চেরনোবিল নিয়ে বহু লেখা পড়েছি, বহু ডকুমেন্টারি দেখেছি। তেত্রিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া নিউক্লিয়ার প্লান্ট বিস্ফোরণের ভয়াবহতা আন্দাজ করার চেষ্টা করেছি। চেরনোবিল যাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে অন্য কারণে। ভয়াবহতা দেখতে নয়, নতুন করে প্রকৃতি আবার কেমন করে শুরু করেছে তা দেখতে।
ইংরেজি এবং রাশিয়ান ভাষায় চেরনোবিল বানানটা Chernobyl, ইউক্রেনিয়ানরা বানান করে Chornobyl, উচ্চারণ চর্নোবল।
১৯৯১ সালে রাশিয়া থেকে ইউক্রেন ভেঙে স্বাধীন হয়। চেরনোবিল বর্তমান ইউক্রেনের একটি গ্রাম যেখানে ১১০০ শতাব্দীতে ইহুদীরা বসতি শুরু করেছিল। খুবই ধর্মপ্রাণ একদল ইহুদী। তাদের নাকি অনেক আধ্যাত্মিক শক্তি ছিল। চেরনোবিল নামকরণ করেছিল ইহুদিরা যার অর্থ এবান্ডন্ড মানে যেখানে মানুষ থাকেনা। পুরো জায়গাটা অনেক বড়, বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গ্রামটি বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেলে সোভিয়েত সরকার গ্রামটিতে অনেক পয়সা ইনভেস্ট করে মানুষের বসবাসযোগ্য করে তোলে। তারপর শুরু হয় নিউক্লিয়ার প্লান্টের কাজ।
নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টে দেশের সবচেয়ে মেধাবী বিজ্ঞানী, প্রকৌশলীসহ দরকারী সব ধরনের প্রফেশনালদের নিয়োগ দেয়া হয়। আর এসব প্রফেশনালদের থাকার জন্য একটা মডেল টাউন বানানো হয়। যেখানে শিশুপার্ক, হাসপাতাল, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফায়ারব্রিগেড, পুলিশসহ যাবতীয় সুযোগসুবিধা নিয়ে স্বপ্নের মত একটি শহর গড়ে তোলা হয়, নাম প্রিপেত (Pripyat)। সোভিয়েত সরকারের প্ল্যান ছিল এরকম শহর রাশিয়ার অনেক জায়গায় করা হবে সবার থাকার জন্য।
যেসব লোকজন নিউক্লিয়ার প্লান্টে কাজ করতো তারা প্রিপেতে এপার্টমেন্টসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বিনামূল্যে পেতো। শুধু শর্ত একটাই - সরকারকে কোন প্রশ্ন করা যাবেনা। প্রশ্ন করলে উত্তর তো পাবেইনা বরং ঝামেলা পাবে অনেক।
এই শহরে সবমিলিয়ে বাসিন্দা ছিল ৪৭,০০০। বাসিন্দাদের মধ্যে ১৭,০০০ এর বয়স ছিল আঠারোর নিচে মানে নতুন ফ্যামিলি।
চেরনোবিল ট্যুর বুকিং দিয়েছিলাম অনলাইনে। রাজধানী কিয়াভ থেকে কোচে করে একদিনের ট্যুর।
চেরনোবিল ট্যুর গাইডরা গভঃমেন্টের লাইসেন্স প্রাপ্ত। লাইসেন্স ছাড়া যেকোন ট্যুর অবৈধ, অসম্ভব। কমিউনিজমের জেলের ঘানি নিশ্চিত। কমিউনিস্ট জেল পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্য জেল। রাশিয়া থেকে আলাদা হলেও ইউক্রেনের সব জায়গায় কমিউনিজমের প্রভাব স্পষ্ট।
কিয়াভ থেকে কোচে উঠলাম সকাল সাতটায়। পাসপোর্ট চেকিং শেষে হওয়ার পর রওনা হলাম ঠিক আটটায়। কিয়াভ থেকে চেরনোবিলের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। দুইঘন্টা পর পৌঁছলাম প্রথম চেক পয়েন্টে যেখানে আবারও পাসপোর্ট চেক হয়, কোচ চেক হয়। চেকিং এর পর একটা রেডিয়েশন মাপার যন্ত্র দেয়া হলো প্রত্যেককে যেটাতে সারাদিনে একজন মানুষ সবমিলিয়ে কতটুকু রেডিয়েশন ইনহেইল করেছে সেটা রেকর্ড করা হয়। এই যন্ত্রের রিডিং গভঃমেন্টের জন্য।
যন্ত্রের রিডিং বেশী ধরা পড়লে গাইডদের জবাবদিহিতা করতে হয় কখন এবং কোন জায়গায় ট্যুরিস্টদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে রিডিং বিপজ্জনকভাবে হাই এসেছে।
সে যন্ত্র নিয়ে টয়লেট ব্রেকের পর কোচে উঠলাম। কোচ ঢুকলো ৩০ কিলোমিটার জোনে। ডিজাস্টার সেন্টার মানে যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছিল তেত্রিশ বছর আগে সেখান থেকে দশ কিলোমিটার রেডিয়াস একটা জোন করা হয়েছে আর ত্রিশ কিলোমিটার রেডিয়াসে আরেকটা জোন করা হয়েছে। রেডিয়েশনের তারতম্যের কারণে।
ট্যুর বুক করার সময় একটা গার্গি কাউন্টার যন্ত্রও বুক করেছিলাম বিভিন্ন জায়গায় গামা রেডিয়েশন মাপার জন্য। গাইড সেটা দিল। রিডিং দেখলাম ০.১৬ মাইক্রোসিভেত (µSv)
সাধারণ রিডিং যেকোন সাধারণ এলাকায় থাকে ০.০৫ এর মত। বুঝা গেলো অলরেডি হাই যদিও মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। ভেতরে গেলে না জানি কত দেখব!
চলবে....
(চেরনোবিল ট্যুর নিয়ে অনেক লেখব কারণ এটা আমার জন্য একটা স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।)
#লেখাঃ Shanjida Roman
#Ukraine_Diary
#Chernobyl_Disaster
#Travel_Diary_Of_SR
২ -
https://m.facebook.com/groups/330898140288719?view=permalink&id=2978206565557850
৩ -
https://m.facebook.com/groups/330898140288719?view=permalink&id=2981105691934604
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪১