somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানে যাপিত জীবন- পর্ব ০৬

১১ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


করোনা আক্রান্ত সময়ে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী যখন বাসায় বন্দী, আমার এখানকার জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক। সকালে ঘুম থেকে উঠি, নাস্তা করি, ল্যাবে যাই আর রাতে বাসায় ফিরি। অথচ আমার শহরে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে ২৮ জানুয়ারি। চীনের খুব কাছাকাছি ভৌগলিক অবস্থান, একই আবহাওয়া এবং বাণিজ্যিক নির্ভরতার কারণে জাপানের করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ছিল খুবই বেশি। শুরুও হয়েছিল একদম প্রথম দিকে, ১০ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যেই। তবে পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। ভবিষ্যতে কি হবে তা উপরওয়ালাই ভাল জানেন। তবে এখনো জাপানে মহামারী না ছড়ানোর পিছনে কারণ হিসেবে আমার যা মনে হয় তা হল, তাদের যেকোনো সাধারণ “ফ্লু”এর প্রতিও প্রচণ্ড ভীতি বা অন্যভাবে বললে সচেতনতা রয়েছে। আমি যখন এখানে আসি, তখন সেপ্টেম্বর মাস, অর্থাৎ সামার শেষ হয়ে এসেছে। একদিন প্রফেসর সাপ্তাহিক সেমিনার শেষে সবাইকে আসন্ন ফ্লু’থেকে সাবধান থাকার জন্য পরামর্শ দিলেন। আবার, তখনও যে কোন দিন রাস্তায় অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে মাস্ক পরিহিত দেখতাম। কারণ, মাস্ক পরিহিত ব্যক্তি চায়না যে তার অসুস্থতা অন্য কারো মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। এটাই এখানকার সামাজিক সম্প্রীতির অন্যতম উদাহরণ। এছাড়াও, আরও বেশ কিছু ভাল অভ্যাস রয়েছে তাদের। যেমন, মানুষজন করমর্দন বা হ্যান্ডসেক একদমই করে না, সামান্য মাথা ঝুঁকিয়েই শেষ। রাস্তায় কাউকে থুতু ফেলতে দেখবেন নাহ। ফ্যাকাল্টি বা শপিং মলের দরজায় প্রায়ই হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা থাকে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। মানুষজন যথেষ্ট সহযোগী। প্রফেসর স্বশরীরে রুমে এসে বলে গিয়েছে, বিদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে এ অবস্থায় যদি তোমার কিছু লাগে তবে নির্দ্বিধায় আমার কাছে চলে আসবে। আমি তোমার জন্য ম্যানেজ করে দিব।


তবে, জাপান এখনো লকড-ডাউনের মত কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। যতদূর শুনেছি, আইন সরকারকে সেই ক্ষমতা দেয়নি। বর্তমান জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতেও প্রধানমন্ত্রীকে আইন সংশোধন করতে হয়েছে। কিন্তু, প্রথম দিকে জাপান ইচ্ছে করেই চায়নি জরুরী অবস্থা জারি হোক। কারণ জুলাইয়ে অলিম্পিক হবার কথা ছিল।ঐ সময়টায় আমাদের দেশের মত জাপানও চায়নি, করোনা আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা বাড়ুক। তারা নাকি ইচ্ছে করে টেস্ট করেনি। জনগণও ঘরে গিয়ে আইসোলেশনে থেকে সরকারকে সাহায্য করেছে। ফলস্বরূপ, করোনা খুব বেশি ছড়ায়ওনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব থমকে গিয়েছে, এক বছরের জন্য। অলিম্পিকের পিছনে সরকারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ছিল। এটা জাপানের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। তারপরও তারা অন্য দেশের সাহায্যে এগিয়ে আসছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হলে প্রায় বিশটি দেশকে বিনামূল্যে আভিগান ঔষধ সরবরাহ করবে। অনুন্নত দেশের জন্য আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে অনুদান দিচ্ছে। এবং জনগণকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করছে। যদিও বাইরে গনপরিবহনসহ সকল পরিসেবা বিদ্যমান, মানুষজন বেশি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছে না।


আমার কাছে মনে হয়, এ জাতি প্রটোকল নির্ভর, প্রটোকল ছাড়া কিচ্ছু করবে নাহ। আর সেটাই হয়ত তাদের বাঁচিয়ে দিচ্ছে। ইটালিতে এত মানুষ মারা যাবার পিছনে তাদের বয়স্ক জনগনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পত্রিকায়। কিন্তু, বয়স্ক জনগনের দিকদিয়ে প্রথমে কে জানেন... জাপান। আল্লাহ যদি সহায় হন...
এদিকে আমার ঘুরাঘুরিও একদম বন্ধ। বরফ প্রায় গলে গিয়েছে, ন্যাড়া গাছপালা নিঃশব্দে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। নিস্তব্ধ প্রকৃতি। তবে নিচের মাটিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বরফের আচ্ছাদন সরে একটু উষ্ণতা পেতেই মাটির নিচে সুপ্তাবস্থায় থাকা বাহারি ফুলের বীজ অঙ্কুরোদগমীত হয়ে ফুটে উঠছে।

আশা করি পৃথিবীও এভাবে একটু একটু করে ফিরে আসবে তার আগের অবস্থায়। ততদিন একটাই কামনা... Dear Earth, dear Bangladesh… Get well soon… ফিহআমানিল্লাহ...




সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×