somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাচেলর্স রঙ্গঃ তিন বন্ধুর দুনিয়া (প্রারাম্ভ)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



না না না, এ হতে পারে না । বের হ, আর অল্প বাকি । প্লিজ বের হ, বের হ । চিৎকার করে উঠল অর্চি । বাথরুম থেকে এ ধরনের চিৎকার এই প্রথম শুনলাম আমি আর রিফাত । রিফাত আর আমি দুজনেই বসে বসে গল্প করছিলাম । রিফাতের পৌনে ১২ নাম্বার গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে । রিফাত কি মেয়েটাকে নিয়ে সামনে যাবে নাকি পিছনে সেটা ঠিক করার জন্য পরামর্শ করছিলাম । এরই মধ্যে অর্চির চিৎকার আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ও পৃথিবী বদলানো আলোচনাতে ব্যাঘাত ঘটায় । দুজনেই বাথরুমের সামনে গিয়ে দরজা ধাক্কা দেই । রিফাত কে বলি ধাক্কা দিতে । পরে না করে দেই ওর হাতির মত শরীর দিয়ে ধাক্কা দিলে দরজা ভেঙ্গে যাবে তাতে করে এই বাসা ছাড়তে হবে । এর আগেও বাসা ছাড়তে হয়ে ওর জন্য । আসলে ওর শরীরের জন্য ।

ওর হাতির মত শরীর নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠা নামা করার সময় ধুপধাপ শব্দ হতো তাই বাড়িওয়ালা আমাদের বের করে দেয় । কোন বাসায় আমরা দু মাসের বেশি থাকতে পারিনি । খালি এই বাসায় কিভাবে জেনো ঠিকে গেছি । তবুও সাবধানে থাকি কখন কোথায় কি হয় বলা তো যায় না । কারণ ব্যাচেলর শুনলেই বাড়িয়ালাদের চোখ কপালে উঠে যায় আর ভ্রু চলে যায় টাকে । এই পর্যন্ত সব বাড়িয়ালাই ছিল টাকলু । এদের মধ্যে একজন এতই কড়া ছিলেন আমরা পারফিউম দিয়ে ঘর থেকে বের হলেও সেটা তার চোখে পরে যেতো । তার নাক বিষধর সাপের চেয়েও প্রখর । তবে ওই বাসায় শান্তি ছিল । আহা বিকেল হলেই শান্তি আসত । কি ভাবছেন, এই শান্তি সেই শান্তি না । বাড়িওয়ালার ভাতিজি শান্তি । তাকে নাকি দেখে হাতি বেহুশ হয়ে গিয়েছিল । আমার আর অর্চির দুদিনের ঘুম হারাম করেছে মানব হাতি মানে রিফাত ।

- রিফাত ঘটনা তো সুবিধার না
- অপু তোর কি মনে হয়?
- বাথরুম এ গিয়ে ও অন্য কিছু......
- ধুর কি সব বলিস
- নারে আগে কখন ও এমন করেনি । দরজা ভেঙ্গে ফেলি
- আরে রাখ দেখি কি হয়

তখন ই দেখলাম বাথরুমের দরজা খুলে গেল সটান । অর্চি দাঁড়িয়ে আছে । মাথায় ক্লিয়ার ম্যান শ্যাম্পু সারা শরীরে সাবান । আন্ডার ওয়্যার পরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাত বের করে বলল, দোস্ত পানি নাই । মনটা চাচ্ছিল এই ছাদ থেকে ছাগল টাকে লাথি মারি । ওদিকে রিফাত এর তর সয়নি সে দিয়েছে অর্চির পিঠে ।

মাগো বলে ব্যাথ্যায় চিৎকার দিল অর্চি । আমি শুধু ওদের দুজন কে দেখছি । একটা দেখার মত দৃশ্য । এ যেন হাতি ও জলহস্তীর অসম লড়াই । একজন ট্রাউজার আর হাতা কাটা গেঞ্জি পরা অন্যজন মাথায় শ্যাম্পু গায়ে সাবান আর হাফ প্যান্ট পরা । এ যেন মনে হচ্ছে পানি পথের যুদ্ধ । যদিও পানি নেই বলে এখন অর্ধেক হেরে বসে আছে । আমি শুধু দেখছি । কারন আমার মত তাল পাতার সেপাইদের ওরা দুজন মিলে এক ফুতে উড়িয়ে দিতে পারে । এদের মাঝে পরা মানে দুই রুটির মাঝখানে পরে চিরে চ্যাপ্টা হওয়া । তারচেয়ে শুয়ে শুয়ে দেখি কি হয় ।

এই বলে হাতে রবিদাকে নিয়ে পড়া শুরু করব । তখন ই ধপাস । বাহ একজন কুপোকাত । কিন্তু না সে কুপোকাত হয় আবার উঠে দাড়িয়েছে । তাকে লড়াই করে যেতে হবে । হারলে হবে না ।

"বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্রে মেদেনী"

আমি পাশ থেকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি । যেহেতু আমি একা তাই দুজন কেই সাপোর্ট করতে হবে । রবি বাবু কে ফেলে দিলাম । না মানে পাশে রেখে অর্চি আর রিফাত কে চিয়ার করছি । মনে মনে টি২০ এর চিয়ার গার্লদের কথা চিন্তা করলাম । ভেবে দেখলাম আহা কি গ্ল্যামার । না আমাকে স্বপ্নে ডুবে গেলে হবে না । এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হচ্ছে । যেই জিতুক না কেন আমাকে চিয়ার করতে হবে ।

- অপু তুই বসে বসে দেখছিস, এই হাতিকে থামা
- অর্চি তুই পারবি, লড়ে যা লড়ে । করব লড়ব জিতব রে
- অপু তুই অর্চির পক্ষে?
- নারে মোটকু আমি খাওয়া পক্ষে, থামিস না । ওই দেক অর্চি দিল ।

খেলা ভাল জমেছে । লাইভ টেলিকাস্ট করা গেলে ভাল টাকা পাওয়া যেত । কিন্তু অনেক খানি এগিয়ে গেছে । এখন সম্ভব না । যাই হোক আমি চিয়ার করে যাচ্ছি । এমন সময় ঘরের দরজা দড়াম করে খুলে গেল ।

আমরা তখন সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। অনেকটা ফ্রিজ করে দেয়ার মত ঘটনা। যেন কেউ আমাদের কে স্ট্যাচু বানিয়ে দিয়েছে। দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এযে সাক্ষাত পরী । মিস ইউনিভার্স এর কাছে ফেল । আমার কান দিয়ে কিছু ঢুকছে না । সব স্লো মোশন হয়ে গিয়েছে । আমি হারিয়ে গিয়েছি তার চোখে । তখন সব কিছু মনে হচ্ছে রঙিন । ব্যাচেলর এই জীবনে যেন প্রানের ছোয়া ।
হুশ ফিরল যখন রিফাত বালিতে থাকা অবশিষ্ট পানি আমার মাথায় ঢেলে দিল । অর্চি আগেই পালিয়েছে ।

কারন কোন মেয়ের সামনে আন্ডারওয়ারে থাকা লজ্জার । লজ্জা ঢাকতেই আবার বাথরুমে গমন । তাও রকেটের বেগে । যেন ফ্ল্যাশ ও তাকে দেখে তখন লজ্জা পেতো এই গতি দেখলে । যাইহোক পরী মেয়েটা চিৎকার করছে তখনও । আমি কিছুই না বুঝে রিফাতের দিকে তাকালাম । সে আবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । তার দৃষ্টি হচ্ছে ব্রহ্ম দৃষ্টি যেন এখন ই আমাকে ভস্ম করে দেবে । তারপর বলল, তোর কি কাণ্ডজ্ঞান কমে গেছে নাকি তুই বাচ্চা হয়ে গেছিস?

কেন রে আমি আবার কি করলাম? উলটো ওকেই প্রশ্ন করলাম । এদিকে পরীর মত মেয়েটা ঘরের বাইরে দাড়িয়েই ছিল । আমি গেলাম জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি? সে উত্তর দিল নাম দিয়ে কি করবেন । আমি বাড়িওয়ালার মেয়ে । আমি বললাম ও আচ্ছা বাড়িওয়ালার মেয়েদের নাম হয়না, তা আগে জানা ছিল না । তা আপনাকে কি ম্যাম বলতে হবে নাকি আপু । মেয়েটা মনে হচ্ছিল রাগে ফেটে যাবে । পুরো শরীর দিয়ে যেন ধোয়া বের হচ্ছে । আপনারা কি শুরু করেছেন? আপনাদের জ্বালায় তো থাকা যাবে না। আপনারা তো জংগলীদের চেয়ে খারাপ মনে হচ্ছে। এজন্য ই বাবা কে বলেছিলাম ব্যাচেলর ভাড়া না দিতে। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে মেয়েটা চুপ হয়ে গেল। আমাকে চুপ থাকতে দেখে মেয়েটা কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই ইয়া হু বলে শেয়ালের মত চিতকার শুনলাম অর্চির। বের হইছে, বের হইছে, বলে সে ঢাকাঢাকি করছে। কি অশ্লীল । একটু আগে দেখে গিয়েছে একটা মেয়ে দরজার সামনে।

আমি বললাম আসলে আপু হয়েছি পানি ছিল না তো, আর রিফাত ও অর্চির মধ্যে মাঝে মাঝে ডাব্লুডাব্লুই এর রেসিলিং হয় কিনা তাই। সরি আসলে এই পাচ তলার ছাদ থেকে নিচে আওয়াজ চলে যাবে বুঝতে পারিনি। এরপর থেকে দরজা লাগিয়ে আমরা রেসলিং করব। মেয়েটি যেন আমার কথা শুনে একটু অবাক, না বেশিই অবাক সুন্দরীরা অবাক হলে ভালই লাগে। পিছনে যে রিফাত দাঁড়িয়ে ছিল। ভুলে গিয়েছিলাম। ওকে বললাম শুনলি তো তোদের কারনে কি আবার ভাড়া ছাড়তে হবে নাকি। এবার থেকে ভাল হয়ে যা। রেসলিং করলে বাড়ির বাইরে না হলে অনুমতি নিয়ে করবি। দরকার হলে ছাদে আমরা স্টেজ বসাব। আপু থাকবে আমাদের ইনভেস্টর আর আমি আর্গানাইজার। ভাল টু পাইস কামানো যাবে। কিন্তু মনে রাখিস ছাদ ভেঙ্গে গেলে কিন্তু তোরা দায়ী।

মেয়েটা একটার পর একটা শক খাচ্ছে আমার কথা শুনে। সে কি বলবে বুঝতে পারছে না। আমি নিজেই বললাম, থাক ধন্যবাদ দেবার দরকার নেই।

চুপ, চুপ করুন আপনি কি পাগল নাকি আমাকে পাগল ভাবছেন। ফাজলামি করেন আমার সাথে। জানেন না আমি কে। আমি চাইলে আপনাদের বাসা থেকে বের করে দিতে পারি। আমার সাথে একদম ফাজলামি করবেন না। বলে মেয়েটা রাগে ফুলছে।

আমি আবার বললাম, আপু আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? রাগ কিন্তু শরীর মন দুটোর জন্যই খারাপ। শুনন যেই গরম পরেছে ঘরে গিয়ে লেবু চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে খান। ভাল লাগবে। আর আপনাকে কেন চিনব না। আপনি নিজেই তো বললেন আপনি বাড়িওয়ালার মেয়ে কিন্তু নাম নেই। আংকেল নাম রাখতে ভুলে গিয়েছে। আচ্ছা একটা সুন্দর নাম ঠিক করে দেব?

এবার মেয়েটা খেপে গিয়ে বলল, আজই আপনাদের বাড়ি ছাড়া করছি। দাড়ান। আমি বললাম দাঁড়িয়েই তো আছি আর কই দাড়াব। এবার মেয়েটা মুখ ঘুড়িয়ে যাবার আগে বলে গেল আপনাকে আমি দেখে নেব।

এই বলে মেয়েটা চলে গেল। রেখে গেল এক রাশ লেডিস পারফিউম এর সুগন্ধ।


(ছোট একটা আইডিয়া ছিল । সেটা কে আমার জীবনের সাথে লেগে থাকা দুই বন্ধু কে নিয়ে লেখার চেষ্টা করলাম। ওদের কে পড়িয়েছি । দুজনেই ক্ষেপে আছে । অফিস চার দিনের বন্ধ তাই আপাতত বেচে গেলাম ।)

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫০
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×