somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ চুড়েলের পাল্লায়.....

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে বারবার করে বলে দিয়েছে যাতে রাতের বেলা কোন ভাবেই বাইরে না বের হই । কেউ যদি নাম ধরে ডাকে কিংবা অন্য যে কোন আওয়াজ শুনি তবুও যেন কোন ভাবেই বাইরে না বের হই । কারণ হচ্ছে এই এলাকাতে নাকি চুড়েল আছে । চুড়েল মানে হচ্ছে মেয়ে ভুত ! আমরা যেটাকে পেত্নী বলে চিনি । আমি কেবল মাথা কাত করে সম্মতি জানিয়েছে । হাসি চাপতে একটু বেগ পেতে হয়েছে অবশ্য । তবে বৃদ্ধ প্রিন্সিপাল স্যারের মুখের সামনে হাসতে পারি নি । কিন্তু একটু অবাক না হয়ে পারি নি । অংকের শিক্ষক হয়েও তিনি ভুতে বিশ্বাস করেন এটা দেখে খানিকটা অবাকই হয়েছি ।

চাকরি বাকরি করার ইচ্ছে আমার কোন দিন ছিল না । জীবনের একটা বড় সময় আমি কাটিয়ে দিয়েছি বেকার ভাবে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়িয়ে । বিশেষ করে তৃষার চলে যাওয়ার পর থেকে আমার কোন কিছুর প্রতিই আগ্রহ ছিল না । কোন কিছুতেই আমার মন বসতো না । সময় কাটানো বলতে কেবল বই পড়তাম । কিংবা ল্যাপটপে মুভি দেখতাম । আর পেট চালানোর জন্য কিছু মানুষজনকে পড়াতাম । ব্যাস এই ভাবে কত গুলো বছর চলে গেল । কিন্তু সারা জীবন তো আর টিউশনী করে কাটানো যাবে না । তাই চেষ্টা চরিত্র করে নিবন্ধন টা দিয়ে ফেললাম । পাশ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হল না । শেষ পর্যন্ত এই অখ্যাত কলেজে চাকরিটা হয়েই গেল। কলেজটা আমার পাশের জেলাতে । তাই প্রতি বৃহস্পতিবারে আমি বাসায় চলে যেতে পারবো । বরিবারে আমার কোন ক্লাস নেই । সেই রকম করেই রুটিন করা। সেই হিসাবে টানা তিন থাকা যাবেন বাসাতে । আর বাকি চারদিন এখানে ।

ঢাকা শহরে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম । বিশেষ করে একা একা থাকতে থাকতে । সব কাজ একা একা করতে আর ভাল লাগছিলো না । অন্তত সপ্তাহের তিন দিন এখন বাসায় থাকা যাবে । মায়ের হাতের রান্না খাওয়া যাবে আরাম মত । বাকি চার দিনের অন্তত দুই দিন বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া খাবার দিয়েই চলে যাবে । আর অন্য দুইদিন কাজের ছেলেটার সাহা্য্যে কিছু বানিয়ে নিতে পারবো আমি । ঢাকাতে তো আমি নিজের রান্না নিজেই করেছি । সুতরাং কোন সমস্যা হওয়ার কথা না ।

কলেজ থাকার জায়গা এমন কি এখানকার মানুষ সব মিলিয়ে আমার জন্য চমৎকার একটা স্থান । ক্লাস শেষ করে আমি সোজা বাসায় চলে আসি । একতলা বাসার সামনে খোলা মাঠ । বাড়িটার দুই দিকে গাছ গাছালিতে ভর্তি । বাড়ির সামনে উঠান । সেখানে কলপাড় । তবে বাড়ির ভেতরেই বাথরুম । যদিও সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা নেই । কলপাড় থেকে পানি নিয়ে ওয়াশরুমে রাখতে হয় । সেটা খুব একটা সমস্যা না । কাজের ছেলেটাই পানি ভেতরে নিয়ে যায় । আমি অবশ্য কলপাড়েই গোসল করি । আর ইচ্ছে হলে ৫ মিনিটের হাটা পথ পার করে পুকুরে গিয়েও গোসল করা যায় । সব মিলিয়ে আমার দিন কাটতে থাকলো সুখে শান্তিতে । কেবল একটা অশান্তি রয়েছে । সেটা হচ্ছে এই এলাকার মানুষ ভুতে বিশ্বাস করে খুব। ঠিক ভুতে না, পেত্নীতে বিশ্বাস করে । সন্ধ্যা হতে না হতেই সব দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায় । কেউ বাইরে বের হয় না । এমন কি এশার নামাজ পড়তে বের হয় না । রাতের বেলা কেবল ঈমাম সাহেব একাই মসজিদে থাকেন সেই আযান দেন, সেই নামাজ পড়েন ।

ব্যাপারটা এমনও না যে এই এলাকাতে সবাই অশিক্ষিত মানুষ । সব মিলিয়ে ১০০টার মত পরিবার বাস করে এই গ্রামে । এই গ্রামে কলেজ টা হওয়ার কারণে বেশ কিছু দোকান পাটও গড়ে উঠেছে । অনেক মানুষই পড়াশুনা জানে । কিন্তু সবাই এই পেত্নীতে ভয় পায় রাতের বেলা । এরা এই পেত্নীতে ভয় পায় । এখানে এই পেত্নীকে এরা ডাকে চড়েল নামে । চুড়েল শব্দটা হিন্দি শব্দ । ইন্ডিয়ান অনেক ভুতের মুভিতে এই চুড়েল দেখা গেছে । এই বাংলাদেশেও চুড়েল কোথা থেকে আসলো !!

এই নিয়ে মোটামুটি এই পানশালা গ্রামে বসবাস করছি কিছু দিন । ক্লাস নেওয়ার পর বাসায় চলে আসি । খাওয়া দাওয়া শেষ করে বই নিয়ে বসি । গল্পের বই পড়ার পরে নিজের ল্যাপটপে লেখালেখি করি কিছু সময় । এখানে নেটের অবস্থা খুব একটা ভাল না । ইউটিউবে ভিডিও দেখার উপায় নেই । বাসা থেকে আসার সময় কিছু মুভি টিভি সিরিজ ডাউনলোড করে নিয়ে আসি । সেগুলো দেখি সময় পেলে । তবে পত্রিকা, ব্লগ পড়া যায় কোন মতে । লেখা পোস্ট করতেও খুব একটা সমস্যা হয় না ।

আজকেও খাওয়া দাওয়ার পরে একটা লেখা লিখছিলাম ব্লগে পোস্ট করবো বলে । এমন সময় মনে হল কেউ যেন আমার বাড়ির গেট টা খুলে ভেতরে ঢুকলো । গেটটাতে তালা দেওয়া নেই । প্রয়োজন মনে করি নি । এই এলাকার মানুষ যে পরিমান ভয় পায় রাতে বাইরে বের হবে এমন সাহস কারো নেই । গেটে তালা দেওয়ার কোন দরকার নেই । আর আমার এই বাড়িতে বাইরে এমন কিছু থাকেও না যে তালা দিতে হবে ।
আমি খানিকটা কৌতুহলী হয়ে উঠলাম । এতো রাতে আমার বাসায় কে এল? কার এতো বড় সাহস হল একটু দেখি !

দরজা খুলতে গিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের সাবধান বানী। কোন ভাবেই যেন ঘরের দরজা না খুলি । দরজা খুললেই বিপদ । আমি তেমন কিছু গায়ে মাখলাম না । দরজা খুলে বের হয়ে এলাম । চারিদিকে শান্ত হয়ে আছে । কোথাও কোন আওয়াজ নেই । এমন কি কোন ঝিঝিও ডাকছে না । একটু আগেও নানান পোঁকার ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম । এখন একেবারে চুপ ! বাড়ির গেট টার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সেটা খোলা । অর্থ্যাৎ আমি যে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়েছি সেটা মিথ্যা না । বাতাতে এই দরজা কোন ভাবেই খুলে যাওয়া সম্ভব না । তার মানে কেউ না কেউ গেট টা খুলেছে !
আমি দরজা ছেড়ে বারান্দায় বের হয়ে এলাম । বারান্দাতেও একটা গ্রিলের গেট লাগানো । এটাতে একটা তালা দেওয়া রয়েছে । আমার কেন জানি মনে হল বাইরের গেটের ওপাশেই কেউ দাড়িয়ে রয়েছে । কেন এমনটা মনে হল সেটা আমার জানা নেই । আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না । তবে আমার মনে হল যে আমার এখন ঐ গেট টার ওপাশে যাওয়া লাগবে । দেখতে হবে সেখানে কে রয়েছে ।

আমি গ্রিলের গেট টা খুলতে যাবো তখনই আমার কাজের ছেলে জাকিরের ডাক শুনতে পেলাম ।
-ভাইজান !
আমার ঘরের পাশের ঘরটা খাওয়ার ঘর হিসাবে ব্যবহার হয় । জাকির সেখানেই ঘুমায় রাতের বেলা ।
আমি জাকিরের দিকে ফিরে তাকালাম। দেখলাম জাকির খানিকটা ভয়ার্ত চোখেই আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । আমি যেন একটু বাস্তবে ফিরে এলাম । জাকির আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গেট খুলতেছেন কেন ভাইজান ?
আমি প্রথমে কি বলবো খুজে পেলাম না । তারপর বললাম, বাইরের গেট টা কে জানি খুলে রেখেছে
আমার কথা শুনে জাকির বাইরের গেট টার দিকে তাকালো । ওর মনে হল যেন ও আরও বেশি ভয় পেয়ে গেল । জাকির বলল, আমি তো সন্ধ্যা বেলা গেট লাগাইলাম !
-হ্যা । তাহলে খুললো কে? কেউ আসতে পারে !

জাকির আমার দিকে কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, চুড়েল আইছে ! আপনের উপর নজর পরছে !
-মানে ! কি বলছিস আবোল তাবল !
-হ ! ভাইজান ! আপনার উপরে তার চোখ পড়ছে । আইজ গেট খুলছে । দেখবেন এরপরে সে উঠানে আইয়া আপনেরে ডাকবো !
-ভাল ! আসুক তো ! আমিও একটু দেখি ! অনেক দিন ধরে আমার পেত্নী দেখার সখ !

এই বলে আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করলাম । কিন্তু জাকির হাসলো না মোটেই । সে আমার কাছে এসে কি যেন পড়ে ফু দিল আমার শরীরে । তারপর বলল, ভাইজান দরজা বন্ধ কইরা ঘুম দেন । খবরদার বাইরে আইবেন না ! আমি আগুন জ্বালাইয়া রাখি ! আগুনে চুড়েল আহে না !

আমাকে এক প্রকার জোর করেই ঘরে পাঠিয়ে দিল । আমি ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম । একটা জিনিস সত্যিই আমার মাথায় এল না । আমার কেন মনে হল যে ঐ গেটের ওপাশে কেউ আছে এবং আমাকে ওখানে যেতে হবে ! এমন টা মনে হওয়ার কি কোন কারণ ছিল ? তাহলে কেন মনে হল এমনটা ?

আমি ভেবেছিলাম ঘটনা বুঝি এখানেই শেষ । কিন্তু ঘটনা এখানে শেষ হল না । বলতে গেলে শুরু হল । দুপুর বেলা ক্লাস নিয়ে টিচার্স কমন রুমে বসে আছি এমন সময় প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে ডাক পড়লো । প্রথমে ভেবেছিলা হয়তো ক্লাসের ব্যাপারে কোন কথা বলবেন কিন্তু তিনি গত রাতের ব্যাপারে জানতে চাইলেন । আমি ঠিক বুঝলাম না যে গতরাতের ঘটনা প্রিন্সিপাল স্যার কিভাবে জানতে পারলো?
আমার কাছে খুটিয়ে খুটিয়ে জিজ্ঞেস করলো সব । আমার কেন জানি মনে হল তিনি আগেই জাকিরের কাছ থেকে সব কিছু জানতে পেরেছেন । সম্ভবত জাকিরকে তিনি আগে থেকেই বলে রেখেছিলেন ।

প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, শুনুন অপু সাহেব, চুড়েলের চোখ আপনার উপরে পড়েছে । আপনি বরং কটাদিন ছুটি নিয়ে বাসা থেকে ঘুরে আসুন !
-স্যার আমার ছুটির দরকার নেই । অন্তত কোন পেত্নীর ভয়ে আমি ছুটি নিয়ে পালাবো না ।
-আপনি বুঝতে পারছেন না । এর আগে আরও দুজন স্যার মারা পরেছে ! আপনি নিশ্চয়ই জানেন !

আমারই পোস্টের আগের দুজন স্যারের কথা আমি জানি । তারা দুজনই আত্মহত্যা করে মারা গেছেন । তাদের একজন ছিল ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের রোগী । তার কথা আমি জেনেছি ফেসবুক থেকে । অন্য জনের নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল । আর এখানে এসে শুনি যে তাদের নাকি চুড়েলে ধরেছিলো । কি হাস্যকর এদের কথা বার্তা
প্রিন্সিপাল স্যার বলল, শুনুন মুরব্বীদের কথা শুনতে হয় । আমি মানছি আপনি এসব বিশ্বাস করেন না । তবুও যান । একটু ছুটি কাটিয়ে আসুন । আমি আপনাকে হারাতে চাই না ।

কি আর করা ! ছুটি নিয়ে বাসায় চলে এলাম । বাসায় এসে পড়লাম আরেক বিপদে । মা এবার আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে উঠে পড়ে লাগলো । আগে একটা কারণ দেখাতাম যে চাকরি বাকরি নাই তাই বিয়ে শাদী করবো না । কিন্তু এখন সেই অযুহাতও দেখাতে পারছি না । শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে মেয়ে দেখতে যেতে হল ।

মেয়ে দেখতে গিয়েই বুঝলাম যে বিপদ আসন্ন । মেয়ের পরিবার আমাকে পছন্দ করেছে । এমন কি মেয়ে আমার দিকে যেমন করে তাকিয়ে ছিলো আমি খানিকটা শংঙ্কিত চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । বুঝতে পারলাম যত দ্রুত সম্ভব আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে । নয়তো এরা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে । মেয়ে দেখে এসেই বিকেল বেলা নিজের কর্মস্থলের দিকে রওয়ানা দিলাম । বললাম যে ছুটি শেষ হয়ে গেছে ।

সন্ধ্যার সময় রুমে ঢুকে শান্তির ঘুম দিলাম একটা । এখানে থাকলে অন্তত বিয়ের সম্ভবনা নেই । ঘুম ভাঙ্গলো রাতের বেলা । কেন ঘুম ভাঙ্গলো বুঝতে পারলাম একটু পরে । সন্ধ্যার সময় না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । রাতে ক্ষুধা পেয়ে ঘুম ভেঙ্গেছে । বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার থেকে কিছুটা বের করলাম ফ্রিজ থেকে । নিজেই গরম করে খেয়ে নিলাম । জাকির বাসায় নেই । আমি যতদিন আমার গ্রামের বাড়িতে থাকি জাকির নিজের বাসায় থাকে । আমি এসে ডাক দিলে ও আসে । আমি যেহেতু আগেই চলে এসেছি ওর জানার কথা না। তাই সে আসে নি । ভাবলাম কটাদিন একাই থাকি । ওকে খবর দিবো না । বাড়ি থেকেও বের হব না । এই পুরো সপ্তাহটা আমার ছুটি । সন্ধ্যার আগে না বের হলে কেউ টের পাবে না যে আমি এসেছি । প্রিন্সিপাল স্যারের কাছেও খবর যাবে না ।

আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার শুয়ে পড়লাম । তবে শোয়ার সাথে সাথে আমার ঘুম এল না । নানা রকম চিন্তা ভাবনা আসতে লাগলো মনের ভেতরে । এভাবে আর কতদিন বিয়ে না করে থাকতে পারবো কে জানে ! মা এইবার খুব চেপে ধরেছিলো । যদিও আমি কোন ভাবেই বিয়ে করতে চাই না । কারণ যে মেয়েটিকে বিয়ে করবো তার প্রতি আমার কখনই আগ্রহ আসবে না আমি জানি । যে আগ্রহ আমার ছিল সেটা শেষ হয়ে গেছে তৃষার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই । এখন অন্য কোন মেয়ের প্রতি আমার কোন ভালোবাসা আসে না । আসবে না ।

হঠাৎ বাইরের গেট খোলার আওয়াজ পেলাম । রাত একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে আছে । আমি পরিস্কার শুনতে পেলাম বাড়ির গেট খুলছে কেউ । কোন ভুল হওয়ার কথা না । রাতের বেলা এই এলাকাতে কোন মানুষ বাইরে বের হয় না । সেখানে আমি যে বাড়িতে এসেছি সেই কথা কেউ জানে না । তাহলে এই বাড়িতে কে আসবে?
কোন চোর?
না চোট ডাকাত এই এলাকাতে একদমই নেই । ভয়ের কারণেই কেউ বাইরের বের হয় না চুরি করবে কি!

এই তো আবার ! গেট টা এবার পুরোপুরি খুলে গেছে । স্পষ্ট শুনতে পেলাম । কোন সন্দেহ নেই । আর কৌতুহল দমাতে পারলাম না । আরও ভাল করে বললে আমি যেন একটা ঘোরের ভেতরে চলে গেলাম । আমার কেন জানি মনে হচ্ছে যে আমার এখন এই দরজাটা খুলতেই হবে । বাইরে গিয়ে আমাকে দেখতে হবে আসলে কি হচ্ছে । কেউ আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে নিশ্চয়ই ।

আমি দরজা খুলে প্রথমে বারান্দাতে এবং পরে বারান্দার গেটটা খুলে উঠানে বের হয়ে এলাম । বাইরের গেট টা হাট করে খোলা । আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি গেটটা লাগিয়েছিলাম ভাল করে । কোন ভাবেই ভুল হওয়ার কথা না । বাইরে বাতাস নেই যে গেট খুলে যাবে না । অন্তত সাধারন বাতাসে এই গেট কোন ভাবেই খুলে যাওয়ার কথা না ।

আমি আস্তে আস্তে গেট টার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলাম । আমার কেবলই মনে হতে লাগলো কেউ আমার জন্য দাড়িয়ে রয়েছে গেটটার বাইরে । আমার জন্য অনেক দিন ধরে সে অপেক্ষা করে আছে। গেটের ঠিক কাছে যেতেই আমি তাকে দেখতে পেলাম ।
মেয়েটা শাড়ি পরে আছে । লম্বা চুল একেবারে পা পর্যন্ত নেমে গেছে । পা খালি । চাঁদের আলোতে পরিস্কার দেখতে পেলাম মেয়েটাকে । আমার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে !
একটু যেন হাসলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আসবে না আমার সাথে?
আমার মুখ দিয়ে আপনা আপনিই বের হয়ে গেল, কেন আসবো না?
-তাহলে এসো ।

এই বলে মেয়েটি হাটতে লাগলো । আমি তার পেছনে হাটতে লাগলাম । আমার আর কিছু মনে নেই । আমার কেবল মনে হতে লাগলো যে এই মেয়েটির পেছনেই আমাকে যেতে হবে । অন্য কিছু আমার ভাবা চলবে না । মেয়েটি যেখানে নিয়ে যায় সেখানেই যেতে হবে । এভাবে কত দুর হেটেছি আমি বলতে পারবো না । হঠাৎ আমি আবিস্কার করলাম যে আমি অন্ধকার এক মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে রয়েছে । জায়গাটা আমি চিনতে পারলাম । আমাদের কলেজের মাঠ ।
এখানে কিভাবে এলাম আমি ?
যে মেয়েটির পেছনে এসেছি সেই মেয়েটি কোথায় গেল?
কিভাবে চলে এলাম আমি ?

তীব্র একটা ভয় অনুভব হল । বারবার কেবল মনে হল এখানে কিভাবে আর কেন এলাম আমি? এই এলাকাতে এসে এই প্রথম আমি ভয় পেলাম ! অন্ধকার মাঠে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় আমার কেবলই মনে হতে লাগলো যে দুর থেকে কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে তীক্ষ দৃষ্টিতে !

-স্যার...

আমি চমকে ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার থেকে দুরে দুজন মানুষ দাড়িয়ে । আরেকটু কাছে আসতেই আমি ওদের চিনতে পারলাম । ওরা দুজন রাতে এই কলেজে থাকে । আমাকে এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নেমে এসেছে নিশ্চয়ই । আমি দ্রুত ওদের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। ওদের ভেতরে একজনের হাত ধরতেই মনে একটু বল এল । একটু শান্তি পেলাম । কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে আমি আমার বাড়ি থেকে এই কলেজের মাঠে কিভাবে এলাম । অন্তত ২০ মিনিটের হাটার পথ । এই এতোটা পথ আমি হেটে এসেছি অথচ আমার মনে নেই কিছুই ।

রাতটা আমি কলেজেই কাটিয়ে দিলাম । সকালে ফিরে গেলাম বাসায় । মনের ভেতরে একটা অস্বস্তি ঠিকই কাজ করতে লাগলো । কিছুতেই মনটাকে শান্ত করতে পারছিলাম না ! সত্যিই কি আমি কাউকে দেখেছিলাম ? কি ঘোরে বাসা ছেড়ে বের হয়ে গেলাম ! এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই । সত্যিই কি তাহলে চুড়েলের পাল্লাতে পড়েছিলাম আমি ? এই যুগে এসেও আমাকে এটা বিশ্বাস করতে হবে !


চলবে....
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১২:৫৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×