somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তানজীর আহমেদ সিয়াম
সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।nধন্যবাদn

কুড়ানো ( পর্ব ৩৭ ) কুমিল্লায় রবীন্দ্রনাথ এবং পরিমল দত্ত

১৮ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
কুমিল্লায় রবীন্দ্রনাথ এবং পরিমল দত্ত



পরিমল দত্তের ব্রাক্ষণবাড়িয়ার গৌতমপাড়ায় আদি নিবাস, পিতা অসিত কুমার দত্ত ছিলেন কুমিল্লায় পুলিশ কর্মকর্তা। পরিমল দত্তের জন্ম কুমিল্লা পুলিশ লাইনের কোয়াটারে, ১৯০১ সালে।
কুমিল্লা, কলকাতা এবং আসাম বিভিন্ন যায়গায় লেখাপড়া করেছেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯১৯ সালে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করার পর স্নাতকে ভর্তি হন।

১৯২০ সালে, কলকাতায় কংগ্রেসের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গান্ধীর অহিংস অসহয়োগ আন্দোলনের। সেই ডাকে সারা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন লেখাপড়া শেষ না করেই।
১৯২২ সালে দুই বছরেই শেষ হয়ে যায় সেই অসহযোগ আন্দোলন।
একদিকে অসহয়োগ আন্দোলন শেষ অন্যদিকে স্বাধীনতার সংগ্রাম তীব্রতর হচ্ছে দিনে দিনে।

চলে গেলেন শান্তিনিকেতন। সেখানে ভগ্নিপতি শৈলেন সেন কর্মরত। বড় বোন সেখানে সংগীত চর্চা করছেন, প্রকৃত পক্ষে বড় বোনের কাছেই পরিমল দত্তের সংগীতের হাতেখড়ি।

১৯২৬ সালে শান্তিনিকেতন থেকে আবার কুমিল্লা অভয় আশ্রমে চলে আসেন।
কুমিল্লায় পেয়েছেন সুর সাগর হিমাংশু দত্ত, আজয় ভট্টাচার্য, সঞ্জয় ভট্টাচার্য, শীচন দেব বর্মণ, মোহম্মদ হোসন খসরু, দীলিপ কুমার সিংহ (মন্টু সিং), জানে আলম চৌধুরী (জানু মিয়)সুরেন দাশ, সুখেন্দু চক্রবর্তী, অসিত চৌধুরী, কুলেন্দু দাশ, শৈল দেবী এবং ওস্তাদ আয়াত আলীর খানের মতো ব্যক্তি বর্গের সাথে পথ চলেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যা কান্ডের পর, নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন। মহত্তা গান্ধী আসহয়োগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। সবাই সরকারি স্কুল কলেজে লেখাপড়া বন্ধ করে দিলেন। বিলাতী পণ্য বর্জন। চরকায় কাটা সূতার তৈরী খাদি কাপড় পরিধান করতে শুরু করলেন।

১৯২৩ সালে কুমিল্লার অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠা হয়। ব্রিটিশ বিরোধী মহত্বা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের সূতিকাগার কুমিল্লার অভয় আশ্রম। এখনেই প্রথম শুরু হয় চরকায় সুতা কেটে খাদি কাপড়ের প্রচলণ, ব্রিটিশ ভারতে। অভয় আশ্রমের অনান্য কাজ ছিলো শিক্ষা বিস্তার, কুষি ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বাস্থ সেবা এবং যাবতীয় আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড।

চির কুমার সভা

চির কুমার পরিমল দত্ত, অভয় আশ্রমে যাঁহারা কর্মরত ছিলেন সবাই চির কুমার এটাই তাদের ব্রত। পরিমল দত্তের অন্য দুই ভাইও চির কুমার ছিলেন। নিজেদের সব সম্পত্তি অভয় আশ্রমকে দান করে দিলেন। তিনি কুমিল্লা টাউন হলে রবীন্দ্রনাথের চির কুমার সভা নাটক মঞ্চস্থ করেন, নেপথ্য সংগীতের দায়িত্বে ছিলেন। পেছনে থাকতেই ভালোবাসতেন, নিভৃত চারী।

'সুস্থু দেহে সুস্থ মন' এই কথাটি ছিলো জীবনের ব্রত।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রচর্চা করছেন, শুদ্ধ ভাবে। তিনি কবিগুরুর কাছ থেকে নিয়েছেন গানের তালিম।

আমি পরিমল কাকুকে দেখেছি, শান্তিনিকেতনি ব্যাগ কাধে ঝুলিয়েে, শুদ্ধ রবীন্দ্রসংগীত শিখাচ্ছেন ঘুরে ঘুরে এ'বাড়ি থেকে ও'বাড়ি খাদির কাপড় পরে। তাহার সুযোগ্য শিক্ষারর্থীরা হলেন, বাশরী ভদ্র, রাখি ভদ্র, এ্যরমা দত্ত, সুনন্দা সিনহা, সুদিপ্তা সিনহা, শমসুদ্দীন আহম্মদ ভুলু আরো অনেকেই, গান শিক্ষা দেয়া পেশা নয়, শুধু শুদ্ধ করে গাইতে হবে, এটাই ছিলো নেশা।
বেশ কয়েক বার সুযোগ হয়েছে, গিয়েছি পরিমল কাকুর কাছে, অভয় আশ্রমে, শুনেছি, শান্তিনিকেতনের কথা, কবিগুরুর কথা, ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের কথা, কুমিল্লার সংস্কৃতির ইতিকথা।
গেয়ে শুনাতেন দরাজ গলায় প্রিয় গান,

'আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুনন্দ'

রবীন্দ্রনাথ ও অভয় আশ্রম

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবারই কুমিল্লা আসেন ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রয়ারী।
অভয় আশ্রমের তিন বৎসর পুর্তি। ত্রি- বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। সাথে কবির পুত্র ও পুত্রবধু এবং শান্তি নিকেতনের অনেকেই এসে ছিলেন।
কলিকাতা থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ, স্টিমারে চাঁদপুর তারপর ট্রেনে করে, রাতে কুমিল্লা এসে পৌঁছালেন।
কবিগুরু তখন কিছুটা অসুস্থ ছিলেন, তাই আগেই জানিয়েছেন, কোন সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন যেনো না করা হয়।
কবি ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পুর্যন্ত কুমিল্লায় ছিলেন।
২০ ফেব্রুয়ারি অভয় আশ্রমের কর্মীরা কবিকে একটি মান পত্র দেন। সেই মানপত্রের জবাবে কবি বলেছিলেন।

'আত্মাই শান্তির উৎস', এই শক্তির সহিত পরিচয় লাভ করতে হলে আপনাকে সমম্পুর্নরূপে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। অভয় আশ্রমের কর্মীরা এইরূপে আত্মত্যাগ করছেন বলে শারীরিক অসুস্থতা সত্বেও আমি এখানে এসেছি'

বিকালে অভয় আশ্রমের, ত্রী-বার্ষিক সভায় কবি সভাপতিত্ব করেন। বেশ কয়েকটা ইভেন্ট যেমন নাটক, খেলাধুলা, চরকায় সূতা কাটার প্রতিযোগিতা, সব কয়টা অনুষ্ঠান কবিগুরু উপভোগ করেছেন। দুপুরে মধ্যন্ন ভোজের আয়োজন করেছিলো। সেখানে শহরের বিখ্যাত সবাই একসাথে কবির সাথে আপ্যায়িত হন।
অভয় আশ্রমের কর্মী ছাড়াও সেই সভায় সাত হাজরেরও বেশী লোকের সমাগম হয়েছিলো।

তথ্যসুত্রঃ শওকত
#যে_স্মৃতি_ধূসর_হয়নি
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:৫৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×