somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিল্লী কা লাড্ডু - পর্ব ৮

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দিল্লী কা লাড্ডু - পর্ব ৮
--------------------------- রমিত আজাদ




(পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে)

পাহাড়গঞ্জের চিত্রগুপ্ত রোড দিয়ে চলা অটোরিকশাটি মোড় ঘুরে যখন Panchkuian Marg (পঞ্চকুয়া সড়ক)-এ উঠলো একপাশে পড়লো Ramakrishna Ashram Marg Metro station। এ সময় হঠাৎ হাসানের মনে হলো সুনিতাকে একটা কল করা দরকার। এট লিস্ট জানানো প্রয়োজন যে সব ঠিক আছে। হি ইজ ওকে। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে মোবাইলটা হাতে নিলো। আর কত নাটক দেখতে হবে হাসান-কে?! হাতে নিতে না নিতেই মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। সুনিতা-র নাম্বার থেকে কল। এটা আশাও করেনি হাসান। যাহোক, সবুজ বাটনে চাপ দিলো হাসান। ওপাশ থেকে মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে এলো

সুনিতা: হ্যালো, ইজ ইট হাসান?
হাসান: ইয়েস স্পিকিং।
সুনিতা: আর ইউ ওকে?
হাসান: এভরিথিং ইজ ভেরি ফাইন।
সুনিতা: ডিড ইউ ফাইন্ড দ্যা এ্যাম্বেসী?
হাসান: ইয়েস। আই মেট দ্যা এ্যাম্বেসেডর ইভেন।
সুনিতা: ভেরি নাইস। হোয়ার আর ইউ নাউ?
হাসান: (হাসান একটু দ্বিধান্বিত হয়ে বললো) আই এ্যাম নাউ গোয়িং।
সুনিতা: হোয়ার?
হাসান: মীন। জাস্ট আই এ্যাম নাউ ইনসাইড এ্যান অটো।
সুনিতা: হোয়ার আর ইউ গোয়িং?
হাসান: জাস্ট টু হ্যাভ সাম ফুড। গোয়িং টু দ্যা সিটি সেন্টার, কনাটপ্লেস। এ্যাজ আই এ্যাম টোল্ড, দ্যাট এ ম্যাকডোনাল্ডস ইজ দেয়ার।
সুনিতা: ওহ! ম্যাকডোনাল্ডস! নট ওয়ান, সাম ম্যাকডোনাল্ডস' আর দেয়ার। এনিওয়ে, আই এ্যাম অলসো এ্যাট দ্যা সিটি সেন্টার নাউ। লেটস্ মীট।



উত্তর কি দেবে হাসান ঠিক বুঝতে পারছিলো না। এই বিদেশ-বিভুঁয়ে যে নাটকটি গতকাল থেকে শুরু হয়েছে, প্রথম দৃশ্যেই তার যবনিকাপাত চেয়েছিলো হাসান। উদ্দেশ্যহীন অর্থহীন একটি কোইনসিডেন্স-কে টেনে লম্বা করার কোন প্রয়োজন নেই। চিন্তার এ' পর্যায়ে হাসানের মনে স্ট্রাইক করলো, জীবনের সব কোইনসিডেন্সগুলোই কি নিছক কোইনসিডেন্স, নাকি তারা চেইন অব প্রায়র অকারেন্সেস দ্বারা ডিটারমাইন্ড? নাকি কোইনসিডেন্স একটি অনিশ্চয়তা? আবার এই অনিশ্চয়তাই তো কোন একটি নিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়! 'ফিলোসফী অব ডিটারমিনিজম' আর 'ফিলোসফী অব আনসারটেইনিটি' সম্ভবত জগতের দ্বান্দ্বিকতা!

হাসান: ওকে, লেটস্ মীট।
আরেক দফা অস্থির হলো হাসানের মন! কেন ফট করে রাজী হয়ে গেলো। 'না' বলতে পারলো না কেন সে?
সুনিতা: জাস্ট কাম টু দ্যা কনাটপ্লেস ম্যাকডোনাল্ডস, এ্যান্ড ফোন কল মি।



কিছুক্ষণ পর কনাটপ্লেসের চৌরাস্তার মোড়ে নামলো হাসান। এখান থেকে ম্যাকডোনাল্ডসটা কোন দিকে? কাল কিছু একটা দেখেছিলো। চওড়া প্রদর্শগবাক্ষওয়ালা বড় একটা ম্যাকডোনাল্ডস। এখন তো আশেপাশে আর কিছু চোখে পড়ছে না! তবে কি রাস্তার ওপাশে? এখানে রাস্তা পার হবার জন্য কোন ফুট ওভারব্রীজ নাই। হাসানের মনে পড়ে আনিতাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলো, "দিল্লী-তে কি আন্ডারপাস আছে?" আনিতা জবাব দিয়েছিলো, "আছে তো, বেশ কয়েকটাই আছে।" গতকাল একটি আন্ডারপাস দেখেছিলো হাসান। আজ এমনি একটি আন্ডারপাস দিয়ে রাস্তার ওপাশে গেলো হাসান। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর দেখলো, নাহ্, এই দিকটায় কোন ম্যাকডোনাল্ডস নাই। আবার রাস্তার ওপাশে গেলো হাসান। এপাশে খুব বড় শপিং সেন্টার! আবার বহুতল ভবন। এমন কয়েকটি। গোলক ধাঁধায় পড়ে গেলো সে। ফুটপাতে কিছু ভিক্ষুক বসে আছে! একজন ফুটপাতে স্যুটকেস-ব্যাগ ইত্যাদি সাঁজিয়ে বিক্রি করছে। আরেকজন বই সাঁজিয়ে বিক্রি করছে। কয়েক দশক আগের ঢাকার বায়তুল মোকাররম এলাকার কথা মনে পড়লো হাসানের! বই বিক্রেতার কাছে গিয়ে হাসান জিজ্ঞাসা করলো, "ইহাপে ম্যাকডোনাল্ডস কাহা হ্যাঁয়?" বিক্রেতাটি খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলো, এটা বিল্ডিং নাম্বার এতো, ব্লক এফ, ওটা ব্লক জি, ইত্যাদি; ডান-বামে গিয়ে কিভাবে ম্যাকডোনাল্ডস পাওয়া যাবে। এরপরেও খুঁজে পেতে কিছুটা সমস্যা হলো। দিল্লীর এদিকটায় রাস্তা আর শপিং সেন্টারের মাঝে চওড়া ফুটপাত আছে, পথচারীরা হাটতে পারে নির্বিঘ্নে, আবার অনেক তরুণ-তরুণী, এমনকি বৃদ্ধরাও একপাশে বসে আড্ডা দিচ্ছে। এত খোঁজাখুঁজির পর যে ম্যাকডোনাল্ডস-টির সন্ধান পেলো হাসান, সেটা খুব ছোট। কোনমতেই গতকালটির সাথে মেলাতে পারলো না। যাহোক, এখন সুনিতা-কে কল করা দরকার।



হাসান: হ্যালো সুনিতা। ম্যায়, কনাট প্লেস মে হ্যাঁয়।
সুনিতা: কাঁহা?
হাসান: ম্যাকডোনাল্ডস-কি সামন মে হ্যাঁয়। ফুটপাত মে।
সুনিতা: ম্যায় ভি ম্যাকডোনাল্ডস-কি সামন মে হ্যাঁয়!
হাসান: ম্যায় তুমকো দেখ নেহি সক্তা।
সুনিতা: কিউ?
হাসান: আই কান্ট সি ইউ। হোয়ার আর ইউ?
সুনিতা: আর ইউ ইন ফ্রন্ট অব ম্যাকডোনাল্ডস?
হাসান: ইয়েস।
সুনিতা: হোয়াট টাইপ?
এবার হাসান বুঝলো। কোথায় গোলমাল হচ্ছে। সম্ভবত ম্যাকডোনাল্ডস-এর অন্য কোন শাখার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সুনিতা। হাসান বিষয়টি বুঝিয়ে বললো সুনিতাকে।
সুনিতা: সমঝ্ গায়ি। তুম উহাপে ইন্তেজার করো, ম্যায় আতা হু।



একটু পরে হাতের বাঁ পাশ থেকে ফুটপাত বেয়ে সুনিতাকে হেটে আসতে দেখলো হাসান। যতই কাছে এগিয়ে আসছে ততই তার রূপের জেল্লা বাড়ছে। সুনিতা কি কালিদাসের কিংবা পদ্মপুরাণে বর্ণিত উর্বশী? গতকাল ঘরের আধো আলোয় অত ঠাহর করা যায় নি। সুনিতা শ্যামাঙ্গী নয়, আবার পর্বতের তুষারের মত শেতাঙ্গীও নয়। মাঝামাঝি কিছু একটা হবে। আবার mulattoদের মত চকলেট কালারও নয়। রঙটা দুধে-আলতা বলা যেতে পারে। আনিতার মতই সুনিতাও দীর্ঘাঙ্গী নয়। ওদিক থেকে যখন ও হেটে আসছিলো, আরেকবার শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো হাসানের। হাটার ভঙ্গীতেও আনিতার সাথে অদ্ভুত মিল! ইউরোপীয় ধাঁচের পোষাক পড়া সুনিতা। প্রচন্ড সপ্রতিভ মেয়ে। সহসা কবি নজরুল-এর সেই গানটি মনে পড়লো হাসানের


(দুধে আলতায় রং যেন তার সোনার অঙ্গ ছেয়ে—
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে।
চাঁদের কথা যায় ভুলে লোক তাহার মুখে চেয়ে।
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে॥
ও-পারের ওই চরে যখন চুল খুলে সে দাঁড়ায়,
কালো মেঘের ভিড় লেগে যায় আকাশের ওই পাড়ায়।
পা ছুঁতে তার নদীর জলে জোয়ার আসে ধেয়ে।
সে ভিন-গাঁয়েরই মেয়ে॥)
---------------------------- কাজী নজরুল ইসলাম

(চলবে)

-------------------------------------------------------

রচনাতারিখ: ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সাল
সময়: দুপুর ৩টা ৫৫ মিনিট



XXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXXX

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×