ফুলটি দেখতে যেমন সুন্দর তার নামটিও চমৎকার "সুখ মুরালি"।
২০১৮ সালের কথা, বৃক্ষকথা গ্রুপের বেশ কয়েকজন বৃক্ষপ্রেমির সাথে আমি গিয়েছিলাম মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে। হাঁটতে হাঁটতে দেখতে দেখতে একসময় গার্ডেনের পশ্চিম-উত্তর কোনের সরকারী নার্সারিতে পৌছে হঠাত করেই চোখে পরলো একটি গুল্মের ঝোপে অসাধারণ নীলচে-বেগুনী ফুল ফুটে আছে। সেই প্রথম পরিচয় হলো সুখ মুরালি বা কালো বাসকের সাথে।
জ্বী, সঠিক পড়েছেন আপনি, আমি কালো বাসক লিখেছি।
ফুলটি দেখতে মোটেও কালো নয়, তবুও তার বাংলা নাম "কালো বাসক"। সাধারন বাসকের সাথে এর কোনো দিক থেকেই কোনো মিল নেই। না মিল আছে ফুলের আকারে-গড়নে, না মিল আছে ফুলের রঙে। গাছের বা পাতার সাথেও সাধারণ বাসকের সাথে কালো বাসকের তেমন কোনো মিল নেই বললেই চলে। তবুও এটি কালো বাসক। কেউ কেউ নীল বাসক বলতে চায়, তবে সেটি সঠিক নয়। কারণ নীল বাসক বা খাড়া মুরালি (Eranthemum strictum) নামে অন্য আরেকটি ফুল আছে। সেটি দেখতে প্রায় সবদিক থেকেই এই কালো বাসকেরই মতো। বান্দরবানের পাহাড়ে এই নীল বাসক বা খাড়া মুরালি প্রচুর ফুটতে দেখেছি আমি।
ফুলের নাম : সুখ মুরালি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : বাংলা- কালো বাসক; হিন্দি- গুলশাম; তামিল- নীলামূলি; তেলুগু- নীলাম্বরমু ।
Common Name : Blue Sage, Blue Eranthemum, Eranthemum.
Scientific Name : Eranthemum pulchellum
ল্যাটিন শব্দ pulchellum মানে "সুন্দর"। ফুলটিযে সুন্দর তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সুখ মুরালি গাছের শীর্ষে ফুল ফোটে। পাঁচ পাপড়ির ফুলগুলির ফ্লাওয়ার টিউব নলাকার। নলের ভিতর থেকে ৩টি পুংকেশর ফুলের পাপড়ির উপরে বেরিয়ে আসে, যাদের ২টির অগ্রভাগ প্রায় আয়তাকার, অন্যটি দেখতে আলাদা। সব ফুল এক সাথে না ফুটে নিচের দিক থেকে ধীরে ধীরে একে একে ফুল ফোটে। ফুল ফোটে সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। তবে বছরের বেশিরভাগ সময় ধরে অল্প বিস্তর ফুল ফোটতে পারে।
কালো বাসক একটি চিরসবুজ বহুবর্ষজীবী শাখাপ্রশাখাযুক্ত গুল্মে জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি ভেষজ ঔষধী উদ্ভিদও বটে। তবে
বাগান আলোকরে রাখা যেকোনো ফুলের চেয়ে এই কালো বাসকের সৌন্দর্য কোনো আংশে কম নয়, বরং কিছুটা বেশীই বলা চলে। কারণ হলো এর নীল রঙের ফুল। আমাদের এই অঞ্চলে এমন চমৎকার নীল রঙের ফুল খুব কম গাছেই দেখতে পাওয়া যায়। তবে সৌখিন বাগানে এই গাছ খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না। কারণ বিজ থেকে এই গাছের চারা করা খুবই কঠিন। কাটিং করে বংশবিস্তার করা বরং সহজ। ফল ক্যাপসুল আকৃতির ক্ষুদ্র ৪টি বীজ হয়। প্রাকৃতিক ভাবে এদের হিমালয়ের কিছু অংশ, ভুটান, বার্মা, ইন্দো-চীন, পশ্চিম চীন, ভারত, নেপাল, বাংলাদেশে পাওয়া যায়। মূলত ভারত ও চীন এদের আদিনিবাস।
কালো বাসক বা সুখ মুরালি গাছের পাতা সরল, ডাঁটাযুক্ত, কিছুটা লোমশ এবং গাঢ় সবুজ। ডিম্বাকৃতি থেকে উপবৃত্তাকার পাতাগুলি ৪ থকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত গতে পারে। পাতার শিরা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। গাছটি ২ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে, আর ১ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পার। হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে এরা ভালো জন্মে।
ছবি তোলার স্থান : বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর, ঢাকা।
ছবি তোলার তারিখ : ৩রা মার্চ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৫