১) আমি প্রায় ই বিকালে একটু হাটতে বের হই। আজ সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাযের পর হাটছি৷ অনেক কিছুই রাস্তায় দেখি৷ তার মধ্যে একটা ঘটনা চিরন্তন এটি। একটি ২, ৩ বছরের শিশু তার মা আরো দুই জন হাটছে রাস্তায়। যা হয় সাধারণত, শিশুরা বাবা মার হাত ধরে হাটে। এই মেয়েটিও তার মার হাত ধরে হাটছে। অনেক সময় দেখা যায়। বড় রা এতো স্পিডে হাটে। পিছনে বাচ্চা কেউ হাত ধরলে তাকে রেস করে করে হাটতে হয়। এইখানেও তাই হচ্ছে, মেয়েটি হাত ধরে আছে মায়ের, মা হাটছে, মেয়েটি তার পিছনে হাতে ধরে আছে, আর হাটার সাথে তাল মিলাতে পারছেনা৷ কি করেই বা তাল মিলিয়ে সে হাটে? তার পা তো এতো বড় নয়। সে কোন এরকম লাফ দিয়ে দিয়ে হেটে যাচ্ছে। ( আমরা অনেক সময় এই বিষয়টা খেয়াল করিনা। আমার হাত যে ধরে আছে, তার হাত পা কত বড়)
২) বাসায় ফিরে আসছিলাম৷, দেখি এলাকার এক বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে খুব ঢাক, ঢোল, সানাই বাজাচ্ছে তারা। সানাই বাদক এনেছে বিয়ে বাড়ির লোকেরা। আর সেই তালে এলাকার সব বাচ্চা কাচ্চা নাচতে আরম্ব করেছে৷ দেখি আমার দেহেও তাল উঠে যাচ্ছে। একে তো এলেকা আমার অপরিচিত তার উপর আমাকে কেউ চিনেনা। নাচলে কে কি বলে৷।
সানাইয়ে সুর তুলেছে, নাচ মেরি ময়না, তুই পয়সা পাবিরে, । একটু পর, ও বন্ধু লাল গোলাপি,৷ তারা কোন গানের সুর ই এক লাইনের বেশি বাজাচ্ছে না। তবে সুন্দর বাজাচ্ছে।
আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানে ওই বাজনা বাদক, সানাই বাদক, পাওয়ায় যায়না। ধারণা করা হয় মোঘল সাম্রাজ্যের অনেক আগে থেকেই ধনী পরিবারের বিয়েতে সানাইয়ের ব্যবহার করা হতো। ধনীবৃত্তের কিংবা প্রাচুর্যের প্রতিচ্ছায়া ছিলো বিয়েতে সানাইয়ের ব্যবহার। কোনো হিন্দু-মুসলিম নয়। সানাই বাদকের উপস্থিতি ছিলো সব ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের অনুষ্ঠানেই।
আমার এক ফুফাত বোনের বিয়েতে ফুফা মশাই এনেছিলো এই গ্রামীণ বাদক দল সাথে এনেছিলেন সানাই। ৩ দিন অনুষ্ঠান হয়েছিল৷ আর গাজি কালুর গানের জন্য ময়মনসিংহ হতে শিল্পী এসেছিল। এখন সেই দিন নাই , আর সারাদিন চলেছিল ফকিরি মুর্শিদি গান। এখন আমাদের বিয়ে হয় কমিউনিটি সেন্টারে। সবার হাতে থাকে বিয়ের কার্ড। কার্ড যাকে দিবে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবে৷
সানাইয়ের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল উস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের নাম। সানাইকে ভারতের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত জগতের যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার একক কৃতিত্ব ভারতের উচ্চাঙ্গ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের।
(ছবিতে উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব) ছবি ইন্টারনেট থেকে।।
৩) আমার ছোট কালে মনে পড়ে। আর খালুজানের খুব গাজি গানের প্রতি টান ছিলো৷ সে বাড়িতে এই গাজি কালু গানের আসর বসাতেন।
গানে
রাজকন্যা চম্পাবতীর সঙ্গে গাজীর বিবাহ, পরিশেষে সকলকে নিয়ে গাজীর গৃহে প্রত্যাবর্তন ও সুখে জীবন যাপনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে
।গাজী পীরের কাহিনি বর্ণিত আছে এই গান গুলোতে। এতে গাজী-কালুর ফকিরবেশে দেশভ্রমণ,, পীর ফকির গাজি কালুর নানান কাহিনি শুনানো হতো গানে গানে । এখন আর সেই গান গুলো দেখি না। কোথাও আসর ও বসে না৷
মানুষ এখন হিপহপ আর রেপ গানে মাতাল।
৪)গাজীর বাবা ছিলেন বৈরাটনগরের শাসক সেকেন্দার শাহ। এই শাহের প্রথম রানী অজুফা সুন্দরীর গর্ভে গিয়াসউদ্দিন, যিনি জুলহাস নামেও পরিচিত এবং বরখান গাজী জন্মগ্রহণ করে। অজুফা সুন্দরীর পালিত ছেলের নাম ছিল কালু। রাজা ও রানীর বড় ছেলে জুলহাস শিকারে গিয়ে হারিয়ে গেলে এরপর বয়সেযোগ্য গাজীকে রাজকর্মভার গ্রহণ করতে বলা হয়।
গাজীর দ্বিতীয় পর্বটি শুরু হয় ছাপাইনগরের মুকুট রাজার (মতান্তরে শ্রীরাম রাজা) কন্যা চম্পাবতীর প্রেমে পড়া নিয়ে। চম্পাবতী সাত ভাইয়ের এক বোন। গাজী চম্পাবতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে ভাই কালুর মাধ্যমে রাজার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। এসব ঘটনাই মুলত গানের মাধ্যমে গাওয়া হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৯:০৯