হুমায়ুন আজাদের চোখে বাঙালী এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে তার কিছু প্রবচন তুলে দেয়া হলো। আরো কিছু আগামীতে প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকলো।
১। "মিনিষ্টার" শব্দের মূল অর্থ ভৃত্য। বাংলাদেশের মন্ত্রীদের দেখে শব্দটির মূল অর্থই মনে পড়ে।
২। আগে কাকনবালার আসতো পতিতালয় থেকে, এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
৩। আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্নবাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখারীনির উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটু বিচলিত হয় না।
৪। বাংলার প্রধান ও গৌণ লেখদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ধার করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন নিজের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে।
৫। বাঙালী যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
৬। প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, তখন নতুন বিদ্রোহীরা কারাগারে বা ফাসিকাষ্ঠে ঝোলে।
৭। বেতন বাংলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
৮। পুরস্কার অনেকটা প্রেমেরে মতো, দু'একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশী পাওয়া লাম্পট্য।
৯। কবিরা বাংলায় বস্তিতে থাকে, সিনেমার সুদর্শন গর্দভেরা থাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদে।
১০। বুদ্ধিজীবিরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভন্ড, ভন্ডতর, ভন্ডতম।
১১। যে বুদ্ধিজীবি নিজের সময় ও সামজ নিয়ে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত পশু।
১২। আর পঞ্চাশ বছর পর আমাকেও ওরা দেবতা বানাবে; আর আমার বিরুদ্ধে কোন নতুন প্রতিভা কথা বললে ওরা তাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে।
১৩। পা বাংলদেশে মাথার থেকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। পদোন্নতির জন্য এখানে সবাই ব্যগ্র, কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোন উদ্বেগ নেই।
১৪। এখানকার একাডেমিগুলো সব ক্লান্ত গর্দভ; মুলো খাওয়া ছাড়া ওগুলোর পক্ষে আর কিছু সম্ভব নয়।
১৫। বাংলাদেশে কয়েকটি নতুন সাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে, এগুলো হচ্ছে স্তুতিবিজ্ঞান, স্তবসাহিত্য, সুবিধাদর্শন ও নমস্কারতত্ব।
১৬। এখানে অসতেরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত।
১৭। বাংলাদেশের প্রধান মুর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোন আলোচনা অনুষ্ঠান দেখা। ঐ মুর্খমন্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছে মুর্খশিরোমনি।
১৮। এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষণঃ অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।
১৯। বাঙালী একশো ভাগ সৎ হবে এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হলেই বাঙালীকে পুরষ্কার দেয়া উচিত।
২০। একজন চাষী বা নদীর মাঝি সাংস্কৃতিকভাবে যতোটা মূল্যবান, সারা সচিবালয় ও মন্ত্রীপরিষদও ততটা মূল্যবান নয়।
২১। বাঙালী আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনো কখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো।
২২। তৃতীয় বিশ্বে নেতা হওয়ার জন্য দুটি জিনিষ দরকারঃ বন্দুক ও কবর।
২৩। এ দেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবকঃ দারোগার শোকসংবাদেও লেখা হয় তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন।
২৪। ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দে ওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যেতে পারে না, কারণ অন্তরে কোন বিমান যায় না।
২৫। রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ বিপরীত বস্তুঃ একটা ব্যাধি অপরটি সাস্থ্য।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৮