লতিফুর রহমান সাহেব বাথরুমের দরজা খুলেই চমকে গেলেন । বাথরুমের ভেতরে পরে আছে একটা লাশ। কিন্তু এখানে লাশ তাও তালা না ভেঙে কে নিয়ে আসবে । তাছাড়া সব কিছুই তো ছিল বন্ধ । কলেজের অবসর প্রাপ্ত বাংলার শিক্ষক কিছুতেই যেন হিসেব মেলাতে পারছেন না । চিন্তার সব কিছুতেই লাশ জুড়ে । পুলিশ ডাকবেন নাকি ঝামেলায় পরবেন । সব কিছুই তাল গোল পাকিয়ে গেল ।
লাশ এখানে এল কি করে । বোঝাই যাচ্ছে অনেক দিন থেকেই এখানে ছিল । মাছি ভন ভন করছে । লাশটা প্রায় পচে গিয়েছে । তবে বোঝার উপায় নেই লাশটি কার ।
এখন কি করবেন লতিফ সাহেব ।
ঘটনা এভাবেই গড়িয়ে গড়ে তুলেছে “ছদ্মবেশ” এর কাহিনী । নানা ধারা এদিক সেদিক করে ঘটনার শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে তার শেষ পর্যায়ে ।
“ছদ্মবেশ” নামটি দিয়ে শুরু করি । এর মানে হচ্ছে মুখোশ । সামনের দিকে এক রকম আর ভেতরে এক রকম । যদি বাস্তব জীবনের কথা বলি তবে আমরা সবাই মুখোশ পরেই আছি । এক এক জন নিজের চরিত্র করে যাচ্ছি । যাই হোক গল্পে ফিরে আসা যাক । “ছদ্মবেশ” এর সবাই ছদ্মবেশ ধরেই থাকে । সবার আলাদা আলাদা স্বার্থ এবং আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে পূরনের লক্ষ্যে সবাই নিজেদের আড়াল করে রাখে মুখোশের আড়ালে ।
মানুষ অনেক সময় নিজের কাজের জন্য বা স্বার্থের জন্য কাছের মানুষটিকেও ধোকা দেয় । দরকার হলে শেষ পর্যন্ত খুনও করে ফেলে । হিংসৃতার বশবর্তী হয়ে সে অন্ধ হয়ে যায় । খারাপ ভালো কিছুই তখন আর তার কাছে কিছু মনে হয় না । সে শুধু তখন নিজেকেই জানে । নিজেকে নিয়েই ভাবে । তখন তার শুধু একটাই ভাবনা কিভাবে স্বার্থ উদ্ধার হবে ।
বইটিকে রহস্যউপন্যাস বলতে পারছি না ।
হ্যা আপনি ঠিক ই পড়েছেন । বইটিকে আমি রহস্যউপন্যাস বলতে পারছি না । এটাকে এই জনরায় ফেলতে কষ্ট হচ্ছে আমার । তার কিছু কারন বলছি ।
বইটির ভেতরে একসাথে অনেক গুলো ঘটনা জুড়ে দেয়া হয়েছে । তারপর সবার শেষে হুট করেই যেন সব শেষ হয়েছে । অনেকটা পাজল মিলানোর মত । হুট করেই সব মিলে গিয়েছে ।
রহস্যউপন্যাসের শুরু হয় ধীর একটা ধারায় । এটাও সেই ধারা বজায় ছিল কিন্তু ভিতরে যাওয়ার পর যেন সব এলমেলো মনে হয়েছে । এক ঘটনা অন্যটার সাথে কেমন যেন একটা অসামঞ্জস্যতা ছিল । সব কিছুর টার্নিং পয়েন্ট থাকে । এখানে সেটা মিস করে গিয়েছি । ঘটনার মোড় ঘুরতে না ঘুরতেই যেন অন্য ঘটনা শুরু ।
গল্পের শুরুতে লতিফ সাহেব ঠিক ভাবেই হাটতে পারতেন বা পারতেন না এটা উল্লেখ নেই । কিন্তু শেষে রয়েছে । তাহলে গল্পের ভিতর এটা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই কি । তারপর তিনি মারা গেলেন ।
এরপর আসে দুই নেতার মধ্যে বিরোধ । এটা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক না অনেক আগে থেকেই চলে আসছে । আর এখানেই আছে একটা টুইস্ট । একজন বর্তমানে ক্ষমতায় অন্য জন ক্ষমতা হাসিল করতে প্রস্তুত । তাই যে কেউই তাদের সর্বোচ্চ দিতে চেষ্টা করবে । নিজের নাক কেটে হলেও পরের যাত্রা ভঙ্গ করবে ।
অথচ যাত্রা ভঙ্গ করতে গেলে যে নিজেরেই ক্ষতি হবে সেটা কি একবারও চিন্তায় আসে না । আমি তার ক্ষতি করতে গেলে সেটা যে আমার উপর ই আসেবে না এমন তো নয় ।
তার উপর এত বড় ঘটনা ঘটানোর পরও তাকে ছেড়ে দেয়াটা দৃষ্টি কটু আমার কাছে মনে হয় । কারন বিষয়টা সবাই জানে । তারপরও তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এটা মেনে নেয়াটা কঠিন ।
এছাড়া কিছু জিনিস খাপছাড়া রয়েছে । শেষের দিকের প্রেম বা ভালবাসার টান মায়াটা না থাকলে ভাল হতো । যেহেতু রহস্য তাই কিছুটা রহস্যের সাথেই এর সমাপ্তি হলে মন্দ হতো না ।
যাইহোক, অনেক কিছু বলে ফেললাম । আসলে মিস্ট্রি বলি আর রহস্য বলি, সেখানে একটা টান খুজি । যেটা পাঠকে বেধে রাখবে । পাঠকে পাতার পর পাতা চোখ রাখতে বাধ্য করবে । পাঠক শুধু খুজেই যাবে সামনে কি রয়েছে ।
তবে প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে লেখক সাদাত হোসাইন কে সাধুবাদ জানাতে হচ্ছে । তবে আমার মনে হয় উনি সামাজিক উপন্যাস লিখতেই বলব । কারন রহস্য জিনিশটা একদম আলাদা ।
বিঃদ্রঃ এই রিভিউটি সম্পূর্ন আমার নিজস্ব মতামত ।
বইঃ ছদ্মবেশ
লেখকঃ সাদাত হোসাইন
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪০