somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পটা; স্নিগ্ধা আর পরশ'কে নিয়ে ........

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবনের বাকেঁ যে কত ছোট ছোট উপলব্ধি রয়েছে, যেগুলো প্রায় অজানাই থাকে। এই অজানার মাঝেই রয়েছে কত সুন্দরতম স্মৃতি, ভালবাসা, স্নিগ্ধ প্রেমময় সম্পর্ক। আমরা তার খুবই কম জানি কিংবা যখন জেনে থাকি তখন বিষ্ময়ের শেষ হয়না, এতো ভাললাগা আর ভালবাসা যেকোন সময়কে জড়িয়ে এক অপরুপ মায়াময় পরশ তৈরী করতে পারে তা না জানলে বিশ্বাসই হতে চাইবে না। এমনই একটা মুহুর্ত নিয়েই আজকের গল্প, যেখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে আর কিছু ফুল।

স্নিগ্ধা , ইউনিভার্সিটি পড়ে; খুব শান্ত স্বভাবের। তার শান্ত স্বভাবটা কাউকে বলে দিতে হয়না, এম্নিতেই বোঝা যায়। কিন্তু এই শান্ত মেয়েটাই আজ পৃথিবীটাকে ওলট পালট করে নিজেকেই অশান্ত করে তুলেছে। ও বার বার মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিল, সময় খুব দ্রুত বয়ে যায় আর সাথে ঘড়ির কাটাও। ওকে দেখে তাই মনে হচ্ছিল যেন ঘড়ির সাথে ওর একটা অঘোষিত যুদ্ধ লেগেছে। স্নিগ্ধা বাসটার জানলার পাশে বসা ছিল। খানিকটা চুল খোলা, বাইরের বাতাসে এলোমেলো ওড়না আর হাতে এক গোছা ফুল।

পরশ, সেও ইউনিভার্সিটি পড়ে; তবে খুব শান্ত স্বভাবের নয়। কিন্তু তাকে দেখে যে খুব চঞ্চল মনে হবে তাও নয়। ও মোবাইলে গেম খেলছিল, সময়টাকে পার করার জন্য যা করা হয় আর কি। সময় নিয়ে অবশ্য ওর মাথা ব্যথা নেই। হালকা লালচে চেকের একটা জামা, চোখে চশমা আর হাতে একটা বই। পরশ, স্নিগ্ধার পাশে বসা ছিল।

পড়ন্ত দুপুর, অবসন্ন বিকেল।

স্নিগ্ধা'কে খুবই অস্থির লাগছিল, ওর সেই অস্থিরতার মাঝেও একটা মিষ্টি হাসি ওর বাঁকা ঠোটেঁ মিশে ছিল। ও অপেক্ষায় ছিল। যে অপেক্ষা একজন মানুষকে আনন্দের উচ্ছাসে সাগর পাড়ি দেবার মত, সেই অপেক্ষাই সে তীব্রতর কাতর ছিল। আজ প্রথম, স্নিগ্ধা তার ভালবাসার মানুষকে দেখতে চলেছে, যে মানুষটাকে সে শুধু শুনেই এসেছে কিন্তু দেখা হয়নি, সেই মানুষটাই আজ তার সামনে আসবে। যে মানুষটাকে স্বপ্নের পৃথিবীতে সবচাইতে আনন্দ দিতে চেয়েছে অথচ তার এই প্রথম দেখাই স্নিগ্ধা নিজেই আনন্দ পেতে চলেছে।

পরশ তার পাশের সিটে বসা মেয়েটাকে কয়েকবারই লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছু বলেনি। পরশ সবচাইতে বেশী খেয়াল করেছে মেয়েটা হাতে থাকা এক গোছা ফুলের দিকে। পরশ নিজের মনেই ভাবতে থাকে এই ফুলগুলো কিসের জন্য বা কার জন্য হতে পারে ? নিজেই উত্তর দেয়, ওর সবচাইতে প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবী বা কোন অনুষ্ঠান বা .... অনেক উত্তর পরশের মনটাকেও খানিকটা দোলা দেয়। তাই যখনই ফুলগুলোর দিকে পরশ চোখ রাখে, সেই চোখ একবার স্নিগ্ধাকেও দেখে। একটা সময় পরশের হৃদয় ফুল আর স্নিগ্ধা'র মাঝে কোন পার্থক্য খুজেঁ পায়না।

অত:পর,

স্নিগ্ধা ওর গন্তব্যের প্রায় কাছাকাছি পৌছে গেল, ধানমন্ডি ২৭ এর রবীন্দ্র সরোবরের মঞ্চ। স্নিগ্ধাই ওকে এখানে আসতে বলেছিল। রবীন্দ্রনাথ ওর প্রিয় যেমন প্রিয় ওর প্রিয় মানুষটি। পৃথিবীতে ভালবাসার বোধহয় এই এক আনন্দ, কোন কিছু পাওয়ার জন্য নয় শুধু একটু কাছে আসা, খানিকটা সময় পাশে থাকা, চোখে চোখ রাখা, ভয়ের তীব্রতাই অল্প একটু স্পর্শ করা। স্নিগ্ধা তাড়াহুড়া করে, ওকে নামতে হবে। ভালবাসার আবেশে ও মোহাবিষ্ট ছিল, তাই যে নেমে পড়তে হবে এই খেয়ালটুকু হল খানিকটা দেরীতে।

পরশ তখনও ওর পাশে বসা। শুধু দেখলো স্নিগ্ধা'কে নেমে পড়তে - যতক্ষণ ওকে দেখা যায়। কি যে হল, পরশের ভাবনায় তখনও স্নিগ্ধা; তাই সময়টা অল্প হলেও যে অনুভূতি পরশকে হুট করে বেঁধে ফেলেছিল সেই অনুভূতিটাই স্নিগ্ধা চলে যাবার সাথে সাথে কেমন শূন্য মনে হতে লাগল, আপনা থেকে পাশের খালি সিটটাতে ওর চোখ চলে গেল। পরশ চমকে উঠলো, সিটের উপর এক গোছা ফুল। ও বুঝতে পারে, সেই ফুল যে ফুলগুলো স্নিগ্ধা'র হাতে ছিল। ভূলে ফেলে গেছে। পরশ এগিয়ে দেখলো, না স্নিগ্ধাকে পেলনা।


স্নিগ্ধা খুব হাশিখুশি থাকে, কিন্তু ভয়ও করে। ও মস্ত বড় ভূল করে ফেলেছিল, তাড়াহুড়ায় বাসে ফুলগুলো ফেলে এসেছে, ওর খুব খারাপ লাগলেও অপেক্ষা করতে থাকে, সময়টা যতই এগিয়ে যেতে থাকে ততই ওর খুশি ভরা মুখখানি সূর্য অস্তরত আধাঁরের মত মলিন হয়ে আসছিল, বিকেল'টাও পড়ন্ত। ও লক্ষ্য করে যে মানুষটাকে শুধু এই প্রথমবারের মত সামনে থেকে দেখবে বলে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছে সেই মানুষটা তার কাছে নেই, কথা দেয়া সময় পেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধা বুঝতে পারে, এ মিথ্যে অপেক্ষা, হয়তো যে অপেক্ষার কোন শেষ নেই। স্নিগ্ধা ফিরে চলে।

সন্ধ্যা নেমেছিল, রাস্তার সোডিয়াম আলোয় অচেনা পথে স্নিগ্ধা ফিরে যাবার স্থানটিতে দাড়িয়ে থাকলো। ঠিক হাঠতই স্নিগ্ধা খেয়াল করলো পাশে একজন ওর ফুলগুলো হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ..... ঠিক সে সময়ই পরশও পাশে ফিরে দেখে স্নিগ্ধা !

"আরে আপনি না ! আমি জানতাম, আপনি এখানে ফিরবেন, তাইতো দাড়িয়ে আছি আপনার অপেক্ষায়;
ফুলগুলো ফেলে এসেছিলেন, হয়তো আপনার প্রিয় মানুষের জন্য, তাই না ? নেন।" - পরশ গড়গড় করে একটানে কথাগুলো বলে গেল।

স্নিগ্ধা শুধু তাকিয়েই থাকলো, ফুলগুলোর দিকে নয় কিংবা পরশকেও না; শুধু পরশের চোখে তাকিয়ে ছিল। অন্ধকারেও যে চোখ জ্বলজ্বল করছিল আলো উজ্বলতায়, যে চোখে কথা বলছিল, যে চোখে স্পষ্ট লেখা ছিল কিছু কথা, যে কথাগুলোই আজ স্নিগ্ধা বলতে চেয়েছিল তার প্রিয় মানুষটিকে। স্নিগ্ধা যে চোকে তাকেই খুজেঁ পেল যাকে খুঁজছিল এতটা প্রহর জুড়ে। কখন যে স্নিগ্ধার চোখে জল চলে এলো সে বুঝতেই পারেনি।
স্নিগ্ধা বলে উঠল -

আমি স্নিগ্ধা

আর, আমি পরশ ।
৯টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×