যুক্তিবিজ্ঞান প্রায়ই তিনটি অংশে ভাগ হয় - আবেশক যুক্তি, মনন যুক্তি , এবং ন্যায়িক যুক্তি-।
ইংরেজি লজিক( Logic) বাংলা যুক্তি বিজ্ঞান। কোন কিছু আন্দাজে বলে দেওয়াকে যুক্তি বলেনা। যুক্তি দর্শন শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত । আপনি যদি কোন বিষয় নিয়ে যুক্তি তুলেন পক্ষে /বিপক্ষে সেটা লজিক্যাল (যুক্তিগত ভাবে প্রমাণিত ও তথ্য যুক্ত থাকা চাই) । আর সেটা যদি কোন ব্যক্তি গুষ্টি সম্পর্কে হয় তাহলে সেটা যুক্তিযুক্ত হওয়া আবশ্যক।
নাস্তিকদের অনেকে আছে নিজেকে বড় যুক্তিবাদী মনে করেন । অথচ তাদের লেখায় কু যুক্তি থাকে বেশি। প্রমাণ ছাড়া, তথ্য ছাড়া একটা বিষয় লিখে ফেললেই সেটা যুক্তি হয়ে যায়না । তারা মনে করেন দর্শন শুধুমাত্র নাস্তিকদের চিন্তার বিষয়। আস্তিক মানুষেরা দর্শনের কিছুই বুঝেনা। এমন কি কোন আস্তিক জ্ঞানী লোক দর্শন শাস্ত্রে জ্ঞানী নন। তাই তারা দর্শনের পাহাড় কাটতে লেগে যান ।
যুক্তির জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো চিন্তা শক্তি। এই চিন্তাশক্তি যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ আমরা না করতে পারি তখনই আমাদের যুক্তি, কু-যুক্তিতে রুপান্তরিত হবে এবং ধাধার মধ্যে পড়ে গিয়ে মাঝপথে আটকে যাবো। ফলে ভ্রান্ত যুক্তি নিয়েই আমরা যুক্তিবাদী হবো এমনটা আমরা আশা করতে পারি না। কেউ কেউ এই ভ্রান্ত যুক্তি দাড় করিয়ে নিজেকে যুক্তিবাদী মনে করেন। এটা কোন জ্ঞানী লোকের কাজ না। তবে তারা নিজের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত জ্ঞানী। তাই তারা নিজেকে যেকোন কিছুই ভাবতে পারেন। নিজেকে তারা যুক্তিবাদী ভাবতেই পারেন, কারণ তাদের প্রতিপক্ষের লোক অতি দুর্বল। প্রতিপক্ষের লোক কিছু না জানলে সে নিজেকে যে কোন কিছুই দাবি করতে পারে। এতে সমস্যা হয়না ।
উদাহরণ, তাল গাছের উপর দিয়ে একটি কাক উড়ে গেল
একটি তাল মাটিতে ঝরে পড়লো
সিদ্ধান্তঃ কাক উড়ে গেল, তাই তালটি মাটিতে ঝড়ে পড়লো।
এভাবে আপনি যুক্তি দিলেন এমন ব্যক্তির সামনে যে জানেনা, তাল গাছের তালের অবস্থা বা যুক্তি কি জিনিস। এখন সে আপনাকে জ্ঞানী ভাবতেই পারে।
ভাত খাওয়ার সময় সালাম মারা গেলো।
ভাত খাওয়ার সময় কালাম মারা গেলো।
ভাত খাওয়ার সময় রুবেল মারা গেল।
ভাত খেতে খেতে রিংকু মারা গেলো।
সিদ্ধান্ত ঃঃ সকল মানুষ ভাত খেয়ে মারা যায়। অথবা ভাত খেলে মানুষ মারা যায়।
আজকের দিনে আপনারা এমন ই যুক্তি দেখাচ্ছেন । এর প্রমাণ হল আজকের সকালে একজন জিহাদের বিষয়ে বিশাল জ্ঞান দান করলেন জাতিকে । তিনি ও তার মহান যুক্তি অমর হয়ে গেল। আপনি জিহাদ সম্পর্কে কিছু না জেনে সিদ্ধান্ত দিলেই সেটা যুক্তি হয়ে গেলো না । আর আপনি যুক্তি দিয়ে মুক্তি পেয়ে গেলেন না । যুক্তি দিতে হলে তার উপাত্ত তথ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা চাই। সিদ্ধান্ত দিতে হলেও আপনাকে সঠিক তথ্য জানতে হবে।
ইসলামী দর্শন মূলত দুই ভাগে বিভক্তঃ কালাম ও ফালসাফা। ফালসাফা গ্রিক শব্দ, এটি গ্রিক দর্শন থেকে উৎসরিত| অপরদিকে কালাম অর্থ কথা বা বক্তব্য, এটি যুক্তিতর্ককে দর্শনে ব্যবহার করে ( উইকিপিডিয়া)
পরীক্ষামুলক যুক্তি দার করাতে আরব আশারিয়া পলিম্যাথ ইবনে আল-হায়থাম (আলহাজেন) দ্বারা বিজ্ঞান পদ্ধতির উন্নয়ন ছিল বিজ্ঞানের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। বুক অব অপটিক্সে ( ১০২৫ খ্রিস্টাব্দ) তাঁর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিটি আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুরূপ ছিল এবং নিম্নলিখিত পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত ছিল:এর ধাপগুলি ছিলো এইরূপ।
পর্যবেক্ষণ
সমস্যার বিবরণ
অনুমানের প্রণয়ন
পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুমান পরীক্ষা করা
পরীক্ষামূলক ফলাফল বিশ্লেষণ
উপসংহার গঠন করা এবং সূত্রের ব্যাখ্যা
ফলাফল প্রকাশ। (উইকিপিডিয়া)
আপনি যুক্তি দেখান কোন সমস্যা নাই। তবে যে বিষয়ে যুক্তি দেখাবেন, আগে সঠিক পর্যবেক্ষণ করুন, পর্যবেক্ষণ শুধু দুই একটা উদাহরণ দেখলেই হবেনা। আগে জানতে হবে উদাহরণ গুলো সঠিক কি না? আপনি পর্যবেক্ষণ করলেন এমন উদাহরণ যাতে মাত্র ২% তথ্য আছে । ৯৮% তথ্যসূত্র নাই। তাতে যুক্তি ঠিক হবে কি? সমস্যা বিবরণ করতে হবে। সেটা করতে গেলেও আপনাকে ১০০% তথ্য জেনে নিতে হবে। মানে আগে সঠিক পর্যবেক্ষণ জরুরী। আপনি ইংরেজি ডিকশনারি সম্পর্কে বলতে চাইলে অক্সফোর্ড এর ডিকশনারি শুধু দেখলে হবেনা। আর আপনি সেখানে শুধু বাংলাদেশ হতে একটা ১৫ টাকা দামের ডিকশনারি পড়েই বলে দিলেন ডিকশনারিতে সব শব্দ নাই।
আপনি কোন বিষয়ে তথ্য উপাত্ত না পেলে অনুমান প্রণয়ন করতে পারেন। কিন্তু তথ্য উপাত্ত না দেখেই অনুমান নিয়ে সিদ্ধান্ত লিখে ফেলবেন তাহলে যুক্তির সিদ্ধান্ত সঠিক হবে কিভাবে? আপনি ৩০ টাকা দামের একটা বাংলা অবিধান কিনে বলছেন , আরে বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষার শব্দ নিয়ে কোন গবেষণা করেনা। বাংলা একাডেমি থাকার কোন লাভ নাই । তাহলে আপনার এই সিদ্ধান্ত কি সঠিক? আপনি তো আসল অবিধান হাতেই নিলেন না । আর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন বাংলা ভাষার কোন ভালো অবিধান নাই। বাংলা একাডেমির কোন দরকার নাই ।
আপনি যখন এতো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন, তখন আপনার আগে জানা দরকার। যুক্তি কি৷ কেন এটা উপস্থাপন করা হয়। না জেনে
কোন গ্রন্থ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানানোর কোন অধিকার আপনার নাই ।
অধিবিদ্যার মধ্যে আভিসিনা (ইবনে সিনা) সত্যকে সংজ্ঞায়িত করেছেন:
“ মনের অনুরূপ তাই যা বাইরের সাথে যোগাযোগ আছে। ”
আভিসিনা তার অধিবিদ্যার মধ্যে তার সত্যের সংজ্ঞা বর্ধিত করেছেন:
“ একটি জিনিসের সত্য হল প্রতিটি জিনিসের একটি সম্পত্তি যেটি তার নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এমন কিছু।
”
টমাস অ্যাকুইনাস তার কোডলিবেটার মধ্যে আভিসিনা তার অধিবিদ্যার মধ্যে সত্যের যে সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এই একটি ভাষ্য লিখেছেন, যেমন নিম্নরূপ ব্যাখ্যা:
প্রতিটি জিনিসের সত্যতা হল যেমনটি আভিসিনা তার অধিবিদ্যার মধ্যে বলেছিলেন, এটি তার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন সম্পত্তি সম্পত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই তাকে সত্য স্বর্ণ বলা হয় যা সঠিকভাবে স্বর্ণ হচ্ছে এবং এটি প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণের প্রকৃতি অর্জন করে। এখন প্রতিটি জিনিস সঠিকভাবে কিছু প্রকৃতির কারণেই এটি প্রকৃতির সম্পূর্ণ ফর্মের অধীনে দাঁড়ায়, আর এটাই হচ্ছে প্রকৃতি ও প্রকৃতির প্রজাতি।(উইকিপিডিয়া)
মুসলিম যুক্তিবিদগণের মধ্যে উল্লেখ্য আল-ফারাবি, আভিসিনা, আল-গাজ্জালী এবং অন্যান্য।
২)
কিতাবুশ শিফা (Arabic: کتاب الشفاء Kitab Al-Shifaʾ, Latin: Sufficientia) হল ইবনে সিনা কর্তৃক রচিত বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক বিশ্বকোষ। এটি বিজ্ঞান ও দর্শনের উপর ইবনে সিনার প্রধান কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। আনুমানিক ১০১৪ সালের দিকে তিনি এটি লেখার কাজ শুরু করেন এবং ১০২০ সালে সমাপ্ত করেন ।
ইবনে সিনা যাদের কাছ থেকে প্রভাবিত হয়েছেন।
জাফর আল-সাদিক, হিপোক্রাতিস, সুশ্রুতা, চারাকা, গ্যালেন, প্লটিনাস, ভারতীয় গণিত শাস্ত্র, ওয়াসিল ইবনে আতা, আল-কিন্দি, মুহাম্মাদ ইবনে জাকারিয়া আল-রাজি, আবু রাইহান আল-বিরুনি, জন ফিলোপোনাস এরিস্টটল, নব্য-প্লেটোবাদ, আল-ফারাবী।
ইবনে সিনার প্রভাবিত হয়ে যারা কাজ করেছেন।
ইবন রুশ্দ, ওমর খৈয়াম, টমাস একুইনাস, আলবার্টাস ম্যাগণাস, হোসেইন নাসর।
তথ্যউপাত্ত +++উইকিপিডিয়া ও ব্লগ।
ছবি গুগল সার্চ ইঞ্জিন।
কিছু বিশ্লেষণ আমার নিজের করা।
সব শেষে একটা কথাই বলবো। তর্ক বিতর্ক করে আজকাল অনেকেই ফেমাস হয়ে যাচ্ছেন। আপনিও কোন একটা জাতিকে নিয়ে তর্ক বিতর্ক করে ফেমাস হতে পারবেন। তর্ক করে অনেক ফেসাদ করতে পারবেন। জাতিকে বিভক্ত করতে পারবেন। কারন আজকের দিনের মানুষ না জেনেই মেনে নেয়। কিন্তু আপনি জ্ঞানী হয়ে যাবেন না। আপনার ভুল যুক্তি সঠিক হয়ে যাবেনা। আপনার ভুল যুক্তি গুলো আসল যুক্তিবাদী মানুষেরা ঠিক ধরতে পারবে। আপনি ভুল কথা নিয়ে লাফালাফি করছেন এটা বুঝতে তাদের বেশি সময় লাগবে না। আর ইতিহাস একদিন আপনার ভুল ব্যাখ্যাকে ভুল প্রমাণ করে দিবে । ওইদিন আপনি মূর্খ হিসেবেই প্রমাণিত হবেন। এক দুই দিন ফেমাস হওয়ার নাম জিন্দেগী না । ভুল ব্যাখ্যা আর ভুল যুক্তি তুলে ধরে ফেমাস হলেই বিখ্যাত লেখক হলেই কেউ জ্ঞানী হয়ে যায়না। অনেক লোক আছে তারা জোকস লিখে বিখ্যাত। তবে আপনি তার চাইতেও মূর্খ । আপনার নাম শুধুই ভুল তর্কে বিতর্কে । কোন জ্ঞান আপনার নাই । তাই কোন তথ্য না জেনে আপনি ভুল ব্যাখ্যা করে বিখ্যাত হতে চান । প্রমাণ করতে চান আপনি অনেক কিছুই জানেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৫৯