সকাল সকাল মেয়েটার চিৎকার।
-বাবা.....তুমি এখনো ঘুমুচ্ছো....?
-কি করবো এখন....!!?
-কি করবা মানে.....!!!!ওষুধ খাইছো....!!!
-খাওয়ার তো কথা ছিল কিন্তু...
-খাও নাই...তাই তো....!!!!!তুমি এত মনভুলো কেন,বাবা...?যাও,আজকে আমি নাস্তাই করবো না....
-আরে না না....এই তো খাচ্ছি.....তুমি নাস্তা করে ভাসিটি যাও...
-ঠিক তো....!!!
-হু....
-তোমার জমিদার ছেলে কই....!!!!
-জানি না....
-উফ!!!!
এইতো গেল আমার সকাল।সারাদিন মেয়েটা আমাকে জালিয়ে খাবে....এটাই আমার বড় মেয়ে লামিয়া।আর আমার আরেকটা নবাব আছে...নাম নিলয়....
এই মেয়েটার জন্যই এখনো আমার দিন ভাল মত যায়।লামিয়া এখন অনাস ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।নিলয় ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।ওদেরকে আমি সম্পুন্ন স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছি।যাতে লাইফের আনন্দ টা পায়।তবে জীবনে চলার পথে ভুল জিনিসগুলিও বুঝিয়ে দিয়েছি।
ছেলে মেয়ে দুইটাই আমার সাথে ফ্রি।তারা তাদের বিভিন্ন জিনিস শেয়ার করে।শুধু আমি করি না।
লামিয়া ক্লাস ১০ এ থাকা অবস্থায় ওকে বলেছিলাম
-লামিয়া...?
-বল বাবা.....
-তোমার বয়স এখন কত...!?
-১৭
-তোমার কোন ছেলে ফ্রেন্ড আছে...?
-আছে বাবা (মাথা নিচু করে)
-সে কি তোমার বাবার থেকে প্রিয়....!?
-অবশ্যই না.....
-তোমার জীবন তুমি পরিচালনা করবে...আমি শুধু পথ দেখিয়ে দেব।তোমার ফ্রেন্ড কে বল ভালভাবে পড়াশোনা করতে।এখন তোমার যেমন অনুভুতি ৫ বছর পর যদি এমন থাকে,তাহলে তার সাথেই তোমাকে বিয়ে দেব...
-জী বাবা বুঝতে পারসি।
এইতো গেল আমার মেয়ের কথা।এখন ছেলের কথায় আসি....
ছেলে আমার ক্লাস ৮ এ সিগারেট খাওয়া শুরু করে।হ্যা,আমিও খেয়েছিলাম।কিন্তু আমি রিয়েলাইজ করেছিলাম যে এইটায় কোন ফায়দা নাই।টাকাটাই নষ্ট।আমি নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলাম।যাই হোক,নিলয় আমাকে দেখে নাই।তাই আমি ওর আগে তারাতারি বাসায় ফিরি।এক প্যাকেট বেনসোন নিয়ে....লামিয়
া অবাক.....
নিলয় বাসার আসার ১ মিনিট আগে সিগারেটটা ধরালাম।ছেলে মেয়ে দুইটার একটাও কখনো আমাকে সিগারেট খেতে দেখেনাই।যার কারনে একটু অবাক।
-বাবা,তুমি সিগারেট খাও (নিলয়)
-কেন অবাক হয়েছো....?
-অবাক হওয়ার মতই কাজ করছো.....
-আমিও ঠিক একটু আগে এমনই অবাক হয়েছিলাম....
এবার নিলয় একটু নড়েচড়ে উঠলো
-কি দেখেছো বাবা..?(লামিয়া)
-নিলয় বলবো...?
-......(চুপ)
-কি করছিস রে....?(লামিয়া)
-আমি সিগারেট খেয়েছিলাম....
ঠাস!!!!!আমি তাকিয়ে আছি লামিয়ার দিকে...
-তোর লজ্জা করলো না....এই বাবার সন্তান হয়ে সিগারেট খেতে....!!!!!
-নিলয়....!!!
-জী বাবা.....
-বুকে আসো....
আমার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি বের হল।আমিও সেদিন বাবার সামনে এইভাবে ধরা খেয়েছিলাম।কিন্তু আমার বাবা শাস্তি হিসেবে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।এই জন্য বাবার ওপর জিদ করে আমি সিগারেট কন্টিনিউ করে যাই.....
-জানো নিলয়....আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারতাম না।শুধু মনে কষ্ট পেতাম।আমার ছেলেটা খারাপ হয়ে গেছে এই কষ্টে।তোমার বোন যে চড় মেরেছে সেটা তোমার ভালর জন্য।আর আমি তোমাকে বুকে নিলাম এই কষ্ট ভুলিয়ে দেয়ার জন্য।
-বাবা...আই এম সরি।আর কখনো হবে না।
-আমি জানি।
তারপর থেকে আমার ছেলে মেয়ে দুইটা কখনো কোন ভুল কাজ করেনি।
আমি যে খুব হাসি খুশি থাকতাম তা না।আবার যে খুব গম্ভীর থাকতাম তাও না।একটা জিনিস হয়তো জানার ইচ্ছা থাকতে পারে ওদের মা কোথায়....!!!!!
-বাবা...দেখো....আমাকে একটা মোবাইল গিফট করসে...(লামিয়া)
-তোমার ওই ফ্রেন্ড....!!!!
-হ্যা....খুব সুন্দর না....?
-হুম....
-ছেলেটা খুবই ভাল বাবা....
-.......
-আচ্ছা বাবা.....তুমি মার সাথে প্রেম কর নাই...?
-হঠাৎ এই কথা....!!!!
-আজকে একটু বল না বাবা....!!!!
-কি বলবো....!!!
-কিভাবে কি হইসে....!!!!
আমি ছোট করে শ্বাস নিলাম।ও তো ওর মায়ের মেয়ে।আবদার তো করবেই.......
লামিয়ার মায়ের নামও লামিয়া।ওর সাথে পরিচয় ছিল ক্লাস ৮ এ।ছোটকাল থেকে সবার অবহেলা দেখে বড় হয়েছি।তাই সবার সাথে তেমন মিশতাম না।আমার থেকে অনেকেই সাহায্য চেয়ে সাহায্য পেয়েছে।তাই ভুলে গেলেও আবার মনে পড়ে হেল্প করার মত মানুষ আছে।
যাই হোক।লামিয়া দেখতে ছিল ভীষন সুন্দর।ক্লাসে সবার সাথে কথা বলত।আমার সাথেও এসেছিল কথা বলতে,বাট আমিই বেশি কথা বলতাম না।তবে......ওকে ভাল লাগত।
.
.
-নিল......(আমার নাম)
-হ্যা বল...
-স্যারের অমুক লেকচার টা তোমার কাছে আছে...?
-উম....সাথে নাই কিন্তু বাসায় আছে....
-তাহলে চল।গিয়ে নিয়ে আসি
আমি না করতে গিয়েও পারলাম না।এত সুন্দর একটা মেয়ের আবদার ফেলা যায় না।
তো এইভাবে বিভিন্ন ভাবে আমাদের সময় কাটে।কিভাবে জানি একটা ভাল সম্পক হয়ে গেল আমাদের মাঝে।ও যে আমাকে পচ্ছন্দ করে তা বুঝতে পারি ভাসিটি এডমিশনের সময়।
-জানিস....তোকে পটাইতে মজা লাগে..(লামিয়া)
-মানে....
-মানে হল...তুই যে এত গম্ভীর হয়ে থাকার চেষ্টা করস বাট পারস না।তোর একটা সিক্রেট পাইছি....
-কি রকম....!!!!
-তোকে একটু নরমভাবে অনুরোধ করলে পানির মত গলে যাস।গতদিনের কথা দেখ....তোকে কিন্তু লাস্ট টাইম আমার বাসায় নিয়ে গিয়ে ছাড়ছি.....হাহা....
.
.
আসলেই।আমি যেতে চাই নাই।এমন নরম কন্ঠে বল্ল যে আমি রাজী হয়ে গেলাম।
ঠিক এরকম ভাবেই আরেকটা দিন.....
-নিল....(খুব নরম ভাবে)
-আবার কি চাস....!!!!(বুঝতে পারলাম মতলব খারাপ)
-ইয়ে মানে....চল না যাই....
-কই....!!!!
-ইয়ে.....চল একসাথে থাকি......
-কি কস...!!!!!!
-মানে....চল না বিয়ে করে ফেলি.....!!!
আমার মাথায় বাজ পড়লো....
-মানে কি.....!!!!!মাথা ঠিক আছে তোর....!!!
-আমাকে পচ্ছন্দ করস না....!!!!
-লামিয়া...পাগলামি করবি না....বাসায় যা.।
-প্লিজ....চল একবার বিয়ে করি...প্লিজ..প্লিজ...
.
.
.
-তারপর বাবা.....!!!!
-তারপর আর কি....বিয়ে হল..তোমার মার কথা তো বললাম...আমাকে পটাইতে পারতো...পটিয়ে বিয়ে করছে...
-ইস!!!!তোমার মনে হয় ইচ্ছে না.....!!!!!
-হুম..
.
.
সুখ সবার কপালে সয় না।তাই হয়তো এমনটাই হইছে।তবে আমার প্রভাব যেন ছেলে মেয়ের মাঝে না পড়ে সেটাই কামনা করি......
(Long time....after 9 month)......
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৫৪