গতবার গরমের ছুটিতে গ্রামে দাদু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার দাদুদের বড় একটা পুরাতন বাড়ি, মস্ত বড় একটা পুকুর আর অনেকগুলি ফলের গাছ ছিল।বড় একটা উঠান ছিল।আমি এই উঠানে যে কয়দিন ছিলাম খেলা খেলতাম।কত যে মজা হতো!
আমার দাদু অনেক আদর করতো আমাকে।মজার মজার গল্প শোনাতো। একদিন একটা তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর গল্প শুনিয়েছিল। একদিন এক পাপী মহিলা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল পথের মধ্যে একটা কুকুর পানি পিপাসায় ছটফট করছিল। মহিলা কুকুরটিকে পানি পান করিয়েছিল। এজন্য আল্লাহ তার সব গুণাহ মাফ করে দিয়েছিল।আমি মনোযোগ দিয়ে মুগ্ধ হয়ে গল্প গুলি শুনতাম।
একদিন দাদু বাড়ির রাখাল ভুলুর কাধে চড়ে গ্রামের মেলা দেখতে গেলাম। ভুলু আমাকে দিদি বলতো। দুজনে গল্প করতে করতে আকাবাকা পথ দিয়ে হেটে চলেছি।একটা ধানক্ষেতের কাছে বস্তা পড়ে আছে, ভীতর থেকে কান্নার শব্দ আসছে।মনে হচ্ছে কেউ বিড়াল বস্তাবন্দী করে ফেলে গেছে।আমি ভুলুকে বললাম চলো তো দেখি?
ভুলু আমাকে কাধ থেকে নামালো, তারপর বস্তার মুখটা খুললো। ওমা! এ তো একটা বিড়াল ছানা! সাদা ফুটফুটে আর গায়ে কালো ডোরাকাটা। আমি কোলে নিতে গেলাম। ভুলু বললো কি করছো দিদি? বাড়ি ফিরে মা যদি শোনে তুমি বিড়াল ধরেছো বকাবকি করবে। ভুলু, মা বকবে না আমি দাদুভাইকে বলে দেবো, দাদু ভাই সেদিন আমাকে একটা গল্প বলেছিল সেখানে জীবে প্রেমের কথা বলা ছিল। চলো আজ আর মেলা দেখবো না, চলো এই সুন্দর 'পুটু' কে বাড়ি নিয়ে যায়। ভুলু কোলে তুলে নিলো পুটু কে। আর আমি পিছে পিছে হাটছি।
বাড়ি এসে দাদুকে ডাকলাম। দাদু আসলো, এত তাড়াতাড়ি মেলা দেখা হয়ে গেল? না দাদু পথের মধ্যে এই পুটু টা কান্না করছিল। কেউ বস্তায় পুড়ে ওকে রেখে গিয়েছে মাঠে। দাদু বললো-'এতো সুন্দর বিড়াল ছানাকে কেউ ফেলে দেয়? ' ভালো করেছো দিদি ভাই। আর নামটা কে দিলো- আমি দাদু ভাই। চমৎকার হয়েছে। ভুলু যা তো এক বাটি দুধ নিয়ে আয়। দুধ আনলো আমি আর দাদু পুটুকে দুধ খাওয়ালাম।চুক চুক করে পুটু এক বাটি দুধ খেয়ে নিল, খুব ক্ষুধার্ত ছিল।দাদু বললো চলো একে ঘরে নিয়ে যায়।
দাদু বাড়ি বেশিদিন থাকা হলো না। বাবা ফোন দিয়েছে ঢাকা ফিরতে হবে। আগামীকাল-ই মা রওনা দেবে বলেছে। আমি বায়না ধরলাম পুটুকে সাথে নেবো। কিন্তু মা নিতে দিলেন না। আমার মন খুব খারাপ পুটুকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। ঢাকা আসার দুদিন পর দাদুকে ফোন দিলাম-'দাদু পুটু কেমন আছে? ' দাদু কথা বলছে না। কি ব্যাপার দাদু বলো?
গতকাল পুটু পাশের বাড়ি গিয়েছিল আর ঐ বাড়ির রান্না করা এক বাটি মাছ না কি সে খেয়ে এসেছে। এজন্য ওরা পুটুকে ধরে লাথি দিয়ে মেরেছে। এতো মার মেরেছে পুটুর একটা পা ভেঙ্গে গেছে।আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেল।ফোন রেখে কাদতে শুরু করলাম। মা এসে জিজ্ঞেস করলো কাদছো কেন? মা পুটুকে কারা যেন মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছে। কেদো না তোমার দাদুকে বলে দিচ্ছি ডাক্তার দেখাতে।
পরেরদিন দাদুকে ফোন দিলাম দাদু ফোন ধরলো। দাদু, পুটু কেমন আছে? দাদু কথা বলছে না। দাদু কথা বলো-'পুটু কেমন আছে?' দাদু বলে উঠলো-'পুটু মারা গেছে দিদি'। আমি তারপর থেকে কান্না শুরু করেছিলাম। মানুষ এতো খারাপ কেন? সামান্য মাছের জন্য পুটুকে ওরা মেরে ফেললো? মা এসে আমাকে কোলে তুলে নিল। চোখ মুছিয়ে দিলো।আমি কাদতে কাদতে বললাম-'মা, পুটুর মা পুটুর জন্য কাদছে তাই না? '