somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

। আমাদেরকে যেন আফসোস করতে না হয় !

১১ ই জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের জীবনকালেই হয়তো সেই সময়টা আমরা দেখে যাবো, এই দেশ এই মাটি এবং আমাদেরকে রাহুমুক্ত করতে নির্দ্বিধায় জীবনটাকে বাজী রেখে যাঁরা পাহাড়ের মতো অদম্য বুকটাকে টানটান করে দাঁড়িয়েছিলেন ট্যাঙ্ক গুলি আর বন্দুকের মুখে, আমাদের প্রচণ্ড অপরাধবোধ আর তীব্র পাপবোধ থেকে রেহাই পেতে ঋণশোধ তো দূরের কথা, একটুখানি কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যেও তখন আর একজনকেও খুঁজে পাবো না আমরা ! তাঁরা আমাদের ভাই, বন্ধু, পিতা, প্রাণের প্রিয়জন। তাঁরা আমাদের অহঙ্কার, বীর মুক্তিযোদ্ধা। কৃতজ্ঞ সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতিটা ফোঁটা দুধের ঋণ শোধ করে দিয়েছিলেন তাঁরা। ভাই হিসেবে ভ্রাতৃত্বের অমোঘ বন্ধনকে করেছেন পবিত্র, বন্ধু কিংবা প্রিয়জন হিসেবে স্বতঃস্ফূর্ত দায়বোধের পবিত্রতা ধারণ করে এই জাতিকে কলুষমুক্ত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগে মহীয়ান তাঁরা আজ আমাদের পিতার আসনে অধিষ্ঠিত।

কিন্তু জাতি হিসেবে বুঝি বড়ই দুর্ভাগা আমরা, মানুষ হিসেবেও আজ প্রশ্নবোধে আক্রান্ত। যে পিতারা তাঁদের অবিকল্প জীবনরস দিয়ে আমাদেরকে তিলে তিলে বেড়ে ওঠার নিশ্চিত স্বাচ্ছন্দ্য হাতে তুলে দিয়েছিলেন, কুৎসীৎ শৃঙ্খল ছিঁড়ে মুক্ত পা দুটোকে যেখান খুশি সেখান যাবার এক মায়াবী ভূখণ্ড নিষ্কণ্টক করে দিয়েছিলেন, উচ্ছল উদ্দাম মনটাতে ইচ্ছেখুশি ডানা জুড়ে নিতে বিশাল মুক্ত এক আকাশের ঠিকানা গুঁজে দিয়েছিলেন আমাদের বুকে, সেই পিতাদের প্রতি আমাদের অপরাধ আজ আকাশচুম্বী ! তাঁদেরই ছিনিয়ে আনা মহান স্বাধীনতার প্রশ্নযোগ্য উত্তরাধিকারী হয়ে আজ আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে প্রয়োগ করছি তাঁদের প্রতিই অমার্জনীয় অবজ্ঞা আর অবহেলা নিক্ষেপ করে।

আহা, আমরা সেই জাতি, যারা বুঝে কি না বুঝে আমাদের পিতৃ-পরিচয়কেই কলুষিত করছি আজ ! অসহায় অবলম্বনহীন করে দিয়ে তাঁদেরকে বাধ্য করছি তাঁদের সেই অগ্নিক্ষরা বজ্র-কঠিন হাতকে ভিক্ষার হাত বানিয়ে নিতে। বিনা চিকিৎসায় বিনা শুশ্রূষায় কঠিন অসুখে ভোগে ধুকে ধুকে পুষ্টিহীন হাত বাড়িয়ে অনুগ্রহ চাইতে সেইসব স্বাধীনতা বিরোধী কুলাঙ্গারদের কাছেও, যাদেরকে একদিন লাথি দিয়েও মহানুভব উদারতায় প্রাণভিক্ষাও দিয়েছিলেন এঁরা। সেইসব উদারতা আজ সত্যিই কি সংশোধনের অযোগ্য ভুল হয়ে নিজেকেই গ্রাস করতে এসেছে ?

অকৃতজ্ঞ প্রজন্ম হিসেবে আমাদের কোন প্রায়শ্চিত্ত হবে না, আমাদের আফসোসের কোন সীমা-পরিসীমা থাকবে না, আমাদের অপরাধ আর কখনোই মার্জনাসীমায় ফিরিয়ে আনা যাবে না, যদি না আমাদের স্বতঃস্ফূর্ততা আমাদের দায়বদ্ধতা আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধ দিয়ে এখনো আমরা যথাযথ মানবিক হয়ে ওঠতে পারি। সময় থাকতে যে জনগোষ্ঠি মানবিক হতে ব্যর্থ হয়, তার রাষ্ট্র তার সরকার তার জাতিসত্তা বিমূর্ত হয়ে যায়।

পিতাকে অবজ্ঞা মানেই নিজের পিতৃপরিচয়কেই অস্বীকার করা, মাতৃরসের অবমাননা করা। সময় আমাদের জন্য অপেক্ষায় নেই। যাকে দান করা যায়, তার কাছ থেকে কিছু চাইতে নেই। তাঁরাও আমাদের কাছে কিছু চাইতে আসেন না। কিন্তু আমরা তো অকৃতজ্ঞ নই ! আমাদের রক্ত তো তাঁদের অবদান অস্বীকার করতে পারে না। যদি তাঁদেরই উত্তরাধিকার বহন করি আমরা, তাহলে তাঁদের জন্য কিছুই কি করার নেই আমাদের ? নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের আশেপাশে যে ক’জন সেই অঙ্গিকার লালন করা বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাঁদেরকে খুঁজে বের করে তাঁদের পা ছুঁয়ে কিংবা হাত ধরে শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায় অবনত চিত্তে অন্তত সেই অপরিশোধ্য ঋণস্বীকারটুকু কি করতে পারি না আমরা ? আমাদের মানবিক ব্যক্তিসত্তা কি এতোটাই বিপর্যস্ত যে বিনা চিকিৎসায় একে একে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসহায় মৃত্যু আমাদের একটুও নাড়া দিতে পারে না ! আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার পরও আমাদের সামর্থের নগন্য অংশও কি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দিয়ে রাঙাতে পারি না আমরা ?

হাঁ পারি। যে স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যমে একদিন তাঁরা আমাদের জন্য তাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে একটুও পিছ-পা হন নি, একমাত্র প্রাণটাকে উৎসর্গ করতে কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এক অনিশ্চিত অসম যুদ্ধে, উত্তর-প্রজন্ম হিসেবে আমরাও আমাদের অহঙ্কারী প্রণোদনাগুলো জড়ো করে তাঁদের প্রতি শর্তহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশে পবিত্র হয়ে ওঠতে পারি। নিজেকে নিজে সম্মান করে নিজের কাছেই নিজের মানবিক গ্রহণযোগ্যতাকে আরো উন্নত করে তুলতে পারি। কেউ হয়তো বলবেন, আমরা কি কোনো কৃতজ্ঞতাই দেখাইনি ! হাঁ, দেখিয়েছি বৈ কি ! তবে এটাও মনে রাখতে হবে, প্রাণহীন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বিদ্রূপের নামান্তর। তাই আসুন না, আমরা আমাদের প্রত্যেকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামর্থ দিয়েই না হয় সবাই মিলে একবার চেষ্টা করে দেখি, কিছু করতে পারি কিনা ! নিজের সত্তার কাছে যেন পরাজিত না হই, সমস্ত মতভিন্নতা ভুলে সেরকম উদ্যোগ নিয়ে ওই উদ্যোগগুলোকেই সার্থক করে তুলি। উত্তরপুরুষের কাছে একদিন আমাদেরকেও যে জবাবদিহি করতেই হবে !

প্রিয় পাঠক, আপনার ধৈর্য্য আর মহার্ঘ সময় ব্যয় করে লেখাটি পড়েছেন বলেই সকৃতজ্ঞ অনুরোধ করি, ‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন ’ এই উদ্যোগটিতে আপনার অবিকল্প সহমর্মিতার সামান্য স্বাক্ষরও রাখতে পারেন কিনা দয়া করে একবার দেখবেন কি ?
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×