somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাড়ি থেকে পালানোর গল্প

২৪ শে জুন, ২০২২ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের প্রায়ই সবারই কখনও না কখনও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ছুড়ে দিয়ে যেদিকে চোখ যায় সেদিকে চলে যওয়ার কথা মনে আসে । আপনারও কোন না কোন সময়ে এমন কথা মনে এসেছে নিশ্চয়ই! আমার এসেছে বেশ কয়েকবারই। এখনও আমার প্রায়ই মনে আসে কথাটা ! প্রায়ই মনে হয় সাইকেলটা নিয়ে বের হয়ে পড়ি । ফোনটা বাসায় রেখে, অল্প কিছু টাকা পয়সা নিয়ে যেদিকে দুচোখ চলে যায়, সেদিকেই সাইকেলটা চালিয়ে দিই । কিন্তু এই ইচ্ছে টা কোন ভাবেই পূরণ করা হয় না । হয়তো কোন দিন সত্যি সত্যি বের হয়ে যাব । যতদিন না যাচ্ছি ততদিন এই জীবন নিয়েই আছি । ব্লগেও আছি !

যাইহোক আজকের পালানোর গল্প যদিও এই গল্প না । আজকের পালানোর গল্পটা হচ্ছে আমার জীবনে প্রথম এবং এক মাত্র বাড়ি ছেড়ে পালানোর গল্প । ছোট বেলা থেকেই আমি আমার বাবাকে বড় ভয় পেতাম । অথচ তিনি প্রায় কোন দিনই আমার গায়ে হাত তোলেন নি । সম্ভবত একবার তার হাতে একটা চড় খেয়েছিলাম । অবশ্য তার আমাকে মাইর দেওয়ার দরকারও ছিল না । কেবল আমার দিকে একবার চোখ গরম করে তাকানোই যথেষ্ঠ ছিল । আমি আমার পুরো জীবনে বলতে গেলে কোন অন্যায়ই করি নি কেবল মাত্র আমার বাবার এই মারের ভয়ের কারণে । আমার বড় ভাইকে প্রচুর মাইর দিয়েছেন তিনি । সেই মাইর খাওয়া দেখেই আমি মোটেও কোন অন্যায় করার সাহস করি নি কোন দিন । মোটামুটি ক্লাস টেন পর্যন্ত আমার নামে বাসায় কখনও নালিশ আসে নি । ক্লাস টেনে অবশ্য একটা ঘটনা ঘটেছিলো । সেটা ঠিক নালিশ নয় । সেই গল্প আমি আগে করেছি অবশ্য ।

যাই হোক, আগেই বলেছি যে আমি আমার বাবাকে ভয় পেতাম খুব । তাকে বলার উপায় ছিল না যে সেদিন স্কুলে যাবো না । কী কারণে স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না সেটা আমার অবশ্য মনে নেই । তবে স্কুলে যাবো না এটাই ছিল ফাইনাল । তখন যশোরে থাকি । ক্লাস ফোরে পড়ি যতদুর মনে পড়ে। বাসার ঠিক কাছেই স্কুল । হেটে যেতে মিনিট পাঁচেক সময় লাগে । বাসায় আম্মুকে বললাম যে আমার খুব পেট ব্যাথা করছে । আমি কিছুতেই স্কুলে যাবো না । কিন্তু সে বিশ্বাস করলো না । বলল যে স্কুলে যেতে হবেই ।

আমি শার্ট গায়ে দিলাম । প্যান্ট পরলাম । তারপর বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম । স্কুল যেদিকে তার বিপরীত দিকে হাটা শুরু করলাম ! ঝুমঝুমপুর গ্রাম আমার পরিচিত । টুকটুক করে হাটতে হাটতে গ্রাম পার হয়ে অন্য আরেকটা গ্রামে হাজির হলাম । আমার লক্ষ্য ছিল যে কোন ভাবে স্কুলে যাওয়ার সময়টা পার করে তারপর বাসায় ফেরা । হাটতে হাটতে অন্য আরেকটা গ্রামে চলে এসেছি । গ্রামের নাম টা অবশ্য এখন আর আমার মনে নেই । তবে সেই গ্রামে আমি আগেও গিয়েছিলাম । আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম সেই বাড়িওয়ালার বাবার বাড়ি ছিল সেই গ্রামে । বাড়িওয়ালার ছেলে বন্ধু ছিল । সেই হিসাবে তার দাদার বাড়ি আমি আগেও এসেছি । সেই বাড়ির একজন আমাকে দেখলো । এবং আমাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল । তখন সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় । আমাকে ভাত খাওয়ালো । ডিম ভাজি আর আলুভাজি ছিল । এটা আমার এখনও মনে আছে । সেই বাসায় আমি আরও বেশ খানিকটা সময় ছিলাম । তারপর যখন মনে হল যে স্কুলের সময় পার হয়ে গেছে তখনই বাড়ির পথ ধরলাম । বাড়ির লোকজন অবশ্য আমাকে এগিয়ে দিতে চাইলো । রাস্তা যেহেতু আমার চেনা তাই দরকার নেই বললাম । যদিও কাজ হল না । তাদেরই একজন আমাকে সাইকেলে করে বাসায় পৌছে দিল ।

বাসায় পৌছে দেখি সেখানে অন্য রকম অবস্থা । আমার আম্মা কান্না কাটি করে অস্থির । পরে শুনেছিলাম যে আর কিছু পার হলেই নাকি মাইকিং করার প্লান করা হচ্ছিলো । আমার পরিকল্পনা ছিল কেবল স্কুলে না যাওয়ার কিন্তু পরিস্থিতি যে এমন হয়ে যাবে আমি কোন দিন ভাবিও নি । সেদিনের পরে আমি আর কোন দিন বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করি নি । তবে এরপরে যদি একান্তই কোন দিন স্কুলে না যাওয়ার কথা বলতাম তাহলে আমাকে আর জোর করে স্কুলে পাঠানো হত না !

এই গল্প টা অবশ্য বাড়ি থেকে পালানোর গল্প না । এটা স্কুল পালানোর গল্প । অনেকে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, তবে আমি জীবনে কেবল মাত্র একটা দিন স্কুল পালিয়েছি । আর কোন দিন স্কুল পালাই নি । এই ঘটনাটা উপরের ঘটনার আগে । তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি । আমাদের টিফিনের পরে দুইটা ক্লাস হত তখন । সেই দুইটার একটা ক্লাস হত ইংরেজি র‌্যাপিড রিডিং । স্যার ইংরেজি গল্প পড়াতেন । স্যারের নাম টা মনে আসছে না এখন । তবে সেই স্যার ছিলেন খুব রাগী । স্যার কেবল ইংরেজি গল্পই পড়াতেন না সেই গল্প থেকে শব্দার্থ ধরতেন । এটা আমার জন্য খুব প্যারা ছিল । একদিন আগে স্যার মোটামুটি সবাইকে এই পড়ার জন্য মেরেছেন । আমি কোন মতে উতরে গেছি । তবে ঐদিন কিছুই হয় নি । যদিও স্কুলের কাছেই বাসা ছিল, টিফিনে পিরিয়ডে বাসায় গিয়ে ফেরৎ আসা যেত । ঐদিন বাসায় গেলাম । সেই শব্দার্থ পড়তে থাকলাম । তবে এক সময়ে খেয়াল হল যে কোন কাজ হবে না । ব্যাগ নিলাম । তারপর আস্তে করে স্কুলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেলাম । বাসায় যাওয়ার উপায় ছিল না । স্কুল থেকে দুরে একটা ছোট নদী ছিল । ভৈরব নদীর কোন শাখা নদী সম্ভবত । নীলগঞ্জ ব্রিজের নিচে গিয়ে বসে থাকলাম । তারপর যখন স্কুল ছুটি হল তখন আমি ব্যাগ নিয়ে বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । এমন একটা ভাব যেন স্কুল থেকেই আসছি ।

অবশ্য এইটা বাসায় ঠিকই প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিলো কয়েক দিন পরে ।

মোটামুটি এই হচ্ছে আমার জীবনের দুইটি পালানোর জন্য । কদিন আগে সহব্লগার জুলভার্নের পালানোর গল্প পড়ে মনে আমার জীবনের পালানোর গল্প টা লেখা যাক ।


pic source
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০২২ রাত ১:০০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×