কদিন আগেই মাই নেইবার টোটোরো এনিমেশন মুভি সম্পর্কে বলেছিলাম । এর পরে আরও বেশ কয়েকটা মুভি পরপর দেখে ফেলেছি যার সব গুলোই Studio Ghibli এনিমেশন বানিয়েছে । এতো চমৎকার সব কাহিনী নিয়ে মুভি গুলো বানানো হয়েছ যে প্রতিটি মুভি দেখার পর মনের ভেতরে এমন একটা আন্দোলন তৈরি হয় সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না । Studio Ghibli এনিমেশন কোম্পানী ১৯৮৫ সালে জাপানের টোকিওতে তার কার্যক্রম শুরু করে । এখনওপর্যন্ত প্রায় ২২টা এনিমেশন মুভি তারা বানিয়েছে । তার ভেতর থেকে আমার দেখা ৫টা মুভি নিয়ে আজকের এই পোস্ট । গতদিনের মাই নেইবার টোটোরো মুভিটাও তারাই বানিয়েছে । সালটা ছিল ১৯৮৮ ।
আমার দেখা মুভি লিস্টের প্রথম মুভিটার নাম Castle in the Sky । মুভিটা মুক্তি পায় ১৯৮৬ সালে ।
ছবি উৎস- fathomevents.com
মুভিটার প্রধান দুই চরিত্রের নাম সীটা এবং পাজু । মুভির শুরুতেই দেখা যায় যে আকাশ দস্যু ডোলা এবং তার ছেলেরা একটা প্লেনকে আক্রমন করে । সেখানে সীটা থাকে । মুসকা নাকের আরেকজন সরকারী সিক্রেট সার্ভিসের অফিসারও সেখানে থাকে । মূলত মুসকা সীকাকে নিয়ে যাচ্ছিলো । সীতা তার কাছ থেকে নিজের গলার লকেট ছিনিয়ে নেয় । তারপর মুসকা এবং দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে সেই প্লেন থেকে পালাতে চায় কিন্তু ঘটনা ক্রমে প্লেন থেকে পরে যায় । তবে তার গলায় এক আশ্চর্য লকেট থাকায় সে বাতাসে ভেসে ভেসে নিচে পড়ে । সীটাকে খুজে পায় পাজু !
কিন্তু দস্যু ডোলা এবং গভার্মেন্টের লোকেরা তাদের পিছু ছাড়ে না । ওদের হাত থেকে দুজন পালাতে গিয়ে একটা পরিত্যাক্ত মাইনে ঢুকে পরে । সেখানে এক বৃদ্ধের কাছে জানতে পারে লাপুটা সম্পর্কে তথ্য পায় । পাজুর বাবা এই লাপুটা খুজে পেয়েছিলো । কিন্তু লোকজন তার কথা বিশ্বাস করে নি । পাজুর জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে এই লাপুটা খুজে বের করা এবং বাবাকে সত্যবাদী প্রমান করা ।
লাপুটার পেছনে কেবল পাজুই নয় সেই গভার্মেন্টের লোকজনও পরে আছে । মূলত লাপুটাতে লুকাতে ধনসম্পদ লুট করার জন্য দস্যু ডোলা এবং সেই গভার্মেন্টের মুসকা কাজ করছে । এবং সীটার গলায় যে লকেট টা রয়েছে সেটা লাপুটার খোজ দিতে পারে ।
একসময় সীটা এবং পাজু মুসকার হাতে ধরা পরে । মুসকা সীটাকে বোঝায় যে যদি সে মুসকাকে সাহায্য করে তাহলে পাজুকে তারা ছেড়ে দিবে । সীটা রাজি হয় । কিন্তু পরে পাজু পাইরেট ডোলার সাথে একত্র হয়ে সীটাকে মুসকার হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে । সেই উদ্ধারের সময় সে লাপুটা সম্পর্কে তার প্রযুক্তি সম্পর্কে একটা পরিস্কার ধারনা পায় । তবে উদ্ধারের সময় সীটা তার গলার লকেট হারিয়ে ফেলে । মুসকা সেই লকেটের সাহায্যে এক সময় লাপুটা খুজে পায় । এদিকে সীটা আর পাজুও লাপুটাতে গিয়ে হাজির হয় । তারপর .... সেখানে সীটার আসল রহস্য জানা যায়, লাপুটার সাথে তার কি সম্পর্ক সেটাও পরিস্কার হয় । মুসকা কেন লাপুটা খুজছিলো আর লাপুটার মানুষজন কেন লাপুটাকে ত্যাগ করে চলে গেছে সবই শেষটাতে এসে জানা যায় !
আপনিও তৈরি হয়ে যায় এই চমৎকার মুভিটা দেখার জন্য !
এর পরের মুভিটার নাম Kiki's Delivery Service
ছবি উৎস - rottentomatoes.com
Ghibl স্টুডিওর প্রতিটি মুভির কাহিনীই আলাদা এবং চমৎকার । এই মুভিটাও তার ব্যতীক্রম নয় । কিকি হচ্ছে একজন উইচ বা ডাইনি । তবে আমরা গল্প উপন্যাসে ডাইনি বলতে কেবল বিকৃত চেহারার খারাব বুড়িকেই বুঝি যারা কেবল মানুষের অপকার করে কিন্তু জাপানের কালচারে এই উইচদেরকে ভাল ভাবেই দেখানো হয়েছে যারা মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করে । কিকিই এবং তার মাও তেমন উইচ । তারা মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করে এবং মানুষ্য সমাজে তারা গ্রহনযোগ্য ।
যাই হোক কাহিনী শুরু হয় কিকির বাড়ি ছাড়া নিয়ে । উইচদের ট্রেডিশন অনুযায়ি যখনই কোন উইচের বয়স ১৩ হবে তখনই তাকে পরিপূর্ন উইচ হয়ে ওঠার জন্য বাড়ি ছেড়ে এক বছর বাইরে থাকতে হবে । বাইরের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে । কিকিও তার বছর পূর্ন হওয়ার পর এক রাতে বাড়ি ছেড়ে অজানার পথে রওয়ানা দেয় । সাথে সঙ্গী হয় তার কালো বিড়াল জিজি । জিজির কথা সে পরিস্কার বুঝতে পারে । সে তার ঝাড়ুতে করে উড়াল দেয় । গিয়ে হাজির হয় এক বড় শহরে । কিন্তু সেখানে গিয়ে পড়ে বিপদে । শহরে একলা একটা ১৩ বছরের মেয়েকে কোন হোটেল থাকতে দিতে চায় না । তখনই ঘটনা ক্রমে কিকি এক প্রেগনেন্ট বেকারীর মালিককে সাহায্য করে । সেই মহিলা খুবই চমৎকার একজন মানুষ । সে কিকিকে তারই বেকারির পেছনের একটা ঘরে থাকতে দেয় ।
কিকি সেখানে তার ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে । নিজে যেহেতু ঝাড়ুতে করে উড়ে বেড়ায় সেহেতু জিনিস পত্র পৌছে দিতে তার খুব একটা কষ্ট হয় না । নানান মানুষের সাথে তার পরিচয় হয় ।
সেখানে টমবো নামের এক ছেলের সাথেও তার পরিচয় হয় । টমবো তাকে খুবই পছন্দ করে । কিন্তু টমবো অন্যান্য বন্ধুদের আচরনে কিকি নিজেকে খানিকটা অবাঞ্চিত মনে করে । এক পর্যায়ে এটা নিয়ে কিকি খানিকটা মানসিক কষ্টে পড়ে । এবং সে তার পাওয়ার হারিয়ে ফেলে । আর উড়তে পারে না, তার বেড়ালের কথাও বুঝতে পার না ।
তখন তার আরেক আর্টিষ্ট বন্ধুর সাথে দেখা দেয় । সকল ঝামেলা থেকে কিছু দিন দুরে থাকার জন্য সে আর্টিষ্ট বন্ধুর সাথে তার কেবিনে গিয়ে হাজির হয় । তখন আর্টিষ্ট বন্ধুটি বলে তারও এমন হয়, মাঝে মাঝে সে আঁকতে পারে না । মানসিক ভাবে অশান্তিতে থাকলে এমন হয় তারপর একটা সময়ে ঠিকই আকার শক্তি ফিরে আসে । কিকিকেও বলে যে এক সময়ে তার উইচের শক্তিও ফিরে আসবে । কেবল নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে !
সেই ঘটনাই ঘটে কয়েকদিন পরে । তার বন্ধু টমবো বিপদে পড়ে । একটা বেলুনশিপের দড়ি ঝুলে উড়ে যায় । তাকে উদ্ধার করতে কিকি এগিয়ে যায় । কিন্তু সে তো তার উড়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে । তাহলে শেষ পর্যন্ত কি কিকি তার উড়ার শক্তি আবার ফিরে পাবে ? রক্ষা করতে পারবে তার বন্ধুকে !
Studio Ghibli এর মুভি গুলো মনের উপরে একটা আলাদা প্রভাব ভেলে । নতুন একটা জীবনবোধ তৈরি করে । আমি বলবো মুভি গুলো দেখার পরে আমি আবার যেন একটু নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করি । নতুন ভাবে সব কিছু এপ্রিশিয়েট করতে শুরু করি । যত গুলো মুভি তারা বানিয়েছে সব গুলো দেখে ফেলার ইচ্ছে আছে আমার । কয়েকটা দেখে ফেলেছি । বাকি গুলোও দেখে ফেলবো আশা রাখি । আপনারাও দেখতে পারেন । বিশেষ করে আপনারা যারা আপনাদের সন্তানদের নিরাপদ এবং সুস্থ বিনোদন নিয়ে চিন্তিতা তারা নিশ্চিন্তে এই মুভি গুলো দেখতে দিতে পারেন ।