somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার মনিরা সুলতানার বই ''বাসি বকুলের ঘ্রাণ''

১৮ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
চিঠি আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ । বর্তমান সময়ে মানুষ এই কাগজে লেখা চিঠির সাথে সম্পর্ক একেবারে শেষ করে দিলেও ইলেক্ট্রনিক চিঠির সাথে সম্পর্কে টিকে আছে বেশ ভাল ভাবেই । প্রিয় মানুষটিকে মনের কথা টুক করে জানিয়ে দেওয়া যায় সহজেই । কিন্তু আগে মানুষ চিঠি লিখতো তারপর সেটা প্রিয় মানুষের কাছে পাঠিয়ে অপেক্ষা করতো দিনের পর দিন । ঠিক মত চিঠি পৌছালো কিনা, সেই চিঠি সঠিক হাতে গেল কিনা অন্য কেউ পড়ে ফেললো কিনা ! কিন্তু যদি চিঠির ঠিকানাই ভুল হয় ? একজনের চিঠি গিয়ে হাজির হয় অন্য জনের কাছে ? উড়ো চিঠির গল্পটাও ঠিক এমনই । হলের ভুল বিল্ডিংয়ের ঠিকানাতে চিঠি আসে শোয়েব নামের এক ক্যাডেটের । কত আবেগ দিয়ে সে চিঠি লিখেছে তার প্রিয় মানুষটিকে অথচ সেই চিঠি পৌছিয়েছে ভুল মানুষের দরজায় !

গল্প পড়ে আমার মনে বড় ইচ্ছে হল যে শোয়েব কি অবশেষে তার আসল মুনিরার কাছে যেতে পেরেছিলো? আমার গল্প হলে দেখা যেত যে ক্যাডেট শোয়েবের সাথে অন্য মুনিরার একটা প্রেম হয়ে গিয়েছে । কিন্তু বাস্তব তো আমার গল্প না । বাস্তবে এসব আসলে কিছু হয় না !

২.
কেবল হত যদি আমাদের ব্যবহৃত পছন্দের জিনিস পত্র গুলোও আমাদের কাছে তাদের অভাব অভিযোগ করতো ! আমাদের উপরে অভিমান করতো । তখন হয়তো দেখা যেত আমার ল্যাপটপ আমাকে প্রতি নিয়ত অভিযোগ করছে যে তাকে কেন আমি এতো অবহেলা করছি ! কেন আমার এন্ড্রোয়েড মোবাইলকে বেশি সময় দিচ্ছি । বাটন ফোনটা তো তাহলে কান্নাকাটি করে শেষ হয়ে যেত । পিসি অবশ্য খুব বেশি অভিযোগ করতো না । নিয়মিত তাকে ঠিকই সময় দিচ্ছি । দেখা শুনা করছি । কোন এক রাতে ঘুম ভেঙ্গে আমি হয়তো দেখতে পেতাম তারা নিজেদের ভেতরে কথা বলছে । আমার অবহেলা কষ্ট দেওয়া নিয়ে নিজেদের মাঝে দুঃখ বিলাশ করছে । এমন সব দুঃখ বিলাশের গল্প হচ্ছে পড়ুয়া প্যাচালি --- খন্ডটা । একটা লাইন আমার কাছে বেশ মজার লেগেছে । লেখিকা সেখানে লিখেছেন - বেশ একটু অভিমানের স্বরে ম্যাককে শান্তনা দিচ্ছে কমপ্যাক ।
দেশে ফেরার পরে সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে লেখিকার । সব আস্তে ধীরে গুছিয়ে নিয়ে আসতে আসতে লেখালেখি থেকে নিজেকে দুরে রেখেই চলেছেন অথবা রাখতে হয়েছে । আশা করি এক সময়ে সব গুছিয়ে নিয়ে এসেছে আবারও নিয়মিত তার ম্যাক আর কমপ্যাকের মনের দুঃখ গুলো দুর করবেন । সনি ভাইও যেন রাত জেগে আর কান্নাকাটি না করে সেটার দিকেও খেয়াল দিবেন ।

৩.
লেখিকার যাপিত জীবনের গল্প গুলো পড়তে পড়তে আমার কেন জানি বারবার মনে হচ্ছিলো যে এযেন আমারই গল্প আমি পড়ছি । ছোট বেলা তো এভাবেই কেটেছে আমাদের । বাবার বদলির চাকরি, এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে যাওয়া । নতুন বন্ধু নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো । ঈদ কিংবা অন্য ছুটির দিনে নানা/দাদা বাড়ি বেড়াতে যাওয়া । কাজিনদের সাথে হুটিপুটি রাতে ভুতের গল্প, ঝড়ে এক সাথে আম কুড়ানো, বড়দের বাড়ি ফেরার তাগাদা । এসব তো আমার সাথেও ঘটেছে । আমিও তো একই ভাবে এই জীবন পার করে এসেছি অতীতে । হঠাৎ করেই তাই বইটাকে বড় আপন মনে হতে থাকে আমার । মনে হতে থাকে যেন এগল্প গুলো যেন আমার বড় পরিচিত । আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা !

৪.
আমাদের সবার জীবনেই বলার মত কিছু না কিছু গল্প থাকে । প্রতিদিনকার ছোট ছোট গল্প নিয়েই মূলত আমাদের একটা জীবন তৈরি হয় । কারো কারো জীবনের এই গল্প গুলো না বলাই থেকে যায় । কেউ আবার বলার জন্য কাউকে খুজে পায় না আবার কেউ কেউ হয়তো সে গল্প গুলো কিভাবে বলবে সেটা বুঝতে পারে না । বাসি বকুলের ঘ্রাণ বইতে লেখিকা তার সেই জীবনের গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন । উপরে সেই গল্প গুলোর কয়েকটা গল্পের ব্যাপারে কেবল বলা হয়েছে । যদি পুরো বইয়ের গল্প গুলো নিয়ে বলতে যাই তাহলে দেখা যাবে বইয়ের থেকে পোস্টের দৈর্ঘ লম্বা হয়ে যাবে । একটু আগেই বললাম যে সবার জীবনের কিছু গল্প থাকে কিন্তু সবাই সেই গল্প বলতে পারে না । আবার আমাদের মাঝে কেউ কেউ থাকে যারা নিজেদের জীবনের এই গল্প গুলো খুব চমৎকার ভাবে বলতে পারেন । কারো কারো মুখ অতি সাধারণ ঘটনাও বড় বেশি মধুর শোনায় । মানুষ তন্ময় হয়ে সেই গল্প শুনতে থাকে । বাসি বকুলের ঘ্রাণও সেই তেমনই তন্ময় হয়ে শোনার গল্প । একবার শুরু করলে তা শেষ না করে ওঠার উপায় নেই । বিশেষ করে যখন আপনি বই পড়তে পড়তে ভাববেন যেন আরে এতো দেখি আমার কিংবা আমার পরিচিত মানুষেরই গল্প !


৫.
বইটি আজই সংগ্রহ করে পড়ে ফেলতে পারেন । লেখিকার লেখার হাত নিয়ে কোন কিছু বলার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না । সেটা সম্পর্কে সকল ব্লগারদের একটা পরিস্কার ধারণা থাকা স্বাভাবিক ! কোন এক বর্ষণ মুখ বিকেলে বই পড়া শুরু করবেন । অলস বিকেলে চা কিংবা কফির সাথে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়তে গিয়ে আপনার এক অনাবিল আনন্দবোধ জাগভে । মনে হবে যে মানুষের জীবনে কত চমৎকার সব ঘটনা ঘটে । আপনি নিজেও উপলব্ধি করতে পারবেন যে আপনার জীবনটাও কিন্তু কম চমৎকার নয় । বিশেষ করে লেখিকার জীবনের সাথে যখন নিজের জীবনের একটা মিল খুজে পাবেন । আপনার শৈশব কৈশোর কিংবা যুবক বয়সের সাধারণ ঘটনা গুলো নিয়ে আপনি আবার ভাবতে বসবেন একটু । মুখে তখন আপনা আপনি চলে আসবে একটা সুখস্মৃতির হাসি !


বইটি কিনতে এইখানে ক্লিক করুন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:৫৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×