somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুচরো ব্লগিং ০১

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ব্যক্তিগত ভাবে আমি পাখি খাঁচাতে বন্দী করার বিপক্ষে । অনেক ছোট বেলাতে একবার আমার বাবা আমাকে একটা টিয়া পাখি কিনে এনে দিয়েছিলো । পাখিটা কোন আওয়াজ করতো না । সারাদিন চুপচাপ খাঁচার ভেতরে বসে থাকতো । আমি কয়েকবার সেটাকে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু সেটা কেন জানি উড়তে পারতো না । বাড়ির ভেতরে হাটাহাটি করতো ! আমি তার পেছন পেছন ঘুরে বেড়াতাম । আমার দেখতে ভাল লাগতো না । তারপর পাখিটা আমার এক কাজিনকে দিয়ে দিলাম । পরে শুনেছিলাম সেটা নাকি মারা গিয়েছিলো । মন খারাপ হয়েছিলো বেশ । তারপর থেকে পাখি খাঁচায় বন্দী করে পোষার ব্যাপারটা মাথায় আসে নি ।

অনেক দিন পরে, একদিন ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরছি । মোহাম্মাদপুর গ্রাফিক্স আর্ট কলেজের সামনে এসে হঠাৎ এক পাখিওয়ালার সাথে দেখা । সে আমাকে কেমন করুন সুরে বলল যে আমি কোন পাখি কিনবো কিনা ! সারা দিনে কোন পাখি বিক্রি হয় নি ! কি যে মনে হল আমি নিজেও জানি না । এক জোড়া কিনে ফেললাম । বাসায় নিয়ে এলাম, নতুন খাঁচা কিনলাম । পাখি দুটো খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল । খুব বেশি উড়াউড়ি করতো না । খাওয়ার সময় খেত আর সব সময় ডালের উপরে বসে থাকতো । আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম । মাস খানেক পরে মনে হল আর বন্দী করে রেখে লাভ নেই । ছেড়ে দিই। একদিন দুপুর বেলা খাঁচার দরজা খুলে নিচে গেলাম । ফিরে এসে দেখি যে ওরা তখনও বসেই আছে । বের হয় নি । পরে খাঁচাটা একটু ঝাকি দিয়ে বের করে দিলাম । জানলা দিয়ে দেখলাম দুজনে উড়ে চলে গেল !

এরপর আরও কিছুদিন পার হয়ে গেছে । যে পরিবারটির সাথে আমি থাকি সাবলেট আকারে, তারা পাখি কিনে নিয়ে এল এই বছর খানেক আগে । লকডাউনের ভেতরে । ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পাখির খাঁচা গুলো থাকে । অনেক গুলো পাখি ! সবার নিচে আছে এক জোড়া ঘুঘু । উপরে আরও দুটো খাঁচা । আমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ মুখে নিয়ে তাদের সামনে যাই । পাখি গুলোকে দেখি । ওরা কিচির মিচির করে । শুনতে ভাল লাগে! খাবার দেই । এর ভেতরে দিদিরা প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকে । সাভারে তাদের বাসা আছে সেখানে যায় প্রায় । পুরো বাসায় তখন আমি একা । আমিই পাখি গুলোর দেখা শুনা করি । নিজের হলে ছেড়ে দিতাম তবে অন্যের পাখি ছাড়বো কিভাবে !

এরমাঝে একজোড়া পাখির ডিম দিল । তাদের খাঁচা আলাদা করা হল । আমি প্রতিদিন উকি ঝুকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম যে পাখির ডিমের কি অবস্থা । মোট ৫ ডিম । গুনতে পারলাম । আমি যতদুর জানতাম এরা জোর সংখ্যাতে বাচ্চা দেয় । বিজোর সংখ্যাতে দেয় কিভাবে কে জানে ! যাই হোক একদিন ঘটলো ঘটনা ।

দাদা সকালে বেলা আমাকে জানালো যে কে জানি পাখির খাঁচার দরজাটা খুলে রেখেছে । পুরুষ পাখিটি উড়ে চলে গেছে । কিন্তু মেয়ে পাখিটি তখনই বসে আছে । ডিমে তা দিচ্ছে । এর পরের কয়েকদিন দেখতাম খাঁচাতে পাখিটা একাই বসে আছে । ডিমে তা দিচ্ছে । খাবার খাচ্ছে । পরে দাদা নতুন আরেকটা পুরুষ পাখি নিয়ে এসে খাঁচাতে দিয়েছিলো কিন্তু মেয়ে পাখিটি গা করে নি । তার দিকে কোন খেয়ালই দেয় নি । এরপর একদিন সকালে ব্রাশ করতে গিয়ে পাখির ডাকের সাথে সাথে আরও একটা সুক্ষ ডাক শুনতে পেলাম ।
বাচ্চা ফুটেছে ।
কি যে আনন্দ লাগছিলো । হাড়ির ভেতরে কেমন সুক্ষ আর ছোট ছোট পাখনা ছাড়া বাচ্চা !
আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
এরপর দেখতাম মা পাখিটি কিভাবে তাদের বাচ্চা গুলোতে খাওয়াচ্ছে ।
মোট তিন টা বাচ্চা ফুটেছিলো । দুইটা ফুটে নিই ।

কিন্তু গতকালকে একটা কষ্টের ঘটনা ঘটলো । আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে যথারীতি দেখলাম পাখি গুলোতে । দেখলাম পাখির বাচ্চা গুলো কেমন পড়ে আছে । মনে হল যেন ঘুমিয়ে আছে । কিছু চিন্তা করলাম না । পরে ডাকা আমাকে জানালো যে কোন কারণে পাখির বাচ্চা গুলো মারা গেছে । এতো মন খারাপ লাগলো । এমন করে কিভাবে মরে গেল কে জানে !
দাদা জানালো যে একা মায়ের পক্ষে নাকি বাচ্চ মানুষ করা সম্ভব না । বাবা পাখি আর মা মাখি মিলে খাওয়ানো লাগে তবেই বাঁচে । কে জানে কেন মরলো?
কয়েকদিন তো ভালই বেঁচে ছিল । কিঁচির মিচির করতো !
আমার কেবল জানতে ইচ্ছে করছিলো মা পাখিটার মনে কেমন অনুভব হচ্ছিলো !


মানুষের জীবনও এমন ! কখন যে শেষ হয়ে যাবে কোন ঠিক নেই ।



এই নিকটা অনেক দিন আগে খোলা হয়েছে । কেন যে খুলেছিলাম নিজেও জানি না । ভাবছি এখানে এই রকম খুচরো ব্লগিং করবো । পাইকারি ব্লগিং তো আর করতে পারি না । এখানে এই খুচরো ব্লগিংই চলবে ! প

হ্যাপি ব্লগিং !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×