আমাদের আশ্রম এর কথা আপনারা অনেকেই জানেন। আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো আশ্রমে কয়েক রকমের রাজহাঁস পালবো। সমস্যা হচ্ছে গ্রামে যাদের রাজহাঁস আছে তারা কেউ বিক্রি করতে চায় না, না বড় হাঁস বিক্রি করে, না বাঁচ্চা বিক্রি করে, না ডিম বিক্রি করে। হাট থেকে কিনে আনলে সেগুলি হয় রুগনো, বড় হতে হতে মারা যায় বেশীর ভাগ। দামও নেয় খুব চড়া।
বেশ কয়েক মাস আগে হঠাত করে এক লোক ঝাঁকায় করে বেশ কিছু রাজহাঁস বিক্রি করতে নিয়ে আসে এলাকায়। মোটামুটি তরুণ রাজহাঁস। ভাবলাম এরা খামারের হলেও যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে, নিচ্ছয়ই আশ্রমে ছেড়ে দিলে মারা যাবে না। অনেকক্ষণ দরদাম করে বেশ সুস্থ সবল দেখে ৭টি রাজহাঁস কিনলাম ৮,০০০/= (আট হাজার) টাকা দিয়ে। সেদিনই বন্ধু হিরা আর ইস্রাফীল সেগুলিকে নিয়ে চলে গেলো আশ্রমে।
পরদিন খবর এলো একটির অবস্থা খারাপ। তারপরদিন আরো একটির অবস্থা খারাপ। কোনোটি খাচ্ছে না। কোনোটা ঠিক মতো হাঁটছে না। কোনোটার পাতলা পায়খানা। একটা করে দূর্বল হয়, আর সেটিকে কেটেকুটে খাওয়ার আয়োজন করা হয়। এমন করে করে শেষ হতে হতে সবেধন মণি দু্খানি রাজহংস টিকে রইলো শুধু। বাকিরা আমারাদের ভূড়িভোজের রসনা বিলাসে লেগেছে শুধু।
টিকে যাওয়া সবেধন মণি দু্খানি রাজহংস এখনো বেশ বহাল তবিয়াতেই রয়েছে। আশ্রমে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে পুরুষ রাজ হাঁসটি মাঝে মাঝেই অন্য সকল প্রাণীদের উপরে দাপট দেখিয়ে বেড়ায়। দূর থেকে দেখতে ভালই লাগে। দূর থেকে, কারণ সে মাঝে মাঝে আমাদের উপরেও চড়াও হয়। একদিন বন্ধু হিরার হাতে কামড়ে দিয়েছে। এক দিন হিরার মেয়ে রাহিকে তাড়া করে ফেলে দিয়েছে।
এই সিজনে রাজহংসীটি গোটা দশেক ডিম পেরেছে। হিরা ডিম গুলিকে মুরগির নিচে দিয়েছিলো তা দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর জন্য। আমি নিষেধ করেছিলাম। কারণ প্রথম বারের ডিমে বাচ্চা হওয়ার চান্স খুবই কম থাকে। পুরুষটি সবল হতে বেশ কিছুটা সময় নেই। প্রথম দিকের বিটে ডিমগুলি ফারটাইল হয়না বললেই চলে। আমার কথা না শুনে হিরা চান্স নিয়েছিলো। কোনো লাভ হয়নি। একটি ডিমও ফারটাইল হয়নি, বাচ্চা পাওয়া যায়নি। আশা করছি আগামী বার ডিম থেকে বাচ্চা পাবো।
ছবি তোলার স্থান : আশ্রম, নাগরি, কালিগঞ্জ, গাজীপুর, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খিষ্টাব্দ।