আমাদের এক জীবনে কারা আপন । কাদের কাছে আমাদের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি । সবচেয়ে কাদের কাছে আমাদের সকল অভাব অভিযোগ নিয়ে দাঁড়িয়ে যাই । হ্যা, আমাদের বাবা মা । সন্তানরা যত ই বন্ধু বা অন্যান্য মানুষের কাছে আপন হয়ে উঠুক না কেন । বাবা মায়ের কাছে সবচেয়ে বেশি আপন । আর বাবা মা ও তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু । কেউ মায়ের কাছে আবার কেউ বাবার কাছে বেশি আপন । তবে আমাদের সকল বিপদ আর সমস্যায় তারা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে যান । তাহলে বুঝুন তো আপনি হারিয়ে গেলে তাদের মনের উপর কি প্রভাব পরে । এমন হারিয়ে যাওয়ার এক কাহিনী নিয়ে তৈরি হয়েছে “Searching” মুভি ।
কাহিনীসুত্র
ডেভিড কিম তার এবং তার স্ত্রীর পুরাতন ছবি ও স্মৃতি গুলো খুজে দেখছিল । তার সাথে তাদের মেয়ে মারগোট এর অনেক ছবিও আছে । সেগুলো ই নাড়াচাড়া করছিল । ডেভিড কিম এর স্ত্রী পামেলা তাদের এক মাত্র সন্তান হচ্ছে মারগোট । তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে পামেলার লিমফোমা ধরা পরে । এরপর অনেক চেষ্টা করে যায় কিম কিন্তু তার স্ত্রী তাকে আর মেয়ে ছেড়ে চলে যায় পরপারে ।
এরপর থেকেই মেয়ের সাথে একটু দুরত্ব তৈরি হয় । কারণ কিম মেয়েকে সেভাবে সময় দিতে পারত না । তবে তারা দুজনেই সব সময় নেটে কানেক্টেড থাকত । প্রায় সব সময় ই কথা হতো । ভিডিও কলে এবং ফোনে কথা বলত তারা । তারপরও কিম চেষ্টা করে যেত যাতে করে মারগো মায়ের অভাব বুঝতে না পারে । তবুও কিছুটা হলেও দুরত্ব থেকে যেতো ।
সেই দুরত্ব থেকেই মারগো একা হতে শুরু করে । একা হতে হতে নিজেকে সবার থেকে মোটামুটি আলাদাই করে ফেলে । সে পিয়ানো ক্লাশে যাওয়া বন্ধ করে দেয় । সেই টাকা আবার জমাতে শুরু করে । তবে সে অনলাইনে ফ্রেন্ড পায় । তাদের সাথেই তার যোগাযোগ বেশি হতো । এমনকি এক ফ্রেন্ডের মায়ের অসুস্থতার জন্য তাকে ২৫০০ ডলার পাঠিয়ে দেয় । এক রাতে কিম মারগোর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে পরে । রাতে হঠাৎ করে মারগোর ফোন আসে তিন বার । তারপর থেকে তার আর কোন খোজ পাওয়া যায় না ।
সকালে উঠে কিম মারগোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোন খোজ পাওয়া যায় না । কিম তার ভাই পিটার কিম এর সাথে যোগাযোগ করে । কিন্তু সেও কিছু জানে না বলে জানায় ।
ডেভিড হতাশ হয় না । সে খুজতেই থাকে । ধীরে ধীরে অনেক সত্যের মুখোমুখি হয় সে । কিন্তু জানত না যে সে পর্যন্ত কি আসছে সামনে ।
মারগো কি হবে মারা গিয়েছে ? নাকি সে বেচে আছে ? ছবির শেষ মিলবে উত্তর ।
আলোচনা
অনেক দিন পর কোন মুভি না টেনে দেখেছি । সত্যি বলতে টেনে দেখে কিছুই বুঝি নাই । তাই প্রতি স্টেপ বুঝতে প্রতিটি সিন ই দেখতে হয়েছে । প্রতিটি ফ্রেম দেখতে হয়েছে । বুঝতে হয়েছে আসলে কোথায় যাচ্ছে এই মুভি । কাহিনীর প্রতিটি ধাপ আলাদা । একটা শেষ হলে মনে হয় মুভি শেষ । তখন দেখলাম মুভির আরো ৫০ মিনিট বাকী । আবার দেখি ৩০ মিনিট বাকি । মানে আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে এরপর কি হতে পারে ।
থ্রিলার হিসেবে বলতেই হবে ভাল কাজ হয়েছে । কাহিনীর নির্মান শৈলী বলার অপেক্ষা রাখে না । সুন্দর ভাবে সাজানো । যেন মানুষের মনে কৌতুহল সৃষ্টির জন্য ই মুভির কাহিনী তৈরি হয়েছে । একটা মুভি কত ভাবে টুইষ্ট দেয়া যায় । এতে তেমন ভাবে দেয়া আছে ।
তবে মুভিটির যখন আপনারা দেখবেন অবাক হবেন । বলার ইচ্ছে ছিল না । তারপরও বলছি । মুভিটি দেখার সময় মনে হবে এটি ল্যাপটপ এর ক্যামেরায় দেখছেন আবার মনে হবে বাসার সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখছেন । এখানে ক্যামেরার ব্যবহার দেখে অবাক হয়েছি । মনেই হয়নি যে আসলে তার কোন ক্যামেরা ব্যবহার করেছে । পুরোটাই ল্যাপটপ এ করা হয়েছে এমন ।
ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটাও বুঝতে পারবেন । ইন্টারনেট্র ভাল খারাপ দুটি দিক ই আপনি দেখতে পারবেন এখানে । আপনি এটাও বুঝতে পারবেন আসলে আমাদের কি করা উচিত ইন্টারনেট দিয়ে । ভাল খারাপ দুটো কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় । আপনি কোনটি করছেন । তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের কাছ থেকে কি নিয়ে যাচ্ছে আর কি দিচ্ছে । সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন ।
ছবিটি কিন্তু ছোট । মাত্র ১০২ মিনিটের । তারপর ও টুইষ্ট এ ভরপুর । আপনি শেষ বলে উঠতে যাবেন তখন ই দেখবেন আবার মুভি শুরু ।
ডেভিড কিম এর ভুমিকায় ছিলেন জন চো । যাকে আপনারা “ হারোল্ড এন্ড কুমার ” মুভি সিরিজে হারোল্ড এর ভুমিকায় দেখেছেন । যদিও সার্চিং এর তার ভুমিকা একটু সিরিয়াস । সারা শোহন ছিলেন পামেলা কিম, ডেব্রা মেসিং ছিলেন ডিটেক্টিভ, মিচেল লা ছিলেন মারগো আর জোসেফ লি ছিলেন ডেভিড কিম এর ভাইয়ের ভুমিকায় ।
সবশেষে বলব, যারা টুইষ্ট পছন্দ করেন তাদের জন্য অবশ্যই দেখার মত একটা মুভি ।
ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । গাছ লাগান । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখুন ।
ডাউনলোড লিংকঃ এখানে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪২