somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোহাম্মদ (সাঃ) মাওলা আলী (আঃ) কেই তাঁর প্রতিনীধী করে গিয়েছিলেনঃ (পর্ব-১)

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদিও ইতিহাস থেকে এ ঘটনা, এ সত্য প্রায় বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে প্রথম হতেই। এখন যেই ঘটনা বলব, বেশিরভাগ মানুষের কাছেই নতুন মনে হবে। মানুষকে সত্য জানতে দেয়া হয়নি। এসকল কিছু এক এক করে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যেহেতু ইতিহাস মুলক লেখা তাই একটু বড় হবে। বিশেষ করে মোল্লাদের হাজার রেফারেন্স দেয়া লাগে। এর কারনে সুন্দর গল্পের মত করে লিখতে পারিনি। আবার আমি লেখকও নই তাই হয়ত সেইরুপ শ্রুতিমধুর হয়নি। কষ্ট করে পরতে হতে পারে, তার জন্য বিজ্ঞ পাঠকের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এক কথায় এই পুরা লেখা হলোঃ মাওলা আলী(আঃ) নিযুক্ত হয়েছিল প্রথম খলিফা, তথা নবী (সাঃ) পরবর্তী স্থলাভিষীক্ত, প্রতিনীধী, পরবর্তি খলিফা, মুমীনের প্রভু হিসাবে। কখন কিভাবে তার আলোচনা করা হয়েছে।
প্রাথমিক আলোচনাঃ
কোরানুল করিমে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “কুল্‌লা আছ আলুকুম আলাইহি ...লাহু ফীহা হুছনা” অর্থাৎ বলে দিন ( হে প্রিয় রসুল) আমি চাইনা তোমাদের কাছে এই বিষয় (নবুয়ত) কোন পারিশ্রমিক আমার নিকটবর্তীগণের (আহলে বায়াত) মা-আদ্দাতা (ভালোবাসা) ব্যতিত। যে ব্যক্তি ইহার (এই আদেশের) সদ্ব্য ব্যবহার করে আমি (আল্লাহ) তার জন্য শ্রীবৃদ্ধি (বরকত) করে থাকি (সুরা শুরাঃ ২৩)। উক্ত আয়াতের দ্বারা আল্লাহ পাক আহলে বায়াত এর প্রতি মোহব্বত উম্মতে মোহাম্মদী (সঃ) এর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। সাহাবাগন উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার পর রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করেছিলেনঃ “ইয়া রসুলুল্লাহ (সাঃ) কারা আপনার নিকটবর্তি জন, যাদের উপরে আল্লাহ ভালোবাসা উত্তম করে দিয়েছেন? উত্তরে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইন” হলো আমার নিকটবর্তী জন। উক্ত আয়াতকে বলা হয় “আয়াতে মা’আদ্দাত” বা প্রানাধিকার ভালোবাসার নিদর্শন। কোরানুল কারিমে সুরা আল ইমরানের ৬১ নং আয়াতটিকে বলা হয় “আয়াতে মুবাহীলা” বা চ্যালেঞ্জ নিদর্শন। এ আয়াতের শানে নজুল হলো হযরত জাবের (রাঃ) হতে ধারাবাহিকভাবে, শাবী, দাউদ ইবনে মাক্কী, সোলায়মান ইবনে দীনার, বাশার ইবনে মিহরান, আহামদ ইবনে দাউদ মক্কী, সোলায়মান ইবনে আহমদ আবু বকর ইবনে মুরদিয়া (রাঃ) বর্ননা করেছেন, একদা আবিদ ও সাঈদ রসু্লুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে গিয়ে তাদের সাথে মুবাহীলা (চ্যলেঞ্জ) করার জন্য আহবান করলো। এরে রসুল করিম (সাঃ) বাধ্য হয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করলেন। পরদিন রসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর আহলে বাইয়েত তথা মাওলা আলী, মা ফাতেমাতুজ্জাহরা, ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন (আঃ) কে সাথে নিয়ে মুবাহীলার জন্য বের হলেন। কিন্তু খৃষ্টানদেরকে মুবাহীলা করার জন্য খবর দিলে তারা ভীত হয়ে তারা মুবাহীলার জন্য অস্বীকৃতি জানায়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাজিল হয় আয়াতে মুবাহীলা। আয়াতটি হলোঃ “ফা কুল তা আ-লাউ নাদউ...আলাল্ কাজেবীনা” অর্থাৎ সুতরাং তুমি বল, এসো! আমরা ডাকি আমাদের সন্তানদেরকে এবং তোমাদের সন্তানদেরসকে এবং আমাদের নারীদেরকে এবং তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নফসকে এবং তোমাদের নফসকে, অতঃপর আমরা শপথ পাঠ করি, মিথ্যুকদের উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক”। “তফসীরে ইবনে কাসীর” ২য় খন্ডের ৪৭৭ পৃষ্ঠায় এবং “ তফসীরে মাজহারী” ৯ম খন্ডের ৪৯২-৯৩ পৃষ্ঠায় বর্নিত আছে, উক্ত আয়াতে মুবাহীলার বিষয়ে হযরত জাবের (রাঃ) বলেনঃ উক্ত আয়াতে মুবাহীলায়-
“আনফুসানা” শব্দ দ্বারা রসুল (সাঃ) ও মাওলা (আঃ)-কে
“অনিছা আনা” শব্দ দ্বারা মা ফাতেমাতুজ্জাহরাকে এবং
“ওয়া আবনা আনা” শব্দ দ্বারা ইমাম হাসান ও হোসাইন (আঃ)-কে বোঝানো হয়েছে।

আসল কথায় ফিরে আসিঃ
রসুলুল্লাহ (আ) জীবনে একবার মাত্র হজ্ব পালন করেছিলেন। মক্কা শহরকে চির বিদায় জ্ঞাপন করে তিনি জন্মস্থান ত্যাগ করলেন। এই জন্য ইহাকে বিদায় হজ্ব বলা হয় এবং তাঁর দেওয়া এই ভাষনকে “বিদায় ভাষন” বলা হয়, যেহেতু ইহা ছিল জন্মভূমির প্রতি শেষ ভাষন।

মক্কায় অবস্থিত সকলকে বিদায় সম্ভাষণ করে নিজে এহরামের পোশাক না ছেড়েই মদীনার পথে রওনা হলেন। প্রায় সোয়া লক্ষ লোক তাঁর সহযাত্রী ছিলেন।

পথে ১৮ই জিলহজ্ব তারিখে শনিবার দিন জোহর এবং আছরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী “জুফায়” যখন তিনি ‘গাদিরে খুম’ নামক জায়গায় উপস্থিত হলেন তখন এই আয়াত নাজেল হইলঃ-

হে রসুল, আপনার রব হইতে যাহা নাজেল করা হয়েছে তা পোউছাইয়া দেন। আর যদি তা না করেন তা হলে তাঁর (আল্লাহর) রেসালাত পৌছাইয়া দেওয়া হল না। আল্লাহ আপনাকে মানব মন্ডলী হতে লইয়া আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের দলকে হেদায়েত করেন না (সুরা মায়েদাঃ৬৭)। ইহা কোরানের সব শেষের আগের আয়াত। শেষ কথাটির প্রকৃত অনুবাদ হইলঃ আল্লাহ আপনাকে মনুষ্য হইতে (সরাইয়া) তাঁর সাথে লাগাইয়া লইতেছেন বা লইবেন।

“গাদির” অর্থ জলাশয়। জায়গার নাম খুম। খুমের জলাশয়ের নিকটবর্তী হইলে উক্ত আয়াত এইরুপে নাজেল হয়েছিলঃ “ইয়া আইউহার রাসুল বাল্লেগ মা উনজিলা ইলাইকা মির রাব্বেকা আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন। অইন লাম্‌ তাফআল ফালা বাল্‌লাগতা রেসালাহু। আল্লাহু ইয়া, সেমুকা মিনান নাস”।

ইহা হতে “আন্না আলীউন মাওলাল মোমেনীন” কথাটি কোরান হতে বাদ দেয়া হয়েছিল ওসমানের (র) প্রকাশনা হতে। মুসা নবীর সঙ্গে যেমন হারুনের নাম কোরানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেইরুপে আলী (আ) নামও কোরানে কয়েকবার ছিল। ( ইবনে আবি হাতেম বর্ননা করেছেন, আবু সাঈদ খুদরী হতে উক্ত আয়াত হযরত আলীর শানে নাজেল হয়েছে। ইবনে মারদুইয়া ইবনে ওমর হতে বর্ননা করেন যে, আমরা উক্ত আয়াত রসুলের (আ) এর সামনে এইভাবে পড়তামঃ তফসীরে দোররে মনসুর; মোল্লা জালালউদ্দিন শিউতী; ২য় খন্ড, মিশর থেকে প্রকাশিত)

[ উক্ত আয়াতের সমর্থনে হাদিস দু’টো হলো “মান কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু (বোখারী, মেশকাত)”। হযরত রাসুল (সাঃ) যে হযরত আলী (আঃ) কে হারুন নবীর সাথে তুলনা করেছেন তার প্রমাণ বোখারী ২য় খন্ড ১৯৪ পৃষ্ঠায় এবং ৩য় খন্ডে ৫২৬ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে হিসাম ২৭৭ পৃষ্ঠায়। সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্নিত আছে যে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ হে আলী, তুমি আমার নিকট ঐ স্থানে আছো যেখানে মুসার নিকট হারুন ছিল। কিন্তু আমি ব্যতীত নবী নেই আমি শেষ নবী। যদিও আরও অনেক প্রমাণ রয়েছে তবে আমি মনে করি জ্ঞানীদের জন্য এই দুটোই যথেষ্ট। ]

কিন্তু কথা হলো দীর্ঘ ২৩ বছর ইসলাম প্রচারের পরে, এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য, যুদ্ধ-যন্ত্রনা সহ্য করার পরেও এমন কি জিনিস বাদ রয়ে গেল? যার জন্য রেসালাতই পুর্ন হবে না বলে আল্লাহ ঘোষনা করলেন?
এই আয়াত নাজেল হওয়ার সাথে সাথে রসুল পাক সেখানেই থামিয়া গেলেন এবং বাহন থেকে নেমে গেলেন। সবাইকে একত্র করলেন। সেখানকার “আকাশিয়া” নামক কাটা গাছগুলো পরিষ্কার করে ফেলা হলো। জোহরের নামাজ শেষে উটের গদিগুলো দিয়ে বেদী বা মঞ্চ করা হলো। যেহেতু দিনটি ছিল প্রচন্ড গরমের, সেহেতু বাবলা গাছের সাথে চাদর টানিয়ে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করা হলো। তারপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ননা করলেন। আর বললেনঃ

“ নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস আমানত রেখে যাচ্ছি, যদি এ দু’টিকে আঁকড়ে ধর তাহলে কখনো গোমড়াহ হবেনা। তার একটি হলো আল্লাহর কেতাব-যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত রজ্জু এওবং অন্যটি হল আমার আহলে বায়াত। এ দুটি কখনো পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হনে এবং এ অবস্থায়ই হাউজে কাউসার আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখ তাদের সাথে তোমরা কিরুপ আচরন করবে” (তিরমিযী)

অন্য বর্ননায় উক্ত হাদিসের শেষে এ কথাটি রয়েছে যে, “আমি আমার আহলে বাইয়েত সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করে দিচ্ছি”- এ কথাটি রাসুল (সাঃ) তিনবার করে বলেছিলেন। এ হাদিসটি তিরমিযী সুত্রে মেশকাতের ৫৮৯২ এবং ৫৮৯৩ নং হাদিসে সহী সুত্রে বর্নিত আছে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) হতে এবং মুত্তাকী হিন্দী তাঁর “কানজুল উম্মাল” গ্রন্থে বর্ননা করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদেরকে অবশ্যই দুটি জিনিস নিয়ে জিজ্ঞাসা করব। আর তাহলো-কোরান ও আমার আহলে বায়াত। (আরবাইনাল আরবাইন এবং আল্লামা সিউতীর “ইহয়াউল মাইয়্যেত”)

তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেনঃ “আলাস্ত আওলা বেকুম মিন আনফুসিকুম” অর্থাৎ আমি কি তোমাদের আপন জীবন হতে অধিক প্রিয় নই? সবাই বললেনঃ “কালু বালা”-হ্যা ইয়া রসুলুল্লাহ(সাঃ)। সমবেত জনমন্ডলী হতে তিনবার এই সম্মতি নিবার পর রসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আঃ) এর দু’বাহু সমবেত জনমন্ডলীর সামনে তুলে ধরলেন আর বললেনঃ

“মান কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজাআলিউন মাওলাহু আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদামান আদাহু, অন্সুর মান নাসারা অখ্‌জুল মান্‌ খাজালা, ফাল ইয়াছ হাদিল হাজেরুন খায়েরা”।
অর্থাৎ আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ! তুমি তাকে বন্ধু রুপে গ্রহণ কর যে তাকে বন্ধু রুপে গ্রহন করে, তাকে শত্রু রুপে গ্রহন কর যে তার সাথে শত্রুতা করে, এবং তাকে সাহায্য কর যে সাহায্য করে, এবং লাঞ্ছনা দাও তাকে যে লাঞ্ছনা দেয়।

এ হাদীসটি-“আহমদ” সূত্রে “মেশকাতের” ১৫৭ পৃষ্ঠায় ৫৮৪৪ নং হাদিসে বর্নিত আছে, হযরত বারা ইবনে আযেব ও যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে। এ – হাদীসটির শেষে বর্ননাকারী বলেনঃ এরপর যখন হযরত আলী (আঃ) এর সাথে হযরত ওমর (রাঃ) এর সাক্ষাত হয়, তখন তিনি আলী (আঃ)-কে বললেনঃ
“ধন্যবাদ হে আবু তালিব পুত্র! তুমি সর্বময় প্রতিটি নারী-পুরুষের প্রশংসিত হয়ে রইল”।
“রেসালাত” মানে প্রতিনিধিত্ব। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহপাকের প্রতিনিধি এবং তাঁর বিদায়ের পুর্বে হযরত আলী (আঃ) –কে তাঁর প্রতিনিধি করে যাবেন এ-ই ছিল আল্লাহ পাকের নির্দেশ। সদর উদ্দিন চিশতী সাহেব তাঁর “মাওলার অভিষেক” বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ “আলী (আঃ)-কে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিনিধি হিসাবে আলী (আঃ)-কে জনমন্ডলীতে রসুল (সাঃ) এর পরে তাঁর স্থলাবিষিক্ত করার নির্দেশক সংবাদ নাজিল করা হয়েছিল এর কিছুকাল আগেই। তবে তিনি তা পরে সবার সামনে উপযুক্ত পরিবেশে প্রকাশ করলেন কেননা তিনি ভাল করেই জানতেন হযরত আলী (আঃ) এর এ মাওলাইয়াত বা প্রতিনিধিত্ব হিংসার বশবর্তী হয়ে লোকেরা অস্বীকার করবে এবং আলী (আঃ) এর বংশধরের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলতে থাকবে যার ফলে ধর্ম বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই তিনি গাদীরে খুম নামক জায়গায় এসে জনসম্মুখে ইহা প্রকাশ করলেন; ইহার গুরুত্ব সবাইকে বোঝাবার জন্যই তিনি মক্কা থেকে ফেরার পথে “এহরাম বস্ত্র” পরিহিত অবস্থায় রওনা দিয়েছিলেন।

“গাদিরে খুমের” হাদিসটি “প্রতিনিধিত্ব” অর্থে প্রযোজ্য এবং এর পরেই উপস্থিত জনগন প্রতিনিধিত্ব স্বীকার করে বায়াত গ্রহন করেন। এ হাদিসটি “তাবরানী” ইবনে জরীর, হাকীম, তিরমিযী সবাই জায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে ঠিক এভাবেই হাদিসটির বিশুদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এমনকি ইবনে হাজর তাঁর “সাওয়ায়েক” গ্রন্থের পঞ্চম পর্বের প্রথম অধ্যায়ের ২৫ পৃষ্ঠায় বর্ননা করে সহীহ হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সামান্য বর্ননার ভিন্নতার মাধ্যমে গাদিরে খুমের ঘটনাটি “মুসনদে আহমদ, খাসায়েসুল আলাভীয়া” কিতাবেও বর্ননা করেছেন সহীহ্‌ হিসাবে। ঐতিহাসিক এ হাদিসটি কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবেঈন, ৩৫৫ জন উলামা, ২৫ জন ঐতিহাসিক, ২৭ জন সংগ্রাহক, ১১ জন ফিকাহ্‌বিদ, ১৮ জন ধর্মতাত্ত্বিক ও ৫জন ভাষাতাত্ত্বিক কতৃক বর্নিত হয়েছে।

কিছু কিছু লেখক “গাদিরে খুমের” সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন, তাদের অজ্ঞতা এবং উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত প্রতিহিংসা হলো এর প্রধান কারণ। ইনারা মুনাফিক মুয়াবীয়া-ইয়াজিদ ও তাদের অনুসরণকারী মোল্লা মৌলবীদের ছিলছিলার প্রেতাত্বা বহন কারী কট্টর মৌলবাদ মুনাফিক। এজন্য তাদের কারো দ্বারা রচিত রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী কোন গ্রন্থে “গাদিরে খুমের” এ ঐতিহাসিক ঘটোনাটি পাওয়া যাবেনা। গাদিরে খুমের হাদিসটি – আল্লামা আল আমিনী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “আল গাদিরে” পুর্নতথ্যসহ বর্ননা করেছেন। এর জন্যই তিনি মৌলবাদী খারেজীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। তবে যারা আল্লাহর রসুল (সাঃ) ও তাঁর প্রতিনীধি মাওলা আলী (আঃ)-কে মনে প্রানে মেনে নিতে পারেনি তারাই এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। অথচ আল্লাহ বলেন নবী (সাঃ) কোন কাজ করেননা, কোন কথা বলেনা যতসময় না তাঁর আদেশ না আসে।
আল্লামা সৈয়দ সাঈদ আখতার রিজভী রচিত “ইমামত” বইয়ের ৩৭ পৃষ্ঠায় উক্ত গাদিরে খুমের ঘটনা ও হাদিস বর্ননাকারীগণের একটী তালিকা পেশ করেছেন তা দেখে নেয়া যেতে পারে।
গাদিরে খুমের ঘটনার একটি প্রমান হলো, ইমাম আহমদ তাঁর “মুসনদ” গ্রন্থে রিয়াহ ইবনে হারিস হতে দুটি সূত্রে বর্ননা করেছেনঃ
একদল লোক হযরত আলী (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আমাদের মাওলা ! আপনার উপর ছালাম। হযরত আলী (আঃ) তাদেরকে প্রশ্ন করলেন তোমরা কারা? তারা বললঃ- হে আমিরুল মুমেনীন ! আমরা আপনার অনুগত ব্যক্তি। হযরত আলী (আঃ) বললেনঃ- আমি তোমাদের মাওলা কিরুপে হইলাম, তোমরাতো আরব! তারা বলল গাদিরের দিনে আমরা রসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি- “আমি যার মাওলা এ আলীও তাঁর মাওলা”।

রিয়াহ বলেন, যখন তারা ফিরে যাচ্ছিল তখন আমি তাদের অনুসরণ করলাম এবং তাদের প্রশ্ন করলাম, আপনার কারা? তারা বলল, আমরা মদীনার আনসার। তাদের মধ্যে আবু আইয়ুব আনসারীও ছিলেন।

হাদিসটি মুতাওয়াতির হবার পক্ষে অপর দলিল হলো এ হাদিস আবু ইসহাক সালবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে সুরা মাআরিজের তফসীরে দুটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) গাদিরের দিনে যখন জনগণকে সমবেত করে হযরত আলী (আঃ) এর হাত ধরে ঘোষনা করলেনঃ “মান কুন্তুম মাওলাহু ফাহাজা আলীউন মাওলাহু” – এ খবরটি তখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। হারিস ইবনে নোমান ফিহরি তা শুনে উটে আরোহন করে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট এসে উটটি বেধে রাসুল (সাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে মোহাম্মদ! তুমি একদিন নির্দেশ দিয়েছিলে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করতে এবং তোমাকে তাঁর নবী হিসাবে স্বীকার করতে, আমরা তা করেছি। পরবর্তীতে বললে, দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তে তাও করলাম, যাকাত দাও- তাও দিলাম। পরে রমজান মাসে রোজার নির্দেশ দিলে তাও শুনলাম এবং হজ্জ্ব করার নির্দেশও পালন করলাম। এতো কিছুতেও তোমার সন্তুষ্টি হলো না, অবশেষে তোমার চাচাত ভাইয়ের হাত ধরে তাকে আমাদের উপর শ্রেষ্ট বলে ঘোষনা দিলে, “ আমি যার মাওলা, আলীও তার মাওলা”? – এ কথাটি কি তোমার নিজের পক্ষ থেকে নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে? নবী (সাঃ) বললেনঃ যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নাই সেই আল্লাহর শপথ করে বলছি, ইহা আল্লাহর পক্ষ হতে। হারিস তার বাহনের দিকে ফিরে যেতে যেতে বললো, হে আল্লাহ ! মোহাম্মদ যা বলেছে তা যদি সত্য হয় তবে আমাদের উপর আসমান হতে পাথর বর্ষণ করুন অথবা আযাব প্রেরন করুন। তখনো সে বাহনের নিকট পৌছায়নি, আকাশ থেকে একটি ছোট পাথর তার মাথায় এসে পড়ল এবং পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গেল এবং সেখানেই সে মারা গেল। এ ঘটনাটি মাওলানা ফারমান আলী স্বীয় তফসীরে সুরা মা’আরিজের ১-৩ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন। এবং আরো বহু কিতাবে এর ঘটনাটি বিশ্বস্থ সুত্রে বর্নিত আছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একদল হাদিসবেত্তা এ হাদিসটি বীনা বাক্যে গ্রহন করেছেন। যেমন – আল্লামা শাবলানজী মিশরী হতে তাঁর “নুরুল আবসার” গ্রন্থের ১১ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আঃ) এর জীবনীতে হাদিসটি সহীহ সুত্রে বর্ননা করেছেন। হালাবী তাঁর “সীরাহ” গ্রন্থের ৩য় খন্ডের ২১৪ পৃষ্ঠায় বিদায় হজ্জ্বের আলোচনায় হাদিসটি বর্ননা করেছেন এবং “আল মুরাজায়াত” কিতাবের ২৩৬ পৃষ্ঠায় এ হাদিস উল্লেখ আছে এবং ২৪২ পৃষ্ঠায় ঘটনা উল্লেখ আছে।
একদল নির্বোধ কট্টর মৌলবাদী খারেজীগণ বুঝাতে চেষ্টা করেন যে, রাসুল (সাঃ) তাঁর চাচাত ভাই আলী (আঃ)-কে যখন ইয়ামেনে প্রেরণ করেন তখন হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একদল নিন্দুকেরা রাসুল রাসুল (সাঃ) এর কাছে অভিযোগ করেছিল। তাই নবী (সাঃ) , আলী (আঃ) সন্তুষ্টি করতে গাদিরে খুম নামক স্থানে এ হাদিসটি প্রকাশ করেন। বাস্তবে আজকেও আমার সামনে একজন এই কথা বলে বসলেনঃ “ আরে ভাই আলী তার চাচাতো ভাই তাই ...আমরাও যেমন আমাদের ছেলে মেয়ে ভাই বোনকে খুশি করতে বলে থাকি অনেক কিছু...সেইরকম তিনিও করেছেন। কিতু গর্ধবের দল এটূকু বুঝেনা, সামান্য খুশি করাবার জন্যে আল্লাহ তায়ালা একটা আয়াত নাজিল করবেন না, নবী (সাঃ) ও এত বড় অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিবেন না। আসলে কান্ডজ্ঞানহীন সাইনবোর্ডধারী খারেজী তাদের স্বার্থাম্বেষী, পরশ্রীকাতর মুনাফিকির দ্বারা সত্য বিষয়টিকে ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে যুগে যুগে।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেনঃ আমি আলী হতে, আলী আমা হতে। এ হাদিসটি সুনান লেখকদের মধ্যে নাসায়ী তাঁর “খাসায়েসুল আলাভীয়া” গ্রন্থে, আহমদ ইবনে হাম্বল তাঁর “মুসনাদের” ৪র্থ খন্ডে, হাকীম নিশাবুরী তাঁর “মুসতাদরাক” গ্রন্থের ৩য় খন্ডে, যাহাবী তাঁর “তালখিসে মুসতাদরাখ” গ্রন্থে বর্ননা করে বলেছেন যে, মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটি সহীহ্‌। মুত্তাকী হিন্দী তাঁর “কানজুল উম্মাল” ৬ষ্ঠ খন্ডে ইবনে আবি শাউবাহ ও ইবনে জারীর হতে বর্ননা করেছেন এবং সহীহ বলে স্বীকার করেছেন।
হযরত ওমর (রাঃ) বায়াত গ্রহন করতে গিয়ে বললেনঃ ধন্যবাদ ধন্যবাদ হে আবু তালিবের পুত্র ! তুমি আজ হতে সকাল সন্ধ্যা মানে সর্বসময় প্রতিটি মুমীন নর-নারীর নিকট প্রশংসিত হয়ে রইলে। এ ঘটনাটি মেশকাতে ৫৮৪৪ নং হাদিসে বর্নিত আছে।

বায়াত সমাপ্ত শেষ হলে তখন কোরানের সর্বশেষ আয়াত নাজিল হয়ঃ
“ আল ইয়াওমা ইয়া ইসাল্লাযীনা...ইসলামা দ্বীনা (সুরা মায়েদাঃ ৩)”।
অর্থাৎ “আজ কাফের গন তোমাদের দ্বীন হতে নিরাশ হয়ে গিয়েছে। অতএব তাদেরকে আর ভয় করিও না, ভয় কর আমাকে। আজ তোমাদের দ্বীন পরিপুর্ন করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপুর্নতা দান করলাম এবং তোমাদের দ্বীন ইসলামের উপর আমি রাজি হলাম”।
এই আয়াতটি কোরানে নাজিল কৃত সর্বশেশ আয়াত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আলী (আঃ)-কে তাঁর প্রতিনীধি বা স্থলাভিষিক্ত করে ইসলামের পূর্নতা ঘোষনা করলেন। আধ্যাত্নিক জ্ঞানীগণ বা ইলমে নব্বীর ওয়ারিশ যারা তারা এ কথা স্পষ্ট জানেন এবং দেখেন যে মাওলা আলী (আঃ) যে স্থানে অধিষ্টিত আছেন ইসলাম বা মানব ধর্ম ইনসানিয়াত সে স্থানে স্থিত আছে।
চলবে...

দোহার
কাদরীয়া দরবার শরীফ


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×