি করলেন? স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর জন্য কেনো অপেক্ষা করেছে গোটা জাতি? কেনো তিনি এসে এই দেশের রাষ্ট্রপতি হলেন। কেনো সাত কোটি মানুষ, লাখো মুক্তিযোদ্ধা, এতো কমান্ডার এবং রাজনীতিবিদরা বলেননি যে আপনি বাতিল, আপনি আপোষ করেছেন, আপনাকে আমরা চাই না। কেনো বলেননি? তিনি কি পায়জামার সঙ্গে বুট আর কাধে বন্দুক নিয়ে চলতেন যে তাকে ভয় পেতো সবাই?

বাঙালী তৈরি ছিলো না, বাঙালীর উপর মুক্তিযুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এইসব রাবিশ কথাবার্তা দিয়ে কি বোঝানো হয় আমি সত্যিই বুঝি না। রাত দশটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্যাংক বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পৌছেছে রাত সাড়ে এগারোটায়। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। আগাম না জানলে কিভাবে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারাই নিহত হয়েছেন যারা এটা আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনী ক্যাচাল ভেবে রয়ে গিয়েছিলেন। কেউ লড়তে লড়তে মারা যাননি। সব নিরীহ ছাত্র। প্রস্তুত না থাকলে তো সার্চলাইটের তালিকা মেনে এক রাতেই গোটা দেশ আওয়ামী লীগ মুক্ত করে ফেলতো পাকিস্তানী সেনাবাহিনী।

একটা পরিপূর্ণ রাষ্ট্রকাঠামোয় থেকে একটা পরিপূর্ণ সরকারী অবকাঠামোয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সেই সরকার ছিলো আওয়ামী লীগের। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই মুক্তিযুদ্ধের বাই ডিফল্ট সর্বাধিনায়ক। কারন সেই সরকার সেনাশাসিত সরকার ছিলো না, গণতান্ত্রিক সরকার ছিলো। আর যারা সেনাবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন থিসিস গিলিয়ে ৭৫ পরবর্তী পাকিস্তানী কাঠামোয় দেশ শাসনকে জায়েজ করতে চান তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই। জুনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গঠনের আগে মুক্তির লড়াইয়ে মেজর জিয়া, রাস্তার সলিমুদ্দিন কিংবা হরিদাস পালে কোনো তফাৎ ছিলো না। সবাই লড়েছেন। সামরিক প্রশিক্ষন এবং যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় ময়দানের নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়েছে মাত্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গঠন করার পর মুক্তিযুদ্ধটা দুই দেশের লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিকতা পেয়েছে। তার আগে গেরিলা যুদ্ধ ছিলো মাত্র যা কেউ কেউ গৃহযুদ্ধ বলেও অবমূল্যায়িত করে।

এবং এই তত্বের জনকরা এই পরিবেশনায় অপমান করে ২৫ মার্চ রাতের সবচেয়ে বীর যোদ্ধাদের, মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লড়াকু সৈনিকদের। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। রাজারবাগে যারা ৫টি গুলি আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত লি এনফিল্ড থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে লড়েছেন মেশিনগান আর রিকয়েলেস রাইফেলের বিরুদ্ধে। মারা গেছে পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সদস্যরা। ঢাকা সেনানিবাসে কতজন বাঙালী মরেছেন? কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস বাদ দিলে অপারেশন সার্চলাইটে নিহত সেনা সদস্যের সংখ্যা কতো? এক রাজারবাগের অর্ধেকও না। তবে সবাই দেশের জন্যই শহীদ হয়েছেন। ওই তাত্বিকরা অপমান করেন তাদেরও।

আমাদের দেশের জন্ম ইতিহাস, আমাদের স্বাধীনতা ইতিহাস রাজনীতিবিদদের পুতুলখেলা হয়ে গেছে। যে যার খুশী মতো এডিট করে মনগড়া কথা বসিয়ে দিচ্ছে। আর তাদের ইন্ধন জোগাতে সুশীল মুখোশ পড়ে তৈরি আছে স্বাধীনতাবিরোধীদের সহায়ক শক্তি। এর অবসান চাই। বন্ধ হোক এইসব নোংরামী। আর তা অবিকৃত অবিকল রাখতে সংসদে আইন চাই। একমাত্র বর্তমান সরকারই পারে এই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে…।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৮
১৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×