somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ স্যার ডাকা নিষেধ

২৭ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-স্যার আসবো?

জমির উদ্দিন নিজের ভাবনাতে ডুবে ছিলেন তখনই স্যার ডাকটা তার কানে এল । ডাকটা শুনতেই মনের ভেতরে একটা অস্বস্তির ভাব বয়ে গেল । তাকিয়ে দেখলো তার সেক্রেটারি নাদিম দরজায় দাড়িয়ে রয়েছে । ভেতরে আসার অনুমূতি চাইছে । এই ব্যাপারটা জমির উদ্দিনের সব সময় ভাল লাগে । এই মানুষ জন তাকে সম্মান করছে, ভেতরে আসার জন্য অনুমূতি চাইছে তারপর সমীহ করে কথা বলছে এসব সে এখন অভ্যস্ত হয়েছে । চাকরিটা পাওয়ার পর থেকে নিজেকে সে অন্য সবার থেকে একটু উচু পর্যায়ে ভাবা শুরু করেছে । এখন অন্য সবাইকে আর তার নিজের সমান মনে হয় না । মনে হয় সে এখন অন্য সবার থেকে আলাদা । তার অবস্থা অনেক উপরে। অনেক এলিট সে ।


-স্যার আসবো !

আবারও সেই অস্বস্তিটা ফিরে এল মনে ।
-হ্যা এসো । কী ব্যাপার !
নাদিম ঘরে ঢুকেই একটা ফাইল এগিয়ে দিল । তারপর বলল আমির আলী এসেছে স্যার । আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে স্যার !

নাদিম এই মোট তিন বার স্যার বলে ডাকলো তাকে । তিনবারই শব্দটা শুনে সে খানিকটা অস্বস্তিবোধ করেছে । এই ব্যাপারটা নিয়ে নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছে তার ।
নাদিমকে একটা কড়া ধমক দেওয়া দরকার । এতো স্যার স্যার করার দরকার কি বেটার !

নাদিম আবারও বলল, স্যার আমিল আলীকে কি ভেতরে পাঠিয়ে দিব।
একটু অস্বস্তি নিয়েই জমির উদ্দিন বলল, হ্যা পাঠিয়ে দাও !

মিনিট দুকে পরেই আমীর আলী ঘরে ঢুকলো । জমির উদ্দিন নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠলো না ।

আমীর আলী সামনে দাড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, বসবো স্যার?

জমির উদ্দিনের এই অস্বস্তিটা আবারও বাড়লো । আমীর আলী তাকে স্যার বলছে । এবং তার চোখে মুখের একটা কৌতুকের ছায়া দেখতে পাচ্ছে সে । যেন তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছে । এই মাস দুয়েক আগে এই আমীর আলি তাকে ভাই বলে ডেকেছিল বলেই এই পুরো দুইমাস সে তার ফাইলটা আটকে রেখেছিলো । চাকরিতে প্রবেশের পর থেকে মানুষের মুখে স্যার ডাকাটা শুনেশুনে সে অভ্যস্ত । যে কেউ যখন তাকে স্যার বলে না ডাকতো তখন তার মনে হত যেন তাকে সে সঠিক সম্মানটা দিচ্ছে না । এটা তাকে রাগিয়ে তুলতো । এতো এতো পড়াশোনা করে এতো এতো কষ্ট করে সে আজকে এই পজিশনে এসেছে আর এরা তার কষ্টটাকে সম্মান করছে না । অবহেলা করছে ! এটা জমির উদ্দিনের মোটেই সহ্য হয় না । যারা যারা তাকে স্যার বলতো না তাদের প্রতি জমির উদ্দিনের মনভাব হত রূঢ় আর তাদের কাজও সে করে দিতো না । কোন প্রকার সাহায্য করতো না । তবে প্রথম থেকে যে স্যার স্যার বলে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলতো তাদের বেলায় একটু নমনীয় মনভাব দেখাতো ! তার পরেও কেউ কেউ তাকে ভাই ডেকে ফেলতো । তাই একবার বাধ্য হয়ে জমির উদ্দিন নিজের অফিসের বাইরে একটা ব্যানার টাঙ্গিয়ে দিলেন । নিজের পদবী যোগ করে লিখলেন যে তাকে ভাই চাচা ডাকা নিষেধ ।

এরপর অবশ্য সমস্যা একটু সমাধান হয়েছিলো । তাকে আর কেউ ভাই চাচা ডাকতো না । স্যারই ডাকতো !

এভাবেই চলছিলো বেশ ভাল ভাবেই । তারপর মাস খানেক আগে থেকে একটা বিস্ময়কর ঘটনা লক্ষ্য করলো । মানুষজন আশে পাশে সবাই সবাইকে কেমন স্যার বলে ডাকছে । মানুষ আগে দোকানদার কিংবা রিক্সাওয়ালাকে মামা/চাচা বলে ডাকতো তার বদলে স্যার বলে ডাকছে ।

প্রথম প্রথম ভেবেছিলো বুঝি এটা তেমন কিছু নয় কিন্তু পরে আসল ব্যাপারটা খেয়াল করলো । ফেসবুকে একজন একটা ক্যাম্পেন চালু করেছে । সেখানে গনহারে সবাইকে স্যার ডাকতে আহবান জানানো হয়েছে । এবং মানুষ জন সেটাতে সাড়াও দিচ্ছে । গন হারে সবাইকে এখন স্যার বলা হচ্ছে । আজকে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখতে পেল তাদের বাসার এক ভাড়াটিয়ার ছেলে তার দারোয়ানকে বল, স্যার দরজা একটু খুলে দিন ।
একই সাথে সেই দারিয়ান তাকে দেখে বলল, স্যার স্লামুয়ালাইকুম !

ব্যাপারটা মনে আসতেই জমির উদ্দিন মনটা অস্বস্তিতে ভরে গেল । এটা কোন কথা । দারোয়ানকে যে নামে ডাকা হচ্ছে তার মত এতো বড় অফিসারকেও সেই একই নামে ডাকা হচ্ছে । এটা তিনি মেনে নিতে পারছেন না । আজকে যেমন এই আমির আলী তাকে স্যার ডাকছে তার মনে হচ্ছে তাকে সে মোটেই সম্মান দিচ্ছে না । এর থেকে যে সে গতবারের মত ভাই ডাকতো তাহলেই বুঝি ভাল হত ।

আমির আলী আরো দশবারের মত তাকে স্যার ডাকল । প্রতিবার সেই অস্বস্তিটা ফিরে ফিরে আসতে লাগল ।
এরপরের আরও একটা মাস যেন পুরো দেশ জুড়ে এই ক্যাম্পেইনটা আরো জোরদার হতে শুরু করলো । মানুষ তার আশে পাশের মানুষজনে স্বভাব ভাবে স্যার ডাকা শুরু করলো । মামা ডাকটা একেবারে যেন উঠেই গেল । মামার বদলে স্যার । চাচার বদলে স্যার । সবাই এখন কেবল স্যার ডাকে । এমন কি পাড়ার ভিক্ষুককেও ভিক্ষা না দেওয়ার সময় বলে, স্যার মাফ করেন । স্যার অন্য খানে দেখেন।

এটা নিয়ে অবশ্য কারো কোন সমস্যা ছিল না । সবাঈ এটাকে বেশ উপভোগ করতে শুরু করলো । কেবল জমির উদ্দিনের মনে শান্তি নেই । সে কিছুতেই এখন আর স্যার ডাকটা সহ্য করতে পারে না । যে কেউ তাকে স্যার ডাকলেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায় । তার এখন কেবল মনে হয় এতো পড়া শোনা করে এতো বড় চাকরি সে অর্জন করলো অথচ মানুষজন তাকে স্যার ডেকে তাকে অপমান করছে । তাকে যথাযত সম্মান দিচ্ছে না ।

বাধ্য হয়ে সে আবারও নিজের কেবিনের বাইরে একটা নোটিশ টাঙ্গালো । সেখানে লেখা ''স্যার ডাকা নিষেধ''


এই লেখার আইডিয়া উৎস

ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×