আমাদের পৃথিবীর প্রায় ৭০% সমুদ্রে এবং পৃথিবীর ৯০% প্রাণী সামুদ্রিক প্রাণী অর্থাৎ তারা সমুদ্রে বাস করে এবং মানুষ সহ শুধুমাত্র ১০% প্রাণীই পৃথিবীতে বাস করে।
(১০) দৈত্যকৃতির স্কুইড
ছবিঃ চিত্রশিল্পী ESTEBAN DE ARMAS কতৃক অঙ্কিত সমুদ্র দানব ক্রাকেন।(http://www.rd.com)
ছবিঃ ফটোগ্রাফার Adéle Grosse এর তোলা দক্ষিন আফ্রিকার সমুদ্র উপকূলে পাওয়া ১৩ ফুটের বেশি লম্বা বিরল প্রজাতির দৈত্য স্কুইড।(Click This Link)
এই বিশাল প্রাণীটি ‘কারিবীয় দ্বীপের জলদস্যু’ (Pirates of the Caribbean) এবং জুলস ভার্নের ‘সাগরতলের ২০,০০০ দল’-(20,000 Leagues Under the Sea) -তে প্রদর্শিত পৌরাণিক ক্র্যাকেনের মত করে কল্পনা করা হয়। যদিও এটি কল্পিত বিষয় যে দৈত্যকার প্রাণীগুলো সমুদ্রগামী জাহাজগুলিতে আক্রমণ করত। কিন্তু গভীরের এই রহস্যময় প্রাণী সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এমনকি ২০০৪ সাল পর্যন্ত এটির জীবন্ত চিত্রধারন এবং ২০১২ সাল পর্যন্ত পানির নিচে ভিডিও ধারন করা সম্ভব হয়নি। যখন এটি ভূ-পৃষ্ঠে ধরা পড়েছিল, তখনও এর চিত্রধারন করা হয়নি। বিজ্ঞানীরা এই গভীর সমুদ্রের দৈত্যদের জীবন সম্পর্কে কার্যত কিছুই জানতে পারেনি, এমনকি তারা কত বড় হয় তাও নয়। কোন কোন গবেষকের অনুমিত ধারণা এটি ৬৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা। শুধুমাত্র তাদের গোত্রীয় ভাই বৃহদাকার স্কুইড সম্পর্কে সামান্য কিছু জানা যায়। স্কুইড ওজনে বড় হতে পারে কিন্তু দৈর্ঘে নয়। এই প্রাণীটির সম্পর্কেও কম জানা যায়। ২০২০ সালের জুন মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সমুদ্র সৈকতে বিরল দৈত্যাকার স্কুইড তীরে উঠে আসে। ১৩.৭ ফুট লম্বা, গভীর সমুদ্রের এই বাসিন্দা দক্ষিণ-পশ্চিম দক্ষিণ আফ্রিকার ব্রিটানিয়া উপসাগরের তীরে একটি সৈকতে আটকা পড়েছিলেন। ফলে গবেষকেরা এই প্রাণীটার সম্পর্কে কিছু তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক সামুদ্রিক প্রাণী ভয়ঙ্কর নয় বরং দৃষ্টিনন্দন। শিল্পীর আঁকা ছবি অন্তত তাই প্রমান করে।
(১১) বাল্টিক সাগরের অস্বাভাবিকতা
ছবিঃ বাল্টিক সমুদ্র উপকূল।(DeepOceanFacts.com)
ছবিঃ বাল্টিক সমুদ্রের গভীরে অনুমিত এলিয়েন স্পেসশিপ। প্রাচীন কোড বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাল্টিক সাগরের অসঙ্গতি 'ইউএফও'তে ধাতু রয়েছে যা প্রকৃতি পুনরুৎপাদন করতে পারে না।(DeepOceanFacts.com)
ছবিঃ বাল্টিক সাগরের 'গ্লেসিয়াল ডিপোজিট।(http://www.freepik.com/)
সমুদ্রের তলায় কি এলিয়েন স্পেসশিপ থাকতে পারে? ২০১১ সালে, সমুদ্র অভিযাত্রীরা বাল্টিক সাগরের তলদেশে অদ্ভুত চিহ্ন সহ একটি ডিম্বাকৃতি আকৃতির বস্তু খুঁজে পেয়েছিল। বস্তুর "চিত্রগুলি" গ্রাফিক শিল্পীদের দ্বারা অঙ্কন করা হয়েছিল। এরপর যা ঘটে তাহল ভিন্নজগতের কিছু আবিষ্কার ভেবে এটি দ্রুত ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। এটার ধরণ বাস্তব দৃশ্য সম্বলিত দানাদার সোনার চিত্রের মত ছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে অস্বাভাবিকতা আসলে একটি হিমবাহ জমা বা অন্য কিছু প্রাকৃতিক গঠনের কারনে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর উৎপত্তি অনিশ্চিত। কারণ আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন। কে জানে? অবশ্যই, অতি-বুদ্ধিমান এলিয়েন জীবন আদৌ বিদ্যমান কিনা তা মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্যগুলির মধ্যে একটি।
(১২) আন্তঃসামুদ্রিক ভূতত্ত্ব
ছবিঃ মৌরিতিয়াস দ্বীপের ভু-তত্ত্ব।(Theyucatantimes.com)
ছবিঃ সমুদ্রের গভীরের ভু-তত্ত্ব।(Theyucatantimes.com)
আমরা সত্যিই সমুদ্রতলের ভূখণ্ড সম্বন্ধে বেশি কিছু জানি না। কিন্তু আমরা স্কুবা ড্রাইভের মাধ্যমে গবেষণায় দেখতে পেয়েছি যে, ভূপৃষ্ঠে প্রকৃতির যেই সৌন্দর্য বিদ্যমান- সাগরতলে ঠিক তেমনি অত্যাশ্চর্য সুন্দর ভূপ্রকৃতি রয়েছে। "ব্রাইন পুল"- মানে যেখানে নোনা জলের ঘনত্ব আশেপাশের মহাসাগরের চেয়ে বেশি সেখানে হ্রদের মতো পৃষ্ঠ উপকূলরেখা তৈরি করে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটি ডেনমার্ক প্রণালীতে অবস্থিত। এটি পানির নিচের জলপ্রপাত। এখানে ঠান্ডা জলের বিশাল প্রবাহ সমুদ্রের ১১,৫০০ ফুট তলদেশে পতিত হয়। পৃথিবীর বৃহত্তম স্থল জলপ্রপাত সেই তুলনায় মাত্র ৩,২১২ ফুট। সমুদ্রগর্ভে থাকা আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছে। সমুদ্র তলদেশের এই ঘটনাগুলোর হদিস বিজ্ঞানীরা প্রায়শই খুঁজে পাননা। যদিও গবেষকরা জানেন যে এই সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব রয়েছে, তবুও তাদের সঠিক পদক্ষেপের অভাবে অনুসন্ধান কার্যক্রম শেষ হয়ে ওঠেনি। এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি বিজ্ঞান রহস্যগুলির মধ্যে একটি যা কেউ বুঝতে পারেনি।
যে তথ্যসূত্রের আলোকে এই সিরিজটি সাজানো হয়েছে।
***যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা মাধ্যম আন্ডারওয়াটার অডিওতে প্রকাশিত “Mysteries of Deep Sea: A Quest For Treasure” প্রবন্ধ। । প্রবন্ধের লেখিকা Anjela Griffith ‘Stanford University’ তে Oceanography বিষয়ে এম.ফিল. গবেষণারত।
***Reader's Digest একটি আমেরিকান জেনারেল-ইন্টারেস্ট ফ্যামিলি ম্যাগাজিন, যা বছরে ১০ বার প্রকাশিত হয়। ম্যানহ্যাটন শহরে এটির সদর দপ্তর। Reader's Digest এ লেখিকা Tina Donvito’র লেখা “Scientific quest for Deep Sea: Secret Unrevealed” প্রবন্ধ।
***Live Science হল একটি বিজ্ঞান সংবাদ ওয়েবসাইট যা ব্রিটিশ মিডিয়া কোম্পানি ‘Future’ দ্বারা পরিচালিত হয় নিউইয়র্ক সিটি-ভিত্তিক ডিজিটাল মিডিয়া কোম্পানি Purch Group, Inc এর মাধ্যমে। লেখিকা Andrea Mustain ২০১১ সালে Live Science সাইটে “Mysteries of the Oceans Remain Vast and Deep” শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেন।
১ম পর্বঃview this link
২য় পর্বঃview this link
৩য় পর্বঃ view this link
চলবে........................
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৩