আজ সেলুনে গিয়েছি চুল ছোট করাবো এই আশায়৷ তো গিয়ে দেখতে পেলাম সেলুনের সবকটি কেদারা ব্যাস্ত আছে। মানে নরসুন্দর সাহেব রা খুব ব্যাস্ত। তাই আমাকে বললেন, আপনি বসুন, এক্ষুনি খালি হয়ে যাবে। একটি বালককে দেখতে পেলাম, সে তার চুলের নকশা করার নিয়ম বলে দিচ্ছে। সে কিভাবে তার চুল গুলোকে দেখতে চায়, সেই পদ্ধতিটাই নরসুন্দর কে বলে দিচ্ছে৷ হঠাৎ তার পিতা চলে এলো, ঠিক তার পিছনে দাড়িয়ে। প্রশ্ন ছুড়ে দিলো বালকের দিকে। কি? তুমি চুল ছোট করবে না, বাবু। ছোট করলে তোমাকে ভালো দেখাবে। ওইভাবে বড় করে কাটতে নেই। ভালো লাগবে না। আর নরসুন্দর সাহেবকে সে অনুমতি দিয়ে দিলো, চুল হবে ছোট৷ ভদ্র মানুষের মতো। এই বলে তিনি চলে গেলেন। সাথে বালকের ছোট বোন ছিলো৷ তাকে পাশের দোকান থেকে চকলেট, চিপস কিনে দিতে তারা চলে গেলো।
এই ফাকে বালকটি আবার বেকে বসলো। সে তার মতোই চুল কাটতে বললো নরসুন্দর কে।নরসুন্দর না পেরে চুল কাটে আর তাকে জ্ঞান তালিম দেয়। দেখো বাবা তোমার বাবা চায়না এমন চুল তুমি কাটো। এতে সে কষ্ট পাবেন৷ আর এভাবে চুল কাটে অভদ্র ছেলেরা । যারা নেশা করে, বাজে ছেলে,। তারপরেও বালকটির কথায় নরসুন্দর সেভাবেই করে দিলো স্টাইল।
কিছুক্ষণ পর আবার বালকের পিতার আগমন। আরে তোমারে না বললাম চুল ছোট করে দিবে। কি কাটলা? এভাবে কেউ কাটে? এখন সেলুনের সবাই তাকে বুঝাতে শুরু করলো। মানে ওইখানে যারা আছে আমি বাদে। থাক ছোট করেই কাটো। এই সেই অনেক কিছু।
অবশেষে বালকটি রাজি হল, তাও বেশি ছোট সে করবেনা। হালকা ছোট করবে। তাই হল, নরসুন্দর তার চুল কেটে দিলেন৷
#একটা শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। বাবার কথাও রাখা হল৫০% ছেলের কথাও রাখা হল ৫০%। সবাই খুশি হল৷
১) বালকদের চাওয়া ঃঃ আজকের দিনে অনেক বালক, ছেলে রা চায় তার বাবা মা যেনো তাকে সেই চুলে স্টাইল করতে দেয় যেটা নেইমার, রোনালদো, জাস্টিন বিভার রা দেয়৷ বা বড় বড় মডেল অভিনেতা রা দেয়। তাদের বাবা মা যেনো কোন দিমত না করে।
২) বাবা মা রা ভাবে সেলুনের নরসুন্দর খুব চালাক। সে তার সন্তানকে বড় বড় চুল রেখেই স্টাইল করে দেয়। যাতে কয়েকদিন পরপর চুল কেটে টাকা কামাই করা যায়।
৩) আবার নরসুন্দর দের মতামত হল। তারা ইচ্ছা করে চুলের স্টাইল করে দেন না।যে কাটতে আসে তার মন রাখতে৷ কারন তার মনের মতো কেটে না দিলে সে আর আসবে না।
তারা এটাও বলে স্টাইল করে চুল কাটতে যে সময় লাগে। সেই সময়ে আমরা ৩জনের চুল কাটতে পারি৷ অথচ স্টাইল করে কাটলে সেখানে ১ জনকে সময় দিতে হয়। তাই আমাদের লাভ হয়না৷ আমাদের সময় ও টাকা দুইটাই ক্ষতি। আমরা তো চাই সবাই চুল খাটো করেই যাক।
তবে না করলে আমাদের কি অপরাধ?
৪) আমার কথা হল, ওই ছেলেটি ছোট করার পরেও যেরকম চুল কেটেছে। এভাবে আমি একদিন চুলের স্টাইল করলেও আমার পিতা তাহার বাড়িতে আমাকে বাস করতে দিবেনা।
৫) সংবাদে দেখলাম ভুয়াপুর এর থানার ওসি সাহেব এই সকল বালকদের ধরে ধরে চুল কেটে দিচ্ছে। অনেকে ওসি সাহেবের কাজকে ভালো বলেছেন ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। অনেকে বলেছে এই অভিযান সারা দেশে হওয়া দরকার।
৬) আসল কথা হল, আজকাল কিছু ছেলে, বা বালক এই স্টাইল গুলোকে যেমন ভাবে আপন করে নিচ্ছে। এতে তাদের বখাটে ছাড়া কিছুই লাগে না। তার উপর এসব ছেলেরা এতো কম বয়সে হয়ে যাচ্ছে ইভটিজার, আর মাদকসেবি। এই জন্যই পিতা মাতারা একটু ভয়ে ভয়ে থাকে। না জানি আমার সন্তান কার সাথে ঘুরে। কি করে বাহিরে গিয়ে। এ বেপারে শুধু মা বাবা নয় সচেতন হতে হবে শিক্ষক, এলাকার মুরুব্বি, সরকার পুলিশ প্রশাসন সবার।
৭) ঢাকায় নতুন জালাতন শুরু হয়েছে কিশোর গ্যাং। কিশোরদের নিয়ে গড়ে উঠা মাস্তান বাহিনী। এরা ছিন্তাই চুরি, হাইজেক , আরো চাদাবাজি করে। এসব কিন্তু শুরু হয় কম বয়সেই। অনেকে মনে করে ছোট ছেলে কি আর করবে৷ এই বালক গুলো কি করে পারে এটা বড়দের ধারণাও নেই। কারন আমি এই বয়সে দেখেছি। কি করতে পারে একটা বালক আর কি পারেনা।
যাই হোক ছেলে বাবা আর চুল এই নিয়ে সংঘাত চলছেই প্রতিটি ঘরে। এটা নতুন না৷ যদিও অনেকে মেনে নেন যেমন আমি মেনে নিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯