somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শৈশব, কৈশোর আর তারপরের লাগামহীন দিনগুলি - ৯

২২ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এভাবেই কাটছিল দিন। কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পরে আমি তানভীর (বর্তমানে ULAB এ পড়ছে) আর আফনান (সাইপ্রাসের নিকোসিয়া ইউনিভার্সিটিতে আছে বর্তমানে) গীটার শিখতাম। একদিন গীটার ক্লাসে যাওয়ার পথে হঠাত গলির মাথায় একটি মেয়েকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মানুষ স্বপ্নে যেমন হুর পরী দেখে এই মেয়ে তার থেকে একটু বেশী সুন্দরী। আমি এখন পর্যন্ত ওর থেকে সুন্দরী মেয়ে দেখিনি। আরেকটা মেয়েকে রাইফেলস স্কয়ারে দেখেছিলাম এতটা সুন্দরী, তবুও যেন কোথায় কিছুটা কমতি ছিল। মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। ভালো করে তাকিয়ে দেখি স্কুল ড্রেস পড়নে। হয়ত সেমিস্টার পরীক্ষা ছিল, হাতে ক্লিপবোর্ড আর পেন্সিল বক্স। রোদের আলোয় মনে হচ্ছিল ওর অনাবৃত অংশগুলো থেকে নিজস্ব আলো ঝরছিল। প্রথম দেখায় প্রেম বিশ্বাস করেছিলাম সেই প্রথম। আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে রইলাম। মেয়েটা আমাদের বাসার পাশেই থাকে। কিন্তু এতদিন চোখে পরেনি, পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম মেয়েরা নতুন এসেছে এলাকায়।


প্রেমের জ্বালা হারে হারে টের পাইলাম। বন্ধুদের কাছে বলতেও পারিনা, কারন ওরা জানে আমি প্রেমে বিশ্বাস করি না। প্রতিদিন স্কুল ছুটির সময়ে কলেজ বাদ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম মেয়েটিকে দেখার জন্য। প্রখর রোদে ছাদের উপরে বসে থাকতাম কখন ও ছাদে আসবে। লেখালেখির অভ্যেস ছিল। প্রতিদিন একটা করে চিঠি লিখতাম। কিন্তু সেই চিঠি আর তাকে দেয়া হতো না। এর মধ্যেই দেখলাম এই মেয়ের জন্য আরও ক্যান্ডিডেট আছে। মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। বন্ধু সোহেল কে বললাম কি করমু? সোহেল কিছুক্ষন আমাকে পর্যবেক্ষণ করে হাসতে হাসতে শেষ। বগা ফান্দে পইরা কান্দে।

যাইহোক, শেষে আমাদের ফ্রেন্ড শাওন শান্তকে ধরলাম দুজনে এর বিহিত করার জন্য। শাওন শান্ত জমজ বোন। ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে সেই মেয়ে স্কুলে যায়। আমার চিঠিলেখার সেই খাতা ওদের হাতে দিয়ে বললাম,” পড়বি না তোরা, মেয়েটারে দেখিয়ে দেব, তোরা শুধু ওর হাতে দিয়ে দিবি।“ সেই মেয়ের সামনে যাওয়ার সাহস আমার ছিল না। অথচ ফ্রেন্ডের জন্য অন্য মেয়ের কাছে তদবির নিয়ে আমি ঠিকই যেতে সাহস পেতাম।


শাওন শান্ত খুব সুক্ষ ভাবে কাজ করলো। মেয়ের হাতে খাতা ধরিয়ে দিলো। আমিও কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম, যার জন্যে লেখা সে তো পেলো! প্রেম হওয়া না হওয়া ব্যাপার না। পরে শুনি টিফিন টাইমে সেই মেয়ে শাওন শান্তদের বাসায় এসে কান্না কাটি করে অস্থির। মেয়ে নাকি আমাকে পছন্দ করতো। কিন্তু বলতে পারতো না। মেয়ে তখন পড়ে মাত্র ক্লাস নাইনে। যাইহোক, গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। এইবার শাওন শান্ত সোহেল তিনটারে খাওয়ানোর পালা। এরই মাঝে একদিন শাওন শান্ত ওদের বাসায় আমাদের মিট করার ডেট ফিক্সড করলো। মেয়ের সাথে মেয়ের মা স্কুলে যায় বলে মেয়ে টিফিন আওয়ারে পনের মিনিটের জন্যে আসবে।


যাইহোক, মেয়ে এসে বসে ছিল আমার খেয়াল ছিল না। শাওন ফোন দিয়ে বলে হারিমি ঘুম থেকে উঠে দৌড় দে। আমি কোনমতে ওদের বাসায় যেয়ে দেখি মেয়ে লাজুক মুখে বসে আছে। আমি বিপরিতে বসে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করলাম। কি বলবো সারারাত ঠিক করেছিলাম। মেয়েকে দেখার পরে ভুলে গেছি। শাওন একটা থাপ্পর দিয়ে বললো,”তুই কি সপ্তাশ্চর্য দেখতে আসছিস নাকি কিছু বলবি? মেয়েরে প্রপোজ করছিস?” ঘটনা সত্য, এই মেয়েকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রপোজ করা হয়নি। সামনে যেয়ে মেয়ের হাত ধরে চোখে চোখ রেখে লাইফের ফার্স্ট প্রপোজ করলাম।


বাংলায় প্রপোজ করা লজ্জাকর কিন্তু আমি বাংলায় বলে ফেললাম। তারপরে মেয়ের সম্মতি আদায় করে ছারলাম হাত। সেই প্রথম স্পর্শ আর সেই শেষ। এর পরে প্রতিদিন স্কুলে যেতে আসতে দেখতাম। কিন্তু কথা হতো না। মেয়ে একদিন ধরা পরল তার মায়ের কাছে। তার মা বিচার নাকি প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছিলেন বুঝতে পারিনি কারন তার আগেই আমার ছোট ফুপ্পি যে কিনা আমাদের বাসায় বসে চা খাইতেছিলেন তিনি আমার প্রেমিকার আম্মাকে ইচ্ছেমতন কতগুলা কথা শুনিয়ে বিদায় দিলেন। তারপরেও আমি আধাপাগল, তারজন্যে সব করতে পারি। মেয়েও আবার যোগাযোগ শুরু করলো। সুন্দরী মেয়েরা আসলেই বোকা হয়। মেয়ে আবারো খাইলো ধরা।


এইবার মেয়ের মা রাগে মেয়ের বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। আমার বাসায় জীবনেও এই মেয়েকে মেনে নিবে না আমি জানতাম। কারন আমাদের ফ্যামিলির বাইরে কখনো কিছু ঘটেনি এ পর্যন্ত। আমি দেবদাস হয়ে পথে পথে ঘুরতে শুরু করলাম আর বন্ধুদের কাছে সিগারেটের বিনিময়ে পরামর্শ চাইতে লাগলাম। যাইহোক, যথাযথ আনুষ্ঠানিকতায় সেই মেয়ের বিবাহ দেয়া হইল। আমার ছোট বোনের শরীর খারাপ থাকায় হসপিটালে ছিলাম তখন। নইলে আমি মমতাজের সেই গান পাইরেসি করে অবশ্যই গাইতাম,”বন্ধু যখন জামাই লইয়া, আমার বাড়ির সামনে দিয়া......”


অবশেষে পৃথিবীর ছ্যাকা পুরুষদের খাতায় আমার নাম উঠে গেলো। এলাকায় শান্তি নাই, সবাই বাকা চোখে তাকায়। সেই মেয়ের একই এলাকাতে বিয়ে হয়েছিল পরে তার জামাইও বাকা চোখে তাকাইতো। এরই মাঝে ফাহাদের ছাদে জলসায় বসে দুষ্টামি করতে করতে সিগারেট ধরে ফেললাম। সারারাত ছাদে বসে একের পর এক সিগারেট টানতাম আর হেডফোনে ব্রাড পিস্টলি এর হুইস্কি লুলাবাই গান শুনতাম। মাঝে মাঝে চোখ দিয়ে শুধু জল গড়াত। মাথার ভেতরে বিমর্ষ যন্ত্রনা অনুভব করতাম। আসলে ভালোবাসার মর্ম বুঝতে পারা যায় তা হারানোর পরে। এই মেয়েটির হাত একদিন মাত্র স্পর্শ করেছিলাম। তবুও এতটা কষ্ট হবে বুঝতে পারিনি। নির্ঘুম রাতের পর রাত শরীর ভেঙ্গে পরে।


তখন আমি কলেজ পাশ করে বেড়িয়েছি মাত্র। কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দিলাম না। সাইফুর’স আর ব্রিটিশ কাউন্সিলে ক্লাশ করতাম IELTS দেয়ার জন্য। মনে হচ্ছিল ফ্যামিলি থেকে দূরে চলে কিংবা অন্যকোথাও যেয়ে হয়ত এই কষ্ট চাপা দেয়া যাবে। তাছারা আমার ইচ্ছেই ছিল বাইরে পড়াশোনা করার। অনেক রাতে বাসায় ফিরতাম লালরঙা দুটি চোখ নিয়ে। মাথা ঝিম ঝিম করতো। কষ্ট ভুলে থাকতে গাঁজার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। গাঁজা আর কখনো শর্ট খেয়ে রাত করে বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়তাম। আব্বু আম্মু বুঝতে পারতো সব, কিন্তু সকালে স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করতাম। প্রাইভেটে ভর্তি হতে চাপ দিলেন আব্বু। তার ধারনা পড়াশোনার মাঝে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটি তে এডমিশন নিলাম।


প্রায় দুই মাস এডিক্টেড ছিলাম, একদিন ফ্রেন্ড অরমিকার সাথে রিকশায় ফিরছিলাম। হঠাত করেই বললো,”দোস্ত আমাকে একটু গাঁজা এনে দিবি, আমি টেস্ট করে দেখতাম কেমন।“ লাইফে দেখা পাগলী মেয়েদের মধ্যে আমার এই ফ্রেন্ডটা ছিল একটা। একবার বললো ডেক্সপোটিন খাবে, আমরা কেউ কিনে দিলাম না। শেষে ও নিজে যেয়ে ফার্মেসী থেকে দুই বোতল ডেক্সপোটিন কিনে এক বোতলের অরধেক খেয়ে বমি করে যায় যায় অবস্থা। কিছুদিন দেখতে না পেয়ে ফোন দিয়ে শুনি এই কাহিনী। যাইহোক, ওকে বললাম গাঁজা দেয়া যাবে না। শেষে আমাকে প্রমিজ করিয়ে ছাড়লো আমি যেন জীবনে এইসব না ধরি। সেদিন লাইফের সবথেকে ভালো বন্ধুটির মাথায় হাত রেখে প্রমিজ করলাম কোন খারাপ কিছুতে আসক্ত হবো না। এখনো পর্যন্ত সেই প্রমিজ রেখেছি।


সুস্থ জীবনে এসে শুরু হলো দুষ্টামি। কিন্তু ফোনেই সীমাবদ্ধ। আমার দিল দরিয়া দোস্তরা ইনফরমেশন এনে দেয়। এরই মাঝে একসাথে রুটিন করে প্রেম শুরু। একদিন সোহেল এক মেয়ের ফোন নাম্বার দিয়ে বলল কথা বলতে। আমি মেয়ের সাথে কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম। মেয়ের সাথে তিনমাস পরে দেখা করতে যেয়ে দেখি মিনি সাইজের এক হাতি দাঁড়িয়ে আছে। যত্তসব হারামি বন্ধুবান্ধব আমার। এক জিনিস বেশিদিন ভালো লাগে না। শেষে এইসব প্রেম ভালোবাসার মধ্যেও বিরক্তি এসে গেলো।


আমার শৈশব, কৈশোর আর তারপরের লাগামহীন দিনগুলি - ৮

(আগামী পর্বে সমাপ্য)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১২ ভোর ৫:৩০
২৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×